somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবনীতার ডায়েরি -১

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

ক'দিন ধরেই আমার মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। এটা ঘটা করে কাউকে বলারও কিছু নাই। তারপরেও যখন একটু অবসর মিলে তখন মেজাজ খারাপ ভাবটা ফিরে আসে। আমি কখনই নিজের মতের বাইরে গিয়ে কারো সিদ্ধান্ত মেনে নেবার মত মানুষ ছিলাম না। হয়ত খুব বেশি শুনতে হয়েছিল " তুই তো মাইয়া মানুষ " তাই হয়ত জেদ বেশি কাজ করত আমার উপর কিছু চাপিয়ে দিলে যা যৌক্তিক না। ছোট বেলা থেকেই আমার জানা হয়ে গিয়েছিল "আমি ভাল না " "ভাল মাইয়া না "! যখন এসব শুনতাম কিশোরী বেলায় মন কেমন কেমন যেন লাগতো, দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতাম, ভাল খারাপের সংজ্ঞার বোধ চেপে বসে আমার ভেতরটা এলোমেলো করে দিত! কিন্তু ক্লান্তিহীন ভাবে আমাদের সমাজের মানুষ গুলো আমাকে এই পরিণত বয়সে এসেও ভাল খারাপ ন্যায় নীতির শিক্ষা দিচ্ছে। আমার সেসময়ের রাগগুলো প্রিয় বন্ধু তুলির উপরেই গিয়ে পড়ে। আমাকে রাগাবার জন্যই হয়ত ও আরো গম্ভীর হয়ে বলে -

আরে মাইয়া মানুষের কি শিখনের কি শেষ আছে? তোরে শিখাইতাছে, তুই শিখতে থাক। লগে আমারেও শিখা!

কিন্তু আমি শিখতে চাই না। ওকে বলি -

জীবনটা কয়দিনের রে! এইসব প্যানপ্যানানি আর ভাল্লাগে না! সারাটা দিন অফিসের খাটুনি শেষে ঘরে আইসাও দেখি ঘরের ভিত্রে "সমাজ "ঢুইক্যা গেছে। বলে আমি হেসে ফেলি।

শুনে তুলিও হাসে। বলে -

মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। সমাজের বাইরে কেউ না। সামাজিক হইতে পারলি না বুড়া বয়সেও, আর কবে শিখবি? তোর সমাজ তোরে কি কি শিখাইলো শুনি?

আরে ধুর ধুর, বাদ দে। এখন জামাই লইয়া ঘুরতে যামু। লং ড্রাইভ! হু হু হু। তোর জামাই কি করে?

কি আর করব! পিসিতে বইসা গেম খেলে। মন চায় আছাড় মাইরা ভাইঙ্গা ফালাই কম্পিউটারটা!

তুলি শোন, আর জ্বালাবি না। এখন ফোন রাখলাম। এখন জামাই নিয়া লুমান্টিক টাইম কাটামু। আমি ফোনের লাইন টা কেটে দেই।

কেউ একজন আমার কাল্পনিক সংসারের সুখে সুখি হচ্ছে, এটাও আমার অনেক ছোট ছোট সুখের একটা উপকরণ!

২।

আজ অফিস ছুটির আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম অফিস থেকে। উদ্দেশ্য জামাই নিয়ে ঘুরাঘুরি আর টুকটাক কিছু শপিং । ব্রেইনটাকে মনে হয় দীর্ঘ সময় রেস্ট দেয়া দরকার। মাথা ভীষণ দপদপ করে অফিসের বিভিন্ন চাপ আর ' সমাজের' চাপে। টুং করে মোবাইলে ফেসবুকের নোটিফিকেশনে দেখলাম তুলির অভিমানী মেসেজ -

" অফিসে কাজ জানি তুই একলাই করস! এখনো ব্যস্ত নাকি? ঢং ধরসস, তোর লগে সম্পর্ক শেষ। যাহ্‌ !"

আমার হাসি হাসি মুখ দেখে জামাই ড্রাইভ করতে করতে জানতে চায় হাসির কারণ কি ? বললাম -

তুলির মনে হয় মাথা খারাপ হইছে। নিশ্চয়ই ওর জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করছে। তাই আমার উপর তেজ দেখায় ক্যান অরে ফোন দেই না।

তো ফোন দিলেই তো পারো!

আমিও বলি -

আজকেই ভাবছিলাম বাসায় ফিরে ফোন দিবো। বলতে বলতেই ওকে ফোন করি। শুনি ওর ভার ভার হয়ে থাকা গলা। ওকে ক্ষেপাতেই বলি -

কিরে স্কুল গার্ল, জামাইয়ের লগে আবার কি লইয়া লাগলি ? ফোনের ওপাশে ওর ফ্যাত ফ্যাত করে কান্না ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাই না। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু হয়েছে। তাই আমি একটু গম্ভীর ভাব আনার চেষ্টা করে বলি -

কান্দস ক্যান? তোর সমস্যা কি ?

ও নাক টানতে টানতে কাঁদে আর বলে তাহামনির আব্বা মনে হয় আমারে ইদানিং অবহেলা করতাছে। কেমন জানি বদলাইয়া গেছে।

আমার এত্তো হাসি পায় ওর কথা শুনে! আমি হাসতে হাসতেই বলি , ক্যান তানভীর ভাই তোর কোন দায়িত্বটা পালন করতে আবার ভুইল্যা গেলো শুনি! আর প্রেম কইরা বিয়া করছস, সমবয়সী দুইজনে, তুই এখনো ওরে নাম ধইরা ডাকা শিখলি না। কি তাহামনির আব্বা , তাহামনির আব্বা কইয়া ডাকস!

হ, সুখে আছস তো, তুই তো হাসবিই! শ্রাবণ ভাই তো আর আমার জামাইয়ের মতো না। তুই জানস ইদানিং ও আমার মোবাইল চার্জে দিয়া দেয় না, পোলাপাইন গুলিরে পড়তে বসায় না! ঘরে ফির‍্যা কম্পিউটারে গেম খেলবো নাইলে ঘুমাইব!

আমি বলি,

ঘুমাইলে সমস্যা কি ?

হ, অয় ঘুমাইলে আমার সমস্যা আছে। আমি সারা রাইত ঘুমাইতে পারি না। অয় পাশে থাকার পরেও আমার একলা একলা লাগে। আমারে ফালাইয়া আমার জামাই ঘুমাইব ক্যান? বিয়ার আগে তো ফোনে ফোনে আমারে ঘুম পারাইয়া তারপর ঘুমাইতো। এখন কি বিয়া কইরা সব দায়িত্ব শেষ হইয়া গেছে?

আমি ওকে বলি -

শুধুই মাথা গরম করিস না। ও একটু চুপচাপ ধরণের তার মানে এই না তানভীর ভাই তোরে অবহেলা করে!

হ, সবাইরেই আমার চিনা আছে। তোরেও ! সারাদিনে একটা ফোন দেস না, ফেসবুকে মেসেজ দেস না। তোর লগে আর কথাই কমু না।

ও রেগেমেগে ফোন রেখে দেয়। আমার জামাই জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়। আমি হাসি আর বলি - তানভীর ভাইয়ের কেসও তোমার মতোই। বিছানায় শুইলেই তোমরা কীভাবে ঘুমাইয়া যাও, নাক ডাকো! আর বাকি কাহিনী নাইলে বাদই দিলাম!

আমার মনেও অনেক প্রশ্ন আসে, অনেক কিছুর ছুটোছুটি চলতে থাকে। আমি স্টিয়ারিঙে আমার জামাইয়ের রাখা হাতের উপর আমার হাতটা চেপে ধরি, ওকে ছুঁয়ে থাকতে চাই। মাঝেমাঝে ও পাশে থাকার পরেও কেন যেন মনে হয় ওকে আমি মিস্‌ করছি, কেমন দূরের অচেনা কেউ! কাছে থাকার পরেও প্রিয়তম মানুষেরা কেন যে কখনো কখনো দূরের নক্ষত্র হয়ে যায় জানি না !

চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×