somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রঙ দে বাসন্তির সেই নায়কের জন্মদিন আজ

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভারতীয় মুসলিম যাকে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়।

তিনি কিন্তু ভালো উর্দু কবিতাও লিখতেন 'ওয়ার্সি' এবং 'হযরত' ছদ্মনামে । এবং এই সূত্রেই ১৯২২ সালে, অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে, শাহজাহানপুরে সভায় পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিলের সঙ্গে পরিচত হন এবং ভালো বন্ধুতে পরিণত হন। মাঝেমাঝেই তিনি লিখে বিসমিলকে দেখাতেন, বিসমিল তা সংশোধন করতেন। এভাবেই দুই কবির কবিতা এতোই পরিচিতি পায় যে, তাদের কবিতা ছাড়া ব্রিটিশ বিরোধী কনফারেন্স জমতোই না ।

আর দু’জনের ফাঁসিও হয় একই কারণে ।

তিনি বুঝেছিলেন অহিংসার নরম কথায় স্বাধীনতা আসবে না । তাই বিপ্লবের পথ ধরে প্রথমে বিখ্যাত কাকোরি ট্রেন ডাকাতিতে সম্পৃক্ত হন । তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সরকারি অর্থ লুট করার এবং সেই টাকা সেই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার যারা প্রতিনিয়ত ভারতকে ৩০০ বছরের অধিককাল ধরে লুট করছে।
ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবীদের সাহস দেখে অবাক হয়েছিলো। ভাইসরয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে নিয়োগ করে মামলাটি তদন্ত করবার জন্যে। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫ তারিখ সকালবেলা একই সাথে পণ্ডিত রামপ্রসাদ বিসমিল এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও কিন্তু কেবল তিনি ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যার খোঁজ পুলিশ পায় নি। তিনি লুকিয়ে বিহারের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে দশ মাস কাজ করেন। চেয়েছিলেন বিদেশ গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে মূর্ত সহায়তা করবেন এবং জন্য লালা হর দয়ালের সাথে সাক্ষাত করবেন । এ-জন্য গোপনে দিল্লি যান এবং এক পাঠান বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় গ্রেপ্তার হন ।

তৎকালীন পুলিশ সুপার তাসাদ্দুক হোসেন পণ্ডিত রামপ্রসাদের বিরুদ্ধে তাকে উত্তেজিত করতে চেষ্টা করলে কিন্তু তিনি দৃঢ়চিত্তে বলেন— Khan Sahib, I know Pandit Ram Prasad better than you, he is not such a person as you say but even if you are right then I am also quite sure that as a Hindu, he will be much better than British India to whom you are serving like a servant.


জেলে থাকতে তিনি প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করতেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে— বুধবার, ফাঁসির চারদিন আগে, দুজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা যেখানে তাকে নিঃসঙ্গ সেলে দেখতে আসেন। তিনি তখন নামাজে ছিলেন। একজন কর্মকর্তা বিড়বিড় করে বলে, ‘আমি দেখতে চাই যখন এই ইঁদুরটিকে ঝোলানো হবে তখন তার কতটুকু বিশ্বাস থাকে।’ তিনি কিন্তু নামাজে ব্যত্যয় করলেন না । শেষে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বাতাসের মতো মর্মর শব্দ করতে করতে বেরিয়ে যায়।

১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সোমবার, তাকে দুই স্তর উপরে বেদিতে নেয়া হয়। শিকল থেকে মুক্ত করার পর তিনি ফাঁসির দড়ির কাছে যান এবং সেটিকে চুমু খেয়ে বলেন— আমার হাত কোনো মানুষ হত্যা করেনি। আল্লাহ্‌ আমাকে ন্যায়বিচার দেবেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া ২ আগস্ট ২০০৪ সালে আশফাককে নিয়ে Daredevilry of sons of the soil শিরোনামে যেই ফিচার ছেপেছে, তার শুরুটা এমন— "La ilahi il Allah, Mohammed Ur Rasool Allah"... With these words Ashfaqullah laid down his life for his motherland.

হ্যাঁ, তিনি আশফাকউল্লহা খান । ১৯০০ সালের এই দিনে (২২ অক্টোবর) তার জন্ম হয় ভারতের উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে। অর্থাৎ শাহাদাতের সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ২৭ ।

তিনি ছিলেন সামরিক দিক দিয়ে বিখ্যাত পরিবারের সন্তান । তার অনেক আত্মীয় ব্রিটিশ ভারতের পুলিশ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ কারাগারের গেইটের নাম রাখা হয়— অমর শহিদ আশফাকউল্লা খান গেইট । প্রখ্যাত হিন্দি কবি ‘অগ্নিবেশ শুক্লা’ ‘আশফাক কী আখিরি রাত’ নামে একটি চমৎকার কবিতাও লিখেছেন ।

তবে আপনারা অনেকেই আমিরখানের ঐতিহাসিক ছবি ‘রঙ দে বাসন্তি’ দেখেছেন । এই ছবিইতেই তিনি ও তার সহকর্মীদের চিত্রিত করা হয়েছে। তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুনাল কাপুর।


ছবি ও তথ্যসূত্র :
১. নিখাত ইকবাল লিখিতি ‘গ্রেট মুসলিমস অব আনডিভাইডেড ইন্ডিয়া’
২০০৯, কল্পনাজ পবলিকেশন্স দিল্লি, পৃ. ৬২-৬৩
২. টাইমস অব ইন্ডিয়া, Daredevilry of sons of the soil
৩. বিদ্যারম্ভ শর্মা সংকলিত ‘যুগ কি দেবতা : বিসমিল আওর আশফাক’, পৃ. ২১০
৪. Encyclopaedia of the Indian Biography: Nagendra Kr. Singh.
৫. RESEARCH REFERENCE AND TRAINING DIVISION
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×