আজকা মনটা খুব ফুরফুরা লাগতেছে। নতুন শার্ট গায়ে দিছি, সাথে ডার্ক ডেনিম প্যান্ট। মার্কেট থেইকা কিনতে গেলে চোখ বন্ধ কইরা এইটার দাম নিতো ৩২০০ থেইকা ৩৩০০ টাকা। ওই প্যান্ট সাতশো টাকায় কিনছি ভাবা যায়! কামরুলরে একটা চুম্মা দিতে মন চাইতাছে। কামরুল আমাগো অফিস পিয়ন আর কী! শুচিস্মিতা কইছে -
তোমার প্যান্টের রঙটা অনেক সুন্দর!
তখনই মনে মনে ভাবছি পরেরবার কামরুল যখন স্টকের জিনিসপত্র আবার আইন্যা দিবো কম দামে, ওরে একশো টাকা আলাদা ভাবে দিমু। অবশ্য কামরুল অফিসের পিয়নগিরি করা ছাড়াও আলাদা কইরা যে সাইড বিজনেসের কাজ করে এইসব ব্র্যান্ডের শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জির স্টকের, রিভারভিউতে দোকানও কিনছে। ওরই টাকার অভাব নাই, সেই হিসাবে একশো টাকা তো হাতের ময়লা। এমনও হইতে পারে, কইবো -
আরে স্যার বাদ দেন তো, ট্যাকা টুকা লাগবো না।
আমিও ভাবছি দুই একবার সাধনের পর কামরুল টাকা নিতে না চাইলে আমিও আর জোরাজুরি করুম না। একশো টাকায় জিপিতে এক সপ্তাহের প্যাকেজ নিলে তিনশো মিনিট বোনাস নেওন যাইব। শুচিস্মিতার লগে কথা কইতে গেলে মাইয়াটা ফোন রাখতে চায় না। কিন্তু আমারতো খালি শুচিস্মিতারে সময় দিলেই হয় না, আরো কয়েক জায়গায় সময় দেওন লাগে। মাইয়া মানুষের পেটের ভিত্রে যে কত কথা থাকে আল্লাহরে আল্লাহ!
যাই হউক, কইতাছিলাম আজকা আমার মনটা ফুরফুরা। কোন কথা থেইকা কই গেসিগা। আমিও আসলে একটু বেশি কথা কই। একটু বেশি না, অনেক বেশিই কথা কই। এই লিগ্যা অবশ্য তানিয়া আপা আমারে অনেক কটু কথা শোনায় অফিসে। তার কটু কথা আমি গায়ে মাখি না। সুন্দরীগো সব কথা গায়ে মাখাইলে মার্কেট পইরা যাইতে পারে আমার। হে হে হে! ভাবখানা এমন যে আমি কোন হনুরে! আমার নতুন শার্টটা এর আগে অফিসে চাইরদিন পইরা আসছি। সেইদিন দেখি তানিয়া আপা আমারে দেইখা একটু পর পর খালি হাসে। আমিও চান্সে মিটি মিটি হাসি আর কোণা কাঞ্চি দিয়া তার দিকে তাকাইয়া তাকাইয়া দেখি। আমার আবার অস্থিরতা বেশি। না পাইরা জিগাইয়াই ফালাইলাম-
- এই তুমি আমারে দেইখা হাসতাছো ক্যান?
- আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে সাগর পাড়ে যাবেন ছুটি কাটাতে। কোনো অফিসে কেউ এমন ধরণের শার্ট তাও আবার হাফ শার্ট পরে আসতে পারে ধারণায় ছিল না! অদ্ভোত!
তানিয়া আপা এমন আজব ভাবে গলার আওয়াজ বদলাইয়া আর কাঁধ ঝাঁকাইয়া কইছিল যে আমি প্রথমে ধরতে পারি নাই এই অদ্ভোত জিনিসটা কী! জিগাইতেই কয় -
স্ট্র্যাঞ্জ তো!!
সেই স্ট্র্যাঞ্জটাও কইছিল ধমকের সুরে। আমি ভয় পাইয়া চুপ হইয়া গেছিলাম। তারে সত্যি বলতে কি আমি অনেক ভয় পাই। একটু হাসিমুখে সে কথা কইলে আমার ভিতরটা যেমন ফুইলাফাইপা ওঠে আমি আমার নিজেরে সামলাইতে পারি না। তানিয়া আপার ভাষায় আমি নাকি তখন ছাগলামি করতে থাকি। সো হোয়াট! তারে আমার খুব ভাল্লাগে। মাঝে মাঝেই তারে শুধু তানিয়া ডাকি। বহুত খাচ্চর টাইপের মহিলা। শুধু তানিয়া ডাকলে সে উত্তর দেয় না। চাবাইয়া চাবাইয়া কয় -
- আমি তানিয়া আপা। আপা বলে ডাকেন।
সাগর, মাহতাব, অর্ণব এরা যখন তানিয়া বইলা ডাকে তখন হের গায়ে লাগে না। আমি কইলেই যত দোষ আর নিয়ম কানুন বাইর করে। আমারে তানিয়া আপা আসলে বুঝতেই চাইলো না। না বুঝুকগা, আমি আশা ছাড়ি নাই তার লিগা। লাইগা থাকলে একদিন না একদিন তানিয়া আপার বরফ গলবই!
ফুরফুরা থাকার কারণেই আজকা আরো একটা জিনিস চোখে পড়লো। ইয়ার্ন কন্ট্রোলারের চর্বিযুক্ত হাসি। এগাল ওগাল জোড়া বিস্তৃত হাসি। রিকশা ভাড়া দিতে গিয়া দেখি দশ টাকা শর্ট পড়ছে। রিকশা থেইকা নাইমা ব্যস্ত পায়ে হাফিজের রুমে ঢুইকা বলি -
মাম্মা দশটা টাকা দাও তো, ঝটপট
রিকশাওয়ালারে ভাড়া দিয়া আইসা অফিসে নিজেদের রুমে ঢোকার আগে আবার আইসা নিচতলায় হাফিজের লগে দেখা কইরা যাই থ্যাংক ইউ কইতে। ওহ হাফিজ হইল আমাগো অফিসের ইয়ার্ন কন্ট্রোলার। তখনই বিষয়টা আমার নজরে পড়ে যে হাফিজ কেমন চর্বিযুক্ত হাসি দিতাছে। ওর হাসিটা কেমন জানি উদ্দেশ্যমূলক এমন ধরণের লাগতাছে। একটা চোখ টিপ দিয়া জিগাই -
- কী সব মনে হয় ঠিকঠাক চলতাছে! যে ভুড়িটা বানাইছ দেইখা বুঝা যায় তোমার জীবন অনেক সুখের। তা কয় হাজার কেজি সুতা পাচার করলা! বিশাল ধরণের জোকস করছি এমন ভাব নিয়া আমিই হে হে কইরা হাইসা উঠি
- হ, আমার জীবন অনেক রঙিন। আফসোস তোমার মত রিতা, সীতা, ফিতা থাকলে তোমার চেয়ে আমার জীবন আরো রঙিন হইত!
ব্যাপারটা ফান মনে কইরাই আমিও এক ধাপ আগাইয়া কই -
- জীবনের আসল রঙ হইলো মাম্মা ট্যাকা। এইটা আছে তো রঙও আছে, বউ এর ভালোবাসাও আছে। তোমার আছে সুতা বেচার চোরাই ট্যাকা আর আমাগো মামীর অজস্র ভালোবাসা
- আমার কথা বাদ দ্যাও রোমিও। আমার জীবন তো এক নারীতেই গেলো গা কিন্তু তুমি এই বয়সে আইসাও এক লগে এতডির লগে খেলতাছ, প্রশংসা করতেই হয়। কিন্তু ফয়সাল মাম্মা একটু ধীরে চলো, ধীরে
- ধুর কী সব কওনা! কাম কাইজ নাই তো খালি আজাইরা প্যাচাল
- চুল তো আর বাতাসে পাকে নাই। তা অফিস টাইমের দুই ঘণ্টা পর ঢুকলা, জায়গামত পাখি পৌঁছায় দিয়া পাখির বাসা চিন্যা আইলা নাকি?
বইলা হাফিজ কেমন জানি রহস্যজনক হাসি হাসতে থাকে। ওর হাসি আর কথার ধরণ শুইন্যা আমার পেট মোচোড়াইলেও ওরে খারাপ একটা গালি দিয়া কই -
- শালারপুত কাম কর। বইয়া বইয়া খালি আচোদা প্যাঁচাল পারোস। এই বালটার কাছে ট্যাকা ধার নিতে আওনটাই আমার ভুল হইছিল।
আমার কথা শুইনা হাফিজের কোনো উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায় না অবশ্য। ও আগের মতোই পূর্ণ নির্লিপ্ততা নিয়া গা দুলাইয়া দুলাইয়া হাসে। ইচ্ছা করে ঘুসি মাইরা ওর চাপাচুপা ভচকাইয়া দেই। শালা বাইঞ্চোত!
কিন্তু আমার কথা হইলো হাফিজ্যা আমারে এই কথা কইলো ক্যান? তাইলে কী আজকা আমারে কোনো জায়গায় দেখলো! কিন্তু ও দেখবো কই ত্থেইকা! আমার মাথাডা আউলাইয়া যাইতাছে। বিড়ি টানতে পারলে ভালো হইতো। গলাডা শুকনা শুকনা লাগে। এখন আবার ফিরোইজ্যার দোকানে গেলেই ধরবো ভাই পাঁচ মাস হইয়া গেলো এখনো আগের দেনা শোধান নাই! বিড়ি একটা খাইলে ফ্রেশ গাম নাইলে সেন্টার ফ্রুট কিনন লাগে দুই তিনটা কমসে কম। নাইলে আবার তানিয়ার আশপাশ দিয়া হাঁটন যায় না। খ্যাচখ্যাচ করে এই মহিলা আর ভ্রু কুচকাইয়া থাকে। তারপর নিজের ব্যাগের ত্থেইকা পারফিউম বাইর কইরা নিজের গায়ে আর আশেপাশে স্প্রে করে। মুখে কিছু কইলেও এত গায়ে লাগতো না কিন্তু এই বেটি হাতে না মাইরা ভাতে মারে। মাইয়া গো মাথায় যে এত হিটলারি বুদ্ধি কই থিকা আহে!
একটু আগের ফুরফুরা ভাবটা আমার গেছে গা। ভুল কইলাম, ফুরফুরা ভাব গেছে গা না, ফুরফুরা ভাবটা হাফিজ্যা শালারপুত নষ্ট কইরা দিছে। কিন্তু আমারে দেখলোটা কোন জায়গায়! অস্বীকার করুম না আইজকা একটা নতুন এডভেঞ্চার করছি। বিষয়টা নিয়া এখনো রোমন্থন করনের সুযোগই পাইলাম না। কই একটু পর পর ভাইবা ভাইবা শিহরিত হমু, তা না কইরা কামলা খাটনের লিগ্যা এখন ঢুকতাছি খোয়ারে।
আমার আর চাকরি বাকরি করতে ভাল্লাগে না। বহুত তো করলাম চাকরি। এই কোম্পানি ঐ কোম্পানি করতে করতে বয়স এখন প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু টাকা পয়সাও তেমন জমাইতে পারলাম না। যাই হোক আমার এত সিরিয়াস চিন্তা করলে বিপি হাই হইয়া যায়। এইসব আমার পোষায় না। পিসি অন করতে করতে মনে পড়ে আজকা না আমার সামারের কস্টিং শীট আর মিটিং রিক্যাপ সাবমিট করন লাগব! ধুর একটু পরেই তো আমার ইমিডিয়েট বসের রুমে ডাক পড়বো । ধুর এখন কি আমার এইগুলি করনের কথা! চোখের সামনে কম্পিউটারের স্ক্রিনে যা যা দেখতাছি সব কেমন হিজিবিজি লাগতাছে। এক কাপ চা খাওন দরকার। পিয়নগুলিও একেকটা জমিদার। ওগো ডাইকা আইনা কওন লাগে এক কাপ চা'য়ের কথা। এখন এই চা আইতেও মিনিমাম পাঁচ মিনিট বইয়া থাকন লাগবো! মাথা পুরা হ্যাং হইয়া রইছে। কেমন ঘুম ঘুমও লাগতাছে। রাইতে ঘুম ভাল হয় নাই। এত টেনশন মাথার বিভিন্ন খোপে খোপে লইয়া ঘুমান যায় নাকি! ইদানিং দেখতাছি রাইতের বেলা মাইয়াটা বহুত জ্বালায়। বয়স চার পাঁচ হইলে কী হইবো কথা কয় মুরুব্বীগো মতো আর ওর মায়েরে আমার কাছে ঘেঁষতে দেয় না। কালকা রাইতে যখন আমি আর শিউলি চিন্তাভাবনা করতাছি একটু ইন্টিমেট হমু ,ঐ সময় মাইয়া ঘুমের থিকা উইঠ্যা চিল্লান শুরু করছে ও বিছানার সাইডে আইছে ক্যামনে, ও তো মাঝখানে শুইছিল। এরপর যতই বুঝাই মাইয়া ততই কান্দে আর ঘুমানের আগ পর্যন্ত আমার হাতে চিমটাইতে চিমটাইতে হাত পুরা ব্যথা বানায় ফেলাইছে। পুরা মায়ের স্বভাব পাইছে। শিউলিও বিয়ার পর পর মনমতো কিছু না হইলে হাতে চিমটাইতো আমারে।
চায়ে চুমুক দিতে নিমু আর এই সময় দেখি বউ এর ফোন৷ ওর ফোন ধরতে মন চাইতাছে না। সকালে বাসা থেইকা বাইর হওনের একটু পরেই ফোন কইরা শুরু করছে প্যান প্যান। অপরাধ তেমন কিছুই না। গেট থেইকা বাইর হইয়া ঘাড় ফিরাইয়া বারান্দার দিকে তাকাই নাই ক্যান, ও বারান্দায় খাড়াইয়া আছিল। আমি ফোন কানে লাগাইয়া কথা কইতে কইতে গলি ধইরা সামনে আগায় গেছি আর ও যতক্ষণ আমারে দেখা গেছে দাঁড়ায় আছিল যদি আমি একবার পিছন ফিরা দেখি। যখন বয়স কম আছিল এইসব করছি। এখন আর ভাল্লাগে না। দশ বছর ধইরা একই কাম আর কয়দিন ভাল্লাগে বাল! শিউলি আমার সবকিছুতে এত ল্যাপটায় থাকতে চায়,মাঝে মাঝে আমার দম বন্ধ হইয়া আসে। কিন্তু এইসব প্রকাশ করলে ঝামেলা, ঘরে অশান্তি শুরু হইয়া যায়। চা শেষ করতে করতে দেখি টুং কইরা এস এম এস আসনের শব্দ। কার নাম্বার দেইখা বুঝি না আসলে।
" অফিসে পৌঁছে গেছেন? থ্যাংকস আমাকে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছেন বলে..."
ফিরতি মেসেজে আমিও লিখি -
" আপনি চাইলে মাঝে মাঝে পৌঁছে দিতে পারি! কখন ফ্রি থাকবেন? এখন একটু ব্যস্ততায় আছি।"
----- চলবে ----
( বাকি লেখাটা গুছাতে পারলে আবার দিবো এর শেষ পর্ব । )
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯