somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। ।। পর্বভিত্তিক গল্প ।। ।। প্রসন্ন বাতায়ন - ১ম পর্ব

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন বাড়ির সামনে অলসভাবে শুয়ে থাকা কুকুরটার ভয়তেই বাড়ির ভিতরে যাওয়া হয় না সৌহার্দ্যের । অথচ কিভাবে কিভাবে যেন প্রতিদিন রাফিয়াদের বাড়ির সামনে হাজির থাকার জন্য এক তোড়া করে গোলাপ ম্যানেজ করে সে । এভাবে ঠিক কতদিন ধরে চলছে বলাটা স্রেফ কঠিন । তবে এটার শুরু হয়েছিল একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাফিয়াকে প্রথম দেখার পর থেকে । সেখানে অনেক চেষ্ঠা করেও রাফিয়ার সাথে কথা বলতে পারিনি সৌহার্দ্য । এরপর তো রাফিয়াকে হারিয়ে ফেলা । এর পরের ঘটনাগুলো বেশ মজার । রাফিয়াকে ফেসবুকে খুঁজে পাওয়ার অক্লান্ত চেষ্ঠা দৃষ্টি কাড়ে সৌহার্দ্যেরই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাকিরের । জাকির আগে থেকেই চিনতো রাফিয়াকে । বিষয়টা অনেকটাই কাকতালীয় । রাফিয়া হচ্ছে জাকিরের কাজিন বোনের বান্ধবী ।

বন্ধুর কাছ থেকে রাফিয়ার খোঁজ পেয়ে সৌহার্দ্যের বৃহস্পতির অবস্থা পুরাই তুঙ্গে, যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে সে । এরপর ধীরে ধীরে মোবাইল নাম্বার ম্যানেজ, বাড়ির ঠিকানা ম্যানেজ আরও কতকিছু করেছে সৌহার্দ্য কিন্তু রাফিয়ার মনমত কিছুই হয়নি । মোবাইল থেকে ব্লক প্রথম কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরই, ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর পরেও শুধুমাত্র ফলোয়ার হিসেবে ঝুলে থাকা, বাড়ির সামনে প্রথম প্রথম আসা শুরু করার পর থেকে পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেওয়া, বাবার কাছে অভিযোগ, অতঃপর সৌহার্দ্যের বাড়িতে অভিযোগ চলে যাওয়া ইত্যাদি আরও অনেককিছুই হয়েছে । কিন্তু হ্যাঁ, সৌহার্দ্য দমে যায়নি কোন বাধাতেই ।

প্রায় আধা ঘণ্টাখানেক দাড়িয়ে থাকার পর আর এদিক-ওদিক তাকিয়ে থেকে অবশেষে আজকের মত ফিরতি পথ ধরলো সৌহার্দ্য । অথচ ছেলেটা জানতেই পারলো না যে রাফিয়া ঠিকই জানালার পাশে দাড়িয়ে পর্দার ফাঁকে ফাঁকে ওকে দেখছিল । সৌহার্দ্য ফিরে যেতেই রাফিয়া জানালার কাছ থেকে সরে এসে বিছানায় গিয়ে বসলো । সৌহার্দ্যের জানার কথা না কিন্তু রাফিয়া দ্বিতীয় দিন থেকেই এভাবে সৌহার্দ্যকে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখে আসছে । হ্যাঁ আজকে ধরে ৪৮ দিন হলো । ছেলেটার মধ্যে এক ধরনের সরলতা আছে, অন্য অনেক বখাটে ছেলের মত রাফিয়ার জানামতে সৌহার্দ্যের কোন বাজে অভ্যাস নেই । রাফিয়া অনেকের কাছে খোঁজ নিয়েছে অন্য কোন মেয়ের দিকেও সৌহার্দ্যের নজর নেই মোটেও । ছেলেটার স্রেফ পরীক্ষা নিচ্ছে সে । প্রতিদিন ঠিকই সাহস করে সবকিছু উপেক্ষা করে বাড়ির সামনে দাঁড়াতে পারে অথচ সাহস করে মুখ ফুটে ভালোলাগার, ভালোবাসার কথাটা বলতে পারে না । বুদ্ধু একটা !!

- এভাবে আর কতদিন চলবে ?

এতক্ষণ নিজের জগতেই ডুবে ছিল রাফিয়া । হঠাৎ করে যে মা রুমে ঢুকেছে তা খেয়ালই করেনি সে । তবে মায়ের কথা শুনেই সেই চিন্তার জগত থেকে ফিরে আসলো সে, মায়ের করা প্রশ্নটা সে ধরতে পেরেছে । তবু সে চুপ করে থাকলো । মিসেস স্বপ্না অর্থাৎ রাফিয়ার মা মনে করলেন রাফিয়া হয়তো তার প্রশ্ন বুঝতেই পারেনি । তাই তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন,

- কি হলো, বললে না !! এভাবে আর কতদিন চলবে ?
- জানি না ।
- জানি না বললেই হলো ? বিষয়টা তো যত দিন গড়াচ্ছে ততই দৃষ্টিকটু হয়ে যাচ্ছে । নিশ্চয় তুমি কোনকিছুর ইঙ্গিত করেই যাচ্ছ যার কারণে ছেলেটা প্রতিদিন বাড়ির সামনে আসার সাহস পায় !!
- মা !! উদ্ভট কথা বলো না তো । আমি আবার কিসের ইঙ্গিত দিতে যাবো ? আমি কি শুরুতেই তোমাদের ঘটনাটা খুলে বলিনি ? বাবাকে দিয়ে ওকে ভয় দেখাইনি ? ওর বাবা-মা কে কি বাবা যথেষ্ট কথা শুনায়নি ? তাহলে তুমি এমন কিছু কিভাবে বলতে পারো ?
- হ্যাঁ, সবই তো বুঝলাম । কিন্তু সেগুলো তো আরও মাসখানেক আগের কথা, তুমি ছেলেটার সামনে দাড়িয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে বলো না কেন ?
- মা, ইতিমধ্যে আমি পরোক্ষভাবে ওকে অনেকবার বুঝিয়েছি এসব পাগলামি না করতে, এটা কি তুমি জানো ? এখন তাহলে তুমি কি বলতে চাচ্ছ, এখন এই বিষয়টা সরাসরি ওকে বুঝাবো ?
- হ্যাঁ, আমি সেটাই বলতে চাচ্ছি ।
- কিন্তু আমার তো মনে হয় না এতে কোনরকম লাভ হবে ।
- তুমি একবার বলেই দেখো !! এরপর দেখা যাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেওয়া যায় !!
- আচ্ছা মা, কালকেই বলবো তাহলে ।
- আচ্ছা, তোমার কোচিং আছে নাকি ? যাবা না আজকে ?
- না, আজকে শরীরটা ভালো লাগছে না । একটু ঘুমবো ।
- আচ্ছা, ঘুমাও, আর কথাগুলো একটু ভেবে বলো কিন্তু...
- ওকে মা, তুমি এখন যাও, রুমটা একটু অন্ধকার করে ঘুমবো নয়তো ঘুম আসবে না আমার ।
- ওকে বাবা, তুমি ঘুমাও, আমি যাচ্ছি ।

মিসেস স্বপ্না চলে যেতেই রাফিয়ার মাথায় হঠাৎ ভাবনাগুলো এসে জড়ো হলো । সত্যি তো আগামীকাল ওকে আসলে কি কি বলা যায় !! ভাবতে ভাবতেই দুই চোখ লেগে আসলো রাফিয়ার । গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতেও সময় লাগলো না তার ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×