somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপ্রভাত বাংলাদেশ : দিনবদলের বাঁকে শিশুদের শৈশব ফিরে পাবার গল্প

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১..............
সিনা ইফতেখার - নাজনীন ইফতেখার দম্পতির দু'ছেলে মেয়ে । আইডিয়াল স্কুলে ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া আদনান , আর বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নিম্মি ।ছেলে মেয়ের মেধা নিয়ে সিনা সাহেব ভীষণ গর্ব অনুভব করেন ।পেছনের ঘটনা জানতে আমাদের ৭ বছর আগে ফিরে যেতে হবে ।

মেধাবী আদনান সে বছর ভর্তি পরীক্ষায় কোথাও টেকেনি । নিজের ছোটবেলার অপরিসীম কষ্ট ছেলে মেয়ের মাঝে আবছাভাবেও ছড়িয়ে দিতে চাননি সিনা সাহেব। টাকার ব্যাগ নিয়ে ছুটে গেছেন ক্লিন সাংসদ কুবের হোসেন চৌধুরীর কাছে । কুবের সাহেবের শিক্ষানুরাগ সেসময় সর্বজন বিদিত , টাকার বিনিময়ে তিনি রঙিন ভবিষ্যতের সন্ধান দিতে তিনি কখনও কার্পণ্য করেননি। আদনানের অভিজ্ঞতা থেকে নিম্মিকে দু'বছর ক্লাস ওয়ানে রাখা হয় ।তৃতীয়বার প্রথম শ্রেণীতে পড়ার প্রবল ইচ্ছায় যখন সে ভর্তি পরীক্ষা দেয় , ফলাফলে কোন স্কুলেই নিম্মি টেকে না । আদনান সাহেব শক্ত মানুষ , টাকার ব্যাগ প্রস্তুত রাখেন । ২২ জানুয়ারী নির্বাচনের পর কুবের বা গাব্বাস সাহেবের কাছে যেতে হবে তার । ১১ জানুয়ারির পটপরিবর্তন সব এলোমেলো করে দেয় । স্কুলে ঘুরে ঘুরে টাকা সাধেন সিনা সাহেব , কেউ নিতে রাজি হয় না । নিম্মির মত ছোট্ট শিশুটির মৌলিক অধিকার শিক্ষার পথকে যারা রুদ্ধ করতে চায় সিনা সাহেব তাদের ক্ষমা করতে পারেন না ।

২..........
সৌম্যের শৈশবের দিনগুলো শেষ হতে আর বছর দুয়েক বাকি।বাবাকে নিয়ে সৌম্যের অনেক গর্ব।আশপাশ থেকে অনেক অদ্ভূত কথাবার্তা কানে আসে তার ।সুমন কাকার কাছে শুনেছে , সারা দেশের মাঝে একমাত্র তাদের গাঁও গেরামেই নাকি স্পোর্টস সামগ্রীর দোকান হয়েছে , সেখানে দেদারসে হকি স্টিক বিক্রি হচ্ছে ।কামার পাড়ায় কামাররা রামদা তৈরিতে ব্যস্ত থাকার কথাও সে শুনেছে।সৌম্য জানে তার বাবা কেবল পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, মনে মনে সে বলে "মাই ফাদার ইজ দ্যা বেস্ট"।কামারদের জন্য বাবার ভালোবাসা , হকি খেলা ছড়িয়ে অক্লান্ত প্রয়াসকে সৌম্য শ্রদ্ধা করে ।১২ জানুয়ারি,২০০৭ সকালের পর সৌম্য বাবার দেখা পায় না ।লোকে বলে তার বাবা থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছে , সৌম্য জানে তার বাবা এমনি সেখানে গেছেন।ফোনে বাবার সাথে যখন সৌম্য কথা বলেন তখন বাবা দেশের মাটির গন্ধ শুকতে চান , জনগণ জনগণ জিগির তোলেন, জনগণের সেবার কথা বলে ডুকরে কেঁদে উঠেন ।এত কিছু বুঝে না সৌম্য ।শৈশবের দু'টি বছর বাবাকে ছাড়া কাটিয়েছে সৌম্য , চিৎকার করে তাঁর শৈশব ফিরে পেতে ইচ্ছে হয় তার।

৩.........
সায়হামকে বড় মামা ডাকেন পন্ডিত , ছোটমামা বলেন সুলতান । সত্যি সত্যিই সায়হাম সম্ভবত এসএম সুলতানের মত বড় চিত্রশিল্পী হবে ।বাসার একটা ঘরের দেয়াল জুড়ে তার হরেক আঁকিবুকি । এসব অবশ্য সায়হাম টিভি দেখে শিখেছে । সার্ফ এক্সেলের অ্যাড দেখে প্রথম এমন আইডিয়া তার মাথায় আসে । সবাই যখন বাহবা দেয়, ৬ বছরের সায়হাম তখন উপুর্যুপুরি হাই রাইজ বিল্ডিংয়ের ছবি এঁকে ট্রাম্প কার্ড ছুঁড়ে দেয়। ধানমন্ডির অ্যাপার্টমেন্ট টা তার পছন্দ না , বাবার কাছে উত্তরায় ছবির মত একটা অ্যাপার্টমেন্ট আব্দার করে বসে সায়হাম । বাবা আব্দার ফেলতে পারেন না , সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায় । জানুয়ারি ২০০৭ এর শুরুটা লাগাতার অবরোধ চলায় বাবার বুকিংয়ের টাকা দিতে দেরি হয় । ১২ তারিখ হঠাৎ করেই বাবা বুকিং ক্যান্সেল করে বসেন । সপ্তাহখানেকের জন্য ঘরের মাঝে সেঁটিয়ে যান । সায়হামের ছোট্ট মনের স্বপ্নকে যারা গলা টিপে হত্যা করেছে , তাদেরকে সায়হাম কোনদিন ভুলতে পারে না ।

রিয়াদের সাধটাও সায়হামের মতই । ফ্রেন্ডদের কথা দিয়েছিল বাবার বিএমডব্লিউ তে চড়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করবে । ১১ তারিখ রাতে বাবার গাড়িটা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় , বাবাকে জিজ্ঞেস করে একটা রামধমক খেতে হয় ।মান সম্মানের মাথা খেয়ে লক্কর ঝক্কর ২০০৩ মডেলের জি-করোলা তে চড়ে তাকে রোজ স্কুলে যেতে হয় । জানুয়ারি ১১ এর জিনিদের পেলে রিয়াদওও ছেড়ে কথা বলবে না ।

৪.............
দস্যিপনায় সামান্থা ছিল সবার সেরা । পড়াশোনা তখন তার দু'চোখের বিষ । দিন বদলের দিন আসে ২০০৪ এর আগস্টে । বুয়েট পড়ুয়া নির্ঝরের ছোঁয়ায় , পড়ানোর স্টাইল , ইনোভেশন , অভিনবত্ব সামান্থাকে বদলে দেয় । ডানপিটে সামান্থার প্রিয় সাবজেক্ট হয়ে উঠে ম্যাথ , ডিবেটে/কুইজে সামান্থা হয়ে উঠে সবার অগ্রপথিক । নির্ঝরের আন্ডার গ্র্যাড শেষ হওয়ার ডেটলাইন ২০০৬ এর সেপ্টেম্বর । একে একে আইইউটি,কুয়েট,চুয়েটের বন্ধুরা পাশ করে যায় , নির্ঝরের বুয়েট তখনও পড়ে থাকে থার্ড ইয়ারে । খেলা দেখা , জ্বর , পানিতে ক্লোরিনের গন্ধসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নির্ঝরের সিনিয়র ছাত্রদলীয় আর লিগীয় ভাইয়ারা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ায় পরীক্ষার সিডিউল দেয়ার জন্য স্যারদের রীতিমত গলদঘর্ম হতে হয় । তৃতীয় সেমিস্টার শেষ করতে সময় লাগে ৯ মাস , ষষ্ঠ সেমিস্টার শেষ করতে সময় লাগে ১১ মাস ।

সামান্থা নির্ঝরের এমন পিছিয়ে যাওয়া উপভোগ করে , সে জানে ভাইয়া যতদিন আছেন পড়াশোনা নিয়ে তাকে টেনশন করতে হবে না । ৭ম আর ৮ম এই দুই সেমিস্টার শেষ করতে আরও ১৬/১৭ লাগবে একরকম নিশ্চিন্তই থাকে সে, নির্ঝরেরও ধারণাটা খুব একটা ভিন্ন হয় না । হরতাল অবরোধ দিয়ে ৭ম সেমিস্টারে সূচনাটা দারুণ হয় , কিন্তু বিনা মেঘে বর্জ্রপাত হয়ে আসে ওয়ান ইলেভেন । ৭ম আর অষ্টম দু'টো সেমিস্টার শেষ হতে সময় লাগে মাত্র ১০ মাস । পরীক্ষার রেজাল্ট বেরুনোর আগেই চাকরি পেয়ে যায় নির্ঝর , টিউশনি ছেড়ে চলে যায় , সাথে ছেড়ে যেতে হয় পরিপাটি ক্যাম্পাস। আকস্মিক ছেদ পড়ে সামান্থার পড়াশোনায়, বছরান্তে সেটি পুরোপুরি গতি হারায় ।

ঠিক এভাবেই ........
২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ এভাবেই রুদ্ধ করেছে সাংঘাতিক মেধাবী নিম্মির মেধাবিকাশ , সৌম্য হারিয়েছে তার শৈশব।সায়হাম রিয়াদ তাদের শখের বিনিময়ে পেয়েছে , সাধের নির্মম মৃত্যু যন্ত্রণা । সামান্থার গতিশীলতাকে করেছে স্থবির , নির্ঝরকে করেছে আকস্মিক ক্যাম্পাস ছাড়া । "শিশুদের জন্য হ্যাঁ বলুন" স্লোগানের বিপরীতে ওয়ান ইলেভেন কেবল দিয়ে গেছে "না" এর প্রতিধ্বনি ।



অতঃপর............
দিন বদলের পালা শেষে নতুন দিনের আলো এসেছে । সিনা সাহবে টাকার ব্যাগ রেডি করছেন , সৌম্যের বাবা মাটির গন্ধ শুঁকে, সংসদে যাবেন কথা বলে দৌড়ে আসছেন । সায়হামদের পছন্দের নতুন জায়গাটা এখনও জলের নিচে , তবে খুব শিগগিরই সেটা ভরাটের কাজ শুরু হবে । রিয়াদদের বিএমডব্লিউটা পাওয়া গেছে , সেটার ধুলো ঝাড়াঝাড়ির কাজ চলছে পুরোদমে । সামান্থা তার শিক্ষককে খুঁজে পাবে না আর , কিন্তু ভবিষ্যতের সামান্থারা আর শিক্ষক হারাবে না , নির্ঝররা পাবে অনন্তকাল ভার্সিটিতে পড়াশোনার সুযোগ ।



১৯ ডিসেম্বর সকালে জানালা খুলে গভীর ভাবে শ্বাস নেবে এই সব শিশুরা , সমস্বরে বলে উঠবে ..................."সুপ্রভাত বাংলাদেশ"


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৩১
৫৩টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×