আল কোরআন। মিরাকেল ও আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন সম্বলিত এক আসমানি কিতাব । সমগ্র মানব জাতীর জন্য নূর। পথ প্রদর্শক।
নাযিল হয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর।
আমরা একটা জিনিশ হয়ত সব মুসলিম রা ই জানি যে কোরআন এর প্রত্যেকটি লাইন বা বাক্য কে আয়াত বলা হয়। আয়াত শব্দের পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে নিদর্শন। আমরা জানি চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র সব কিছুই আল্লাহ তাআলার মহাত্য বর্ণনা করে। এগুলি হচ্ছে আল্লাহর তাআলার নিদর্শন। ঠিক তেমনি ভাবে কোরআন এর প্রত্যেকটি উক্তি আমাদের কে আল্লাহর একক আধিপত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এগুলো ও ঠিক তেমন ই আল্লাহ তাআলার নিদর্শন। এগুলোকে কেন নিদর্শন বলা হয় তা নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলাপ করা যাবে।
মহানবী (সঃ) বলে গেছেন, "আমার আগে প্রত্যেক নবীকে অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল । আর আমাকে দেয়া হয়েছে সবচেয়ে চিরস্থায়ী মুজেজা। আল কুরআন। সুতরাং কেয়ামতের দিন আমার উম্মতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশী হবে আশা করা যায়।"
আমার লেখার মূল বক্তব্যে আমি তুলে ধরতে চাই একটি কিতাব কিভাবে অলৌকিক বা মুজেজা হতে পারে। যেটা কেয়ামত পর্যন্ত মুজেজা হিসেবে ই সমগ্র মানব জাতীর হাতের নাগালে থাকবে। আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস থাকবে আল কুরআন এর মুজেজাগত দিক গুলো তুলে ধরা ।আমরা যদি কোরআনকে বুঝতে এবং কুরআন যে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাযিল হয়ছে এবং তা যে মানুষের কথা হতে পারে না তার অকাট্য প্রমান যদি তুলে ধরতে পারি এবং নিজেরা অনুধাবন করতে পারি ইনশাল্লাহ আমাদের ঈমান এতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রথমে একটি সাধারন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক। বিজ্ঞানী নিউটন কে আমরা সবাই চিনি। উনি বলেই দিলেন প্রত্যেক ক্রিয়ার ই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। আমরা যারা সাইন্স এর ছাত্র মোটামুটি সবাই জানি যে এটা নিউটনের তৃতীয় সূত্র। আমরা এটাকে মেনে নিয়েছি কারন এটা একটি বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট বা চিরন্তন সত্য। আচ্ছা?? সত্যি কি তাই?? যদি তাই হয় তবে কেন?? কেন আমরা তার কথা কে বিশ্বাস করে নিব?? কেন আমরা এটাকে মেনে নিব?? নিউটন সাহেব ও নিশ্চয়ই এরকম বিপাকেই পরেছিলেন। সহজেই তো মানুষ মেনে নিবে না। তবে কেই বা তাকে উদ্ধার করল? অনেকেই হয়ত বা ধারনা করতে পারছেন যে তার সাহায্য নিতে হয়েছিল গনিতের। কাগজে কলমে গনিতের মাধ্যমে প্রমান করেছিলেন তার এই সূত্র যে কারনে আমরা একে এখন চিরন্তন সত্য হিসেবে ধরে নিয়েছি।
আমার কথার মূল বক্তব্য হচ্ছে গনিতের এক আশ্চর্যজনক ক্ষমতা আছে। যা বিজ্ঞানের অন্য কোনশাঁখার নেই। কোন কিছুই ফ্যাক্ট হিসেবে আমরা মেনে নিব না যতক্ষন না আমরা কাগজে কলমে তার গানিতিক কোন ব্যাখ্যা পাচ্ছি।
আমি যদি বলি ১+২ = ৩। কেউ ই আমার সাথে দ্বিমত হবে না সে নাস্তিক আস্তিক হিন্দু বুদ্ধ যে কোন ধর্মের অধর্মের ই হোক না কেন। গণিতের এই অসম ক্ষমতার জন্য বিজ্ঞানের সকল শাখাই কোন না কোন ভাবে আংশিক অথবা পুরপুরি ই গণিতের উপর নির্ভরশীল।
আচ্ছা এখন মনে একটা প্রস্ন আসতে পারে। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন যিনি নিজেই অঙ্কের সৃষ্টিকর্তা তিনি কি তার প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাবে গণিতের কোন মুজেজা রাখবেন না?? যেখানে তিনি পলিটিকাল সায়েন্স, হিস্ট্রি, প্রফেসি, আধুনিক সায়েন্স , কোয়ান্টাম সায়েন্স সহ অন্যান্য বিষয়ে আলোকপাত করেছেন???উত্তর টা না হওয়াটা বোকামির সামিল। আল্লাহু আলম।।
আজ একটি ছোট উদাহরন দিয়ে আমি এই সিরিজ টি শুরু করতে যাচ্ছি। প্রথমেই আমি বলে নিচ্ছি আল কুরআন পাঠের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং তার বিধি বিধান থেকে যেন আমরা হেদায়াত নিয়ে জীবনের সর্বস্তরে কাজে লাগাতে পারি। আর আমার লেখাটি মুলত দুর্বল ঈমান এর মুসলিম ও নাস্তিকদের জন্য যারা মনে সঙ্কা রাখে আসলেই কি কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে কিনা।।
আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বিভিন্ন শপথ রেখে তার বাণী পেশ করছেন। তার শপথ গুলো প্রত্যেকটার মধ্যে সুগভীর তাৎপর্য রয়েছে যা অনুধাবন করার চেষ্টাই আমাদের বুঝাতে সক্ষম হবে তার গাম্ভীর্য। এরকম একটি শপথ নিয়ে আমি আলোচনা তে যাচ্ছি।
"কসম যা জোড় ও বিজোড়ের"
(আল ফাজর ৮৯:৩)
আল্লাহ তাআলা এই শপথের মাধ্যমে আসলে কি বুঝাতে চেয়েছে সে সংক্রান্ত প্রায় ৩৫ টির মত তাফসির রয়েছে। হতে পারে ৩৫ টি ব্যাখ্যাই সঠিক । আল্লাহ তাআলার একটি আয়াত এর মর্ম আসলে একাধিক হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। পরবর্তী অন্য এক সিরিজে এ সংক্রান্ত একটি লেখা রাখব ইনশাআল্লাহ। সাম্প্রতিক কালে কুরআনের ম্যাথমেটিক দিক টা উঠে আসার পরে এই আয়াত এর একটি অন্য রকম ব্যাখ্যা ইসলামিক স্কলার রা দিয়েছেন। (ডঃ সাব্বির আলীর এই সংক্রান্ত কিছু রিসার্চ আছে।)বাখ্যা টা এই রকম-
সমগ্র কুরআন কে আমরা দুই ভাগে ভাগ করব ।। কিসের উপর ভিত্তি করে?? ঠিক ধরেছেন জোড় বিজোড়ের উপর ভিত্তি করে। তার আগে একটি ব্যাপার ক্লিয়ার করে নেই। সুরা বাকারা এর আয়াত সংখ্যা ২৮৬ এবং এই সুরার ক্রমিক নং ২। তাহলে সুরা আল ফাতিহা এর আয়াত সংখ্যা ৭ এবং এর ক্রমিক নং কত??? !! ১।যারা কুরআন পড়েন তাদের কাছে ব্যাপার টা স্পষ্ট হয়ে গেছে আশা করি। ঠিক তেমনি সুরা নাস এর আয়াত সংখ্যা ৬ এবং এর ক্রমিক নং ১১৪।
সমগ্র কুরআন এ ১১৪ টি সুরা আছে । চলুন একে দুই ভাগে ভাগ করা যাক। কিসের ভিত্তিতে?? জোড় বিযোড়ের ভিত্তিতে। দেখা গেল তার মধ্যে টোটাল ৫৪ টি সুরা আছে যার বিযোড় আয়াত ( উদাঃ সুরা ফাতিহা ৭ আয়াত) এবং ৬০ টি সুরা আছে যার জোড় আয়াত। উদা (সুরা বাকারা ২৮৬)।
আর ও একটু গভিরে যাই। এই ৫৪ টি বিজোড় আয়াত সম্বলিত সুরা কে কি আর ভাগ করা যাবে জোড় বিজোড়ের ভিত্তিতে?? বুদ্ধিমান রা একটু ভেবেচিন্তে উত্তর দিবেন।
যাই হোক আমি ই উত্তর দিয়ে দিচ্ছি অবশ্যই যাবে। কিভাবে?? ক্রমিং নং এর ভিত্তিতে । উদাঃ সুরা ফাতিহা আয়াত ৭। এর ক্রমিক নং ১। যেটা বিজোড় ক্রমিক নং এ পরছে । আবার সুরা ইয়ুসুফ এর আয়াত ১১১ কিন্তু এর ক্রমিক নং ১২ অর্থাৎ এটি জোড় বিভাগে পড়েছে।
আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা গেল এই ৫৪ টি সুরা ২৭ টি জোড় ক্রমিক আর ২৭ টি বিজোর ক্রমিক সিরিয়াল এ পরেছে। নাস্তিক রা বলবে কো ইন্সিডেন্স। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম।
বাকি রইল জোড় বিভাগের ৬০ টি সুরা। চলুন দেখা যাক একেও সেইম ফরমুলা তে ফেললে কি দাড়ায়।
৩০ জোড় ক্রমিক। ৩০ বিজোর ক্রমিক। সুবহানআল্লাহ।। যারা এখন ও এটাকে কো ইন্সিডেন্স ভাবছেন তাদের জন্য আপতত দুঃখ প্রকাশ ছাড়াও আর একটি উপদেশ রয়েছে । আপনারা এই কো ইন্সিডেন্স গুলো নোট করতে থাকুন। ইনশাল্লাহ একদিন আল্লাহ তাআলা আপনাদের হেদায়েত দিবেন ; এই শপথ এর আয়াত নিয়ে পরবর্তী সিরিজে আরও অনেক কিছু ই লিখব আজ কেবন ভুমিকা হল ইনশাল্লাহ সময়ের অভাবে এটুকুই রইল।




সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



