somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে এই জাওয়াহিরি?

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আইমান আল- জাওয়াহিরি মিশরের কায়রো শহরের কাছে জন্ম গ্রহণ করেন। সময়টা ১৯৫১। তিনি তার চাচা মোস্তফা কামাল ওয়াসিফের অনুপ্রেরনায় ১৪ বছর বয়সে যোগ দেন মুসলিম ব্রাদারহুডে। যদিও পারিবারিক ভাবে কুতুবিজিমে বিশ্বাসি ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কুতুবিজমের প্রধান মাওলানা সাইদ কুতুবকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। জাওয়াহিরি তার আরও চার জন স্কুল পড়ুয়া বন্ধু মিলে মিশরের সরকারকে উৎখাত করার জন্য কুতুব ভিশন নামক একটা গোপন সেল খোলেন, যা কিনা পরবর্তীতে কট্টর মৌলবাদি মিলিট্যান্ট "আল জিহাদের" সাথে যুক্ত হয়।
পারিবারিক ভাবে কুতুবিজিমে বিশ্বাসি হলেও জাওয়াহিরি মাদ্রাসায় না পরে স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সার্জারিতে মাস্টাস করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয় বাধ্যতামুলক ভাবে। ১৯৮১ তে আনোয়ার সাদাত হত্যাকান্ডে শতাধিক সেনা অফিসার গ্রেফতার হলে জাওয়াহিরিও আটক হয়, কিন্তু প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায়।

পেশায় মেডিকেল সার্জন (ডাক্তার) হিসাবে জাওয়াহিরি ১৯৮৫ সালে সৌদি আরবের একটা হাসপাতালে চাকুরিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের প্রথম দিকে চাকুরি সুত্রে তার সাথে আল কায়েদা প্রধান বিন লাদেনের দেখা হয়। বিন লাদেন মাত্র লন্ডন থেকে মাত্র ফিরেছেন। তিনি তার দলকে নিয়ে আল কায়েদার সাথে যোগদেন এবং বিন লাদেনের ব্যাক্তিগত চিকিৎসক হিসাবেও নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

১৯৭৮ এ শীতলযুদ্ধের এক পর্যায়ে সোভিয়েটরা আফগানিস্তান দখল করে। সারা পৃথিবী জুরে কেজিবি এবং সিআইএ এর স্নায়ু যুদ্ধ যখন চরমে তখন আমেরিকার কাছে এইটা সাপে বর হয়ে আসার মতো ব্যাপার ছিল। আমেরিকা পাকিস্তানী ব্যাক জামায়াতুল ওলামায়ে ইসলাম পরিচালিত তালেবানদের অস্ত্র, ট্রেনিং, খাদ্য ও সৈন্য দিয়ে সহায়তা করতে থাকেন রাশিয়াকে আফগানিস্থান থেকে হটানোর জন্য। রুশপন্থিদের বিতারিত করে একটা আপাতত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য। এর মধ্যে ১৯৮৫ সালের দিকে জাওয়াহিরি তার ছোট ভাই মুহাম্মদকে বসনিয়া যুদ্ধে নিযুক্ত করেন।

জাওয়াহিরির সাথে তখন জাদরেল মোল্লা ওমর, উসামা বিন লাদেন, গুল-বুউদ্দিন হেকমতিয়ার এবং মতো পৃথিবীর সব নামীদামী সন্ত্রাসী। আমেরিকার ভাড়াটে কুকুর পাকিস্তানি সেনা ও গোয়েন্দা ISI এর সহায়তা তখন ওপেন সিক্রেট। একের পর এক ধ্বংস করা হয় আফগানের উর্বর জমি এবং সেখানে উৎপাদন করা হয় আফিম। মাদক ব্যাবসার অবাধ সুযোগ দেয়া হয় পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের। লাদেন-মোল্লা ওমরদের অতখন অবাধ রাজত্ব। ছুন্নি ছাড়া বাঁকি অন্য সম্পরদায়ের মানুষদের বাড়ি ধ্বংশ করে দেয়া হয়। প্রথমের দিকে জনগণ বিনা পয়সায় আফিম বা হেরোইন দিয়ে তাতে আসক্ত করে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হতো। খুব দ্রুত একের পর এক এলাকা দখলে নিতে থাকে তালেবান মিলিশিয়ারা। সোভিয়েটরা তখন গ্লাসনষ্ট ও পেরেস্ত্রোয়িকায় পরিবর্তন হচ্ছে। যুদ্ধে তখন সরে আসার চিন্তা রাশিয়া একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ১৯৮৮ সালে তাদের সৈন্য গুটিয়ে নেয়। আফগানিস্থানের নতুন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ নাজিবুল্লাহ অনেকটা ছার দেয়ার অজুহাতে কম্যুনিস্ট দেশকে ইসলামিক রিপাবলিক ঘোষণা করেও রক্ষা পায় না। ১৯৯২ সালে তার সরকারের পতন ঘটে।

মুহাম্মদ নাজিবুল্লাহ ক্ষমতা চ্যুত হয়ে জাতিসংঘের মিশন হাউজে আশ্রয় নেয়। তখন তালেবানদের রাজধানী কান্দাহার। ১৯৯৬ সালের দিকে তারা কাবুল তথা গোটা আফগানিস্থান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কাবুলে জাতিসংঘের মিশন হাউজ আক্রমণ করে মুহাম্মদ নাজিবুল্লাহকে তুলে আনা হয়। এরপর তাকে গাড়ির পিছে বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় টেনে নিয়ে বেরানো হয়। অবশেষে দিনের বেলায় জনসম্মুখে ল্যাম্প পোষ্টের সাথে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। পরের ইতিহাস সবারই জানা।

আর তাই আল কায়েদা বা ব্রাদার হুডের সাথে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামের আত্মার সম্পর্ক। জাওয়াহিরি নিজেই প্রাক্তন কুতুবিষ্ট, পরে ব্রাদার হুড, এক সময়ের জামায়াতুল উলামায়ে ইসলাম এবং বর্তমানে আল কায়েদা প্রধান। তাই তার কাছ থেকে এমন অডিও বার্তা আসা অমুলুক কিছু নয়। অডিও বার্তাটি জাল কি না জানি না। তবে জাল হলেও পুর্ব ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×