somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নাস্তিক ভাবনা(৫) : আল্লাহ কে?

২৫ শে মে, ২০০৮ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বিবেচনায় মানুষের নাস্তিক হবার অন্যতম কারন আল্লাহ বা স্রস্টা সম্পর্কিত ভুল ধারনা। যদি একজন নাস্তিককে প্রশ্ন করা হয় তুমি যে ইশ্বরকে অস্বীকার করছ সেই ইশ্বর কে? তাহলে তার উত্তরে সে তাই বলবে যা তার ধর্ম তাকে শিখিয়েছে বা যে সমাজে সে বড় হয়েছে সেই সমাজে ইশ্বর বলতে মানুষ যা বোঝে। কিন্তু ইসলাম যে আল্লাকে বিশ্বাস করতে বলে সেই আল্লাহ সম্পর্কে কি সে জানে? জানে না, যদি জানত তাহলে আল্লাহকে অস্বীকার করা এত সহজ ছিল না। হ্যা যে ইশ্বরের বৈশিস্টগুলো মানুষেরমত, যার আকার আকৃতি আছে, যার স্ত্রি-পুত্র পরিবার আছে তাকে ইশ্বর হিসেবে অস্বীকার করা খুবই স্বাভাবিক এবং বিজ্ঞানীরা মুলত ইশ্বরের এইসব ধারনাকে অস্বীকার করে - সত্যিকারের আল্লাহকে অস্বীকার করার ক্ষমাতা বিজ্ঞানের নেই।
প্রথমেই আসুন আমরা দেখি সৃস্টি রহস্যটা কিরকম। আমরা বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে জানি যে এই বিশ্বজগতে কার্যকারণ ছাড়া কিছুই ঘটে না। স্রস্টা ছাড়া কোন কিছুই সৃস্ট হতে পারে না। এক টুকরা কাগজ দেখে শতভাগ নিশ্চিত ভাবে বলা যায় কোথাও না কোথাও একটা পেপার মিল অবশ্বই আছে।
আসুন এই স্বীকার্য অনুযায়ী চিন্তা করা শুরু করি - ধরি যেকোন বস্তু "ক" এর অস্তিত্বের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত, তাহলে আমারদের স্বীকার্য অনুযায়ী এমন কিছু "খ" অবশ্বই আছে যা "ক" কে সৃস্টি করেছে বা "ক" এর অস্তিত্বের পিছনে কারণ হিসেবে কার্যকর আছে। এখন এই যুক্তি অনুযায়ী "খ"এর অস্তিত্ব প্রমানিত হবার সাথে সাথে এটাও প্রমানিত হয় যে এমন কিছু "গ" আছে যা "খ" এর স্রস্টা বা "খ" এর অস্তিত্বের জন্য দায়ী ... এভাবে চিন্তা করলে একটা অসীম চক্র(ইনফাইনিট লুপ)পাওয়া যাবে যা কোন সেন্স বা অর্থ তৈরী করতে অক্ষম - তাহলে কি আমারদের প্রথম স্বীকার্য ভুল? না তা নয়, করন "কার্যকারণ ছাড়া কিছু হয় না" এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত সত্য। তাহলে এই অসীম চক্র সমাধানের উপায় কি? একমাত্র উপায় হচ্ছে একটা বাউন্ডারী কন্ডিশন সেট করা। সেই বাউন্ডারী কন্ডিশন হচ্ছে "এই চক্রের শেষে কোন এক পর্যায়ে এমন কোন সত্বা থাকবে যা কার্যকারণ ছাড়াই বা স্রস্টা ছাড়াই সৃস্ট হবে। ফলে সেখানেই চক্র থেমে যাবে এবং সেই শেষ সত্বা যার কোন স্রস্টা নেই তিনিই আল্লাহ। এবং যেহেতু তিনি স্রস্টা ছাড়াই আছেন অর্থাৎ আমাদের প্রথম স্বীকার্য তার উপর কার্যকর নয় সেহেতু তিনি এই বিশ্ব জগতের অংশ হতে পারবেন না - এই বিশ্ব জগতের কোন বৈশিস্ট তাঁর মধ্যে থাকতে পারবে না।
নাস্তিকরা এই আদি স্রস্টা বা First Cause এর স্থানে প্রকৃতিকে বসাতে চায়। তারা বলে এই বিশ্ব প্রকৃতি সয়ম্ভু - কোন স্রস্টা ছাড়াই অনন্তকাল ধরে আছে অনন্তকাল থাকবে। তাদের এই দাবি গ্রহনযোগ্য নয়, কারণ -
১. এই বিশ্ব জগতেই বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান করা হয়েছে যে কার্যকারণ ছাড়া কিছু হয় না, তাহলে এই বিশ্ব জগৎ কিভাবে স্রস্টা ছাড়া সৃস্ট হবে। এই জগতের অংশ নন বলেই আল্লাহ স্রস্টা ছাড়া সৃস্ট হতে পারেন। যদি পারত তাহলে আমার হাতের কলমটিও এমনি এমনি সৃস্ট হতে পারত।
২. থার্মোডায়নামিক্স এর সুত্র অনুযায়ী জগতের এন্ট্রপি(বা বিশৃংখলা) ক্রমবর্ধমান। এই ক্রমবর্ধমান বিশৃংখলার মধ্যে কোন কার্যকারণ ছাড়া সুশৃংখ্যল কিছু এমনি এমনি তৈরী হওয়া অসম্ভব।
৩. সাম্প্রতিক আবিষ্কার বিগব্যাং প্রমান করেছে যে এই বিশ্বজগত আদি থেকে অনন্ত পর্যন্ত স্থীতিশীল নয়। এর সুচনা ছিল। তাহলে যার সুচনা আছে তার শেষও থাকবে, তার সুচনা করীও থাকবে। সুতরাং এই প্রকৃতি যে আদিশ্রস্ঠা বা First Cause নয় তা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত।

ইসলাম এই একক, আদি স্রস্টা, নিরাকার, অনন্ত-অসীম সত্বাকেই আল্লাহ বলে স্বীকার করে। এই আল্লাহকে আপনি অস্বীকার করবেন কিভাবে? এই আদি স্রস্টকে অস্বীকার করলে সৃস্টি রহস্যের তো সমাধানই পাওয়া যাবে না - এই বিশ্ব জগত সম্পুর্ন অর্থহীন হয়ে যাবে। হ্যা আপনি যদি সমাধান না চান - বিভ্রান্তিই যদি আপনার কাম্য হয় তাহলে কোন কথা থাকতে পারে না - কিন্তু যদি আপনি সমাধান চান তাহলে এই আদি একক স্রস্টা আল্লাহকে মেনে নেয়া ছাড়া আপনার কোন পথ নেই।
আর কোরআনে আল্লাহর হাত, আসন এসব বিষয়ে যে কথা বলা হয়েছে তার সবই প্রতীকি অর্থে - মানুষের বোঝার সুবিদার্থে - এবং এজন্যই এসবের কোন প্রতিকৃতি, কোন মডেল তৈরীর অনুমতি দেয়া হয়নি। এর বাইরে যত দেব-দেবী-ইশ্বরপুত্র যা কিছু আছে তার সবই মানুষের মনগড়া চিন্তা-ভাবনা, ইসলাম তার সবকিছুই অস্বীকার করে। ড. জাকির নায়েক ব্যাপক গবেষনা করে দেখিয়েছেন প্রধান ধর্মগ্রন্থগুর আদী সংস্করনে এই একক নিরাকর অনন্ত-অসীম ইশ্বরের কথাই বলা আছে। পরবর্তীতে মানুষ তার অজ্ঞতার কারণে সেগুলো বিকৃত করে নিজেদের মত ইশ্বর বানানোর চেস্টা করেছে - এজন্য সেই সব মানুষই দ্বায়ী - ইশ্বর বা আল্লাহ নন।

সৃস্টি তত্বের অসীম চক্র সম্পর্কে বিজ্ঞানও অবগত। প্রকৃতির বিভিন্ন নিয়মকানুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিজ্ঞান এই চক্রের স্তরগুলো জানার চেস্টা করে যাচ্ছে - কিন্তু তারা কখনই এই চক্রের সম্পুর্ণ সমাধান করতে পারবে না। উদাহরণ হিসেবে ধরুন বৃস্টির কথা। বৃস্টি যখন আছে তখন অবশ্বই তার স্রস্টা আছে - এক সময় আমরা জানতাম না বৃস্টির পিছনে কি কার্যকারণ আছে - তাই আমরা সরাসরি বৃস্টির স্রস্টা হিসেবে আল্লহকেই বর্ননা করতাম। এখন বিজ্ঞান জানাল যে বৃস্টির কারণ হচ্ছে পানিচক্র। এখন আমরা বলি আল্লাহ পানিচক্রের মাধ্যমে বৃস্টির ব্যাবস্থা করেন। আমরা সৃস্টি তত্বের একটা চক্র অতিক্রম করলাম মাত্র - কিন্তু সাথে সাথেই প্রশ্ন তৈরী হল - পানি চক্র কে বানাল? যদি বলি সুর্যের তাপ হচ্ছে পানি চক্রের স্রস্টা - তাহলেও প্রশ্ন আসবে - তাপ কে বানাল? এভাবে বিজ্ঞান যতই অগ্রসর হবে সৃস্টি তত্বের এক একটা চক্রের, এক একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে - কিন্তু কখনই পুর্নাঙ্গ সমাধান পাওয়া যাবে না - কারণ বিজ্ঞান সুধুমাত্র সৃস্ট জগতের মধ্যেই সীমিত। আর সৃস্ট জগতের মধ্যে থেকে স্রস্টকে সম্পুর্ন জানা অসম্ভব। শুধুমাত্র অনুভব করাই সম্ভব যে একজন স্রস্টা আছেন - তার বেশি কিছু নয়।
এখন কেউ যদি এই সীমিত জ্ঞান নিয়ে দাবি করে - "পানি চক্রই তো বৃস্টির করণ - এখানে আল্লাহর কাজ কি?" তাহলে তাকে আমি প্রশ্ন করি -"আমি সুইচ টিপি বলেই তো লাইট জ্বলে এখানে পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ কি?" আমার প্রশ্নটা নিতান্তই মুর্খের মত মনে হবে-কারণ আমরা জানি লাইট জ্বলার পিছনে কি কার্যকারণ আছে। তাহলে আমরা যখন বলছি "পানি চক্রই তো বৃস্টির করণ - এখানে আল্লাহর কাজ কি?" তখনও মুর্খের মতই কথা বলছি - কিন্তু অজ্ঞতার কানে সেটা বুঝতে পারছি না, মনে করছি বিরাট জ্ঞানের কথা বলে ফেলেছি।

আমার বৃস্টির উদাহরণকে ভিত্তি ধরে নাস্তিকরা বলবে -"বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে ইশ্বরের ক্ষমতা বা কার্যক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এভাবেই বিজ্ঞান একদিন ইশ্বরের প্রয়োজনীয়তাই বাতিল করে দেবে।" আমি জানি ওনারা এই কথা বলবেন - করণ ওনাদের জ্ঞানের উৎস - নাস্তিক সাহিত্য (যার প্রতিটি বক্তব্য ওনারা ধর্ম গ্রন্থের চেয়েও দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করেন) সেখানে এ'ধরনের কথা বলা আছে। এই কথার উত্তরে বলছি-
১. বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আল্লাহর ক্ষমতার, সৃস্টিশীলতার বিশালতাই বরং প্রমানিত হচ্ছে। আজকে আমরা জানি তাঁর সৃস্ট জগত শুধুমাত্র পৃথিবীতে সীমিত নয় বরং বিলিয়ন বিলিয়ন আলোক বর্ষ ব্যাপি বিস্তৃত। এমনকি এই চতুর্মাত্রিক জগতের বাইরেও অন্য জগত থাকতে পারে। এই বিশাল-বিপুল জগত তো তার শ্রেস্ঠত্ব এবং বিশালতাই প্রমান করে। এভাবে বিজ্ঞান যত অগ্রসর হবে আমরা আল্লাহকে তত শক্তিশালী হিসেবেই দেখতে পাব। এজন্যই ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাকে উৎসাহিত করে - "আল্লাহর সৃস্টি সম্পর্কে চিন্তা করে একটি সকাল ও সন্ধা ব্যায় করা সারা দিন ও রাত নফল ইবাদত করার চেয়ে উত্তম।"
২. বিজ্ঞান পানিচক্রসহ সৃস্টি রহস্যের কোন কিছু আবিষ্কারের অনেক অনেক আগেই কোরআনে আল্লাহর নিরাকার, অনন্ত-অসীম, দুনিয়ার কোন কিছুর সাথে অতুলনীয় পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সাথে সাথে ইশ্বরের পরিচয় পাল্টে যাচ্ছে - এ'কথা অন্য ইশ্বরদের বেলায় প্রযোজ্য হলেও হতে পারে - কিন্তু ইসলামের আল্লাহর ধারনা গত দেড় হাজার বছর ধরে একই আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত একই থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:১৮
৫০টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×