somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে চক্রটি এই অস্ত্র স্ম্যাগলিং ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছিল

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারি অবকাঠামো ব্যাবহার করে হাওয়া ভবন ভিত্তিক চক্রটি দীর্ঘদিন জাবতই এই অস্ত্র স্ম্যাগলিং ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছিল, পাকিস্তানি ISI, আলকায়দা উইং এর সহায়তায় দুবাই কেন্দ্রিক আর্মস স্মাগলার দাউদইব্রাহিম চক্র এদেরকে এই লোভনীয় ব্যাবসায় উদ্ভুদ্ধ করে। এদের সাথে যুক্ত হয় একদল কট্টর ডানপন্থি উচ্চপদস্থ সামরিক 'অব'। হাওয়া ভবনের সমন্নয়ে এরা অস্ত্রব্যাবসা ছাড়াও বড় বড় অপকর্ম করে গেছে বেপরোয়া ভাবে। সম্ভবত এরা বিম্পির হাইকমান্ড ও তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অন্ধকারে রেখেই ব্যাবসা চালাত।

এরা অস্ত্রসস্ত্র ৩গুন বেশী দামে ভারতের পুর্বাঞ্চলের গেরিলাদের কাছে সাপ্লাই দিত। দেশী জঙ্গিদেরও দিত। এর প্রমান ২১ সে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা। এই চোরাচালান প্রথম জানা যায় ১৯৯৪ তে। কক্সবাজারে হরতালকারিদের হাতে অস্ত্রবোঝাই ট্রাকের বহর ধরা পরে, বিপুল অস্ত্র দেখে পিকেটাররা নিকটস্থ সেনাবাহিনীকে ডেকে আনে। কিন্তু সেনাবাহিনী ট্রাকগুলো আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়, কোন মামলা হয়নি। তখন বিটিভি ছাড়া কোন মিডিয়া ছিলনা, দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ছাপা হয়েছিল, সাপ্তাহিক বিচিত্রায়ও এ নিয়ে একটি রিপোর্ট ছিল।

১৯৯৫ তে বহুল আলোচিত বাংলাদেশের কাছে পুরুলিয়ায় গভীর রাতে বিমান থেকে অস্ত্র ফেলার ঘটনা। অস্ত্র ভুল যাগায় ফেলেছিল। কারন একাধিক স্থানে পরে থাকা বাক্স বোঝাই অস্ত্র নিতে কেউ আসেনি। দেশ-বিদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ধারনা করেছিল এই কনসাইনমেন্ট বাংলাদেশ বা আসামে ফেলার কথা ছিল, কিন্তু ভুল্ক্রমে পুরুলিয়াতে ফেলা হয়।
ভারতীয় গোয়েন্দা ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড তদন্ত করে বুলগেরিয়ান মুল আর্মস ডিলার ভায়া চীনা নির্মাতা নরিনকোর ইনভয়েসে এন্ড ইউজার হিসাবে বাংলাদেশি জেনারেল সুবিদ আলি ভুইয়া, গোডাউন ঠিকানা ‘রাজেন্দ্রপুর’ নাম খুজে পায়। তবে পরে ভারত এ নিয়ে আর বাড়িবাড়ি করেনি, কারন স্মাগলাররা সাধারনত সঠিক নাম ঠিকানা দেয় না।

২০০১ এ আরো একটি চালান ধরা পরে, কিন্তু দ্রুত ধামাচাপা দেয়া হয়। ২০০৩ এর দিকে বগুড়াতে ট্রাকবহরের মাত্র একটি এমুনেশান বোঝাই ট্রাক ধরা পরে। সেটি ছিল সুধু একেফরটিসেভেনের গুলি, ট্রাক বোঝাই গুলিভর্তি বাক্স! একে প্রথমে রাজনৈতিক মামলা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, পত্রিকাগুলো বিস্মিত হচ্ছিল সাধারন গুন্ডাপান্ডারা অস্ত্রবিহীন কোটি কোটি গুলি দিয়ে কি করবে? কিন্তু অনুধাবন করেনি যে এটি কন্সাইন্মেন্টের একটি অংশ মাত্র! কিন্তু পরে মামলাটি থেমে যায় বা থামিয়ে দেয়া হয়, তদন্তও থেমে যায়।
আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র ঘটনাটিও পার পেয়ে গিয়েছিল ..
কিন্তু একটা ফালতু কারনে এরা ধরা পরে যায়।
সারাদিন ১লা এপ্রিলের ট্রাম্পকার্ডের জেরে সারাদিন দেশব্যাপি গণগ্রেফতার চলার পর শান্ত সন্ধ্যা।
দুই আনসার সদস্যরা এই বন্ধ সার কারখানায় ডিউটিতে ছিল, এই দুই আনসার মাত্র ২০০টাকা বকসিশ চেয়েছিল কিন্তু স্মাগলাররা দেয় নি উলটা ধমক দিয়েছিল।
পরে এই দুই আনসার নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দিয়ে সার্জেন্ট আলাউদ্দীন ও সার্জেন্ট হেলাল দের ডেকে আনে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা থানায় ফোন করলে ওসির রুমে একজন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক বসা ছিল। মুলত তার মাধ্যমেই চট্টগ্রামে খবরটি ছড়িয়ে পরে ও সাংবাদিকরা উপস্থিত হতে থাকে। ইতিমধ্যেই নবগঠিত কোষ্টগার্ড এর একটি ইউনিট উপস্থিত হয়ে যায়। বিডিআরও খবর পেয়ে চলে আসে। বড় চোরাচালান ধরা পরেছে, কিছুটা ভুমিকা রাখতেই হবে। উপস্থিত পুলিশের একাধিক সদস্য জানান, হাফিজ ও তাঁর সঙ্গী বাদানুবাদের একপর্যায়ে পুলিশের দলকে একটি বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ারও প্রস্তাব করেন। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশ টাকা নিতে রাজি হয়নি।
পুলিশ মামলা দায়ের করলে বিম্পির হাইকমাড থেকে এটাকে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হয়নি সংগত কারনেই।
ফাসি দেয়াতে অনেকে অবাক হয়েছেন। এটা মামুলি চোরাচালান মামলা না। যে কোন দেশেই অস্ত্র ও মাদক রাখা একটি বড় ধরণের অপরাধ, অস্ত্র আনা ও এসব স্মাগলিং একটি বড় ক্রাইম। বিপুল সংখক যুদ্ধাস্ত্র এনে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা আরো ভয়াবহ অপরাধ। সব দেশেই এর জন্য জন্য কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা রয়েছে।

যে পরিমান অস্ত্র ছিল
ওই রাতে এমভি খাজার দান এবং এফবি আমানত’ নামে এই দুটি ট্রলারে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের অপরপ্রান্তে সিইউএফএল জেটিঘাট থেকে ১০টি ট্রাকে লোড করা অবস্থায় মোট ১,৪৬৩ টি বাক্স উদ্ধার করা হয়। যার মোট ওজন প্রায় ১০০ টন।
উদ্ধার করা অস্ত্রের পরিমাণ: ১০টি ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল ১,৭৯০টি। এর মধ্যে গুলি ১১,৪৩, ৫২০, গ্রেনেড ২৭ হাজার ২০, এক্সট্রা ম্যাগাজিন ৬ হাজার ৩৯২ ও রকেট চালিত গ্রেনেড লাঞ্চার ১৫০টি। বেশির ভাগ অস্ত্রই চীনা নরিনকোর তৈরি বা সর্বরাহকৃত।


উদ্ধারকৃত দেড় হাজার বাক্সে যে ধরনের অস্ত্র ছিল:

৭.৬২ এমএম টি ৫৬-১ এসএমজি, (Ak 47 চাইনিজ ভার্শান) - ৬৯০টি
৭.৬২ এমএম টি ৫৬-২ এসএমজি (Ak 47 চাইনিজ ভার্শান) - ৬০০টি
৯ এমএম সেমি অটোমেটিক স্পোর্টিং স্নাইপার রাইফেল - ৪০০টি
ইসরাইলি উজি সাবমেশিনগান ( যদিও বাক্সে লেখা টমি গান) – ১০০ টি
৪০ এমএম টি৬৯ রকেট চালিত গ্রেনেড লাঞ্চার (RPG) - ১৫০টি
বিভিন্ন অস্ত্রের এক্সট্রা ম্যাগাজিন – ৬,৩৯২টি
৭.৬২ এমএম এসএমজি গুলির সংখ্যা ৭,৩৯,৬৮০ টি,
৭.৬২ এম এম উজি সাবমেশিনগানের গুলি - ৪,০০,০০০ টি
Ak 47 এসএমজির কার্টিজ (গুলি) - ১১,৪৩, ৫২০
টি-৮২-২ মডেল হ্যান্ড গ্রেনেড – ২৫,০২০ টি
আর পি জির গ্রেনেড - - ২,০০০ টি
জাপানের তৈরি একটি টুওয়ে রেডিও ট্রান্সিভার (সেট নম্বর টি ০০৬৩৮৫)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×