somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলিয়াস আলী। যেভাবে ছ্যচড়া ক্যাডার থেকে ফ্রন্টলাইনে

২৩ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান, কোন দৃশ্যমান পেশা ছাড়াই এখন শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক।
রাজনীতিতে প্রবেশ এসময় এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের সসস্ত্র ক্যডার হিসেবে যোগ দিয়ে অস্ত্রবাজির রাজনীতি শুরু করেন।নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের ক্যডার হিসেবে যোগ দিলেও পরে দলবদল করে ছাত্রদলের অস্ত্রবাজ কর্মি হয়ে ওঠেন ইলিয়াস আলী। দুর্ধষ নিরু আর বাবলু তখন ক্যাম্পাসের রাজা।


ইলিয়াস আলি, পুলিশের হাতে গ্রেফতার ১৯৯২, অভি গ্রুপের সাথে পিস্তলবাজি।

পাগলা শহীদের শিষ্য ছিল গোলাম ফারুক অভি আর ওস্তাদ শহিদকে খুন করে হিরো হয়ে গেছিল অভি। বাবলু তার নিজ রুমে রহস্যজনক বোমা দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
৯০ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অভি নীরুদের রাজত্ব ছিল, ইলিয়াস সে সময় একটা ছ্যাচড়া মাস্তান ছাড়া কিছু না।
মহসীন হলে মাস্তানীর জন্য ইলিয়াস আলীকে মধুর ক্যান্টিনে কান ধরে ওঠ বস করিয়েছিল সবার সামনে অভি-সজলরা।
সে সময় ছাত্রদল সিনিয়র ক্যাডারদের ফুট ফরমায়েশ খেটেই দিন কাটত ইলিয়াসের, ৯০ এ মিলন হত্যার কারণে অভি নীরুদের রাজত্বের অবসান হয়। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ছ্যচড়া ক্যাডার ইলিয়াস আলী ফ্রন্টলাইনে এসে অভি-নিরু হওয়ার চেষ্টা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই নিজ দলে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি ঢুকিয়েছিলেন ইলিয়াস আলী। মাফিয়া স্টাইলে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব হিটিং গ্রুপ। ছাত্রদলের ক্যাডার পরিচিতি দিয়েই উত্থান তার। একের পর এর ঘটনার নায়ক হয়ে জন্ম দিতে থাকেন অভন্তরীণ সংঘাত। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ইলিয়াস আলী পরিণত হন ত্রাস সৃষ্টিকারী এক সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্রনেতায়। বহু খুনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সে কারণে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয় তাকে। জেলে কাটে সময়।

৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ছাত্রদল নেতা বজলুর রহমান হত্যাকান্ড, ৮৯ সালের ২৯ নভেম্বর তার নেতৃত্বে ডাকসু কার্যালয় ভাংচুর।
৯২ সালের ৩ আগস্ট ছাত্রদলের রতন গ্রুপের সঙ্গে ইলিয়াস গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির নিহত হওয়া এবং এই সংঘর্ষের জের ধরে ৯২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মামুন ও মাহমুদ নামে দুই ছাত্রদল নেতাকে নিজ হাতে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে ছিলেন ইলিয়াস আলী। মামুনকে হত্যা করে তার লাশ গুম করা হয়েছিলো সূর্যসেন হলের ট্যাংকিতে।
এইসব খবর সে সময় ফলাও করে পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল।

এছাড়াও প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে সশস্ত্র পিস্তলযুদ্ধে ছাত্রদল নেতা মির্জা গালিব ও ছাত্রলীগ নেতা লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯১ সালে গ্রেফতার করা হয় ইলিয়াস আলীকে। নিজদলের ভেতর মাফিয়া স্টাইলে গ্রপিং করে অর্ধশতাধিক নিজ দলের সহকর্মিদের হত্যার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।
ওই বছরই ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তাই এক বছরের মধ্যেই ছাড়া পান ইলিয়াস আলী। এর পর দলের প্রত্যক্ষ মদদে অভি-নিরু বিহীন ছাত্রদলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন তিনি।
কিন্তু সন্ত্রাসী তখনও কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা তার প্রতি বিরগভাজন হয়ে ওঠেন। মাত্র ৩ মাসের মাথায় ছাত্রদলের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
এ সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকা স্বত্বেও ৯৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামুন ও মাহমুদ হত্যা মামলায় আবার গ্রেফতার হন ইলিয়াস আলী। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ২ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পান তিনি। শর্ত হিসেবে বিএনপির হাইকমান্ডকে ইলিয়াস আলী কথা দেন কেবলমাত্র তার নিজ এলাকা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে বিএনপির সাংগঠন করা ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।

এরপর ঢাকার রাজনীতি ছেড়ে সিলেটে যান ইলিয়াস আলী। কিন্তু সিলেট গিয়েই ভুলে বসেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দেওয়া তার ওয়াদার কথা। সে সময় থেকেই ভংয়কর মূর্তি নিয়ে সিলেট দাপিয়ে বেড়ান এই নেতা। শুধু নিজ এলাকায় বিএনপি সংগঠিত করা নয় সিলেটে তাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের একটি শক্তিশালী মাফিয়া গ্রুপ গড়ে উঠে। তিনি নিজেও তার বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রাখেন। নিজস্ব সন্ত্রাসি বলয় গঠন করে সিলেটের রাজনীতির আলোচনায় উঠে আসেন ইলিয়াস আলী।
১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
সিলেটের অনেক সিনিয়র রাজনীতিবীদ ইলিয়াস আলীর ও তার দলবলের হামলার মুখে পড়েন। বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ এম সাইফুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, এসএমএ কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আব্দুল মাল আবদুল মুহিতের মতো ব্যক্তিরা ইলিয়াস আলীর সন্ত্রাস আর রাজনৈতিক কূটচালের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন।

শুধু সিলেট আর ঢাকায় নয় দেশের বাইরেও উশৃংখল আচরণের দায়ে পুলিশের নজরবন্দি হতে হয় ইলিয়াস আলীকে।
২০০০ সালে লন্ডনের মিল্টন কিন্স শহরে জয়পুর রেস্টুরেন্টে ওয়েটারকে হত্যার হুমকি দেন তিনি। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গ্রেফতার করতে এলে মুচলেকা দিয়ে সমঝোতা করে ছাড়া পান।
ইলিয়াস আলী তার দীর্ঘ ছাত্র ও জাতীয় রাজনৈতিক জীবনে কম শত্রু সৃষ্টি করেননি, এমন মন্তব্য করে অনেকেই ।
২০০১ সালে এমপি হওয়ার পর তার এলাকা বিশ্বনাথ বালাগঞ্জে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করার অভিযোগ উঠে ইলিয়াস আলী বিরুদ্ধে। তার নির্বাচনী এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী আর প্রশাসনকে ইচ্ছেমতো দলীয়করণের প্রচেষ্টায় নামেন তিনি।
প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নামে ‘ইলিয়াস বাহিনীর লোক’ নামে পরিচিত একদল ক্যাডার-এমন অভিযোগ তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরও এসব কিছুর প্রতিবাদ করারও সাহস ছিলো না ইলিয়াসের ভয়ে ভুক্তভোগীদের। ২০০১ সালের ওইসব ঘটনার জের ধরে মামলা হয়েছে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন সকালে। ইলিয়াস গ্রেফতার হয়েছে ভেবে নিরাপদ বোধ ফিরে আসে। সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়।
মামলায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ভয় দেখানো, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইলিয়াস আলী ও তার লোকেরা বাদীর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।
এতসব অত্যাচার নিপিড়ণের অসংখ্য বিতর্কিত ঘটনার নায়ক ইলিয়াস আলী সবকিছু পাশ কাটিয়ে ফিল্মি স্টাইলে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেন একমাত্র বিএনপির নিতিনির্ধারকদের মদদে।
এই ধরনের অস্ত্রবাজ ক্যাডার ও ছাত্রনেতা আওমিলিগেও অসংখ্য ছিল। দলের ছাত্রসংগঠন অনেক শক্তিশালী থাকলেও দলের রাজনিতিতে কখনো ছাত্রনির্ভরতা দেখা যায়নি। মন্টু, আওরংগ, লেয়াকত, হান্নান, গামা এরা কখনোই হাসিনার পাসে বসার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। পরবর্তিতে দুর্ধষ গডফাদার আওরংগকে বহিষ্কার করা হলে বিএনপি তাকে সাদরে গ্রহন করে।
তত্তাবধায়ক আমলের শেষদিকে যুবলিগ নেতা লিয়াকত গুম হয়।
এইসব থার্ডক্লাস ক্যাডারদের জন্য আওমিলিগ একফোটা চোখের পানিও ফেলেনি। হরতাল তো দুরের কথা।
বিনপির কাছে এইসব টোকাইরা বিশাল নেতা, ম্যাডামের পাসে বসতে পারে।
তার জন্য দুই দুইটা পরে আরো ১ দিন বৃদ্ধি - ৩টি হরতালও হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১:৩২
৪৫টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×