somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সায়েন্স ফিকশন - স্প্লাটুজেনাস গ্রহের একজন কেন্টর – সেরিনা - পর্ব - ০৩ (শেষ পর্ব)

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের দুইটি পর্ব -
সায়েন্স ফিকশন - স্প্লাটুজেনাস গ্রহের একজন কেন্টর – সেরিনা - পর্ব - ০১
সায়েন্স ফিকশন - স্প্লাটুজেনাস গ্রহের একজন কেন্টর – সেরিনা - পর্ব - ০২

এর বেশ কিছুদিন পর -

সেরিনা তার লেখার টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছিল । তার যখন অবসর থাকে, তখন সে টুকটাক লিখতে পছন্দ করে । এই শখটা সে পেয়েছে মনুষ্য জাতির ইতিহাস ঘেঁটে । হঠাৎ-ই সেরিনার ফ্ল্যাটের দরজায় নকের আওয়াজ হলো । এই নকের আওয়াজ শুনে জিনা ও ব্লাটনিস দরজার দিকে এগিয়ে গেলো । তবে সেরিনা তাদেরকে দরজা খুলতে নিষেধ করলো । আগে সে নিশ্চিত হতে চায়, কারা এসেছে । তাই সে তার রেনালয়েড অন করলো । রেনালয়েড দিয়ে সে তার দরজার সামনের ভিজুয়াল সিকিউরিটি ক্যামেরা অন করলো । সেখানে কিছু রবোটিক হেল্পার দাড়িয়ে আছে । তাদের বডির মেশিনারি কালার দেখেই সহজে বুঝা যাচ্ছে তারা গৃহস্থালি রবোটিক হেল্পার নয় । সেরিনা জুম করে দেখতে পেলো, ওদের হাতে কোন অস্ত্র আছে কিনা । কিন্তু অস্ত্র নেই দেখে আশ্বস্ত হলো একটু পরেই । সেরিনা ক্যামেরার পাশের সেন্সরের অডিও মোড চালু করলো । এরপর সে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, তারা কেন এসেছে ? তাদের মধ্যেই একজন জবাব দিলো, তার জন্য দনারাল হাউজ থেকে একটি জরুরী বার্তা নিয়ে এসেছে তারা । আর সকলেই দনারাল হাউজের কর্পোরেট হেল্পার । সেরিনা পুরোপুরি আশ্বস্ত হয়েই দরজা খুলালো ব্লাটনিস-কে দিয়ে । মোট তিনজন রবোটিক হেল্পার সেরিনার ঘরে ঢুকলো । তারা ব্লাটনিসের হাতেই একটি চিপ দিলো । একটি মাইক্রো-চিপ । স্প্লাটুজেনাস গ্রহের কোন বার্তা আদান-প্রদান হয় মাইক্রো-চিপের মাধ্যমেই । সেরিনা ব্লাটনিসের কাছ থেকে চিপটি নিয়ে তার রেনালয়েডে প্রবেশ করলো । হ্যাঁ, সেটিই হয়েছে, যা সম্পর্কে তার কোন ধারনাই ছিল না । তাকে দনারাল হাউজের পঞ্চম লেভেলের হেডের সেক্রেটারি পদ থেকে ডিমোশন দিয়ে অষ্টম লেভেলের হেডের সেক্রেটারি করে দেওয়া হয়েছে । সেরিনা ভেবেই পেলো না, তার দোষ কি । কিন্তু সে কাকে জিজ্ঞেস করবে ? তাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ারও তো কেউ নেই । সে এমন কেউ না, যে উচ্চপর্যায়ে গিয়ে কৈফিয়ত চাইতে পারে । রবোটিক হেল্পারগুলো আবার সেই মাইক্রো-চিপ ফেরত নিয়ে বেরিয়ে গেলো । সেরিনা হতাশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো । এই খবরটি যদি সে দুঃস্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিতে পারতো, তবে কতই না ভালো হতো !!!

ঠিক কতক্ষণ ঘুমানোর পর টের পেলো, তাৎক্ষনিকভাবে সেরিনা এইটা বুঝতে পারলো না । এরপর ঘড়ি দেখেই আশ্বস্ত হলো, ওহ, বেশ অনেকক্ষণই ঘুমিয়েছে সে । ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই সে জেনিলিকে ফোন করলো । জেনিলিই তাকে জানালো, কার্লেরও ডিমোশন হয়েছে । তবে কার্ল নাকি তাকে জানিয়েছে দনারাল হাউজ থেকে নাকি আজকে পুরো গ্রহে ডিমোশন অর্ডার পাশ হয়েছে । আর এর ভুক্তভোগী হয়েছে হাজার হাজার কেন্টর । কিন্তু সেরিনা মনে মনে ভাবতে লাগলো, যেখানে এখনও নির্বাচন হয়ই-নি, সেখানে এতগুলো ডিমোশন অর্ডারের অর্ডিন্যান্স তাহলে পাশ করলো কে ? সেরিনা আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলো । তাহলে তো কেউ একজন নির্বাচনের আগেই নিজের ক্ষমতা জাহির করছে । কারণ নির্বাচনের আগে তো দানারাল হাউজের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা কিন্তু এমন কোন জরুরী অর্ডিন্যান্স পাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তো তারাও রাখেন না । তবে কি নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সাজানো কোন ঘটনা ? কেন্টর-দের রাজা কি তবে গোপনে ঠিক হয়ে গেলো ? তবে কি নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র চলছে ? আর দনারাল হাউজের প্রতিটি লেভেলের হেড-রাও কি এই ষড়যন্ত্রে নাম লেখালো ? যদি সত্যি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে কেন্টর-দের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত কোন হুমকির মুখে । সেরিনা ভেবেই চলছে, কিন্তু এত বড় একটি ষড়যন্ত্রের জট তার একার পক্ষে খুলা সম্ভব নয়, এটা সেও জানে ।

সকলের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বেলায়েক হিউয়ান-ই হলো কেন্টর-দের রাজা । তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে তিনি কয়েক লক্ষ ভোট বেশি পেয়ে জিতে গেছেন । অবশ্য বেলায়েক হিউয়ানের বিজয় অত্যন্ত সহজভাবেই হয়েছে । কারণ তার এই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী রুইনি সেজার্ট নির্বাচনের দুইদিন আগেই বেলায়েক হিউয়ানের সাথে জোট বেধে ফেলে । তাই বেলায়েক হিউয়ানের বিজয়ে পরেও তিনি পরাজিত হননি । তাকে দনারাল হাউজের সেকেন্ড লেভেলের হেডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ তার অবিশ্বাস্য প্রমোশন হয়েছে । সেরিনা, কার্ল ও জেনিলি একসাথেই নিউজ দেখছিল কার্ল ও জেনিলির ফ্ল্যাটে বসে । নিউজের রুইনি সেজার্ট-এর যে ইন্টার্ভিউ-টি দেখালো, সেখানে রুইনি সেজার্ট অতিরিক্ত মাত্রায় খুশি । এখন তাদের তিনজনের কাছে পরিস্কার কেন, তিনি ফিউমোরাস জেনিনির মৃত্যুর পরেও বিচলিত ছিলেন না । তবে তিনি যে এমন কিছু করতে পারেন, তা এই তিনজনের কারোরই ধারণা ছিল না ।

আচ্ছা, রুইনি সেজার্ট যে পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন, তিনি কি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে জোট বাধার এমন অবিশ্বাস্য একটি সিদ্ধান্তের পক্ষেও পরিবর্তনের সাফাই গাইবেন ? জেনিলির কৌতূহলী প্রশ্ন, সেরিনা ও কার্ল দুইজনকেই উদ্দেশ্য করে । সেরিনা ও কার্ল দুইজনই জানে, জেনিলি এই প্রশ্নটি অত্যন্ত বিরক্ত ও রাগ হয়েই করেছে । তবে কার্ল একটি যুক্তিযুক্ত উত্তর দেবার চেষ্ঠা করলো । দেখো, রুইনি সেজার্ট নিজেও জানতো যদি সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো, তবে তার মৃত্যুর অনেক সম্ভাবনা ছিল ।

ফিউমোরাস জেনিনির এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু, হঠাৎ-ই ডিমোশন অর্ডিন্যান্স পাশ ইত্যাদি সবই ইঙ্গিত ছিল বেলায়েক হিউয়ান নির্বাচনে পুনরায় জয়ের জন্য কতটুকু মরিয়া ছিল । তাছাড়া রুইনি সেজার্ট নিজেও একজন তরুণী, তাই তার মধ্যে এত অভিজ্ঞতাও ছিল না যে রাজনৈতিক জীবনে এত ঝামেলার মাঝেও কিভাবে সামনে এগোতে হয় অথবা পিছিয়ে যেতে হয়, যদিও এই দুইটারই সুযোগ তার কাছে ছিল না । তাই আমার তো মনে হয়, সে নিজেকে ও নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখার জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে একরকম বাধ্য হয়েছে । কার্ল-এর এমন উত্তর সেরিনা ও জেনিলি দুইজনের কাছেই বেশ পছন্দ হলো । তবে এখন বেলায়েক হিউয়ানের রাজত্বে সকল কেন্টর-রা যে অনিরাপদ হয়ে গেলো, তার পরিস্কার উপলব্ধিই হলো এই তিন কেন্টরের ।

বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য পরেরদিনই ঘোষণা করলেন, তার নির্বাচনে জয়ের খুশিতে তিনি সকল কেন্টরদের সাথে তার রাজকীয় বাসভবনে দেখা করবেন । অর্থাৎ এই একদিন রাজকীয় বাসভবনের নিরাপত্তা শিথিল করা হবে । এই রাজকীয় বাসভবন কেন্টর-দের সকল রাজাদের জন্য বরাদ্দ থাকে । বেলায়েক হিউয়ানের দুইটি মেয়ে আছে । বেলায়েক হিউয়ান নিজে, তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এই রাজকীয় বাসভবনে উঠে গেলেন জয়ী হওয়ার পরেরদিনই । বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য তার নিরাপত্তার জন্য কোন কেন্টর-দের উপর ভরসা করেন না । তিনি তার নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি রবোটিক হেল্পারদের রেখেছেন । তাদের কাজই তাকে পাহাড়া দেওয়া । এই রবোটিক হেল্পারগুলো অবশ্য দনারাল হাউজের স্পেশাল । এই নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত রবোটিক হেল্পারগুলো শুধু স্প্লাটুজেনাস গ্রহের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকেই দেওয়া হয় । বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য দনারাল হাউজের প্রথম লেভেলের হেড হিসেবেই এগুলো আগেই পেয়েছিলেন ।

সেরিনা নিউজে এই খবরটি দেখার পর থেকেই তার ফ্ল্যাটের করিডরে দাড়িয়ে এটা নিয়ে ভাবতে লাগলো । বেলায়েক হিউয়ানকে হাতের কাছে পাওয়ার এই শেষ সুযোগ । এরপর তিনি সকল কেন্টর-দের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবেন । আর হনুমিনাসদের ইতিহাসে এরকম কেউ পরপর দুইবার রাজা হতে পারেনি । তাই স্বভাবতই বেলায়েক হিউয়ানকে আজীবনই একরকম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া হবে । তাই যদি কিছু করতে হয় তাহলে সেটা আজই । কিন্তু এই কাজটি তো তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয় । আবার সে যে কারও কাছে সাহায্য চাবে, সেটাও তো একটু কষ্টকর । কারণ যদি তার এই পরিকল্পনার কথা কেউ জেনে ফেলে আর সেটি যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কানে চলে যায় তবে নির্ঘাত তাকে মেরে ফেলা হবে । তবুও সে অনেক সাহস সঞ্চার করে, জেনিলিকে ফোন করে তার পরিকল্পনার কথা বললো । জেনিলি যে একটুও অবাক হয়নি কথাগুলো শুনে, সেটা বুঝতে পেরে সেরিনা অবাক হলো । ভালো কাজ করেছিস, আমাকে বলে, জেনিলি বললো সেরিনাকে । আর কাউকে বলিসনি তো ? না, আর কারও সাথে বলার সাহস নেই আমার । সেরিনা উত্তর দিলো জেনিলিকে । গতকাল কার্ল এই ব্যাপারটি নিয়ে আমার সাথে কথা বলছিল । কার্ল নিজেও নাকি বেলায়েক হিউয়ানের মৃত্যু চায় । আমিও ওর সাথে সহমত পোষণ করেছিলাম । তবে এই কাজটি কার্ল, তোর আর আমার পক্ষে করা সম্ভব নয় । এর জন্য প্রয়োজন একটি সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপ । আচ্ছা, তুই এখনই পারলে আমার ফ্ল্যাটে চলে আয় । এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি । জেনিলি এই কথাগুলো বলেই ফোন রেখে দিলো । সেরিনা একচোট ভেবেই তৈরি হয়ে নিলো । আর কিছুক্ষণ পরেই সে জেনিলি ও কার্ল-এর ফ্ল্যাটে গিয়ে পোঁছালো ।

সেখানে সে দেখতে পেলো, কার্ল ও জেনিলি দুইজনই আছে । কার্ল-ই বললো আগে । দেখো, সেরিনা তুমি যে কাজটি করার কথা ভাবছ সেটি অত্যন্ত বিপদজনক ও মারাত্মক ঝুঁকির কাজ । হতে পারে এই কাজটি করতে যেয়ে তুমি সফল না হলে কিন্তু পরবর্তীতে এতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তোমাকে মেরে ফেলার আদেশ হতে পারে । সেরিনা বললো, কিন্তু এই কাজটি তো আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয় । হ্যাঁ, সেটা আমিও জানি । তাই আমি পেরিসিকের সাথে কথা বলেছি একটু আগে । কার্ল উত্তর দিলো । পেরিসিক কে ? সেরিনা কৌতূহলী হয়ে কার্ল-কে জিজ্ঞাসা করলো । পেরিসিক আমার বন্ধু । ও দনারাল হাউজে স্পেশাল সিকিউরিটি রবোটিক হেল্পার সেকশনের হেডের সহকারী । ওর সাথে নির্বাচনের আগেও আমার কথা হয়েছিল । সেও জানতো বেলায়েক হিউয়ান এইবার ক্ষমতায় আসলে কেন্টরদের ভবিষ্যৎ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে । হয়তো সাপার্ট-রা এই গ্রহ পুরোপুরি দখলও করে ফেলতে পারে তার সহায়তায় । তাই বেলায়েক হিউয়ানকে মেরে ফেলার যে কোন পরিকল্পনায় সে সাহায্য করতে প্রস্তুত । তাহলে এখন কি আমাদের এই পেরিসিকের সাথে দেখা করতে হবে ? সেরিনা জিজ্ঞেস করলো কার্ল-কে । হ্যাঁ, আমি অবশ্য প্রথমে ভেবেছিলাম ওকে এখানেই ডেকে নেবো কিন্তু তাহলে অনেকেই সন্দেহ করতে পারে । তাই এখন আমরা তিনজনই পেরিসিকের ফ্ল্যাটে যাবো । পেরিসিক অবশ্য ওর ফ্ল্যাটে একা থাকে না । ওর মেয়ে পার্টনারও থাকে । আমার পেরিসিকের সাথে কথা হয়েছে । সে তার মেয়ে পার্টনারকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেবে আমাদের জন্য । এরপর ওর সাথে আমরা পরিকল্পনার যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো । সেরিনা, কার্ল ও জেনিলি তখনই পেরিসিকের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পেরিসিকের ফ্ল্যাটে পোঁছালো । কার্ল-এর কথামতই দেখা গেলো, পেরিসিকের মেয়ে পার্টনার এখন ফ্ল্যাটে নেই । সে বাইরে গেছে । পেরিসিক হাসিমুখেই তাদেরকে অভ্যর্থনা জানালো ।

কার্ল, জেনিলি ও সেরিনাকে পেরিসিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো । কার্ল এবার তার পরিকল্পনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করলো । পেরিসিকের কাজ হচ্ছে, সে আগামীকাল বেলায়েক হিউয়ানের নিরাপত্তার জন্য যে যে রবোটিক হেল্পারদের নিয়োগ করা হয়েছে বা ঠিক করা হয়েছে, তাদের সার্কিটে সমস্যা সৃষ্টি করবে । এই রবোটিক হেল্পারগুলোই বেলায়েক হিউয়ানকে হত্যা করবে । তবে এতে পেরিসিকের উপর যাতে কারও সন্দেহ না আসে, এই জন্য সেরিনার কাজ হবে বেলায়েক হিউয়ানের কাছে খবর পৌঁছানো যে তার আগামীকাল মৃত্যুর একটা ঝুকি আছে । ফোন না করাই ভালো, তাহলে ফোনের সূত্র ধরে হয়তো সেরিনাকে, পরবর্তীতে বাকিদেরকে ধরে ফেলতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । স্বভাবতই বেলায়েক হিউয়ান চাইবে তার নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে দিতে, তখন সে দনারাল হাউজ থেকে আরও অতিরিক্ত কিছু স্পেশাল রবোটিক হেল্পার অর্ডার করবে । আর জেনিলির কাজ হচ্ছে বেলায়েক হিউয়ানের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে যেকোনভাবেই বেলায়েক হিউয়ানের কাছ থেকে দূরে রাখা । আর টেকনো বাহিনীকে ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে খবর দিয়ে দৃশ্যপটে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিলো কার্ল নিজে । ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে খবর দেওয়া হবে যাতে করে তারা আক্রমণ ঠেকাতে এসেও বেলায়েক হিউয়ানকে বাঁচাতে না পারে বরং ঐসব সমস্যাসৃষ্ট হওয়া রবোটিক হেল্পারদের যাতে তারা ধ্বংস করে দিতে পারে । সকলেরই এই পরিকল্পনাটা পছন্দ হলো । পরিকল্পনা মতে পেরিসিক ও সেরিনার কাজ আজকে । আর কার্ল ও জেনিলির কাজ আগামীকাল । পেরিসিক ও সেরিনা পরিকল্পনা অনুসারেই কাজ করলো । এখন শুধু আগামীকালের অপেক্ষা ।

সকাল ধরেই রাজকীয় বাসভবনে উৎসব উৎসব আমেজ । কেউ একজন প্রাচীনকালের মত চিঠি দিয়ে বলেছে যে আজকে বেলায়েক হিউয়ানের উপর আক্রমণ হতে পারে, এই ঝুঁকিতে দনারাল হাউজ থেকে আরও কিছু অতিরিক্ত স্পেশাল রবোটিক হেল্পার আনা হয়েছে । জেনিলি ঠিকই বুদ্ধি করে বেলায়েক হিউয়ানের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে বেলায়েক হিউয়ানের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছে । সে তাদেরকে বেলায়েক হিউয়ানের উপর আক্রমণ হতে পারে, এই কথাটি বলায় তারা আর ঝুঁকি নিয়ে সামনে আসেনি । সাথে এও বলেছে এই কথাটি সে দনারাল হাউজের অষ্টম লেভেলের হেডের কাছ থেকেই শুনেছে । জেনিলির এই কথা অবশ্য তারা তিনজন সত্যতা নিশ্চিত করতে যায়নি এমনকি বেলায়েক হিউয়ানকেও জিজ্ঞাসা করতে যায়নি । আর বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য আজকে লুকিয়ে থাকতে পারবেন না । যেহেতু আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, তিনি আজকে সকল কেন্টর-দের সাথে দেখা করবেন, তাই তিনি লুকিয়ে যাওয়া মানেই নিজের কথা নিজেই না রাখা । যা একজন রাজার স্বভাবের সাথে যায় না । সকাল ধরেই গ্রহের সকল কেন্টর-রা রাজার সাথে দেখা করতে আসতে লাগলো । অনেকেই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এসেছে, গ্রহের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাদের জোর করে এখানে আনিয়েছে । প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর বেলায়েক হিউয়ান একটু বিরতি নিলেন । এই সময়ে তিনি বাকী কেন্টর-দের পরবর্তীতে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন । এই সময়ে তিনি একটি বড় হলরুমের মত জায়গায় তার স্পেশাল রবোটিক হেল্পারদের নিয়ে ঢুকলেন । আর বাকী সকলকেই ভিতরে ঢুকতে না করে দিলেন । তিনি ভিতরে ঢুকার পরপরই হঠাৎ-ই কি যেন হলো !! দনারাল হাউজ থেকে অর্ডার করা অতিরিক্ত স্পেশাল রবোটিক হেল্পারগুলো তার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো । তিনি ভালোকরে মুখ খুলার আগেই, সেই রবোটিক হেল্পারগুলো তার দিকে অস্ত্র তাক করে তাকে গুলি করলো । মুহূর্তের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন । গুলি করার শব্দ হতেই টেকনো বাহিনীও হুড়মুড় করে হলরুমে ঢুকে পড়লো । রবোটিক হেল্পারগুলো যতক্ষণে তাদের দিকে অস্ত্র তাক করবে, তার আগেই তারা গুলি করে সকল রবোটিক হেল্পারগুলোকে ধ্বংস করে দিলো । কেউ একজন তাদেরকেও চিঠি দিয়ে এখানে আসতে বলছে একটু আগেই । এত কিছুর মাঝে রাজকীয় বাসভবনের আশেপাশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলো । সকল কেন্টর-রাই যে যার মত নিরাপদ জায়গায় সরে গেলো । ঘটনার প্রভাব শেষ হওয়ার পর সকল টিভি নিউজে প্রধান খবর হিসেবে বেলায়েক হিউয়ানের মৃত্যু-কে ফলো-আপ করতে লাগলো । হ্যাঁ, বেলায়েক হিউয়ান অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন । কেন্টর-রা নির্বাচনের একদিন পরেই আবার রাজাশূন্য হয়ে গেলো । তবে এই ঘটনার পিছনে মূলত কারা সেটা আদৌ প্রকাশ পেলো না ।

অবশেষে দনারাল হাউজের সকল হেডের সিদ্ধান্তক্রমে রুইনি সেজার্টকেই কেন্টর-দের রাজা তথা রানী ঘোষণা করা হলো । এই খবর শোনার পর থেকে গ্রহের সকল কেন্টর-দের মাঝে আনন্দের বন্যা বইয়ে যেতে লাগলো । এরপর থেকেই স্প্লাটুজেনাস গ্রহের সকল কিছুই পরিবর্তন হতে লাগলো । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সাপার্ট-দের সাথে কেন্টর-দের যুদ্ধ এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে । কেন্টর-রা সাপার্ট-দের সাথে যুদ্ধের জন্য আরও একটি বাহিনী তৈরি করেছে । এই নতুন বাহিনীর নাম দেওয়া হয়েছে, ক্রাস্টেন । এককথায় কেন্টর-দের নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করে রুইনি সেজার্ট আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি চাইলেও সাপার্ট-দের সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করতে পারবেন না, কারণ গ্রহের প্রায় সকল কেন্টর-রাই এই যুদ্ধের পক্ষে ।

সেরিনা অবশেষে তার ড্যাডির হত্যাকারীর প্রতিশোধ নিতে পেরেছে । সে তাই অনেক খুশি । আর তাছাড়া রুইনি সেজার্ট-ই যে এই কেন্টর-দের সঠিক অর্থে রাজা সেটা সেও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে । কার্ল ও জেনিলিও খুশি । কার্ল, সেরিনা ও গ্রহের অধিকাংশ কেন্টর যারা ডিমোশন অর্ডিন্যান্সের কারণে ডিমোশনের শিকার হয়েছিল, সেই অর্ডিন্যান্সটি বাতিল করা হয়েছে । তাই সকলেই সকলের আগের পদটি ফিরে পেয়েছে । তবে সেরিনা এখনও মনে মনে আশা করে, একজন মনের মত ছেলে পার্টনার পাওয়ার, যার মুখের দিকে তাকিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে । কার্ল ও জেনিলিকে দেখলে তার হিংসে হয় । সে কি আদৌ পাবে না মি. পারফেক্টকে ?

।। ।। ।। ।। সমাপ্ত ।। । ।। ।।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×