somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিয়ান'আনমেন রক্তক্ষয়ের ২০ বছর : কি ঘটেছিল তখন ?

০৩ রা জুন, ২০০৯ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৮৯ এর বসন্তে কম্যুনিস্ট চীন প্রথমবারের মত গণতন্ত্রের দাবীতে প্রবল গণবিক্ষোভের মুখোমুখি হয় । ১০ লক্ষাধিক ছাত্র এবং কর্মী বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্র তিয়ানমেন স্কোয়ারে অবস্থান নেয় । ৬ সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ আন্দোলন চলার পর ৩রা এবং ৪ঠা জুন সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের বিপুল রক্তক্ষয় এবং গণহত্যার মাধ্যমে বিক্ষোভ দমন করা হয় ।

যেভাবে শুরু (১৫ এপ্রিল,১৯৮৯):


(কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক প্রধান হু ইয়াওবেং এর মৃত্যুতে যেন সংস্কারের শেষ আশারও মৃত্যু ঘটল)

অসন্তোষ প্রথম দানা বাঁধে ১৫ এপ্রিল , ১৯৮৯ এ । কমুনিস্ট পার্টির সাবেক সংস্কারপন্থী প্রধান হু ইয়াওবেং সেদিনই মৃত্যুবরণ করেন । সংস্কারপন্থীদের কাছে এই মৃত্যু ছিল বিরাট এক ধাক্কা । হাজার হাজার শোকার্ত সংস্কারপন্থী বেইজিংয়ের তিয়ানমেন স্কোয়ারে সমবেত হয় ।

নীরবতা ভেঙে স্লোগান :
১৮-২১ এপ্রিলের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে চীনের অন্যান্য শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিক্ষোভকারীরা দ্রুত সংস্কার , বেতন বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তার দাবীতে স্লোগান দিতে শুরু করে ।

২২ এপ্রিল , দাবী দাওয়া উথাপন :


(২০০৪ সালে তোলা তিয়ানমেন স্কোয়ার)

২২ এপ্রিল তিয়ানমেন স্কোয়ারে অবস্থিত গ্রেট হল অব দ্যা পিপলে অনুষ্ঠিত হয় হু ইয়াওবেং এর শেষকৃত্য । তিয়ানমেনে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে । নগর পরিষদের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে শাস্তির সম্মুখিন হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়। সতর্কতা অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবীর তালিকা প্রকাশ করে এবং চীনা প্রধানমন্ত্রী লি পেং এর সাথে দেখা করার অনুমতি চায় । চীনা কর্তৃপক্ষ এ দাবী নাকচ করে দেয় ।

২৬ এপ্রিল , রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ , উত্তেজনা বৃদ্ধি :


(পিপলস ডেইলির সম্পাদকীয়র প্রতিবাদ করল ছাত্ররা,২৭ শে এপ্রিল)

২৬ এপ্রিল রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত দ্যা পিপলস ডেইলি , বিক্ষোভকারীদেরকে বিশৃংখলা সৃষ্টি এবং কমিউনিস্টি চায়নার পতনের ব্যাপারে অভিযুক্ত করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে , যাকে মনে করা হয় চীনের তৎকালীন অঘোষিত রাষ্ট্রপ্রধান দেং জিয়াও পেং এর পরোক্ষ মতামত। এ ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় ।

মে , ১৯৮৯ : সারা চীনে ছড়িয়ে পড়া অসন্তোষ


(৪ঠা মে,১৯৮৯ এর ছবি)

৪ঠা মে চীনের পাঁচটি বড় শহরে একযোগে শুরু হয় ৪০ বছরের মাঝে বৃহত্তম ছাত্র বিক্ষোভ। একইদিনে কমুনিস্ট পার্টি প্রধান জাও ঝিয়াং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বিক্ষোভ কয়েকদিনের মাঝেই প্রশমিত হয়ে যাবে ।

গর্বাচেভের সফর : বিব্রত চীন সরকার
সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের চীন সফরের প্রাক্কালে ১৩ই মে তিয়ানমেনে শুরু হয় গণঅনশন । গণঅনশন জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক সারা ফেলে দেয়।

১৫ মে গর্বাচেভ চীন সফরে আসেন। এ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের মাঝে ৩০ বছরব্যাপী শীতল সম্পর্কের অবসান ঘটানো । বিক্ষোভকারীরা তিয়ানমেন স্কোয়ারে অবস্থান নেয়ার প্রেক্ষিতে গর্বাচেভের ঐতিহাসিক তিয়ানমেন স্কোয়ার এবং ফরবিডেন সিটি পরিদর্শন বাতিল হয়ে যায় । প্রচন্ড বিব্রতকর এই ঘটনা চীনা সরকারকে প্রবলভাবে ক্ষুদ্ধ করে তোলে ।

১৯ মে , ১৯৮৯ : জাও ঝিয়াংয়ের প্রথম এবং শেষ


(এসেছিলেন বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে,কিন্তু এই বক্তব্যের পরই হারিয়ে গেলেন কমিউনিস্ট পার্টি প্রধান জাও ঝিয়াংয়)

১৯ মে তিয়ানমেন স্কোয়ারে উপস্থিত হন কমুনিস্ট পার্টির প্রধান জাও ঝিয়াং, যিনি সংস্কারের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন।তার সাথে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লি পেং , যিনি শক্তি প্রয়োগে সমূলে বিক্ষোভ উৎপাটনের পক্ষপাতী ছিলেন । বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে জাও ঝিয়াং বলেন "আমাদের এখানে আসতে অনেক দেরি হয়ে গেছে"। এ কথাটিই সম্ভবত তার রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দেয়। ১৯ মে , ১৯৮৯ এর পর জাও ঝিয়াং গৃহবন্দী হন , ২০০৫ সালের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে আর কখনও দেখা যায়নি।

মার্শাল ল' : হার্ডলাইনে চীনা সরকার
২০ মে জারি করা হয় মার্শাল ল' । সেনাবাহিনী বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হয় , কিন্তু বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে সেনা কনভয়ের চলাচল আটকে দেয়।


(ফাইন আর্টসের ছাত্ররা স্কোয়ারে স্থাপন করে গডেস অব ডেমোক্রেসি)

২৪ মে থেকে শুরু করে ১লা জুন পর্যন্ত সেনাদের উপস্থিতিতেই বিক্ষোভ প্রবল আকার ধারণ করে । লক্ষ লক্ষ উৎসাহী ছাত্র রাস্তায় নেমে আসে। কম্যুনিস্ট পার্টি পলিটব্যুরো বিক্ষোভ দমনের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছায়।

(সমাবেশে নিজেদের দাবী ঘোষণা করছেন একজন ছাত্র )

গণহত্যা: বিক্ষোভ দমন

(সেনা চলাচলে জনগণ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে)


(ট্যাংকের সামনে ব্যারিকেড)


(সেনাদের পথরোধ করে আছে বিক্ষোভকারীরা)


(সেনাদেরকে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আহবান)

৩রা জুন চীনা গণমুক্তি ফৌজ , তিয়ানমেনের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হয় । ব্যারিকেড ভাঙতে তারা সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে ।জনসাধারণের বাধার মুখে সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার গুলিবর্ষণ করে , বিপুলসংখ্যক হতাহত হয়।


(এমন অসংখ্য লাশ পড়ে থাকে তিয়ানমেনে , যার খুব কম ছবিই প্রকাশিত হয়েছে)


(আহতদের সরিয়ে নেবার দৃশ্য)

৪ঠা জুন শুরু হওয়ার পর রাতের মাঝেই তিয়ানমেন স্কোয়ার থেকে মৃতদেহ এবং আহতদের সরিয়ে নেয়া হয় । ভোরের আলোতে শুন্য তিয়ানমেনে মৃত্যুপুরীর নীরবতা নেমে আসে । চীনা সরকার এ ঘটনাকে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অসামান্য বিজয় বলে অভিহিত করে । কিন্তু , সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাষ্ট্রীয় পিকিং রেডিও ঘোষণা করে বসে যে বর্বোরচিত কায়দায় হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়েছে । চীনা সরকার কিছু সময় পরেই রেডিওর নিয়ন্ত্রণ ।
ঘোষনা করা হয় যে বিক্ষোভে একজনও নিহত হয়নি ।


(৫ জুন , বেইজিংয়ের শূন্য রাজপথে ট্যাংকের বহর থামিয়ে দিল এক অকুতোভয় তরুণ, ১৯৮৯ আন্দোলনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবি)


(৭ জুনের ছবি, রাস্তায় কিছু সাইকেলারোহী)

হাজারের গন্ডি ছাড়িয়ে ঠিক কতজন মানুষ এ বিদ্রোহে প্রাণ হারিয়েছে , আর কতজন চীনা সরকারের রোষানলে পতিত হয় , সে সংখ্যাটি আজ ২০ বছর পরেও অজানাই রয়ে গেছে। অজানা নয় কেবল তিয়ানমেনের ১০ লক্ষাধিক মানুষের বিক্ষোভ।

সেই বিখ্যাত দৃশ্য:


সূত্র: রাশিয়া টুডে , ফ্রান্স২৪, বিবিসি
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×