সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক মূর্তি অপসারণ কে অনেকেই দেখছি দেশকে পুনরায় ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র বলে দাবী করছেন । অনেকে তো আবার এক কাঠি সরেস হয়ে দেশকে পাকিস্তানের অঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাস্তান বলছেন ।
গ্রিক মূর্তিটি আসলে ছিল আইনের প্রতিক হিসেবে । তাই সেই মূর্তি অপসারণ নিঃসন্দেহে খারাপ লাগাবে, এটাই স্বাভাবিক । কিন্তু তাই বলে দেশ হেফাজতের অধীনে চলছে, আওয়ামী হেফাজত লীগ গঠন হয়েছে, বিরোধী দল হিসেবে এখন থেকে হেফাজতে ইসলামী হবে, এইসব কথা বলা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বোকামি হবে । আমাদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মূলত মেরুদণ্ডহীন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে, তাই তাদের পক্ষ থেকে সরকারী সমালোচনামূলক যেকোন দাবী আশা করাটা অত্যন্ত অযৌক্তিক । এর মানে এই না যে অন্য কোন রাজনৈতিক দল কোন দাবী করে সরকার সেটা মেনে নিলে, আক্ষরিক অর্থে সরকার তাদের দাবী সবসময় মেনে নেবে । এটা ভাবাও বোকামি ।
আজকে যারা মূর্তি অপসারণের কারণে দেশ একটি নির্দিষ্ট ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্র হয়ে যাওয়ার ভয় করছেন, এই তাদেরকেই ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি কিংবা পিস টিভি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর টু আওয়াজও করতে শুনিনি । এমনকি ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ই মে হেফাজত হত্যার (হোক সেটা গুজব কিংবা সত্য) খবরেও তেমন প্রতিক্রিয়া করতে শুনিনি । তাহলে কি তারা এই দেশটাকে ইসলাম বাদে অন্য কোন ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্র হয়ে গেলে খুশি হবেন ?
দেশ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই কতিপয় সুশিলদের গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে ইঁদুরের মত চু চু আওয়াজ করতে শুনলে, বেশ রাগ হয় । খেয়াল করলেই দেখা যাবে এরা আগে কখনও এসব কোন বিষয়ে মাথা ঘামাতই না । অথচ এখন এসবকিছুতেই তাদের প্রব্লেম । মুসলিম কোন ব্যক্তি মসজিদে হামলা করে বসলেও এদের প্রব্লেম, হিন্দু কোন ব্যক্তি মন্দিরে হামলা করে বসলেও এদের প্রব্লেম, এমনকি খ্রিস্টান কোন ব্যক্তি গির্জায় হামলা করে বসলেও এদের প্রব্লেম । এদের প্রব্লেম সবকিছুতেই । এই কতিপয় সুশিলদের মধ্যে আবার অধিকাংশই হামলা যেই করুক, যেই ধর্মেরই অনুসারীই করুক, সরাসরি দোষ দিয়ে ফেলেন মুসলিম কোন ব্যক্তিকে । এটা তাদের আধুনিক স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
ইসলামে যে কোন মূর্তি হারাম । তারপর আবার মূর্তির সামনে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোটাও জায়েজ নয় । অথচ দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভাস্কর্য, মূর্তি ইত্যাদি তৈরির চলন শুরু হয়েছে যেন দেশ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই । আধুনিক সুশীলদের চুলকানির শুরুটাও এখান থেকেই । যাই হোক, দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের অনুসারীদের মত অনুযায়ী দেশে অনেক সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে যেমনটা ধর্মনিরপেক্ষ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও নেওয়া হয় হিন্দু ধর্ম অনুসারীদের মতামত অনুযায়ী । এতে চুলকানির কিছুই নেই । সরকারী অনেক সিদ্ধান্তই ভুল আছে কিংবা ছিল । কই তাদের তো সবকিছু নিয়ে চুলকাতে দেখি না । খালি ধর্ম সংক্রান্ত হলেই যেন চুলকানির বাজার খুলে যায় এই কতিপয় সুশীলদের ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১:১৯