এরা অস্ত্রসস্ত্র ৩গুন বেশী দামে ভারতের পুর্বাঞ্চলের গেরিলাদের কাছে সাপ্লাই দিত। দেশী জঙ্গিদেরও দিত। এর প্রমান ২১ সে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা। এই চোরাচালান প্রথম জানা যায় ১৯৯৪ তে। কক্সবাজারে হরতালকারিদের হাতে অস্ত্রবোঝাই ট্রাকের বহর ধরা পরে, বিপুল অস্ত্র দেখে পিকেটাররা নিকটস্থ সেনাবাহিনীকে ডেকে আনে। কিন্তু সেনাবাহিনী ট্রাকগুলো আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়, কোন মামলা হয়নি। তখন বিটিভি ছাড়া কোন মিডিয়া ছিলনা, দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ছাপা হয়েছিল, সাপ্তাহিক বিচিত্রায়ও এ নিয়ে একটি রিপোর্ট ছিল।
১৯৯৫ তে বহুল আলোচিত বাংলাদেশের কাছে পুরুলিয়ায় গভীর রাতে বিমান থেকে অস্ত্র ফেলার ঘটনা। অস্ত্র ভুল যাগায় ফেলেছিল। কারন একাধিক স্থানে পরে থাকা বাক্স বোঝাই অস্ত্র নিতে কেউ আসেনি। দেশ-বিদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ধারনা করেছিল এই কনসাইনমেন্ট বাংলাদেশ বা আসামে ফেলার কথা ছিল, কিন্তু ভুল্ক্রমে পুরুলিয়াতে ফেলা হয়।
ভারতীয় গোয়েন্দা ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড তদন্ত করে বুলগেরিয়ান মুল আর্মস ডিলার ভায়া চীনা নির্মাতা নরিনকোর ইনভয়েসে এন্ড ইউজার হিসাবে বাংলাদেশি জেনারেল সুবিদ আলি ভুইয়া, গোডাউন ঠিকানা ‘রাজেন্দ্রপুর’ নাম খুজে পায়। তবে পরে ভারত এ নিয়ে আর বাড়িবাড়ি করেনি, কারন স্মাগলাররা সাধারনত সঠিক নাম ঠিকানা দেয় না।
২০০১ এ আরো একটি চালান ধরা পরে, কিন্তু দ্রুত ধামাচাপা দেয়া হয়। ২০০৩ এর দিকে বগুড়াতে ট্রাকবহরের মাত্র একটি এমুনেশান বোঝাই ট্রাক ধরা পরে। সেটি ছিল সুধু একেফরটিসেভেনের গুলি, ট্রাক বোঝাই গুলিভর্তি বাক্স! একে প্রথমে রাজনৈতিক মামলা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল, পত্রিকাগুলো বিস্মিত হচ্ছিল সাধারন গুন্ডাপান্ডারা অস্ত্রবিহীন কোটি কোটি গুলি দিয়ে কি করবে? কিন্তু অনুধাবন করেনি যে এটি কন্সাইন্মেন্টের একটি অংশ মাত্র! কিন্তু পরে মামলাটি থেমে যায় বা থামিয়ে দেয়া হয়, তদন্তও থেমে যায়।
আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র ঘটনাটিও পার পেয়ে গিয়েছিল ..
কিন্তু একটা ফালতু কারনে এরা ধরা পরে যায়।
সারাদিন ১লা এপ্রিলের ট্রাম্পকার্ডের জেরে সারাদিন দেশব্যাপি গণগ্রেফতার চলার পর শান্ত সন্ধ্যা।
দুই আনসার সদস্যরা এই বন্ধ সার কারখানায় ডিউটিতে ছিল, এই দুই আনসার মাত্র ২০০টাকা বকসিশ চেয়েছিল কিন্তু স্মাগলাররা দেয় নি উলটা ধমক দিয়েছিল।
পরে এই দুই আনসার নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দিয়ে সার্জেন্ট আলাউদ্দীন ও সার্জেন্ট হেলাল দের ডেকে আনে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা থানায় ফোন করলে ওসির রুমে একজন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক বসা ছিল। মুলত তার মাধ্যমেই চট্টগ্রামে খবরটি ছড়িয়ে পরে ও সাংবাদিকরা উপস্থিত হতে থাকে। ইতিমধ্যেই নবগঠিত কোষ্টগার্ড এর একটি ইউনিট উপস্থিত হয়ে যায়। বিডিআরও খবর পেয়ে চলে আসে। বড় চোরাচালান ধরা পরেছে, কিছুটা ভুমিকা রাখতেই হবে। উপস্থিত পুলিশের একাধিক সদস্য জানান, হাফিজ ও তাঁর সঙ্গী বাদানুবাদের একপর্যায়ে পুলিশের দলকে একটি বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ারও প্রস্তাব করেন। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশ টাকা নিতে রাজি হয়নি।
পুলিশ মামলা দায়ের করলে বিম্পির হাইকমাড থেকে এটাকে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হয়নি সংগত কারনেই।
ফাসি দেয়াতে অনেকে অবাক হয়েছেন। এটা মামুলি চোরাচালান মামলা না। যে কোন দেশেই অস্ত্র ও মাদক রাখা একটি বড় ধরণের অপরাধ, অস্ত্র আনা ও এসব স্মাগলিং একটি বড় ক্রাইম। বিপুল সংখক যুদ্ধাস্ত্র এনে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা আরো ভয়াবহ অপরাধ। সব দেশেই এর জন্য জন্য কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা রয়েছে।
যে পরিমান অস্ত্র ছিল
ওই রাতে এমভি খাজার দান এবং এফবি আমানত’ নামে এই দুটি ট্রলারে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের অপরপ্রান্তে সিইউএফএল জেটিঘাট থেকে ১০টি ট্রাকে লোড করা অবস্থায় মোট ১,৪৬৩ টি বাক্স উদ্ধার করা হয়। যার মোট ওজন প্রায় ১০০ টন।
উদ্ধার করা অস্ত্রের পরিমাণ: ১০টি ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল ১,৭৯০টি। এর মধ্যে গুলি ১১,৪৩, ৫২০, গ্রেনেড ২৭ হাজার ২০, এক্সট্রা ম্যাগাজিন ৬ হাজার ৩৯২ ও রকেট চালিত গ্রেনেড লাঞ্চার ১৫০টি। বেশির ভাগ অস্ত্রই চীনা নরিনকোর তৈরি বা সর্বরাহকৃত।
উদ্ধারকৃত দেড় হাজার বাক্সে যে ধরনের অস্ত্র ছিল:
৭.৬২ এমএম টি ৫৬-১ এসএমজি, (Ak 47 চাইনিজ ভার্শান) - ৬৯০টি
৭.৬২ এমএম টি ৫৬-২ এসএমজি (Ak 47 চাইনিজ ভার্শান) - ৬০০টি
৯ এমএম সেমি অটোমেটিক স্পোর্টিং স্নাইপার রাইফেল - ৪০০টি
ইসরাইলি উজি সাবমেশিনগান ( যদিও বাক্সে লেখা টমি গান) – ১০০ টি
৪০ এমএম টি৬৯ রকেট চালিত গ্রেনেড লাঞ্চার (RPG) - ১৫০টি
বিভিন্ন অস্ত্রের এক্সট্রা ম্যাগাজিন – ৬,৩৯২টি
৭.৬২ এমএম এসএমজি গুলির সংখ্যা ৭,৩৯,৬৮০ টি,
৭.৬২ এম এম উজি সাবমেশিনগানের গুলি - ৪,০০,০০০ টি
Ak 47 এসএমজির কার্টিজ (গুলি) - ১১,৪৩, ৫২০
টি-৮২-২ মডেল হ্যান্ড গ্রেনেড – ২৫,০২০ টি
আর পি জির গ্রেনেড - - ২,০০০ টি
জাপানের তৈরি একটি টুওয়ে রেডিও ট্রান্সিভার (সেট নম্বর টি ০০৬৩৮৫)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




