somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি লাল গোলাপ আর হারিয়ে যাওয়া একজন - ।। পর্ব - ০১ ।।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাসান সাহেব মানে জনাব হাসান চৌধুরী বসে আছেন ডাক্তারের চেম্বারে । ডাক্তার মানে ডাঃ হান্নান তার ছোটবেলার বন্ধু । শহরের বেশ নামকরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ । হাসান সাহেব ডাঃ হান্নানের চেম্বারে এসেছেন তার স্ত্রীর জন্য । ডাঃ হান্নানের চেম্বারও শহরের বেশ নামকরা হাসপাতালে । হাসপাতালের তৃতীয় তলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে করিডর পেরিয়ে এক কোনার দিকে ডাঃ হান্নানের চেম্বার । অন্যদিন বেশ ভিড় থাকলেও আজ কেন জানি ডাঃ হান্নানের চেম্বারের বাইরে রোগীদের বেশি ভিড় নেই । ডাঃ হান্নান অবশ্য এই হাসপাতালের অনেক সিনিয়র একজন ডাক্তার । তাই তাকে চেম্বারের বাইরেও আরেকটা রুম দেওয়া হয়েছে । রুমটি অবশ্য তৃতীয় তলাতেই কিন্তু করিডরের বিপরীত প্রান্তে । রুমটি রোগী দেখার জন্য না, তার বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে । সেই রুমেই আজকেও বেশ অনেকক্ষণ ধরেই চেকআপ করলেন সিসেস হাসানকে, হাজার হলেও বন্ধুর স্ত্রী বলে কথা, এতটুকু তো বন্ধুর জন্য করতেই হয় ।

মিসেস হাসানের তথা মিসেস সুমনা চৌধুরীর এই ধরে বেশ কয়েকবার আসতে হলো এই হাসপাতালে । চেকআপ করার পর মিসেস সুমনা চৌধুরীকে রুমটিতে রাখা বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিতে বললেন ডাঃ হান্নান । এরপর নিজের চেম্বারে এসে বসলেন, সাথে হাসান সাহেবও এসে বসলেন । রুমে ঢুকেই বন্ধুর স্ত্রীর রিপোর্টগুলোর দিকে মনোযোগী হলেন ডাঃ হান্নান ।

রুমটিতে বেশ অনেকক্ষণ ধরেই নীরবতা বজায় আছে । হাসান সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছেন, কেন জানি তার মন বলছে খারাপ একটি সংবাদ শুনতে যাচ্ছেন তিনি । আর ডাঃ হান্নান টেস্ট রিপোর্টগুলো বারবার উল্টে-পাল্টে দেখছেন । তার মন বারবার বলছে যেন এই রিপোর্টগুলো ভুল হয় । কিন্তু তার বিশেষ অনুরোধেই বারবার করা পরীক্ষার পর প্রাপ্ত টেস্টগুলোর রিপোর্ট ভুল হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই । বেশ অনেকক্ষণ পর মুখ খুললেন হাসান সাহেবই ।

- কি দেখলি ? (হাসান সাহেব এবং ডাঃ হান্নান একজন আরেকজনকে তুই করেই সম্বোধন করেন)

- আচ্ছা, ভাবীর শরীর গত তিন মাস ধরেই খারাপ, প্রস্রাব-পায়খানার সময় সাথে রক্ত আসে, শরীরের সকল গিঁড়ায় ব্যাথা, আর প্রায় সময় বিছানায় শুয়ে থাকার পর উঠতে গেলে মারাত্মক আকারে মাথা ঘুরায়, তাছারা শরীরে মারাত্মক অবসাদ আর দুর্বলতা কাজ করে, এই লক্ষণগুলো যে তুই আমাকে বলেছিলি প্রথম দিন, এগুলো তুই নিজে কবে থেকে খেয়াল করলি প্রথম ?

- আমি তো ভাল করে খেয়াল করিনি প্রথমে । তোর ভাবী একদিন আমাকে এরকম সমস্যা বলার পর খেয়াল করতে শুরু করি । আসলেই তার বলা কথাগুলো তো সত্যিই, তা বুঝতে পারি তখন । কি যে সমস্যা, এখন তো ও টয়লেটে যেতেও ভয় পায় । আর বাড়ির অবস্থা তো জঘন্য, বাড়ির কত্রি ছাড়া কি আর বাড়ি চলে, তুইও তো বুঝবি...

- হুম, বুঝতেছি । তা ভাবীরে যে টেস্টগুলো করতে দিছিলাম গত সপ্তাহে, সেগুলোর রিপোর্ট তো তুই কাল দিয়ে গেলি । এরপর বাড়িতে বসেই আমি দেখছিলাম রিপোর্টগুলো । আবার এখন তোর সামনে অনেকক্ষণ ধরেই দেখলাম ।

- ওহ, তা কি দেখলি ?

- সমস্যা তো আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই । আসলে মেডিকেলের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ভাবীর শরীরে হোয়াইট ব্লাড সেলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে, শরীরে যে ক্ষতিকর ভাইরাসগুলো অনুপ্রবেশ করার চেষ্ঠা করে সাধারণত, সেগুলো শরীরের এই হোয়াইট ব্লাড সেল বাধা দেয় কিন্তু অতিরিক্ত আকারে বৃদ্ধির ফলে এরা এদের স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে না । তাছাড়া প্যাথজেনগুলো অস্বাভাবিক আকারে ইনভেইড করার চেষ্ঠা করছে, যার ফলে ভাবীর শরীরে কোথাও কেটে গেলে সেই রক্ত ক্লটিং করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে । মেডিকেল টার্মে এই রোগের আরেকটি সুন্দর নাম আছে, যাকে বলে "লিউকিমিয়া" ।

- না, আমি তো কিছুই বুঝছি না । তুই একবারে বল সমস্যা কি ? মেডিকেল টার্ম নিজের কাছে রাখ, ও হাজার বললেও আমি বুঝবো না ।

- বন্ধু, তোমাকে শক্ত হতে হবে আরও । তুমি ভেঙ্গে পড়লে কিন্তু ভাবীও বেশ ভেঙ্গে পড়বে । তখন এই সমস্যার স্বাভাবিক চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হবে । সমস্যাটা যদিও ইনিশিয়াল স্টেজ ছাড়িয়ে গেছে, তবে আশার কথা খুব একটা তীব্রতর পর্যায়ে পৌঁছায়নি । তাই চিকিৎসা সম্ভব ।

- (বন্ধুর কথা শুনে হালকামত ধাক্কা খেল হাসান সাহেব, তবু নিজেকে বহু কষ্টে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো) কি হয়েছে তোর ভাবীর ?

- বন্ধু, ভাবীর ব্লাড ক্যান্সার ।

এই কথা শুনেই মাথা ঘুরে চেয়ারেই কাত হয়ে পড়ে গেল হাসান সাহেব । ডাঃ হান্নান সাহেব ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন । তবু কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে একজন নার্সকে ডাক দিলেন এবং তাকে হাসান সাহেবকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর জন্য বললেন । বেশ অনেকক্ষণ মুখে পানি দিয়েই জ্ঞান ফেরানো হল হাসান সাহেবের । জ্ঞান ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় এসেই কাঁদতে লাগলেন হাসান সাহেব । ডাঃ হান্নান বন্ধুকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন এবং বললেন দেড় মাস অন্তর অন্তর কেমোথেরাপি দিলে সুস্থ হওয়ার বেশ সম্ভাবনা আছে । কিন্তু যদি না হয়......... এই বলেই ক্রমাগত কাঁদতে লাগলেন হাসান সাহেব ।

(বাকীটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×