সালটা ২০০৪, সময়টা বছরের শেষে। আমার ছোটবোনের বিয়ে দেই রাজশাহীতে। ছেলে ভালো, চাকুরী করে বাংলাদেশ বিমানে এয়ারলাইনসে। তখন পোষ্টিং ছিল রাজশাহীতে। বিয়ের অনুষ্ঠানও হয় রাজশাহীতে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বিয়েতে যোগ দিয়েছিলাম। ছুটি পেয়েছিলাম ৬ দিন। বড় ভাই হিসেবে অনেক কাজ ছিল। আমার বাবা দেশে ছিলেন না।
বোনকে বিদায় দিয়ে আম্মাকে নিয়ে ঢাকা বাসায় ফিরে আসি। আম্মা ডায়বেটিক পেসেন্ট। তার এই অসুখ অনেক পুরানো। আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন ধরা পড়ে। যাই হোক, ঐ সময়টা উনি অনেকদিন যাবত বিভিন্ন অসুখে ভুগছিলেন। উনার পেটে প্রচন্ড ব্যথা হতো, এসিডিটি হতো ইত্যাদি। উনি খুবই কম খাবার খেতেন। মামা ডাক্তার। কাছাকাছি বাসা হওয়াতে আমরা ওনার পরামর্শেই নিতাম। আমাদের ফ্যামিলিতে আবার ডাক্তারের আধিক্য।
আম্মা বাসায় একলা থাকে। আমি অফিসে চলে যাই। ফিরে আসি সন্ধ্যার পরে। এই পুরোটা সময় যে কিভাবে কাটতো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। একদিকে আমার চাকরী, আরেকদিকে আম্মা। এক মূহুর্তও স্বস্তি পেতাম না। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করতাম। কোন কাজের লোক বা কোন আত্মীয় স্বজন জোগাড় করতে পারিনি যে তারা এসে আম্মার কাছে একটু থাকবে। রান্নার আর কোন কাজ আম্মা করতে পারতো না তখন।
রিপোর্টে ধরা পড়লো আম্মার গলব্লাডারে পাথর হয়েছে। এবং সেটা খুব সিভিয়ার পর্যায়ে। এই মুহুর্তেই অপারেশন করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটার তো প্রিপারেশন দরকার। বিভিন্ন ঔষধ দিয়ে সেটাকে ম্যাচিওর করতে হয় অপারেশনের জন্য। আমি অফিস থেকে ফিরলে আম্মা যে আমার দরজাটা খুলে দিবে সে অবস্থা আর থাকলো না। উনি একেবারে বিছানায় পড়ে গেলেন। জীবনের কি যে চরম মুহুর্ত ছিল তা এখন চিন্তা করলে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।
অফিস থেকেও ছুটি নিতে পারি না। আমার কাজ আমাকেই করতে হয়। অনেকদিন বাসায় কাজ নিয়ে এসে পিসিতে সারারাত ধরে করেছি। বাসার কাজ করেছি। রান্না করেছি। আমার কাছে সবচেয়ে ভয়াবহ সময় ছিল যখন আমি অফিসে থাকতাম আর আম্মা বাসায় একলা অসহায় সময় কাটাতো।
আম্মা বারবারই অনুভব করতেন বাসায় আরেকজন মানুযের দরকার। সেটা আমার স্ত্রী হলে ভালো হয়। আর তাছাড়া যেহেতু আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাই অতিসত্তর আমার বিয়েটা উনি দিতে চাইছিলেন। এসব কথা আমার সাথে শেয়ার করেছিলেন উনি। কিন্তু তখন এই ধরনের কথা ভাবার কোন সময়ই আমার বা তারও ছিল না।
অপারেশনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। বাংলামোটরের একটা প্রাইভেট হাসপাতালে আম্মার গলব্লাডার টোটালি রিমুভ করা হলো। অপারেশন করলেন আমার এক দুঃসর্স্পকে নানা আর মামা।
চলবে.............
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





