somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(পর্বভিত্তিক বড় গল্প) জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব ৭ :( :(

১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা এই গল্পের আগের ছয়টি পর্ব পড়েননি বা পড়ার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য লিংক শেয়ার করলাম নিচেঃ
(পর্বভিত্তিক বড় গল্প) জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব ১-৪, (পর্বভিত্তিক বড় গল্প) জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব ৫, (পর্বভিত্তিক বড় গল্প) জীবনের এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন - পর্ব ৬

আমার আশেপাশে পরিস্থিতি খুব একটা ঠাণ্ডা বা নিরিবিলি না । রাতে যেমন গুটি কয়েক মহিলা ও পুরুষদের এনে পুলিশ স্টেশন ভরে রাখা হয়েছিল, দিনের বেলায় ব্যাপারটা ঠিক তেমন না । তাছাড়া এখন পুলিশ স্টেশনে পুলিশের সংখ্যাও রাতের চেয়ে ঢের বেশি । সবাই কেমন জানি ছুটাছুটি করছে । সকলেই ব্যস্ত । ওদিকে আরেক হাজত থেকে গানের আওয়াজ হচ্ছে জোরে জোরে । আমি যে হাজতে ছিলাম তার পাশের হাজত আর কি । গানটি অবশ্য একজনই গাচ্ছে, বুঝা যাচ্ছে । মনে হচ্ছে কারও বাথরুম আটকে গেলে সে যেভাবে জোর দেয়, তখন মুখ নিঃসৃত শব্দগুলো অনেক চাপা ও ক্ষীণ হয়, এক্ষেত্রেও ব্যাপারটি অনেকটাই তাই । আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সবার ব্যস্ত গতিবিধি দেখে বোধ হচ্ছে কেউই ঐ লোকটার গান শুনতে পাচ্ছে না । আমি মনে মনে ভাবলাম, আহা রে কি কষ্ট করেই না লোকটা গানটা গাচ্ছে !! আরও খেয়াল করলাম রাতে কারণে-অকারণে কেঁদে যাওয়া বাচ্চাটি এখন আর এখানে নেই, তবে কি বাচাটির আসল বাবা-মা কে খুঁজে পাওয়া গেছে, নাকি (আল্লাহ্‌ না করুক) খারাপ কিছু ঘটলো ওর সাথে, একটু জানতে ইচ্ছা করছে । আচ্ছা, বদরুল সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে এর উত্তর পাওয়া যাবে নাকি আসলাম শেখ ? আমি আবারও কনফিউশনে পড়ে গেলাম । হঠাৎ খেয়াল করলাম, এক কোনায় একজন লোক জীর্ণবস্ত্র অবস্থায় মাটির দিকে মুখ করে মাথা নিচু করে বসে আছে । লোকটির খালি গা (শরীর) আর সারা শরীরে মাটি/কাঁদা লাগানো, মনে হচ্ছে নেশা করার কারণে তাকে ধরা হয়েছে । আর এক পাশে এক বুড়ো চাচা বসে আছে, সেও বদরুল সাহেবের মত মুখভর্তি পান চিবোচ্ছে । মুখে ভাবলেশবিহীন । চাচাকে হয়তো ধরে আনা হয়নি, তিনি হয়তো কোন হাজতির সাথে দেখা করতে এসেছেন । আর তেমন কিছু খেয়াল করার মত পেলাম না । বলতে যদিও অনেক সময় লাগলো কিন্তু এতকিছু দেখলাম মাত্র অল্প কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই । যাই হোক সৎবিৎ ফিরে এলাম বদরুল সাহেবের ডাকেই ।

"কি ব্যাপার, কামাল সাহেব, এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছেন ?" "কিছু না স্যার । একরাত পুলিশ স্টেশনে থেকে হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, স্যার ।" কথা শেষ করা মাত্রই খেয়াল করলাম বদরুল সাহেব হঠাৎ চোখ সরু করে আমার দিকে তাকালেন । পুলিশের সাথে এই এক সমস্যা । তারা প্রত্যেকটি ভালো-খারাপ কথায় সন্দেহ করে, ভাবে হয়তো কথা অন্য কোন অর্থে বলা হয়েছে । কিন্তু আশার কথা কিছুক্ষণ পর বদরুল সাহেব আবার স্বাভাবিক হলেন । স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই আবার বলা শুরু করলেন, "এনায়েত করিমকে তো মনে হয় চেনেন ?" বদরুল সাহেবের এমন প্রশ্ন শুনে আমার মনে হঠাৎ করেই ভয় ধরে গেলো । এই যাহ, তাহলে কি বড় কোন সন্ত্রাসী গ্যাং-এর সাথে আমাকে জড়িয়ে কেস করার ধান্দায় আছেন নাকি এই লোক ? আচ্ছা, এই এনায়েত করিমটা কে ? ঐ সন্ত্রাসী গ্যাং-এর লিডার নাকি সাব-লিডার ? আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম । বেশি চিন্তায় আমি আবার আঙুল, ভালো করে বললে নখ কামড়াতে শুরু করি । এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস । এবারও কখন জানি অজান্তেই নখ কামড়াতে শুরু করেছি । হয়তো টেরই পেতাম না, যদি না বদরুল সাহেব ডাক দিয়ে আবারও সৎবিৎ ফেরত আনতেন আমার । 'কি হলো, বললেন না চেনেন নাকি ?' "ইয়ে মানে, স্যার, কোন এনায়েত করিমের কথা বলছেন ? চিনতে পারছি না, যদি একটু ক্লিয়ার করে বলতেন ।" "ঐ যে ভাই-বন্ধু বস্ত্রালয়ের মালিক । চেনেন নাকি ?" আমার হঠাৎ খেয়াল হলো এনায়েত করিমের কথা । আমরা একই মার্কেটে দোকান দিয়েছি সেই আরও দুই বছর আগেই । লোকটির সাথে আমার দেখা তেমন হয়না, কারণ আমরা দুইজনই মোটামুটি বেশ ব্যস্ত মানুষ । হয়তো মার্কেটের কোন মিটিং-এ হঠাৎ তার সাথে দেখা হয়ে গেলো, ব্যস এতটুকুই । "জী, স্যার, চিনেছি এবার । হ্যাঁ, চিনি তো । কি হয়েছে উনার ?" বদরুল সাহেব এতক্ষণ আমার উত্তরের অপেক্ষাতেই ছিলেন । এটা বুঝা গেলো উনার পান চিবানোতে হঠাৎ বিরতি দেওয়ার কারণে । আমার উত্তর দেওয়ার সাথে সাথেই সেই পান চিবানো আবার শুরু হলো । "না, উনার কিছু হয়নি, উনার সাথে গতকাল আমার কথা হয়েছে । তাও আবার আপনাকে নিয়ে ।" আমি বলতে সাহস পেলাম না, কি কথা ? আর তাছাড়াও বদরুল সাহেব এনায়েত করিমকে কি করে চেনেন ? ইত্যাদি । পুলিশকে যত প্রশ্ন কম করা যায় ততই ভালো ।

(বাকীটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×