somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প- এক দুপুরের মেয়ে

১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কয়েকদিন ধরেই সামির মনটা ভাল যাচ্ছিল না। চাওয়া পাওয়ার অসম সমীকরণ মাথায় ভর করে সব এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছিল। পেশায় চিকিৎসক হলেও লেখালেখি করতে তার ভীষণ ভাললাগে। এতেও মন বসছিলনা। বসে বসে শুধু শূন্যতার প্রহর গুনছিল। এমন দিন হরহামেশাই তার জীবনে এসেছে। তাই এ নিয়ে সে খুব একটা উতকন্ঠিতও নয়। ভাবছিল স্থিরতার এই জীবনে হয়তোবা নতুন কিছুর দেখা পাবে। হলোও তাই।

এমনই দিনে হঠাতই একদুপুরে আচমকা এক মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। সে জানে এসম্পর্ক এক দুপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এর বেশি কিছু চাওয়ারও সুযোগ নেই। সিগারেটটা ছেড়ে দিয়েও সে ছাড়তে পারছিলোনা। মার্ক টোয়েনের মত সে ১০০ বারের অধিক সিগারেট ছেড়েছে অল্প কয়েক বছরেই। আসলে এক্ষেত্রে সামি মার্ক টোয়েনের চেয়েও এগিয়ে। টোয়েন হয়তো সারাজীবনে শতাধিকবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে বিগত সাত বছরেই শতাধিকবার চেষ্টা করেছে। যখন বুঝতে পেরেছে সে সিগারেটে আসক্ত তখন থেকেই ছাড়ার চেষ্টা চলছে অবিরাম। সাফল্য যে আসেনি তা নয়। তিন মাসেরও অধিক সময় পর্যন্ত সিগারেট ছেড়ে থেকেছে। কিন্তু ভূল জীবন দৃষ্টির জন্য এখনো পর্যন্ত সফল হয়ে উঠতে পারেনি। সিগারেট ছাড়ার পর তার আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত তৈরী হয়। মনের মধ্যে অতীত জীবনের চিন্তা ভর করে। মনে হয় সে তার মাকে জিতিয়ে দিতে গিয়ে নিজেই পরাজিত হয়েছে। কিছু অসম সম্পর্কের চিন্তাও মস্তিষ্ককে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।

শুক্রবার ক্লিনিকে বেশ কিছু আল্ট্রাসাউন্ড হয়। যথারীতি এলোমন নিয়ে সে আল্ট্রাসাউন্ড করছিলো। আগের গাইনি চিকিৎসক আসা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পাশের উপজেলা থেকে ইয়াং একজন গাইনি চিকিৎসক নিয়ে আসে। সদ্য বিসিএসে জয়েন করা এবং সদ্য গাইনিতে পার্ট-১ করা। অনেক্ষণ পর তার সাথে সামির পরিচয় হয়। বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। মেয়েটা ওসমানী থেকে পাশ করা তার ইমিডিয়েট জুনিয়র। সামির বদঅভ্যেসগুলোর মধ্যে একটা হলো মেডিকেলের কোন জুনিয়রকে খুব বেশিক্ষণ আপনি করে বলতে পারেনা। কিছুক্ষণ কথা বলার পর থেকেই তুমি করে বলা শুরু করে। মেয়েটা নম্র, ভদ্র, মাথায় স্কার্ফ পরে। যদিও সে মোটেও ধার্মিক নয় তারপরও মেয়েটির ধার্মিকতা তাকে মুগ্ধ করে। মেয়েটি যোহরের নামায আদায় করে। তারপর আবারও কথা হয়। দেখতেও মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর। এ পর্যন্ত ওর প্রতি সামির কোন অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি। সে ধরেই নিয়েছিল মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কারণ মেয়েটি ২০১১ তে পাশ করেছে। এরই মধ্যে বিসিএস এফসিপিএস হয়েছে। তাই সামির মনে হয়েছে বিয়ে না হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তাই সে অবচেতন মনেই জিজ্ঞেস করে বসে, "আপু তোমার হাসবেন্ড কি করে?" তার সকল ধারণা স্তব্ধ করে দিয়ে মেয়েটি জবাব দিল তার বিয়ে হয়নি। সে স্তম্ভিত হয়ে গেল। সম্বিত ফিরে আসতেই বললো, "আসলে আমি অনেক আগেই বিয়ে করেছিতো তাই তোমার ক্ষেত্রে একই রকম ভেবেছিলাম।"

হঠাতই সে অনুভব করল মেয়েটির প্রতি একটা প্লেটোনিক ভালোবাসা তার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো সামির মনে হলো সে-ই তার বউ হওয়ার মত একমাত্র মেয়ে। একমুহূর্তের মধ্যে ভাবনার ডালপালা তৈরী হল। সে বিয়ে করেছে চার বছরেরও বেশি আগে। অনেক টানাপোড়নের মধ্যেও সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে শুধু মেয়েটির কোন দোষ নেই বলে। সম্পর্কোচ্ছেদ করলে তার মা পরাজিত হবে সেটাও একটা কারণ অবশ্য।

সবকিছু ভেবে ভাবনার পাখা গজানোর আগেই সামি তার মুন্ডুপাত করলো। মেয়েটিকে নিয়ে সে খেতে গেল। কি ভেবে যেন মেয়েটিকে ভাত নিজ হাতে বেড়ে দিল। তারপর তরকারি এবং সবশেষে গ্লাসে পানিটাও ভরে দিল। মনে হল এ সময়টুকুই তার জীবনের সেরা সময়। এরকম সময় আর কখনো আসেনি, আর আসারও সম্ভাবনা ক্ষীণ। খাওয়া শেষে একসাথে ক্লিনিকে ফিরে এলো।

মেয়েটি ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে গেল। কিন্তু বারবার শুধু সামির তার কথাই মনে পড়তে থাকলো। মনে হলো ওর চেয়ে ভাল মেয়ে পৃথিবীতে আর হয়না। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস কিছুই করার নেই। মেয়েটি চলে যাওয়ার পর থেকে শুধু সেই সময়টুকুর আবেশ তাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখলো। অজান্তেই মনের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চুর 'এক বিকেলের মেয়ে' গানটির কথা বাজতে শুরু করে। বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে সে দেখে গানের সাথে সবকিছুই মিলে গেছে। মেয়েটি সামির এক দুপুরের মেয়ে। তাকে নিয়ে ভেবে কিছুই হবেনা। শুধু তাকে কাঁদিয়েই যাবে। শুধু বিপন্ন বিস্ময় আর সংশয়ই খেলা করবে। অণুগল্পের মত রয়ে যাবে আজীবন-যার কোন সমাপ্তি রচিত হবেনা। সে কোনদিন জানবেও না- তাকে নিয়ে কেউ এতোটা গভীরভাবে ভেবেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০৭
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×