somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবনীতার ডায়েরি - ২

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের লিঙ্ক

৩।

গত কয়েকদিন ধরেই রিপা ফোন দিচ্ছিলো। ফোন রিসিভ করা হয়ে উঠছিল না। রিপা আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড। স্কুল লাইফের এই একজনের সাথেই আমার এখনও পর্যন্ত বন্ধুত্ব টিকে আছে। ওর আর আমার চলা-ফেরা, পছন্দ-অপছন্দে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিল নেই। ইনফ্যাক্ট স্কুলে ওর সাথে আমার পরিচয় ক্লাস সেভেনে এসে। ও ছিল বি সেকশনের ক্লাস ক্যাপ্টেন। বেশি ফ্যাশন আর গল্প গুজব নিয়ে থাকতো বলে ঠিক করেছিলাম আর যেই হোক অন্তত ওর সাথে কখনো বন্ধুত্ব করবো না কিন্তু কীভাবে যেন ওর সাথেই প্রথম বন্ধুত্ব হয়ে গেলো! আজকে ওকে ফোন দিয়েছিলাম লাঞ্চের ফাঁকে। জিজ্ঞেস করলাম -

কি রে কি খবর?

আমার তো অলয়েজ খবর ভালো, তোরে উল্টা খবর দিমু দেইখ্যা খুঁজতাছি কয়দিন ধইরা। তোর তো পাত্তাই নাই! ভাইবারে প্রোফাইল পিকচার দিছি নতুন, দেখছস?

হুমম, দেখছি।

সুন্দর হইছে না?

হুম সুন্দর হইছে। আমি ওকে বলি, তুই কি এইটা জানাইতেই আমারে খুঁজতাছিলি?

আরে শুধু কি এইটা? নতুন অরনামেন্ট আর শাড়ি পইড়া ছবি তুলছি হেইডি তোর চোখে পড়লো না।

ওর অবাক হয়ে করা প্রশ্ন শুনে আমি হেসে ফেললাম। বললাম - হুম অইগুলাও দেখছি। শাড়িটা সুন্দর। কালোর মাঝে গোল্ডেন পাড়। তোকে মানাইছে।

এইটারে জুট কাতান বলে। সতেরো হাজার টাকা দাম। আইচ্ছা শোন না, আমার ফেইস দেইখ্যা তোর কি মনে হয় নাই আমার স্কিনটা আগের চেয়ে অনেক স্মুদ আর সুন্দর হইছে?

রিপার চোখ আর চুলের ফ্যান ছিলাম আমি স্কুল লাইফ থেকেই। আমি ওকে দেখলে ওর চোখ আর চুলই দেখি। ওর অন্য প্রসাধনির দিকে আমার তেমন নজর পড়ে না। আমি খেয়াল করার চেষ্টা করি ওর স্কিনটা কেমন দেখাচ্ছিল ছবিতে। শুধু মনে আছে ঠোঁটে কড়া করে লাগানো ওর লাল লিপস্টিকের কথা। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ও মনে হয় অধৈর্য হয়ে যায়। ফোনের ওপাশে বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে -

ঐ ভুটকি কথা কস না ক্যান?

আমিও মিছেমিছি ওকে বলি -

হুম তোর স্কিনটা সুন্দর লাগতেছিল।

হাসি হাসি কণ্ঠে ও বলে - লাগবো না আবার! আমি ম্যাক এর কস্মেটিক্স ইউজ করি। বেইজ মেকাপটার দামই সাড়ে চার হাজার টাকা। আমি কম দামীটাই কিনছি। লিপস্টিকের দামটাও অনেক। দাম দিয়া হইলেও ভালো জিনিস ইউজ করন দরকার, কি বলস ?

হুম

কানের ঝুমকাটা কেমন লাগলো? যদিও একটু ভারি টাইপের কিন্তু দেখতে অনেক গর্জিয়াস না?

হুম

ধুর কি খালি হুম হুম করস ? মুখে কথা নাই? লাঞ্চের সময় পেট ভইরা খাস নাই?

আইচ্ছা রিপা, তুই কি শাড়ি, গয়না, জুতা, কস্মেটিক্সের বাইরে আর কোনো কথা বলতে পারস না ? সারাক্ষণ চাঁদনী চক, গাউসিয়া, বসুন্ধরা, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ডের গল্প। অন্য কথা বলতে পারস না?

কি গল্প করমু, বল? আমার তো জামাই নাই, শ্বশুর বাড়ি নাই, ননদ,ননাস-দেবর কেউ নাই যে তাগো প্যাঁচাল পারুম। আমার যা কইরা সময় কাটে সেইগুলিই তো কমু, নাকি বানাইয়া প্যাঁচাল পারুম?

ওর কথা শুনে আমার বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে।

আমি কিছু বলার আগেই রিপা বলে, আজাইরা দীর্ঘশ্বাস ফালাইস না। আর জ্ঞান দেওন শুরু করিস না। মাস্টারনি কোনহানকার!

জামাই, শ্বশুর বাড়ি এইসব ছাড়াও তো আরো কিছু যা নিয়া তুই সময় কাটাইতে পারস! তুই মাস্টার্স কমপ্লিট করছস, তোর নিজের টাকার অভাব নাই। তুই কি পড়াশুনা কন্টিনিউ করতে পারতি না? তোর কি ইচ্ছা করে না জব করতে কিংবা কোনো বিজনেস স্টার্ট করতে? কিংবা কনস্ট্রাকটিভ কিছু নিয়া সময় কাটাইতে?

না, আমার পড়াশুনা করার ইচ্ছা নাই আর। আমার জীবনটাই মাটি হইয়া গেছে নবনীতা। আট বছর সংসার কইরা আমি কিছু পাই নাই। একটা বাচ্চাও পাই নাই। শ্বশুর বাড়ি আমার জীবন ধংস কইরা দিছে, যে ব্যাটারে বিয়া করছিলাম ফ্যামিলির পছন্দে আমি তার বউ হইছিলাম ঠিকই কিন্তু সেই মানুষটা আট বছরে আমার লগে আঠারো দিনও সেক্স করে নাই। আরও শুনবি ?

তোর ডিভোর্সের আজাইরা প্যানপ্যানানি বহুত শুনছি। বাদ দেস না এইবার। এইসব বাদ দিয়া তুই সামনে আগাইয়া আয় না! এই জন্যইতো বলি কাজ নিয়া থাক, বই পড়ার প্র্যাকটিস কর। প্রয়োজনে রান্না শিখ, কোনো রেস্টুরেন্ট ওপেন কর কিংবা আরো কত কিছুই তো আছে।

দ্যাখ তুই আমার কষ্ট বুঝবি না। একাকীত্বের কষ্ট তোর মতো ফ্যামিলি মেনটেইন করা পাব্লিকরা বুঝব না। আমারে আমার মতন থাকতে দে। আমার শাড়ি, কাপড় , গয়না, জুতাই ভালো। আসলে তোরা আমারে ভুলতেই দিতে চাস না আমি ডিভোর্সি। আমি যারে ডিভোর্স দিছি হেই ব্যাটারে কেউ কিছু কয় না খালি আমি একটা মাইয়া দেইখ্যাই আমার কথা শুনন লাগে। সমাজ আমারে ভুলতে দিতে চায় না আমি ডিভোর্সি!

ওর মুখেও সমাজের কথা শুনে আমি এবার সত্যিই হেসে ফেলি। হেসে হেসেই ওকে বলি, তোকে কবে আমি আবার এসব বললাম রে! তুই নিজেও যাতে ভুলে যাস তাই তোকে মোটিভেট করি কিন্তু তোর আগ্রহ নাই নিজের জীবনটাকে বদলাবার। মানুষ তো চাইবেই তোকে এটা সেটা বইলা তোরে কষ্ট দিতে, কন্সেন্ট্রেশন নষ্ট কইরা দিতে। কিন্তু তুই ভাইঙ্গা পড়বি ক্যান?

আমার কিছু ভাল্লাগে না রে নবনীতা। ওর গলার আওয়াজটা খুব বিষণ্ণ শোনায় এবার। জানস, আব্বা-আম্মা খুব চাইতাছে আমার আবার বিয়া দিতে। আপা, দুলাভাই, ভাইয়া, আত্মীয়স্বজনরা সবাই কেউ না কেউ প্রায়ই প্রপোজাল নিয়া আসে। অনেক আনম্যারেড পোলাও আসে বিয়ার প্রস্তাব নিয়া কিন্তু সবাই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়া ঘুরে। আমার বাপের অনেক টেকা, আমাগো সম্পত্তি ভাগ হইয়া যার যার নামে আইসা পড়ছে, আব্বা অসুস্থ দেইখা সবাইরেই আমাগো ভাই বইনগো নামে সম্পত্তি লেইখ্যা দিছে, আমাগো বিজনেস ইত্যাদি সব মিলাইয়া লোভে পইড়া ব্যাটা গুলি আমারে বিয়া করতে চায়। কেউ কেউ দুইটা বিয়া কইরা লুকাইয়াও রাখে, কয় আগের বউ ভালো না তাই দ্বিতীয় বউ খুঁজতাছি। আমরা খোঁজ খবর নিয়া জানতে পারি এইসব! বিয়া মানে কি খাওন দাওন আর জামাই লইয়া শুইয়া থাকন্তি? বিয়ার কি আর মানে নাই ? ও কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।

আমি বলি, তিন বছর তো হয়ে গেল, একা আছিস। তোর যদি কাউকে ভালো লাগে, বাসায় বলতে না পারলে আমাকে বলিস। খালাম্মার সাথে কথা বলবো আমি।

আমার কাউরে ভাল্লাগে না রে ! ব্যাটাগুলি অনেক খারাপ। খালি জামাইগিরি ফলায়। সবাই তো তোর মতো জামাই পায় না। আমার কথা বাদ দে। শ্রাবণ ভাইয়ের কি খবর? ঐ ব্যাটা কেমন আছে, একটা ফোনও তো দেয় না! তুই তারে লইয়া আইতে পারস না বাসায়?

আমি তো পারিই আসতে। তার চেয়ে বরং তুই আয়। তোর একটা আউটিং হইব, ভাল্লাগবো তোর।

নাহ, তোগো ছুটির দিনে তোগো জ্বালামু না!

রিপা, এখন ফোন রাখা লাগবো। কিন্তু তুই তো আমার মন খারাপ কইরা দিলি। প্লীজ তুই কোনো ভালো কাজে নিজেরে এঙ্গেজ কর। তুই অনেক ভালো থাকতে পারবি দোস্তো।

ফোন রাখার পর আমার রিপার জন্য খুব খারাপ লাগে। ওর জন্য কি আসলেই শাড়ি, গয়না, শপিং করা লাইফটাই ভালো তাহলে ? মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ওর যে একাকীত্ব সেটা ওর মতো মানুষরা ছাড়া আর কেউ কি আদৌ বুঝবে! হায়রে সমাজ!

চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×