somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেদনার অবগুণ্ঠনে

০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে কিছু প্রতিজ্ঞা করি নিজের কাছে। আর প্রায়শই তা হৃদপিণ্ডের মাঝ বরাবর তুমুল নাচনে দোল খায় আর মনে করায় -- বেঁচে থাকতে হবে। আমি বেঁচে থাকবো; প্রিয় মানুষেরা থাকুক আর না থাকুক।

ঝাউ বনানীর আড়াল থেকে হাতকাটা নুলিয়ার আর্তনাদে যারা কেঁপে ওঠে কিংবা ভয় পাবার ভান করে তাদের জন্য স্পষ্টতই বলতে চাই তাদের ছায়া মাড়াতে আমার সত্যিই আর ভাল লাগেনা। নানান চলমান দীনতায় তারা অসুস্থ জীবনযাপনের খোলসে আটকা পড়ে গেছে এরকমটাই আমার মনে হয় কেন যেন।

বিবেকের যথার্থ ব্যবহার , নিজ দায়িত্ব পালন , মানবিক মূল্যবোধের শুশ্রূষায় অনীহা আজকাল মনুষ্যত্বের বড্ড অভাবের কথাই মনে করিয়ে দেয় আমাকে । যে কারণে এসব লোকদের চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি। কিন্তু প্রায়শই চক্ষুলজ্জা নামক সূক্ষ্ম বোধের কারণে নানান বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় , না পারতে একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয় অনিচ্ছায়। দিন – রাত্রির চব্বিশ ঘণ্টা সময় থেকে ৪ ঘণ্টা সময়কে ঘুম বা তন্দ্রাবেশের জন্য বিছানায় এলিয়ে দিলেও বিশটি ঘণ্টা বিরক্তি , একঘেয়েমি , হালকা বিনোদন খোঁজা বা নেট ব্রাউজ করে সময় কাটানোতে বেঁচে থাকার উত্তেজনা খুঁজে নিতে বেহায়া মনটা তৃপ্ত হয়না । তবু আমার মনে হয় নিজের মন এবং মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পারলে ব্যক্তিমাত্রই বুদ্ধিমত্তার মাপকাঠিতে উতরে যেতে পারবেন ।

১।

ভোরের আযানকে সুললিত মনে হলেও পাশ ফিরে কোলবালিশটা জড়িয়ে ধরার আরামদায়ক আলস্য কিংবা কাঁটায় কাঁটায় সকাল ৬ টায় ঘুম ভেঙে গেলেও বিছানায় চিত হওয়া ব্যাঙের মতো ভেসে থাকা হাত-পা না ছুঁড়ে এ অভ্যাসটা আমার রপ্ত হয়েছে বিগত ১৫/১৬ বছর ধরে। সকাল ছয়টা থেকে সাতটা , এই এক ঘণ্টা বিছানায় গড়াগড়ি করে যখন সারারাতের চুইয়ে চুইয়ে জমা ক্লেদ ধুতে শাওয়ার নিতে ঢুকি ঠিক তখন থেকে শুরু হয় দিন শুরুর প্রস্তুতি এবং গোসল শেষে বের হয়ে আসি মধ্যবিত্ত ও ভালমানুষের চকচকে মুখোশ পড়ে ।

অফিসের জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যখন আলী মিয়ার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াই ঘড়িতে সকাল ৭ টা ৪৫ বাজে এবং এ নিয়মের হেরফের ঘটেনা একদিনও। অবশ্য সকালের এ সময়টায় আমার চোখেমুখে থাকে রাজ্যের বিরক্তি। রাস্তা জুড়ে ওই সময়টায় থাকে শ্রমজীবী মানুষের ঢল আর রাস্তাটাকে তখন অবতল জাতীয় কিছু মনে হয় - যেন একটা এলুমিনিয়ামের হাঁড়ির পিছনের অংশ যেখানে সূর্যের আলোকচ্ছটা লেগে তার সবটুকু উত্তাপ আমার চোখে ঢেলে দিচ্ছে। উফ অসহ্য লাগে। ইদানীং আলী ভাইয়ের দোকানে নতুন একজন লোক দেখছি। বেশভূষা দেখে মনে হয় বিদেশ ফেরত কিংবা ছুটি কাটাতে এসেছে এবং সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া , কাতার এরকম কোনো দেশ থেকে । এমন দেশগুলোর নাম কেন আমার মনে এসেছে এটা না জানলেও লোকটা যে গত তিনদিন ধরেই ফিরোজা আর সাদা ফুলের ছাপা শার্ট আর চেক লুঙ্গিটা পড়ে আছে তা আমার চোখ এড়ায়নি। নিয়মমাফিক তেল ছাড়া পরোটা আর ফোঁড়ন দেয়া ভাজি কিনবো জেনেও আলী ভাই জানতে চায় কি নিবো আর তার হেল্পার রতনও ভাজির বদলে ডালভাজি দিতে গিয়ে “ ‘জাউরার পুত’ “ গালিকে প্রাত্যহিক স্বাভাবিক কথন হিসাবেই ধরে নেয়। তবে আজ রুটিনে একটু ব্যত্যয় ঘটলো। আজ পরোটা আর ভাজির প্যাকেট আমার দিকে এগিয়ে দিলো ফিরোজা- সাদা ছাপার শার্টের লোকটি। পরে জেনেছিলাম তার নাম হারুন এবং সে আলী ভাইয়ের ছোট ভাই ; কিছুদিন হলো সিঙ্গাপুর থেকে ঈদের ছুটি কাটাতে দেশে এসেছে।

হারুন নামের লোকটি কি আমাকে পরোটা- ভাজির প্যাকেটটি দিতে বেশী সময় লাগাচ্ছে বা আমার হাতটা কি ইচ্ছে করেই ছুঁয়ে দিলো তা পরীক্ষা করতে লোকটির চেহারার দিকে তাকালাম। ৪০-৪৫ হবে হয়তো বয়স । তার চেহারার তেলতেলে হাসি দেখে আমার গা জ্বলে গেল , ক্রোধ চিড়িক – চিড়িক করে উঠলো। “ শালা কুত্তার বাচ্চা , দুই নাম্বার একটা ” গালিটা আপাতত মনে মনেই দিলাম। টাকা পরিশোধ করে সামনে পা বাড়াতেই আলী ভাইয়ের কমন ডায়ালগ “ আপা , আবার আইসেন ” এর জবাবে আজ হাসিমুখে প্রত্যুত্তর করতে পারলাম না । কারণ ঐ হারুন নামের লোকটা কয়েকদিন ধরেই তার চোখ দিয়ে আমাকে লেহন করছে আর আজ সে এক পা আগে বাড়ল ; বাহানা করে ছুঁয়ে দিলো।

এরপর আরও কয়েকদিন পরোটা – ভাজি দেবার ছল করে হারুন নামের লোকটা আমাকে ছুঁয়ে দিয়েছিলো আর আমিও আমার তথাকথিত ভদ্রতার মুখোশ এঁটে মনে মনে আমার জানা যত কুৎসিত গালি আছে তা দিয়ে ক্রোধের গায়ে প্রলেপ দিতাম। আমার কাছে এ ঘটনা শুনে আমার কলিগ শান্তা বলেছিলো তাহলে ঐ দোকানেই আমি কেন যাই আশেপাশে আরও দোকান থাকতে কিংবা বাসা থেকে নাস্তাটা কেন করে আসি না। শান্তাকে অবশ্য বলা হয়না হারুন নামক ব্যক্তিটাকে একটা শিক্ষা দেবার পরিকল্পনা করেছি । আমার সূক্ষ্ম মার তার গায়ে খুব জোরে না লাগলেও কিছুটা যে লেগেছিল তার আভাস পেয়েছিলাম পরে। সেদিন তাদের দোকান থেকে খাবার কিনে পরোটা – ভাজির প্যাকেট হারুনের হাত থেকে আমাকে দেবার কথা থাকলেও সেদিন তাকে বলেছিলাম প্যাকেটটা আমার হাতে না দিয়ে কাউন্টারে রাখতে ঠিক তেমনিভাবেই বিলটাও আমি কাউন্টারেই রাখি যাতে তার হাতের সাথে আমার হাতের ছোঁয়া না লাগে। একই ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি কিছুদিন ঘটাতেই সম্ভবত হারুন নামক লেহনকারী লোকটির আমাকে আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেবার আগ্রহতে ভাটার টান লাগে। তার চোখের সাদা অংশ আর আগের মতো চকচক করে ওঠেনা ।

আহা ! কি শান্তি !

২।

সকাল সাড়ে আটটায় অফিসে এসে কার্ড পাঞ্চ করে নিজের উপস্থিতি জানান দেবার কথা থাকলেও মিনিট দশেক আগেই পৌঁছে যাই রোজ। যদিও প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর প্রথমেই একটা কথা মনে হয় “ আজ অফিসে যাবোনা ” ঠিক অফিসে এসে নিজের চেয়ারটিতে বসলেও একই ব্যাপার কাজ করে “ কাল থেকে আর অফিস করবোনা ” । প্রতিদিন এই একঘেয়েমির কাজ আর ভালো লাগেনা। অবশ্য বিগত ৭ মাসে এই একঘেয়েমিতে ছোট একটা নতুনত্ব যোগ হয়েছে। আমার পাশের টেবিলে রাধিকা নামের যে নতুন মেয়েটি জয়েন করেছে তার কাছে সেজন্য আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। ইস্ট – ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বি বি এ করা দুর্দান্ত স্মার্টনেসের প্রতীক বলা যেতে পারে তাকে। আমাদের ফাহাদ স্যারের সাথে সখ্যতা করতে খুব বেশী সময় অপচয় না করার জন্য রাধিকাকে সাধুবাদ দেয়ার কথাও ভেবেছিলাম একবার। ডাইনিং এ লাঞ্চে কিংবা প্রতি মাসের চারটা মিটিং এ কনফারেন্স রুমে রাধিকা- ফাহাদ স্যারের পায়ের পাতা , আঙুল খুব দ্রুতই যেন একে অপরকে চিনে নিয়েছিলো। স্পর্শে , ঘর্ষণ – বিদ্যায় তাদের অভ্যস্ত হতেও তাই বেশী সময় লাগেনি । যদিও জানতাম তাদের এই ঘর্ষণ স্ফুলিঙ্গের স্থায়িত্বকাল আমাকে আবার একঘেয়েমিতে ভোগাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে দেখতাম রাধিকার অকারণে ওড়না টানাটানি করে গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার একটা ভঙ্গিমা , ফ্রেশ রুমে গিয়ে একটু পর পর গ্লসি লিপস্টিকে ঠোঁটে আর্দ্রতার পরশ বোলানো, আঁটসাঁট শর্ট কামিজের ভেতরে তার দ্রুতলয়ে বক্ষের ওঠানামা আর ফাহাদ স্যারের প্রয়োজনের চেয়ে একটু জোরেই হা হা শব্দে হেসে ওঠা যদিও তা আমার কান এড়াতো না যেমন করে চোখেও পড়তো যখন তখন স্যারের বৌয়ের ফোনে তাকে বিব্রত ভঙ্গীতে রুম থেকে বের হয়ে কথা বলতে।

প্রেম ভালোবাসা জাতীয় ব্যাপার যদি ফাহাদ স্যারের থাকতো রাধিকার সাথে তাহলে হয়তো এতোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার লক্ষ্য করা হতোনা তাই তাদের পায়ে পায়ের সাথে ঘর্ষণ বিদ্যার ঝালাই পর্বে আমি অপেক্ষায় থাকি কখন আরেকটু উত্তেজনা যোগ হবে আর যেখানে গিয়ে আমি হাজির হয়ে বোঝাবো কোনো কিছুই আমার অগোচরে নেই। সেরকম আর হয়না বরং প্রতিদিন ফাহাদ স্যার আর রাধিকা তাদের অভ্যাসকে শান দিয়ে চকচকে করে তোলে তাদের ত্বক।

অবশ্য এদিক ছাড়াও ফাহাদ স্যার এমডি সাহেবকে তৈলমর্দনেও বিশেষ পারদর্শী। এ কারণেই হয়তো নয় বছর ধরে কর্মরত নিষ্ঠাবান সাইফুল স্যারকে ব্যঙ্গ করে “ এক আউন্স ” বলতে বাঁধে না এবং সাফল্যও তার দিকেই চেয়ে হাসে সবসময় । হাহ ! সময়ের কি নিষ্ঠুর মার !

সময়ে স্রোত ও তার দিক পরিবর্তন করে আর এ হিসাব ফাহাদ স্যারদের মতো লোকদের জানা থাকে বলেই তাদের মানসিকভাবে মুষড়ে পড়তে দেখা যায়না যেরকম করে রাধিকাকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়তে দেখা যায় আইটি সেকশনের পাভেল সাহেবের সঙ্গে ; কখনো লাঞ্চে কিংবা ছুটির পর গল্প করার ছলে লিফটের দিকে এগিয়ে যেতে একসাথে দুজনকে। মানুষ মাত্রই বৈচিত্র্য ভালোবাসে । একঘেয়েমি তার সইবে কেন !

তবে একই নিয়মের বা ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে কেউ কেউ একঘেয়েমিতে নাও ভুগতে পারেন। এই অফিসে পাঁচ বছর হলো আছি। কানকথায় জানি এ অফিসের এমডি স্যার আর আমাদের মার্কেটিং ম্যানেজার নবনীতা ম্যাডামের সখ্যতার কথা । কবে থেকে , কিভাবে তাদের এই সখ্যতার শুরু তার সঠিক হিসেব কারোই জানা নেই। তাহলে কি ধরা যায় সময় এবং বয়স তাদের দুজনকে একই বৃন্তে বেঁধে রেখেছে তাদের নিজ নিজ সংসার থাকার পরেও ? দেহজ ক্ষুধার বাইরেও নিজ পরিবার থেকে দিনের পর দিন স্বামী বা স্ত্রীর কাছ থেকে মানসিক সাহচর্য না পাবার ফলেই তাদের এই কাছে আসা , কর্মক্ষেত্রে এক সাথে সময় কাটানোর ফলে নির্ভরতা বেড়ে যাওয়া একে অপরের প্রতি । এই কারণেই অনেকের মতোই আমিও জানি দেশের বাইরের ট্যুরে নবনীতা ম্যাডাম আর এমডি স্যারের নিয়মিত যাতায়াত শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক প্রবৃদ্ধির জন্যই নয় , এর বাইরেও অন্য কিছুর জন্য।

অফিসে এসব দেখতে দেখতে মূলত আমি হাঁপিয়ে উঠেছি ভীষণভাবে। ভদ্রতাসূচক মাপা হাসি আর কথার কারণে অফিসে আমাকে কাঠখোট্টা হিসেবে জানলেও আমার মাঝে যে আন্তরিকতার অভাব নেই তা আর বোঝাতে ইচ্ছে করেনা কাউকেই। কখনো কখনো মনে হয় কর্মক্ষেত্রে নারীর একটা মুখোশ থাকা জরুরী যা কিনা শুধুমাত্র সীমা লঙ্ঘনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে । এসব ভাবতে ভাবতে একটা জরুরী কাগজে অন্যমনস্কতায় বেভুলে সিগনেচারও করে ফেলি।

৩।

সন্ধ্যে ছয়টায় অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকি। পেছনে রিকশার টুং টাং আওয়াজ কাছে এলে জানতে চাই আমাকে তার যাত্রী করবে কিনা। বাসায় ফেরার তেমন একটা তাড়া না থাকলেও ট্র্যাফিক জ্যামে বসে প্যাচপ্যাচে গরমে ঘামতে ভালো লাগছিলোনা। এর মাঝে শুনতে পাই রিকশাচালক ছেলেটা কিছু বলছে আমায়। সে জানতে চায় আমাদের অফিসে সম্প্রতি পিয়ন নিয়োগের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা। সাথে আরও জানায় এইচ এস সি পাশ করে রিকশা চালাতে তার অনীহার কথা , ভদ্রস্থ জীবনযাপনে আগ্রহের কথা এবং সবশেষে আমার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল নাম্বারের কথা। অফিস থেকে বাসার দূরত্ব বেশী না হলেও জ্যামের কারণে ৩৫ মিনিট পর যখন বাড়ির গেটে থামলাম তখন অনিচ্ছায় হলেও বারংবার অনুরোধে বিশ টাকার নোটের গায়ে রিকশাচালক ছেলেটিকে আমার মোবাইল নাম্বার লিখে দিতেই হয় । যদিও জানা হয়না ছেলেটির নাম কিংবা সেও প্রয়োজনবোধ করেনা আমার নাম জানার। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় ভাড়া দেবার সময় খেয়াল করি ১৯-২০ বছরের হালকা পাতলা গড়নের রিকশাচালক ছেলেটিকে।

তিন তলার সিঁড়ি বেয়ে যখন উঠতে থাকি মনে হয় ঘরে ঢোকার দরজাটা যদি খোলাই থাকতো তাহলে ক্লান্তিটা এরকম করে ঝাঁপিয়ে পড়তোনা। আজ কলিং বেল বাজিয়ে অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশী সময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিলো। দশ মিনিট পর আমার ভাই গেট খুললো। বাবা- মা মারা যাবার পর এই ভাইয়ার কাছেই আমার বেড়ে ওঠা ।

অনুমান করে নেই ভাবী বা ভাতিজি, ভাতিজা কেউই বাসা নেই কিংবা ভাইয়া নামাজে ছিলো বলেই এতক্ষণ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আমার ক্লান্ত চেহারা দেখে ভাইয়া জানালো তার খিধে নেই তাই রাতে সে খাবেনা এবং ভাবী আজ রাতে তার বাবার বাড়িতেই থাকবে। অফিস থেকে ফিরে আমাকে যাতে রান্না করতে না হয় তাই ভাইয়ার এই বাহানা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পারি ।

দীর্ঘ ১৭ বছরের দাম্পত্য জীবনেও দেখিনি ভাইয়া আর ভাবীর হৃদয় এক সুরে বাজতে। সন্দেহগ্রস্ততা যে একটা অসুখ তা ভাবীকে দেখেই বুঝেছি আর যে কারণে আমার ভাইকে দেখেছি তার শিল্পী সত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে। প্রথমে বাবা , তারপর মা আমার পনের বছর বয়সে মারা যাবার পর থেকেই বলা যায় আমি ভাইয়ার হাতে মানুষ। তাই ভাইয়াকে আমি অনুভব করতে পারি বেশ ভালো ভাবে। আমার গান পাগলা ভাই তার গান এবং গানকে ঘিরে তার যে ক্যারিয়ার - ভাবীর জন্য ছেড়ে দিলেও ভাবী কখনো পারেনি নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে।

ভাইয়া – ভাবী দুজনে হাজী হলেও তাদের দুজনের ধর্ম জ্ঞান দুরকম। শিল্প আর ধর্ম ভক্তি ভাইয়ার শারীরিক উন্মত্ততাকে নমনীয় করে দিয়েছে বলে ভাবীর ক্রোধ , আস্ফালন যত ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছিলো তার চেয়েও ক্ষিপ্রতায় ভাইয়ার উদাসী মনটা আড়াল খুঁজতে লাগলো। বোবার শত্রু নেই জেনে ধীরে ধীরে মৌনব্রত পালন শুরু করলো। ছুটির দিনেও কখনো দেখিনি ভাবীকে সকাল এগারটার আগে বিছানা ছাড়তে কিংবা দুপুরের খাবার আমাদের নিয়ে সময়মত খেতে বসতে। বরং তার বদলে স্টার থেকে কাচ্চি বিরিয়ানির প্যাকেট কিনে এনে খাওয়াতেই বেশী স্বস্তি বোধ করতো । ভাইয়া , ভাবী , আমি , রেহনুমা আর আবির – এদেরকে নিয়ে সংসারটা গড়ে উঠলেও একমাত্র ভাবী বাদে আমাদের অপর চারটি প্রাণীর প্রাণটা ছটফট করতো স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নেবার জন্য। কারণ ভাবীর গলার অসুখী স্বর , চেঁচামেচিতে আমরা ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতাম। ভাইয়া তার বাড়ি ভাবীর নামে লিখে দিয়েও সেই স্বস্তি কিনতে পারেনি আজ অবধি ।

কিছু কিছু মানুষই বোধ হয় জন্মায় চরম অতৃপ্তি নিয়ে যা সময়ের সাথে সাথে তার মননে , চরিত্রে প্রকাশ পায় এবং জীবদ্দশায় তাড়িয়ে বেড়ায় মৃত্যু পর্যন্ত । ভাইয়ার অতৃপ্তি শিল্পকে লালন করেও অভিমানে তা ত্যাগ করা আর ভাবির অতৃপ্তি যৌনতায়। কোনো সুস্থ , রুচিবান মানুষ অন্তত ভালোবাসা হীন ভাবে স্বামী বা স্ত্রীর সাথে যৌন সম্পর্ক করেনা বলেই আমার বিশ্বাস। ভাইয়ার সাথে আমার বয়সের ব্যবধান বারো বছরের হওয়া সত্ত্বেও তার ছোট ছোট পছন্দ , অপছন্দ , জীবনবোধ দিয়ে জেনেছি তার শুদ্ধতার চর্চাকে। কিন্তু যখন ভাবীর হিস-হিস কণ্ঠ দেয়াল ভেদ করে রাতের মৌনতাকে খানখান করতো তখন বুঝতে পারতাম ঋতু কালীন সময়েও ভাবীকে তৃপ্ত করতে না পারায় ভাইয়াকে দাঁড়াতে হচ্ছে কাঠগড়ায়।

কখনো দিনে বা কখনোবা রাতে তাদের চাপা ঝগড়ায় জানা হয়ে যেতো আমার হাজি ভাবীর জনাকয়েক দেহ সঙ্গীর কথা , জানা হতো ভাইয়ার মনে একান্তে লালন করা তার প্রেয়সী নীরুর কথা - যার বসবাস বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে কোনো এক দেশে এবং যে কারণে ভাইয়ার ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ার কথা, জানা হয়ে যায় বিয়ের আগেই ভাবীর গর্ভপাতের কথা, ভাইয়ার সংসারের প্রতি বৈরাগ্য সত্ত্বেও শুধুমাত্র রেহনুমা আর আবিরের জন্য সংসারকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে টিকিয়ে রাখার কথা কিংবা প্রায় রাতেই স্বামীর পাশে শুয়েও ভাবীর অবদমিত কামনা মেটাতে তার মাস্টারবেটের কথা।

আমি আর রেহনুমা একই রুমে থাকি বলে তাদের এসব ঝগড়াঝাঁটি শুনেও না শোনার ভান করি নিজেদের কাছে । রেহনুমা ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার পাঠ্য বইয়ের কোনো পড়া নিয়ে , আবির দৌড়ে আসে মনোপলির বোর্ড হাতে খেলতে আমার সাথে আর আমি সময়ের কাছে প্রার্থনা করি আমাকে , রেহনুমা আর আবিরকে বধির করে দিতে। একসাথে থাকি বলেই টের পাই আমার ভাতিজির চোখ দিন দিন বিষাদ থেকে বিষাদতর হতে।

ধর্ম মানবতার কথা বলে। মানুষকে সহনশীল হতে শিক্ষা দেয়। আমি খুব ধার্মিক নই তবুও যে বোধ ধর্মকে ঘিরে তা থেকে বুঝি ধর্ম শিক্ষা বা শিল্পের মাঝে আশ্রয় খুঁজলে তা দৈহিক কামনা- বাসনাকে লুপ্ত করে দেয়না। তবুও কেন ধর্মকে ঘিরে ভাবীর বা অন্যান্যদের মনে অপব্যাখ্যা কাজ করে জানিনা। সব ধর্মেই আছে সহনশীলতার কথা হোক তা কোরান – বাইবেল – ত্রিপিটক । তবুও কেন এতো অশান্তি আমাদের ঘরে , কেন বিরহী সুর বাজে ঘরের কোণায় কোণায় !

আহ ! জীবন !

৪।

এসব ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে এলেও রাত প্রায় পৌনে তিনটার দিকে আমার তন্দ্রা ভাব ছুটে যায় মোবাইলের ভাইব্রেটে । এমনিতেই অপরিচিত নাম্বার দেখলে রিসিভ করিনা। চতুর্থ বারের বার ফোন রিসিভ করতেই শুনি ফোনের অপর প্রান্তে কেউ একজন ধমকে উঠলো কেন তার ফোনটা রিসিভ করলাম এবং এখনই যাতে তাকে কল ব্যাক করি। পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই স্পষ্ট উচ্চারণে আমাকে জানানো হলো তার নাম – নুরালি ( নূর আলী ) । যদিও এতো রাতে আমি আগ্রহী ছিলাম না আমার নিওরন সেল ঘেঁটে নুরালি নামক কোনো ব্যক্তির অবয়ব খুঁজতে তবে সে নিজ থেকেই আরেকটু সহায়তা করতেই জানান দিলো আজ সন্ধ্যায় প্রাপ্ত ২০ টাকার নোট থেকেই নাম্বারটা নিয়ে সে আমাকে ফোন দিয়েছে। মেজাজের পারদ ধা করে সর্বোচ্চ কাঁটা ছুঁয়ে গেলেও চিন্তা করলাম আগামীকাল ঘুম ভেঙে এই নুরালিকে ধরা হবে।

অভ্যাসবশত পরদিন সকাল ছয়টায় ঘুম ভাঙলেও মনে পড়ে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। শুক্র এবং শনি এই দুই দিন ছুটি কাটাই আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ; হয়তোবা বাসার বৈরী হাওয়া থেকে বাঁচাতে। ভাবলাম আজ সকালের নাস্তাটা আমিই বানাবো। এই ইচ্ছেটা আন্তরিক ভাবে জেগে উঠলেও কি করে যেন আবার ঘুমিয়ে পড়ি। বিকেল তিনটায় ঘুম ভাঙলেও তার রেশ কাটাতে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ আমার গড়াগড়ি করার অভ্যাস। পুরো ফ্ল্যাটের পিনপতন নীরবতায় বুঝি আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো প্রাণী এখন নেই। পেটের টানে বিছানায় আর শুয়ে থাকতে পারিনা বলেই ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে ঢুকতেই ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে এসে লাগে। দেখি রান্নাঘরের এক কোণায় পলিথিনে মোড়ানো কিছু একটা তার গন্ধ ছড়িয়ে দিতে বেশ হাঁসফাঁস করছে। খুলে দেখি আদা – রসুন কেমন সেদ্ধ সেদ্ধ হয়ে গন্ধ ছড়াচ্ছে। বুয়াকে দিয়ে এসব বাটানো কিংবা ব্লেন্ডারে এসব পেস্ট করাবার মতো সময় হয়তো এ বাসার গৃহকর্ত্রীর হয়নি। ফ্রিজে দুধের প্যাকেট না পেয়ে রং চা’ ই বানাতে হয় শেষ পর্যন্ত । চিনির কৌটা লাগানো হয়নি কতদিন জানিনা তবে সে চিনি থেকে পিঁপড়া সরিয়ে কাপ পর্যন্ত চিনি পৌঁছাতে পৌঁছাতে চা ততক্ষণে তার উষ্ণতা হারাবার শেষ প্রান্তে। ঘরে খাবার মতো কিছু নেই বলেই হয়তো একটু পর পর খিধে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল।

৫।

হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেই আজ তমালের বাসায় যাবো। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে সন্ধ্যের মিনিট বিশেক আগে গিয়ে ওর বাসায় পৌঁছলাম। এই পাগলটা নিজের মা – বাবা, বাড়িঘর থাকতেও ভাড়া থাকে পাশের মহল্লায় । মানুষে মানুষে কত না তফাৎ। আমার কৈশোর – তারুণ্য- যৌবন যাচ্ছে মা – বাবার অনুপস্থিতির চিনচিনে এক চোরা ব্যথায় আর তমাল স্বেচ্ছা নিবাস গেড়েছে কামরুল সাহেবের বাড়ির সাড়ে সাত তলার চিলেকোঠায়। লিফটের সুবিধা না থাকায় মাত্র ২২০০ টাকাতেই তমাল এই ঘরটির অস্থায়ী মালিকানা পেয়েছে খুব সস্তায়। যদিও তমালের এই বাসায় আগে কখনো আসা হয়নি তাই একটা ভাসা ভাসা অনুমান নিয়ে ওর বাসা খুঁজে পেতেও খুব একটা সমস্যা হয়নি । কারন কামরুল সাহেবের বাড়ির খোঁজ করতেই লোকজন চিনিয়ে দিলো। অবশ্য তমালের স্বভাব অনুযায়ী তার চিলেকোঠার ঘরের সামনে আমাকে দেখেও সে অবাক হলো না।

তমাল আমার শৈশবের বন্ধু। একটু ক্ষ্যাপা হলেও মনটা তার যথেষ্টই ভালো যদিও সে তার কর্কশতা দিয়ে তার আবেগ , অনুভূতিগুলোকে আড়াল রাখতেই বেশী সচেষ্ট থাকে বরাবর। গত ১০/১১ মাসে ওর সাথে যোগাযোগে একটা বিরতি পড়ায় কি কি পরিবর্তনের ছোঁয়া ওর মাঝে লেগেছে তা পরখ করতেই ওর কাছে জানতে চাইলাম তার কর্মক্ষেত্রের কথা । দুষ্টুমি করে জানতে চাই যে মহিলা কলেজটিতে ও একাউন্টিং এর লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছিলো সেখানে কয়জন ছাত্রীর ফোন নাম্বার এ পর্যন্ত ওর মোবাইলে জায়গা পেয়েছে। খুব নির্বিকার ভঙ্গীতে ও জানালো নাম্বার এতো বেশী জমে গিয়েছে যে কলেজে ক্লাস নেবার পাশাপাশি কোচিং ও চালাতে হচ্ছে রাতভর ছাত্রীদের সাথে মোবাইলের খরচ যোগাতে। শুনে আমি হাসি ।

ওর রুমের সামনে যে এক চিলতে ছাদ সেখানে বসে দেখলাম ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নেমে আসা, পোস্তগোলা ব্রিজের লাইটগুলোর জ্বলে ওঠা। হু হু করা বাতাসের সাথে বুড়িগঙ্গার গন্ধ নাকে এসে লাগলেও তমালের সান্ধ্যকালীন সিগারেটের গন্ধে তা চাপা পড়ে যায়। আমার দিকেও একটা সিগারেট বাড়িয়ে দেয়। তামাক পোড়াতে পোড়াতে জানতে পারি তমালের বাবা প্যারালাইজড হয়ে মাস ছয়েক হলো বিছানাকে সঙ্গী করে নিয়েছেন । একমাত্র বাবার খাওয়া – গোসল- নামাজ – ব্যায়াম করাতেই একবার নিয়ম করে তমালকে ওদের নিজের বাড়িতে যেতে হয়। ওর মেজ বোন সুমী আপার বিয়ের কথা, ছোট বোনের ডাক্তারি পাশের খবর বলার সময় ওর গলায় যতটা না উচ্ছ্বাসের ছোঁয়া টের পাই তারচেয়েও প্রাণবন্ত হয়ে জীয়নের নতুন ক্লাসের গল্প শোনালো । একমাত্র জীয়নের প্রসঙ্গ এলেই ওর ক্ষ্যাপা পেশীগুলো কি করে শিথিলতায় নরম -নরম হয়ে যায় তা এই আবছা অন্ধকারেও আমার চোখ এড়ায় না। কি করে ওর বড় বোনের ছেলে জীয়ন ওর নিজের হয়ে গেলো সে গল্প , ছুটির দিনে তাদের মামা- ভাগ্নের আহসান মঞ্জিলে ঘুরে বেড়ানোর গল্প শুনতে শুনতে আজো জানা হয়না কেন তমাল নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে এখানে ভাড়া বাসায় থাকছে। ওর নিভৃতে পুষে রাখা অভিমানের জায়গাটায় তাই আমারও আর প্রবেশ করা হয়না।

- পলা , তুই বিয়ে করছিস না কেন বলতো ?
- তোর ফালতু প্যাঁচাল শুনতে আসি নাই দোস্তো। পারলে চা খাওয়া এক কাপ।
- বিনে পয়সায় সিগারেট টেনে এখন আবার চা পানের স্বপ্ন দেখছিস । চাইলে রেল লাইনের ওখানে একটা টং দোকান হয়েছে যেখানে “ পিনিক চা “ পাওয়া যায় । খাবি ?
- চল , নিচে যাই তাহলে। তাছাড়া বাসায়ও ফিরতে হবে।
- আরেকটু বস না পলা ! কাল তো তোর ছুটিই ।

নিঃসঙ্গতা আর বিশ্বাসহীনতার চাপে পড়ে হাঁসফাঁস করলেও কেন যেন কোনো স্বপ্ন বা কল্পনা আমাকে প্রলুব্ধ করতে পারেনা। কৈশোর শেষ হবার আগেই মাথার উপর থেকে বাবা-মায়ের ছায়া সরে যাওয়া, ভাইয়া – ভাবীর অদ্ভুত ফাঁপা এক সম্পর্ক , রেহনুমা আর আবিরের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা বিহীন বিপন্ন সময়টা সন্ধ্যার এই নরম বাতাসেও আমাকে বড্ড ভাবাচ্ছিলো। তীব্র গতানুগতিকতা ও পৌনঃপুনিকতায় আক্রান্ত জীবনে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে , প্রাত্যহিক জীবনে থেকে একটু ভারমুক্ত হতেই বুঝি আমার আজকের এখানে আসা শৈশবের এই বন্ধুটির বাসায়।

- পলা , সেক্স করবি ?
- তোর এই ধরনের ফাজলামির জন্যই তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা , বুঝলি ? উঠছি আমি।

তমালের সাথে কথা অসমাপ্ত রেখেই বেরিয়ে আসি । ওর বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ আমি বুঝতে পারিনা আমার গন্তব্য কোথায়। পরপর দু’ টো সিএনজি এসে থামলো ভাড়ার প্রত্যাশায় আবার ফিরেও গেলো আমার সাড়া না পেয়ে। মানুষ যে কেন, কিসের আশায় বেঁচে থাকে অনেক ভেবেও কূলকিনারা করতে পারিনা। হয়তো মানুষ বেঁচে থাকে সময়ের প্রয়োজনে , বিবর্তন আর সভ্যতা তাকে চেতনা , বুদ্ধি দিয়েছে বলে। মানুষ না হয়ে যদি আজ আমি একটা গাছ হতাম কিংবা হিমালয় – আল্পসের এক টুকরো বরফ হতাম হয়তো সৃষ্ট জীব হিসেবে আমাকে সে জীবনই মেনে নিতে হতো।

রাস্তার এক পাশে একটা গাছ হেলে পড়েছে, তার নিচের ছায়াটা দেখে অনেক দিন পর আমার ইচ্ছে করে একটু কেঁদে নিতে। না কোনো কারণহীন কান্নার জন্য নয় – না আমার নিজের জন্য , না পৃথিবীর আর কোনো মানুষের জন্য। হঠাৎ করেই আমার মনে হতে থাকে এই আকাশটা অনেক বিশাল আর এই বিশালতার নিচে পৃথিবীটা কেমন এক দুঃখিনী মায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এখানে রোজই বাতাস বয় , কতো মানুষের আনাগোনা হয় , গাছ দাঁড়িয়ে থাকে , যান্ত্রিকতায় গতির ঘোর লাগে। তবু সব কিছুতে মিলেমিশে কোথায় যেন একটা প্রচণ্ড বেদনা ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে। হয়তো এই বেদনার কারণটা আমার জানা নেই বলেই চোখের কোলটা কেমন ভিজে ভিজে যায় । নৈরাশ্য আর বেদনা থেকে কবে মানুষের মুক্তি মিলেছে সে উত্তর কোথায় খুঁজলে পাওয়া যাবে অনেকের মতো আমারও জানা নেই।

( সমাপ্ত )
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×