somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু ১০ মিনিটের জন্য...

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জনাব উবায়দুর রহমান খান নদভী বেশ কিছু দিন আগে সাপ্তাহিক দেশ-দর্শন পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন— আলেমদের ঐক্য মাত্র ১০ মিনিটের ব্যাপার ।

পত্রিকার সম্পাদককে একবার হাতেনাতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম— আপনি কেনো তাকে উল্টো প্রশ্ন করলেন না যে, যেখানে রাস্তার জ্যামে দৈনিক বাংলাদেশের মানুষের ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, সেখানে আপনাদের সময়ের কি এতোই মূল্য যে, মাত্র ১০ মিনিট সময় বের করতে পারছেন না?

কয়েকদিন আগে দেখলাম, শায়খ মামুনুল হক সাহেবও ঐক্য নিয়ে জোর গলায় আহ্বান জানিয়েছেন । যদিও ইসলামী ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক তারা, যাদের একাংশ (দুঃখিত, ইসলামী ঐক্যজোটও এতোটা বিভক্ত যে, সে অংশে মামুন সাহেবরা আছেন কি না নিশ্চত নই) সেদিন ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে ‘বিদেশ থেকে টাকা এনে লুটপাটকারীদের’ বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন । বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন ‘মানবতার মূর্তপ্রতীক’ এবং জোর গলায় বলেছেন ‘আওয়ামীলীগ এলে ইসলামের কল্যাণ হয়’ ।

তাদের প্রথম দাবিটা যে ইতোমধ্যেই পূরণ হয়েছে, তা খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারির মধ্য দিয়ে পরিষ্কার । যদিও এদেশের মানুষ ধরেই নিয়েছে হুজুর মানেই বিএনপি, হিন্দু মানেই আওয়ামীলীগ এবং কম্যুনিস্ট মানেই নাস্তিক । ফলে গতকাল দেখলাম, লীগের একজন নেতা ঐক্যজোটের ঘোর সমর্থক জনৈক আলেমকে টিপ্পনী করে বলছেন— আপনাদের নেত্রীকে তো জিপিএ ৫ পাওয়াই দিলাম ।

এই টিপ্পনী হলো আলেমদের অনৈক্যের একটি সাধারণ অপমানের ধরন । যদিও ‘খালেদা জিয়া জেলে গেলেই কি আর না গেলেই কি’ এমন একটা ভাব দুদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে আলেমগণের কথাবার্তায় । উপায় নাই তো । কে জানি খালেদা জিয়া ও সাঁপের ছবি দিয়ে পোস্ট করেছে—কে বেশি ভয়ঙ্কর । একজন কমেন্ট করেছে—শেখ হাসিনা । তাকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে । সুতরাং সবাই চুপ মেরে আছে ।

বিখ্যাত এক খতিব সাহেব গতকাল জুমার বয়ানে শতাধিক বস্তা সিমেন্ট কালেকশন করেছেন । জুমার পরে তাকে ধরে জিজ্ঞেস করলাম—আমাদের জন্য কিছু বলুন । জিজ্ঞেস করলেন—কী সমস্যা । বললাম—আমরা ভয় পাচ্ছি, প্রচণ্ড ভয় । শাহবাগ গণজাগরণের পরে যেমন ভয় জেঁকে উঠেছিলো, তেমন ভয় । হেফাজতের উত্থানে যদিও সেই ভয় কিছুটা কেটেছিলো, কিন্তু ৫ মে’র পরে আবারও আমরা ভয় পেতে শুরু করেছি ।

বললাম—পল্টন কেন্দ্রিক আমাদের একটা পরিমণ্ডল ছিলো, এই ভয়েই সেটা ভেঙে গেছে । আমরা পাঁচটা বন্ধু কোথাও বসে বন্ধুর মতো আড্ডাও দিতে পারি না, ভয় পাই । গত কয়েক বছর বইমেলা থেকে অহেতুক কয়েকজন মাদরাসা ছাত্রকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে । তাই এবার বইমেলায় যেতেও ভয় পাচ্ছি । কাল বিকেলে বাসায় ফিরতে গিয়ে দেখি রাস্তায় লীগের ছেলেরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে, কোনো সংবাদে-নিউজে তাদের ছবিও আসে নাই । সম্ভত: সাংবাদিকরাও প্রচণ্ড ভয়ে আছে ।

বললাম—শায়খুল হাদিস ও মুফতি আমিনী সাহেবকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, সে-সময়ও আমরা ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই ভয়ের সাথে গর্ব জড়িয়ে ছিলো । কেননা, তাদের ঐক্য ছিলো, ফলে তাদের কথায় আমাদের আস্থা ছিলো । তাই বিবাড়িয়ার ৬ শহিদ ও চৌধুরিপাড়ার শহিদি মসজিদের কথা এখনও আমরা বুক ফুলিয়ে বলি । কিন্তু এখন আমরা কার প্রতি আস্থা রাখবো ।

বললাম—কিন্তু এখন আমরা ভয়ের সাথে লজ্জা পাচ্ছি । ভিক্ষাবৃত্তির লজ্জা, হুজুরে হুজুরে চুলাচুলির লজ্জা, ৫ মে’র পরে প্রকাশ্যে খুনীদের ‘বন্ধু’ বলার লজ্জা, কওমি সনদপ্রাপ্তি আমাদের লজ্জা কমায়নি, বরং তাদের ‘মেহমানদারি’ সেই লজ্জা আরও বাড়িয়েছে । এখন আবার নতুন করে তাদের ‘মনবতার মূর্তপ্রতীক’ বলা, আর তাদেরকে ‘ইসলামের কল্যাণকারী’ বলার পরে আমরা এখন মুখ দেখাই কোথায়?

আরও বহু কথা হলো । তিনি বললেন—তোমরা এখন কী চাও? বললাম—আমরা একটা আস্থার জায়গা চাই । একটা অথিরিটি চাই, যাদের কথা আমরা নির্দ্বিধায় রেফার করতে পারবো । যাদের কথায় আমরা উঠবো-বসবো-চলবো এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ করেও মন খুলে হাসবো ।

লক্ষ লক্ষ মিনিটের বিনিময় হলেও আমরা আপনাদের সেই ১০ মিনিট সময় চাই...নইলে একদিন আমাদের লজ্জা কেটে যাবে । তারপর...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×