somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোশারফ হোসেন ০০৭
বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

প্রসন্ন বাতায়ন - একটি পর্বভিত্তিক গল্প - ৩য় পর্ব

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা আগের দুইটি পর্বই মিস করেছেন, তাদের জন্য পর্ব দুইটির লিংক দেওয়া হলোঃ প্রসন্ন বাতায়ন - একটি পর্বভিত্তিক গল্প - ১ম পর্ব এবং প্রসন্ন বাতায়ন - একটি পর্বভিত্তিক গল্প - ২য় পর্ব

২য় পর্ব শেষে -

এখানে এসির বাতাসটা খুব তীব্র । যেখানে সাধারণত যে কোন পাবলিক রেস্টুরেন্টে এসির তাপমাত্রা ২৭-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম দেওয়া থাকে না, সেখানে এখানকার এসির তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেওয়া । সৌহার্দ্যের কেমন যেন শীত শীত লাগছে । সেই ৩টা থেকে এসে বসে আছে, এক ঘণ্টার মত হতে চললো অথচ রাফিয়ার কোন খোঁজ নেই । অবশ্য সৌহার্দ্যের বিরক্তি লাগছে না বরং কেমন যেন একটু নার্ভাস নার্ভাস লাগছে । মেয়েটা এখনও আসেনি একদিক থেকে ভালোই হয়েছে, কি বলবে সৌহার্দ্য ওর সামনে ? সকল বীরত্ব তো ওর থেকে দূরে থেকেই হয়েছে, কাছে থেকে কিছু বলার সাহস কি করতে পারবে সৌহার্দ্য !! দুইদিন আগে রাতের দিকে হঠাৎ জাকিরের ফোন । জাকিরের সাথে প্রায়ই টুকটাক কথা হয় সৌহার্দ্যের, তাই বিষয়টা এতটা অবাক হওয়ার মত কিছু না । কিন্তু কথার এক পর্যায়ে জাকির যখন জানালো রাফিয়া সৌহার্দ্যের সাথে দেখা করে কিছু কথা বলতে চায়, সেই মুহূর্তেই সৌহার্দ্য যেন স্থির হয়ে যায় । রাফিয়া !! তার সাথে দেখা করবে !! সত্যি ? সে কি স্বপ্ন দেখছে না তো ?

জাকিরকে ফোন করে এই কথা জানিয়েছে জাকিরের কাজিন সুস্মিতা । সুস্মিতা আর রাফিয়া একই কলেজে একই ক্লাসে পড়ে । জাকিরের মুখ থেকে এই কথা শুনে সৌহার্দ্যের বিশ্বাস করতে সত্যি অনেক কষ্ট হয়েছে । প্রথমে তো সৌহার্দ্য ভেবেছিল জাকির ওর সাথে মজা করছে কিন্তু পরবর্তীতে জাকির কসম কেটে বললে এরপর সৌহার্দ্য বিশ্বাস করে । এরপর জায়গার নাম, কবে দেখা করতে হবে আর কয়টার দিকে দেখা করতে হবে সবকিছু জানিয়ে জাকির ফোন রেখে দেয় । অবশ্য সবশেষে কংগ্রাচুলেশন জানাতে ভোলেনি সে । এই দুইটা দিন সৌহার্দ্যের কেটেছে অনেকটা স্বপ্নরাজ্যের রাজকুমারের মত । একেকবার একেক অদ্ভুত স্বপ্ন এসে ভর করছে তার উপর । সে আর রাফিয়া হাত ধরে রেললাইনের দুই ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে নয়তো একটি ডিঙ্গি নৌকায় সে আর রাফিয়া চড়েছে - সেখানে সৌহার্দ্য বৈঠা দিয়ে নৌকা চালাচ্ছে আর রাফিয়া একটু নিচু হয়ে হাত পানিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে নয়তো একটা ছোট প্রাইভেটকারে লং ড্রাইভে ঘুরতে বেরিয়েছে তারা দুইজন ইত্যাদি আরও অনেক স্বপ্ন ।

রেস্টুরেন্টটা রাফিয়াদের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে । প্রতিদিন তো রাফিয়াদের বাড়ির সামনে এসেই বসে থাকে সে, সেই হিসেবে এই রেস্টুরেন্টে সময়মত আসতে কষ্ট হয়নি সৌহার্দ্যের । আজকে তার পোশাক পুরোপুরি ফরমাল, সহসা যে কেউ দেখলে মনে করবে হয়তো চাকরির ইন্টার্ভিউ দিতে বেরিয়েছে সে । হাতে স্বভাবজাত সেই গোলাপের তোড়া । আজকে সে গুণে গুণে ত্রিশটা গোলাপ এনেছে । না, ত্রিশ সংখ্যাটা স্পেশাল কিছু না, এমনিতে মনে হয়েছে তাই এনেছে । ঘড়িতে চারটা বেজে পনেরো মিনিটের মাথায় রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো রাফিয়া । চাইনিজ রেস্টুরেন্টটা দুপুর-বিকেলের মধ্যাহ্ন এই সময়টাতে একপ্রকার খালিই থাকে । আশেপাশে ৪-৫টা টেবিলে হাতেগোনা ৫-৬ জন বসে আছে । ব্যাকগ্রাউন্ডে মৃদু সুরে ইংলিশ গান বাজছে, একটা ভালো লাগার পরিবেশ তৈরি হয়েছে পুরো রেস্টুরেন্টের ভিতরে । রাফিয়া একাই এসেছে, জারা অবশ্য সাথে আসার জন্য দুইবার ফোন দিয়েছিল কিন্তু রাফিয়া ওকে সাথে আনেনি । আজকে সৌহার্দ্যের সাথে তার একারই কথা বলা দরকার । রাফিয়া ঢুকে সোজা হেঁটে গিয়ে সৌহার্দ্য যে টেবিলটাতে বসে ছিল সেই টেবিলে সৌহার্দ্যের সামনাসামনি চেয়ারটাতে গিয়ে বসলো ।

এতক্ষণ যে এসির বাতাসটাই খুব তীব্র বলে মনে হচ্ছিল, সেই এসির বাতাসটাকেই এখন বেশ অপ্রতুল বলে মনে হচ্ছে সৌহার্দ্যের কাছে । তার গরম লাগা শুরু হয়েছে । একটু একটু করে ঘামাও শুরু করেছে সে । রাফিয়া খেয়াল করলো সৌহার্দ্য পকেট থেকে একটা রুমেল বের করে মুখ মুছতে লাগলো । পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রাফিয়া মুচকি হাসলো কিন্তু তার এই হাসিটা সৌহার্দ্যের নজরে পড়লো না । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা দরকার, রাফিয়া মনে মনে ভাবতে লাগলো । তাই সে-ই প্রথমে কথা বলা শুরু করলো,

- কখন এসেছেন ?

রাফিয়ার মুখ থেকে হঠাৎ কথা শুনে সৌহার্দ্য আরও নার্ভাস হয়ে গেলো । সে রাফিয়াকে এক্সকিউজ মি বলে ওয়াশরুমে গেলো । সেখান থেকে মুখে একটু পানি দিয়ে এসে আবার জায়গায় এসে বসলো । সৌহার্দ্য যে বেশ নার্ভাস সেটা রাফিয়া বুঝতে পারছে, বিষয়টা বুঝতে পেরে রাফিয়ার বেশ মজাই লাগছে । সৌহার্দ্য চেয়ারে বসতেই রাফিয়া আবারও জিজ্ঞেস করলো,

- কখন এসেছেন ?
- (প্রথমদিকে সামান্য তোতলিয়ে সৌহার্দ্য জবাব দিলো) হ্যাঁ, এই তো, ৩টার দিকে, তুমি যখন আসতে বলেছিলে
- বাহ, রাইট অন টাইম !! আচ্ছা, ৩টার আগে এসেছিলেন নাকি পরে ?
- মানে ?
- মানে একজন মানুষ তো একেবারে রাইট অন টাইম হতে চাইলেও পারবে না । কমপক্ষে সেকেন্ডের ব্যবধান হলেও থাকবে, সেই হিসেবে ৩টার আগে এসেছিলেন নাকি পরে ?
- সেভাবে খেয়াল করিনি
- ওহ আচ্ছা । আমি যে এত দেরী করে এসেছি, এতক্ষণ নিশ্চয় অনেক বিরক্ত হয়েছেন । আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে নিশ্চয় অনেক কথা শুনাতেন, তাই না ?
- হয়তো
- তার মানে এখন আপনি আমাকে কথা শুনাবেন ?
- সেটা কেন ? না তো
- তার মানে আমি এরকম দেরী করে আসলে আপনার সমস্যা নেই ?
- না, ইয়ে মানে... কি বলবো

রাফিয়া আসলে সৌহার্দ্যের সাথে কথা পেচিয়ে তার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিল, এই মুহূর্তে ছেলেটা সেই পরীক্ষায় পাশ করেছে । তবে হ্যাঁ, রাফিয়ার সৌহার্দ্যের সাথে কথা বলতে বেশ ভালোই লাগছে । এই ভালোটা আসলেই অন্য রকম ভালো...

[বাকীটা ৪র্থ ও শেষ পর্বে থাকছে]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×