somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরম-সত্ত্বা, ঈশ্বর, জ্ঞান ও বিশ্বাস

২২ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

precaution
আস্তিক ও অ-আস্তিকদের মধ্যকার কট্টরবাদী (intolerant)দের জন্য নয়।

আস্তিকতা আর নাস্তিকতা - উভয়েই মূলতঃ বিশ্বাস। কারন স্রষ্টা আছেন এমন ‘প্রমান’ নাই। আবার নাই -এরও কোনও প্রমান নাই। স্রষ্টা বা ঈশ্বর বিশ্বাসের প্রসংগে আরো দুই ধরনের অবস্থান হতে পারে। যথাক্রমে সংশয়বাদ ও নির্বিকারবাদ (Irrelevantism.)
এই বিভাজনগুলো ‘পরম সত্তা’-এর সাথে (যাকে সাধারনতঃ স্রষ্টা, ঈশ্বর, খোদা ইত্যাদি বলা হয়) ব্যক্তি মানুষের ও সমাজের কোন সম্পর্ক বা দায়-দায়িত্ব আছে কি-না - এই বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। ধর্মীয় অর্থে ঈশ্বর হলেন এমন সত্ত্বা যিনি মানুষের বাস্তব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। যার কাছে মানুষ প্রার্থনা করে। যাকে ত্রাণকর্তা মনে করে। এ ধরনের ঈশ্বরের ধারনাকে আমরা ব্যক্তি-ঈশ্বর (personal-God) হিসাবে অভিহিত করতে পারি। অর্থাৎ এমন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা যিনি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ভাল-মন্দের সাথে সংশ্লিষ্ট । পক্ষান্তরে যদি মনে করা হয় যে, ঈশ্বর হলেন এমন সত্ত্বা যিনি অস্তিত্বশীল কিন্তু অতিবর্তী। যিনি জগতের বাহিরে অবস্থান করেন। ব্যক্তির বাস্তব জীবনের ভাল-মন্দের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই।এই অর্থে ঈশ্বরের ধারনা হলো মূলতঃ বুদ্ধিবৃত্তিক বা জ্ঞানতাত্ত্বিক যাকে আমরা পরম-ঈশ্বর (philosophical-God) হিসাবে অভিহিত করতে পারি। পরম সত্ত্বা’ হিসাবে এই পরম-ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তি-ঈশ্বর-এর সম্পর্ক কোন কোন ধর্মে অপ্রাসঙ্গিক, কোন কোন ধর্মে প্রাসঙ্গিক আবার কোন কোন ধর্মে অভিন্ন (যেমন ইসলাম)।
‘ঈশ্বর’ বলতে কী বোঝায়? আশ্চর্য্য হলো, সংশ্লিষ্ট বই-পুস্তকে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে-বিপক্ষে শত পৃষ্ঠা আলোচনা দেখা গেলেও ‘ঈশ্বর’ বলতে কী বুঝায় - সে সম্পর্কে এক পৃষ্ঠা লেখাও অনেক সময়ে পাওয়া যায় না। ঈশ্বরের ধারনা নিয়ে সুস্পষ্ট ঐক্যমত না থাকলে ঈশ্বর অস্তিত্ত্বশীল কি-না - এই বিতর্কের কোন যৌক্তিক পরিণতি সম্ভবপর হবে না। কারন, ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি পরম-ঈশ্বর আর ব্যক্তি-ঈশ্বর এর ধারনা এক নয়। তাই, ব্যক্তি-ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রদত্ত যুক্তি পরম-ঈশ্বরের ধারনায় আরোপ করা এক ধরনের শ্রেণীগত বিভ্রান্তি (categorical mistake)।
ঈশ্বর (পরম-ঈশ্বর অর্থে) মানে এমন এক সত্তা যা পরম, অসীম ও অতিবর্তী। ('God' is in its philosophical sense, 'something' or an 'entity' which is absolute, infinite and beyond....)
এ’ ধরনের এক পরম সত্তায় (absolute) বিশ্বাস হলো মানুষের একটি সাধারন অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য। আপনি একে প্রকৃতি বলুন, শুন্য বলুন, অসীম বলুন, অনন্ত বলুন, কিছু-নয়(nothing) বলুন; যা-ই বলুন না কেন; চিন্তার আকার হিসাবে (intrinsically) এক ধরনের ফিলোসফিক্যাল গড-এ আমরা সবাই বিশ্বাস করি।
যারা বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বর আছেন; তারা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর বিশ্বাসের প্রমান আছে। যারা নাস্তিক্যবাদকে গ্রহনযোগ্য মনে করেন তারা ব্যক্তি-মানুষের বাস্তব জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ঈশ্বরে (ব্যক্তি-ঈশ্বর) বিশ্বাস করেন না। তারা ‘বিশ্বাস’ করেন যে এ ধরনের ঈশ্বর না থাকার ‘প্রমান’ আছে। যারা সংশয়বাদী তারা এর কোনটিকেই গ্রহন করেন না অথবা দু’টিকেই সমগ্রহনযোগ্য মনে করেন। আর নির্বিকারবাদী হলেন তারা যারা এই বিষয়ে কোন আগ্রহ বা প্রয়োজন বা বাস্তব জীবনে এর কোন প্রাসঙ্গিকতা অনুভব করেন না। অর্থাৎ তারা মনে করেন যে, এ বিষয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই আমরা সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারি।
প্রসঙগতঃ উল্লেখ্য যে, ‘নাস্তিক’রা সাধারনত বিজ্ঞানবাদী হয়ে থাকেন। বিজ্ঞান চর্চা করা বা বৈজ্ঞানিক হওয়া এক ব্যাপার আর বিজ্ঞানবাদী হওয়া ভিন্ন ব্যাপার। বিজ্ঞানবাদীরা ‘বিজ্ঞান’-এ ‘বিশ্বাস’ করেন। যদিও বিজ্ঞান কখনো ‘নিশ্চয়তা’ দিতে পারে না। আবার নিশ্চয়তা ছাড়া জ্ঞান হতে পারে না। (কোন কিছুকে যখন আমরা সম্ভাব্য বলি তখনও সেটিতে একধরনের নিশ্চয়তা থাকে।যেমন, আমি যদি নিশ্চিত না হই যে, এটি সম্ভাব্য তাহলে আমি বলতে পারি না যে এটি সম্ভাব্য।) আমরা জানি, যে কোন বৈজ্ঞানিক ফলাফল/তত্ত্ব নীতিগতভাবে সম্ভাব্য ও অধিকতর ব্যাপক পরীক্ষণ সাপেক্ষে পরিবর্তনযোগ্য। বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নাই। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে অধিকতর গ্রহনযোগ্য অনুমান বা যুক্তিকে ‘প্রমাণ’ হিসাবে গ্রহন করা হয়। অপরিবর্তনীয় বা স্থায়ী কোন তত্ত্ব বা প্রমাণ বিজ্ঞানে নাই। জগতেও নাই।আমরা অপরিহার্য্য মনে করছি বা আমাদেরকে সন্তুষ্ট করে বলেই কথিত স্বতঃসিদ্ধসমূহ (axioms) আমাদের জ্ঞানের উৎস।কেন আমরা স্বতঃসিদ্ধসমূকে অপরিহার্য্য মনে না করে বা এগুলোর উপর সন্তুষ্ট না হয়ে পারি না? কারণ, আমরা দেহ ও চিন্তাগতভাবে নির্দিষ্ট অবয়বে সীমিত।কিন্তু, কেন? কারণ প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের দৈহিক ও চিন্তনের নির্দিষ্ট কাঠামো আছে। ‘প্রকৃতি’ কী? নাস্তিকতাকে যারা যুক্তিসঙ্গত মনে করেন তারা ‘প্রকৃতি’-তে বিশ্বাস করেন। লক্ষ্যণীয় হলো, তারা ‘প্রকৃতি’র উপর এমন সব গুণ বা বৈশিষ্ট্য আরোপ করেন, আস্তিকেরা যেগুলো হুবহু ঈশ্বরের জন্য দাবী করেন। সুতরাং, প্রকৃতি বলুন আর ঈশ্বর বলুন - একই কথা।ঈশ্বর-বিশ্বাসের জন্য ঈশ্বর, গড বা অন্য বিশেষ কোন শব্দ ব্যবহার করতে হবে এমন কোন কথা নাই।
ঈশ্বর-বিশ্বাস সম্পর্কিত সমস্যার কতিপয় মৌলিক দিক সম্পর্কে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই লেখা। আস্তিকতার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনার জন্য এটি লেখা হয়নি। তাই এখানে আপনার চিন্তনের উপাদান হতে পারে এমন দু’টি প্রশ্ন রেখে অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। আচ্ছা, মাপকাঠির মাপ কি? নাই ! সবকিছু যদি মাপ মতো হতে হয় তাহলে মাপকাঠির কোন মাপ থাকবেনা কেন? জ্ঞানের উপরিকাঠামোর জন্য যাকিছু সঠিক জ্ঞানের মৌলিক কাঠামোর জন্য তা হতে পারে মারাত্মক ভুল।তাহলে জ্ঞান দুই পর্যায়ে দুই ধরনের কেন?
আমি ঈশ্বর-বিশ্বাসী। কিন্তু তা প্রমান নির্ভর নয়। অথচ তা বিশ্বাস-মাত্র তথা অন্ধ-বিশ্বাসও নয়। আমার ঈশ্বর-বিশ্বাস আমার বিবেচনায় যথেষ্ট যুক্তি নির্ভর এবং এই যুক্তিগুলো আমার কাছে নিঃসন্দেহ ও অকাট্য মনে হয়। এ ক্ষেত্রে পাঠককে প্রমাণ, যুক্তি ও বিশ্বাস এই তিনটি পদ(term) কে আলাদা আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে।
তাই ঈশ্বর-এ বিশ্বাস করার যুক্তি আছে, না করারও যুক্তি আছে, এর মাঝামাঝি অবস্থানেরও যুক্তি আছে, আবার এ বিষয়ে না ভাবারও যুক্তি আছে। যার যার মানসিক প্রবণতাই নির্ধারন করে কোন্ কোন্ ‘যুক্তি’কে সে এ বিষয়ে ‘প্রমান’ হিসাবে ‘বিশ্বাস’ করবে। (স্মতর্ব্য, বিশ্বাস করা মানে গ্রহন করা।) সবচেয়ে বড় কথা হলো, ঈশ্বরও চান না মানুষ ‘প্রমাণ’ নিয়ে ঈশ্বর-এ ‘বিশ্বাস’ করুক। বিশ্বাস হলো এক ধরনের আবেগ। যুক্তি এর বাহন মাত্র। ‘প্রমাণ’ এখানে দাবী করা হয়, দেখানো যায় না। যুক্তির উর্ধে ও বিশ্বাস-মুক্ত ‘প্রমাণ’ একটি অলীক বিষয়।
আমাদের সকল জ্ঞানই মূলতঃ বিশ্বাস, কিন্তু সকল বিশ্বাস জ্ঞান নয়। জ্ঞান হলো সে সকল বিশ্বাস যা স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে সত্য এবং যাচাইযোগ্য। ‘Knowledge is justified true belief - Plato’ - জ্ঞানের এই ‘সংগা’ জ্ঞানতত্বে প্রাথমিকভাবে স্বীকৃত হওয়ার পাশাপাশি এই ‘সংগা’র অপর্যাপ্ততার বিষয়েও সব জ্ঞানতাত্ত্বিকরা একমত ! যেটি ‘গ্যটিয়ারের সমস্যা’ নামে পরিচিত। আশ্চর্য্য বিষয় হলো জ্ঞান-এর কোন সর্বজন স্বীকৃত সঙগা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। এতদসত্তেও আমরা প্রত্যেকে কম-বেশী জ্ঞান-এর অধিকারী। এটিকে বলা হয় ‘সক্রেটিসের প্রত্যয়’। এই দৃষ্টিতে জ্ঞানতাত্তিক সংশয়বাদ একটি স্ব-বিরোধী (self-refuting) মতবাদ।
জ্ঞান-গবেষণা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে আমি ফরাসী চিন্তাবিদ ভলটেয়ারের অনুসারী । যিনি অপরের ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত ছিলেন। আমি মনে করি না যে, সবাই আমার সাথে একমত হবে। এটি উচিতও নয়। কিন্তু তাই বলে ভিন্নমত প্রকাশের জন্য কাউকে এমন অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হবে মনে হবে যেন কাছে পেলে ও পারলে তাকে বা তাদের সবাইকে খতম করে দিবো - এমন মানসিকতার লোকজন আমার পোষ্টে দয়া করে অংশগ্রহন করবেন না। ধন্যবাদ।
So, is it that - you have to believe to live; no matter what you believe ....? Put your comments, please : 01552282907 [email protected]
http://www.mozammelhq.blogspot.com/
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:০২
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×