এরপর আমার মাঝে তার অস্তিত্ব আরো বেশি অনুভব করতে থাকি। তার নড়াচড়া টের পাই। তারপর তাকে আবার দেখি যখন তার বয়স মাইনাস পাঁচ মাস। মনিটরে তাকে দেখি আর শুধু অবাক হই! বিশ্বাস হতে চায়না যে সে আছে আমার মাঝেই! আমার মনে হচ্ছিল এ যেন আমার মাঝে আরেকটা আমি! এরপর শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা! কবে আসবে সে আমার কোলে!
ভার্সিটিতে শুধু পরীক্ষা দিতে যেতাম, ক্লাস করতাম না। অনেকে বলেছিল সেমিষ্টার ড্রপ দিতে। কিন্তু তাতে আমার অনার্স শেষ হতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই ওকে আমার মাঝে নিয়েই আমি পরীক্ষা দিয়েছি। ক্লাস করতাম না বলে সারাদিন বাসায়ই থাকা হত। আর বাসায় থাকার ফলে সারাদিন নেটে ব্লগ পড়তাম। একদিন সাহস করে নিজের নামে একটা নিকও খুলে ফেল্লাম। এরপর শুধু ব্লগিং আর অপেক্ষা.. তার আগমনের অপেক্ষা।
এরপর এল সেইদিন..৬ই ফেব্রুয়ারী..আমার এতদিনের প্রতীক্ষা অবসানের দিন। তার আগের রাতে একটুও ঘুম হয়নি। সারারাত শুধু এপাশ-ওপাশ করে কেটেছে। খুব সকালে আমার আম্মু আমাকে যত্ন করে চুল বেধে দিল, ওটিতে যাবার জন্য বিশেষ পোষাকটা (সিস্টার দিয়ে গিয়েছিল) পরিয়ে দিল। ওর বাবা আমাকে বললো ভয় না পেতে, মনে সাহস রাখতে। এরপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ঢুকলাম ওটিতে। তখন আমার একইসাথে খুব ভয় এবং আনন্দ লাগছিল। আমাকে দুটো স্যলাইন আর এনেসথেশিয়া দেয়া হল। অক্সিজেন মাক্স পরিয়ে দেয়া হল। আমার খুব তেষ্টা পাচ্ছিল আর মাথা ঝিমঝিম করছিল। ঘুমও পাচ্ছিল। কিন্তু আমি জোর করে চোখ খুলে রাখছিলাম তার কান্না শুনবো বলে.. তাকে দেখবো বলে। হঠাৎ সারা শরীরে একটা ঝাকুনি খেলাম। সাথে সাথে শুনলাম সেই কাংখিত কান্নার আওয়াজ। আর আমার চোখও ভিজে উঠল সুখের জলে। আমার ভেতর থেকে জন্ম নিল আরেক 'আমি',আমার লক্ষী মেয়ে..আমার প্রথম সন্তান।
আমার এতদিনের প্রতীক্ষার হল অবসান।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ২:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




