কী শুনবেন সেটা একটু পরে বলছি । আগে আসল ঘটনাটা বলি।...
রিকশা করে যাচ্ছিলাম নিউমার্কেট থেকে সলিমুল্লাহ হলের দিকে । পাশে আবার সেই মিঠু । পলাশির কাছে এসে দেখি মিঠু রিক্সায় নেই । ব্যাপার কি ! কিপটুস ভাগলো নাকি ?
ততক্ষণে রিক্সাওয়ালা ব্রেক কষেছে । দৃষ্টি চলে গেছে জাদুঘরটার নিকটে ছোটখাটো একটা জটলার দিকে । জটলার মধ্যমণি আমাদের মিঠু । সাথে আরেকজন নায়িকাও আছেন । তার হাতে স্যান্ডেল ।
ভিড় ঠেলে কাছে যেতে যেতেই শুনলাম, মেয়েটি বাসের নিচে প্রায় চাপা পড়তে যাচ্ছিলো । মিঠু তাকে উদ্ধার করেছে অনেকটা নায়ক স্টাইলে । প্রতিদানে জুটেছে চড় এবং কয়েকটা জুতোর বাড়ি জোটারও সম্ভাবনা ছিলো, যদি আশপাশের লোকেরা এসে মেয়েটার ভুল ভাঙাতে সাহায্য না করতো ।
একমনে হেঁটে যাচ্ছিলো মেয়েটি রাস্তা কাঁপিয়ে । পেছন থেকে দানব সেজে আসা বাসটা যে ক্রমাগত হর্ন দিয়ে যাচ্ছে, সেদিকেই ভ্রুক্ষেপই নেই তার । হাই স্পিডি বাস । সবাই মেয়েটির ‘অন্তিম যাত্রা’র দিকে তাকিয়ে আছে । কয়েকজন ‘হা হা’ কিংবা ‘এই মেয়ে-এই মেয়ে’ বলে চেঁচালোও বটে । কিন্তু সে হয়তো ভেবেছে ইভটিজার ছেলেরা তাকে টিজ করছে, বুড়োদের ভিমরতি হয়েছে কিংবা এই অসভ্য পুরুষ সমাজটা...ছি ছি...হয়তো লিপস্টিক ধুয়ে যাবার ভয় না থাকলে একবার থুথুও ফেলতো সে । অথচ..
ড্রাইভার হার্ডলি ব্রেক কষার আগেই মেয়েটি পিষে গেছে । না, যায় নি...যেতো । যদি না মিঠু রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমে ধাক্কা মেরে মেয়েটিকে রাস্তায় ফেলে দিতো । নিজেও হুমড়ি খেয়ে পড়লো টাল সামলাতে না পেরে । মেয়েটি উঠে দাঁড়াবার ফাঁকে নিশ্চিন্তমনে চলে গেছে মরণঘাতি বাসটা । মিঠু কিন্তু ঠাস্ করে আর্তনাদ তোলা একটা চড়ের ধাক্কায় রাস্তার পিচে ওর হাতের চামড়া কতটুকু ছিলে গেলো সেটা ভালো দেখতেই পেলো না । সাথে বোনাজ পেলো রমনীমুখের ট্রাডিশনাল খিস্তি- ‘‘এই (.......) বাড়িতে মা-বোন নেই তোর ?’’ কে মারলো চড়টা সে বিষয়ে আর সন্দেহ রইলো না মিঠুর ।
‘‘আমি..আমি’’ করে তুতলে তুতলে জবাব দেবার আগেই আরো একবার স্যান্ডেলের আঘাত হয়তো পড়তো ওর হৃদয় ছাড়া যে কোন অংশে । যদি এরই মধ্যে লোকজন জড়ো না হতো আর সেখানকার সদাশয় ফলের দোকানি ‘মুরুব্বি’ মেয়েটিকে এই বলে সম্বোধন না করতেন- ‘তুমি বেঁচে আছো মা ? আমরা তো ভেবেছিলাম...’’
এতক্ষণে মেয়েটি ‘স্যরি’ বলার মতো একটা ‘অজুহাত’ হয়তো পেয়ে গেছে । আমি মিঠুকে ভিড়ের ভেতর দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে এলাম বাইরে । মানুষের চেঁচামেচি ক্রমশ বাড়ছে । আসার মুখে এইটুকু শুনতে পেলাম কেবল- “আপনিও ছেড়িডারে একটা থাবর দিয়া কন স্যরি..”
মিঠু স্তব্ধ । আমি সান্ত্বনা দেবার ছলে বললাম, মাইন্ড করিস না দোস্ত । মনে কর থাপ্পরটা তোর মা দিছে । এতক্ষণে মিঠু ওর চোখের পানি ফেলার একটা কারণ খুঁজে পেলো । আমারও মনে পড়লো, হায় হায় কী বললাম আমি ! ওর তো মা নেই...
শোনেন, আপনারা যদি মা-বোনের জাত হয়ে থাকেন, তাহলে আমরাও বাপ-ভাইয়ের বাইরে নই...আমরা যেমন মা বললে ডাক দিয়ে অন্তর যতটুকু ঠাণ্ডা করি । তেমন বাবা বলে ডাক দিলে কি ঠিক ততটুকু অশান্তি লাগে আপনাদের ? নাকি আপনারা পৃথিবীতে বাপ ছাড়াই...মাফ কর খোদা !
এইবার দেখেন ঘটনার দিন যে ব্লগ লিখেছিলাম তাতে কতিপয় হিজড়ার কমেন্ট---হ্যালো আপুরা, যখন ‘মা-বোন’ বলে চটে ওঠেন, তখন বাপ-ভাইয়ের হিসাবটাও মাথায় রাইখেন...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




