somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০২ :( :(

১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পের পূর্বের অংশ পাবেন ১ম পর্বে -
জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব - ০১

হঠাৎ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম । ঘড়িতে যখন প্রায় ৩ টা বেজে ৪০ মিনিট, তখন পুলিশেরই একজন এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো । "আপনাকে স্যার ডাকছে, চলুন ।" হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি একটু অস্বস্তিতে ভুগছি । আর তাছাড়া বসে বসে ঘুমানোর অভ্যাস নেই বলেও হয়তো এই অস্বস্তিটা আসতে পারে । তবু ঘুম ঘুম অবস্থাতেই চোখ কচলাতে কচলাতে আমি শুধু এই কথাটি বললাম, একটু পানি হবে ? পুলিশের ঐ লোকটি মনে হয় ভালোই । আমার হ্যান্ডকাফ খুলে দিয়ে আমার হাতে একটি পানির জগ এনে দিলো । আমি চোখেমুখে পানি ছিটালাম আবার কিছুটা খেলামও । ঐ পুলিশটি এরপর আমাকে তার স্যারের কাছে নিয়ে গেলো । আমি স্যারের কাছে পৌঁছেই সরাসরি তার নেমপ্লেটের দিকে খেয়াল করলাম । জনাব বদরুল । লোকটির মুখ পানে লাল । সামনে ছোটখাট একটি পানবাটা । মনে হচ্ছে একটির পর আরেকটি পান খাওয়া অভ্যাস তার । "স্যার, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?" আমি আর অপেক্ষা না করেই জিজ্ঞেস করে বসলাম । জনাব বদরুল এতক্ষণ কোন একটি ফাইলের দিকে মনোনিবেশ করে ছিলেন, আমার প্রশ্ন শুনে মুখ উঁচু করে আমার দিকে তাকালেন । কিছুক্ষণ আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলেন, এই সময়টুকুতে পান চিবানোর কথাও ভুলে গেছেন যেন । আমি আবারও বললাম, "স্যার, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে ?", এই ভেবে যে উনি হয়তো শুনতে পাননি । লোকটির ভ্রূ ধীরে ধীরে কুঞ্চিত হলো । লোকটি এরপর রেগে গিয়ে বলে উঠলো, "কেন, এক রাত আমাদের সাথে থাকলে কি আপনার জাত যাবে ? আমরা কি মানুষ না আপনাদের কাছে ?" বুঝলাম, লোকটি ভিতরে ভিতরে অনেক ক্ষোভ পুষিয়ে রেখেছে । আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলাম । একটু পর জনাব বদরুলের নির্দেশে আমাকে হাজতে নিয়ে যাওয়া হলো ।

হাজতে আমার প্রথম রাত্রি । জীবনে যে কতরকম অভিজ্ঞতা হলো, তবে এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা, এই মুহূর্তে তা মনে করতে পারছি না । তবে সত্য হলো, জীবনে এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো সহজে ভোলা সম্ভব না । হাজতে অবশ্য আমি একা না । দেখলাম আরও অনেকেই আছে । হাজতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটি হচ্ছে, খাওয়া আর টয়লেটের জায়গা কাছাকাছি । ঐ গন্ধের মধ্যে বসেই খাওয়া, ঘুম সব । আমি ভাবছি আমাকে কেন গ্রেফতার করে আনা হয়েছে । আমি ভেবে কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না । আবার মনের এক কোনায় এই ভাবনাও আসছে যে আমি হয়তো এই হাজত থেকে আর কোনদিন ছাড়া পাবো না । আর কোনদিন নূপুরের মায়াবী মুখটা দেখতে পাবো না । দুই ছেলে-মেয়ে আফনান আর জারিনকেও মিস করবো । হয়তো এখানেই আমার মৃত্যু হবে ।

আশেপাশের লোকগুলোর চোখের দিকে তাকানো যায় না । সবার চোখেমুখে এক ধরনের আতংক । একজনের সাথে কথা বলে বুঝলাম, লোকটিকে ধরে আনা হয়েছে ছিনতাই এর কথা বলে । অথচ লোকটি নাকি ছিনতাই-এর ঐ ঘটনার সময় নিজের বাসায় ঘুমাচ্ছিল । সন্দেহবশত ধরে আনা হয়েছে আরও চারদিন আগে । বাসার লোকজন প্রতিদিন ধরনা দিলেও মোটা অংকের টাকা চাওয়া হয়েছে ঘুষ হিসেবে । সেই টাকা জোগাড় করতে বিলম্বিত হচ্ছে বলেই লোকটি এখনও হাজতেই আছে । আমার ক্ষেত্রেও কি এমন কিছু হবে ? নূপুর বেশি চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরবে না তো ? এত রাতে আবার সালামকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বসবে না তো ? বাচ্চাগুলোকে দেখবে কে ? আমার চিন্তাগুলো ক্রমশ বাড়ছে । চিন্তা বাড়ার সাথে সাথে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্রমশ চিন চিন করে ব্যাথা শুরু হয়েছে । মনে হলো, প্রেশার বাড়ছে ।

আমি হাজতের শিক ধরে এক কোণার দিকে বসে ছিলাম । হাজতে কেউ কারও বন্ধু হয় না । তবে শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই থাকে । যদি আপনার কোন আত্মীয় এক প্যাকেট সিগারেট ধরিয়ে দিতে পারে আপনার আশেপাশের হাজতিদের, তাহলে তো আর কোন কথাই নেই... আপনি তখন তাদের কাছে বস । আপনার আদেশ তাদের ক্ষেত্রে শিরোধার্য । আপনার হাত-পা টিপে দেবে তারা । আপনার মাথাও টিপে দেবে আর হাত দিয়ে ডলে শরীর মালিশ করা তো আছেই । আমি বসে বসে দেখছিলাম এমন একজনকে তিন-চারজন ঘিরে সেবা করছে । পাশে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, "ঐ লোকটি কে ?" সে উত্তর করলো, "আপনি তাকে চেনেন না ? ধুর, মিয়া, আপনি তো তাইলে এই শহরে থাকেনই না !!! ও হইলো কালা মজিদ । প্রতি মাসের দুই-তিনদিন হাজতে এসে হাজতবাসীদের খোঁজখবর নিয়ে যায় । শহরে বিরাট ত্রাস ওর । আমি তো এমনও শুনেছি, মাসে একটা মার্ডার না করলে নাকি ওর ভাব আসে না......" । আমি আর ভাব আনার তালে থাকলাম না । এই কথা শুনে আরও জড়সড় হয়ে বসলাম । কালা মজিদ মনে হয় আমার পাশে বসে থাকা লোকটির মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে পেয়েছে আর আমাকেও খেয়াল করেছে । কালা মজিদ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কি কেস ? ছিনতাই ? নাকি মার্ডার ? নাকি দুই নম্বরি ? কোনটা ?" আমি একটু ভয়ে ভয়েই উত্তর করলাম, "একটাও না । আমার মনে হয় এরা ভুল করেছে । আমাকে অন্য কারও সাথে গুলিয়ে ফেলেছে ।" কালা মজিদ মনে হয় আমার উত্তরে খুশি হলো না । আবার বেশ রাগও হয়েছে । রাগের ব্যাপারটা আমি বুঝলাম, এর পরপরই তার কথা শুনে । "ভুল করে মানে ? ঐ মিয়া, মশকরা করেন ? এখানে কেউ কাউকে ভুল করে আনে নাকি ? জলদি জলদি হাছা কথা কইয়া ফালান । নাইলে কিন্তু হাছা কথা বলানোর অনেক উপায় আমার জানা আছে ।" কালা মজিদের মুখে এই কথা শুনে আমি ঢোক গিললাম । ভালো বিপদে পড়েছি, মনে হচ্ছে ।

(বাকিটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×