somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭২এ গঠিত 'জাতীয় রক্ষী বাহিনী', কিছু ভুল ধারনা।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্বাধিনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যুদ্ধ ফেরত বিপুলসংখক তরুন মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের জন্য ১৯৭২ এর সুরুতে “জাতীয় রক্ষীবাহিনী” গঠিত হয়। আর্মড পুলিশ এক্ট সংশোধন করে এই আধা-সামরিক বাহিনীটি গঠিত হয়।
সুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধ ফেরত বেকার তরুনদের কর্মসংস্থানের জন্যই মিলিশিয়া রক্ষী 'রক্ষীবাহিনী' গঠিত হয় নি। প্রধান কারনটি ছিল ৭১এ পাকিরা এবং ৭২ এর সুরুতে সকল ভারতীয় সৈন্য চলে যাওয়ার পর একটা বাহিনী শুন্যতার শৃষ্টি হয়। যুদ্ধশেষে অনেকেই অস্ত্র জমা না দেয়ায় একটা বিপদজনক অবস্থার শৃষ্টি হয়।
এদিকে পাকিস্তানে প্রায় ২০-৩০ হাজার বাংলাদেশি বাঙ্গালি সেনাবাহিনীর সদস্য সহ পুলিশ, আধাসামরিক মিলিশিয়া আটক থাকায় আইনশৃক্ষলা বাহিনীর স্বল্পতা আরো প্রকট আকারে দেখা দেয়।
পাকিস্তানে চাকুরিরত ২০-৩০ হাজার সেনাসদস্য, নৌ ও বিমান বাহিনী, আধাসামরিক রেঞ্জার্স শিমান্তরক্ষী, মিলিশিয়া এবং পুলিশ সদস্য। এছাড়া সরকারি-আধাসরকারি সংস্থায় চাকুরিরিত ১৫-২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি, ছাত্র, দোকান, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অগনিত বাঙ্গালি সহ প্রায় ৩-৪ লাখ বাঙ্গালি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছিল।
এই বিপুল সংখক বাঙ্গালিদের ৭১ সাল থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে প্রায় তিন বছর যাবত যুদ্ধবন্দির মত জিম্মি করে রাখা হয়েছিল বিচারাধিন ১৯৫ জন পাকি সামরিক অফিসার যুদ্ধাপরাধির বিপরিতে।
এই শুন্যতা পুরন করতেই মুলত 'রক্ষীবাহিনী' গঠিত হয়েছিল।
বেছে নেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত সাহসি তরুনদের। সবুজ জলপাই রঙের ইউনিফর্মে SLR কম্বাট রাইফেল হাতে রক্ষীবাহিনী ছিল রিতিমত ভিতিপ্রদ। অস্ত্র উদ্ধার করতে যেয়ে প্রায়ই অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়গ করতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক মিছিল দমন করতে পুলিশ ব্যার্থ হলেও রক্ষীবাহিনী নিয়োজিত হত। কারন তখনো ‘দাঙ্গা পুলিশ ব্যাটেলিয়ান’ গঠন করা হয়নি।
এদের কে সেনাবাহিনীর প্যারালাল ভাবার কারন ছিলনা, কারন এরা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধিনস্ত প্যারামিলিটারী ফোর্স। নিয়মিত সসস্ত্র বাহিনী না। এদের মর্যাদা-বেতনকাঠামো শিমান্তরক্ষী BDR এর অনুরুপ।
অনেকে বলত এরা সজনপ্রীতি করে ঢুকানো আওয়ামি লিগের রাজনৈতিক পেটোয়া বাহিনী। ৭৫এর ঘাতকেরা এবং এর অনুসারি সামরিক জান্তা শুপরিকল্পিত ভাবে গুজব ছড়ায় যে এদের অনেকেই ভারতীয় বাহিনীর ইউনিফর্মে ভারতিয় সৈন্য।
অথচ মুজিব তার বাসভবনের নিরাপত্তার জন্যও রক্ষীবাহিনী রাখেননি। তার বাসভবন ও দফতর গনভবন-বংগভবন নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক ভাবে নিয়জিত ছিল সেনাবাহিনী। তখনো PRG ও SSF বাহিনী গঠিত হয়নি।

একথা সত্য যে রক্ষীবাহিনী গঠনের উদ্যেস্য মহৎ ও প্রয়োজনিয় হলেও বেশীর ভাগ সাধারন মানুষ এটাকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখে এসেছে। যারা রাস্তায় মানুষ পেটায় তাদের কে তো ভাল ভাবার কারন নাই। (রাস্তায় পিটানো কি ৪০ বছরেও বন্ধ হয়েছে?)

আসলে তারা ভাল ছিল, রক্ষীবাহিনীর সিলেক্সান খুবই দক্ষ হয়েছিল, তাদের সুশৃক্ষল ভাবমুর্তি সেনাবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পরও অটুট ছিল।


রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে সকল অপবাদ মিথ্যা প্রমানিত হয় ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর।
যখন রক্ষীবাহিনীর সকল অপপ্রচার ভুলে প্রতিটি সদস্যকে এক ধাপ পদন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়, আর রক্ষীবাহিনীর চিফ কে দেয়া হয় রাষ্ট্রদুতের পদ। ৯ই অক্টোবর ১৯৭৫ এ একটি অধ্যাদেশ Jatiya Rakkhi Bahini Absorption Army Ordinance 1975. গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই সেনাবাহিনীতে আত্তিকরণ করা হয়।
এই অধ্যাদেশটিতে অনেকটা দায়মুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে -
"রক্ষীবাহিনী কতৃক বর্তমান ও পুর্ববর্তি সকল কর্মকান্ড, সেগুলো অনুমান করে নেওয়া হবে সেনাবাহিনীর নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত জিনিষ"



Jatiya Rakkhi Bahini Absorption Army Ordinance 1975

তারা উচ্চমান সম্পন্ন, দক্ষতা ছিল প্রস্নাতিত। সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে যোগদেয়ার সময় কোন পরিক্ষা নেয়ার প্রয়জন হয় নাই। কারন সেনাবাহিনীই তাদের প্রশিক্ষন দিয়েছিল, তারা ভালকরেই জানত রক্ষীবাহিনী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দলীয় নিয়োগ ছিলনা, ছিল Good selection. সুদক্ষ, চৌকোশ, যোগ্য এবং সাহসি মুক্তিযোদ্ধা। এদের পেশাদারিত্ব প্রমানিত হয়েছিল। প্রমোশন নিয়ে আর্মিতে ঢুকেও যোগ্যতার প্রমান রেখেছিল। সঙ্গতকারনেই তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ হয়নি ততকালিন সামরিক শাষকদের।
রক্ষীবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত শতাধিক অফিসার কর্নেল, জেনারেল পর্যন্ত চাকরি করে মেয়াদ শেষকরে অবসরে যায়। দুজন সেনা প্রধান পর্যন্ত হয়েছিলেন, এখনো অনেকেই সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে ব্রীগেডিয়ার, জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন দেখা যায়।
বিভিন্ন জনসভায় বা পত্র-পত্রীকায় প্রায়ই রক্ষীবাহিনীর উদাহরন দেয়া হয়। বলা হয় -
স্বজনপ্রীতি করে লোক ঢুকানো একটি দলিয় প্রাইভেট বাহিনী,
মুজিবের নিরাপত্তায় নিয়োজিত দেহরক্ষী বাহিনী,
সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশী মর্যাদা দিয়ে একটি প্যারালাল বাহিনী।

এর কোনটিও সত্য নয়। ছিল রাজনৈতিক গুজব মাত্র।
যদি তাই হত তাহলে এদের যায়গা অন্তত সেনাবাহিনীতে হোতনা।
বর্খাস্ত করতো, নতুবা কোনমতে ঠাঁই হোত আনসার বা VDP তে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭
১০০টি মন্তব্য ৯২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×