somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষণিকের রাজশাহীতে বিস্তর মুহুর্তগুলি

২৭ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রাণের শহর। আমার জীবনের শহর। সেটা রাজশাহী। ঢাকা থেকে যাওয়ার কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত সেখানে যাওয়ার। পারিবারিক, ব্যাক্তিগত কাজে। আর সেই সুযোগে আমার প্রিয় মানুষগুলোর সাথে তো দেখা না করে তো কোন ভুল করতে চাই না।

সেই মোতাবেক ঢাকা থেকে ২৫ জুলাই ২০০৮, সকাল ৮.৪৫ মিনিটে গ্রীন লাইনে চড়ে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে রাজশাহীতে পৌছানো। যাত্রা পথে পিছনে ফেললাম সবুজ ফসলের মাঠ আর থৈ থৈ পানির মাতাল স্রোত (চলনবিল)।

বাম পকেটের মোবাইলের ভাইব্রেশনের অনুভুতি পেলাম যখন কিনা বাস থেকে কেবল একটি পা মাটিতে দিয়ে আরেকটি পা বাসের পাদানিতেই ছিল। আমার প্রিয় ব্লগ বন্ধু শিবলী নোমানের ফোন। সেই ভরাট পরিচিত কণ্ঠ। তার প্রশ্নে উত্তরটা দিলাম যে, "কেবলই নামলাম বাস থেকে"। জানতে চাইলো কখন দেখা হচ্ছে? জবাবে বললাম, বাসায় গিয়ে একটু জরুরী কাজটা শেষ করেই আসবো আড্ডাতে।

চারটা খেয়ে উঠতে না উঠতেই মামুন ভায়ের ফোন। কথা দিলাম "আসছি আমি দেখা করতে"। হঠাৎ জার্নি করাতে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। মামুন ভায়ের যেন তর সইছিল না ঠিক আমার মতই। নির্বাচনের প্রচারনার মিছিলের পিছনে পড়েই তেরোটা বাজলো তার বাড়ী পৌঁছাতে। দেখলাম মামুন ভায়ের জলন্ত সিগারেট হাতে রাস্তায় পায়চারি। শেষে বেশ কিছুক্ষণ তার বাসায় বসে আড্ডা। ফ্লোরে বিছানো মোটা জাজিমের উপর বসে চললো তার সাথে কথাবার্তা। দেখালাম দেয়ালে সাঁটানো বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা তার ছবিগুলো। পুরো ঘরের এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো শাশ্বত বিষয়ক ডকুমেন্ট আর সিডি গুলো। ওয়াল র‌্যাকে ঠাসানো বিভিন্ন বই বার বার আমার মনোযোগ কাড়ছিল। আড্ডার একটি অংশ ছিল সিগারেটকে ধোঁয়া আর ছাই বানানোর পালা।

সেখান থেকে বিদায় নিয়ে ছুট দিলাম শহরের জিরো পয়েন্টের প্রেসক্লাবের দিকে। সেই পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দালান। রিক্সা থেকে নেমেই পড়ে গেলাম নষ্টালজিয়ায়। মনে পড়ে গেল সেই বেশ কয়েক বছর আগের উচ্ছল দিনগুলোর কথা। আহা সেই দিনগুলো কতই না ভাল ছিল! কোথায় আজ সেই পুরোনো বন্ধুগুলো? এখন যে যার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। পুরোনো সিঁড়ি ভেঙ্গে তিন তলাতে দেখা পেলাম সালাউদ্দিন মোহাম্মদ সুমনের। অবশ্য ফোনে আগেই বলেছিলাম আমার যাওয়ার কথা। সেখানেই পরিচয় হলো সাইদূর রহমান ভায়ের সাথে যিনি কিনা রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক। আকাশ ভায়ের খোঁজ করতেই সুমন ফোনে জানিয়ে দিলো ওনাকে, আমি ওখানে গিয়েছি। আকাশ ভাই আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন মিনিট বিশেক। উনি আসলেন ওনার দেয়া টাইমের আরো আগেই।

আমার সাথে যাওয়া শ্যালকের সাথে আকাশ ভাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেন সুমন "মিলটন" বলে । মিলটন মনে করেই আকাশ ভাই পরিচয় পর্ব সারলেন আমার শ্যালকের সাথে। দু চারটি কথাও চালানের ওর সাথে। আমি তখন উল্টো হয়ে ব্লগিং এ ব্যাস্ত সুমনের পিসিতে। অবশেষে হাসি আর চাপিয়ে রাখতে না পেরে নিজেকে পরিচয় দিলাম মিলটন নামে। স্বশব্দে হেসে উঠলেন আকাশ ভাই। হ্যাঁ, উনিই আমাদের জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ভাই। আকাশ ভায়ের আছে অনেক দেবার মত সমৃদ্ধ পরিচয়। উনি রীতি মত একজন প্রতিবাদী যুবক সাংবাদিক। উনি যে সাহস দেখিয়েছেন, সে সাহস সাধারন কোন সাংবাদিকের হয় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে, দেশের এক উর্দিপরা দলের হাতে নির্যাতনের কাহিনী আপনারা নিশ্চই আগেই জেনেছেন এই ব্লগের মাধ্যমে। শত নির্যাতন যাকে দমাতে পারেনি। কলম দিয়ে বেরিয়ে এসেছে সেইসব মূহুর্তগুলোর কথা,আর সেগুলই লিপিবদ্ধ হয়ে প্রকাশ হয়েছে একটি বই, নাম "অন্ধকারে ১৫ ঘন্টা"। তারই একটি কপি আমি উপহার পেলাম তার কাছ থেকে তার অটোগ্রাফ সহ। ওখানে শুভেচ্ছাবানীতে নিজ হাতে আমাকে লিখে দিয়েছেন, "প্রিয় ব্লগার, যার লেখা, সমালোচনা সহস যোগায় আমাদের মত ক্ষুদ্র লেখিয়েদের।" এই উক্তিটি অন্যকারো তরে হলে আপত্তি ছিল না, পুরো লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন উনি আমাকে।

আর হ্যাঁ সালাউদ্দিন মোহাম্মদ সুমন, সে তো এক কবি, সাংবাদিক। আপনারা সবাই চেনেন। তবে "এই কবির প্রতিটি কবিতাটিতে ব্যর্থ প্রেমের হাহুতাশ"- কথাটি অবশ্য আমার নয়, এটা রাজশাহীর লেখক পরিষদের সাধারন সম্পাদক ড. তসিকুল ইসলাম রাজার। সুমনের কাব্যগ্রন্থ গুলোর প্রথমটি "না প্রেম না দ্রোহ" আমি তার কাছ থেকে অটোগ্রাফ সহ উপহার হিসেবে পেয়ে নিজেকে যার পর নাই ধন্য মনে করেছি।

সুজন আর শিবলী অপেক্ষা করছিল ওদের সমকাল এর কার্যালয়ে। আমার দেরীর জন্য শিবলীর সাথে দেখা হলো না। লোডশেডিং পেরিয়ে চারতলায় উঠলাম "সমকাল"এ। পথে "স্টাইল জোন আর হিলসা"র সামনে দাড়িয়ে কালপুরুষ'দায়ের কিছু সৃত্মিকথা জাবর কাটলাম আমার শ্যালকের সাথে। কারণ ঐ প্রতিষ্ঠান দুটি কারপুরুষ’দায়ের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। চারতলাতে দেখলাম সুজন ব্লগে ব্যাস্ত। আরো পরিচয় হলো নব্য ব্লগার সৌরভের সাথে। কথা হলো অনেকক্ষণ। তারপর একসময়ে বিদায় নিলাম ওখান থেকে।

চেষ্টা করেছিলাম সফরের বিশেষ আকর্ষণ মহাকবি মাইকেল মেহেদী‘র সাথে দেখা করার জন্য। অনেকবার ফোন করেও তার সাথে কথা বলতে পারলাম না। পরে অবশ্য উনি আমার নাম্বার চিনে ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করেছিলেন। জানতে পারলাম তার মোবাইলে টাকা না থাকার জন্য সে সেটা ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলেন। উনি অবশ্য একটু ব্যাস্ত কারণ ওনার পরিবারের একজন নির্বাচন প্রার্থী।

রয়ে গেল আরো অনেক পরিচিত সব ব্লগ বন্ধুরা। যাদের সাথে দেখা করার মত সময় ছিল না। এভাবে খুব সংক্ষিপ্ত সফরের থলি ভর্তি হলো বেশ কিছু ভারী মুহুর্ত দিয়ে।

ছবি:
== চলনবিল, যেন থৈ থৈ পানির মাতাল স্রোত। তার মাঝে জেগে থাকা সবুজ চর।
== কোন এক কৃষকের অহংকার, সবুজ মাঠ।
== একটি মোবাইল অপারেটরের সৌজন্যে রাজশাহী সিটির সবুজায়নের এক অংশ।
== মামুন ভায়ের বাসার সামনের ট্রাফিক মোড় (তালাইমারি)।
== দেয়ালে সাঁটা ছবি গুলোর বর্ণনায় ব্যাস্ত মামুন ভাই।
== শাশ্বত ফান্ডের জন্য রাজশাহী ভার্সিটির ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্বোগে তৈরী একটি টি-শার্ট
== শাশ্বত উপরে তৈরী একটি বুকলেট যেগুলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ পদগুলো বরাবরে পাঠানো হবে।
== অটোগ্রাফ দেয়ায় ব্যাস্ত আকাশ ভাই, সাথে সঙ্গী সুমন।
== সুমন, সুমনের কাছ থেকে উপহার পাওয়া তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ হতে আমি আর আকাশ ভাই।
== সুজন, আমি আর নব্য ব্লগার সৌরভ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৪
১৮টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×