গত এক সপ্তাহ ধরে খুদে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আমলা-মন্ত্রী থেকে আমজনতা সকলেই দারুনভাবে এপ্রিশিয়েট করেছে। সবাই বলেছে, সবাই চেয়েছে যে, এমনটা দরকার ছিলো।
স্কুলশিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নগরে বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড ভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন। সরকার সব দাবিমেনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রায় সমাপ্তির পথে -
তাহলে শেষদিন জিগাতলায় এমন রণক্ষেত্র কেন হলো ?
তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দাংগাহাংগামা গুজবের আগে শুরু হয়েছিলো, নাকি গুজবের পরে ?
খুদে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোলন টা শেষদিকে ইংলিশ হয়ে গেল।
"we want justice" বাংলাদেশের আন্দোলন ইংলিশে হয় কিভাবে? জাষ্টিস ফর তাহামিদ, জাষ্টিস ফর চৌধুরী (সাকা) স্টাইল!
রংঢেলে বানানো "৪ জন শিক্ষার্থী নিহত, এবং ৪ জনকে আটকে রেখে ধর্ষিত হচ্ছে" খবরটি মাত্র আধা ঘন্টার মধ্যে বারুদের মতো ছড়ানো হয়েছে। এবং পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, এটি শক্তিশালী ওয়েল অর্গানাইজড টিমের পূর্ব পরিকল্পিত বিষয়। বিশেষ করে গুজব ছড়ানোর পরিকল্পিত ধাপগুলো যদি একটু খেয়াল করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন।
- প্রথমে কয়েকটি খুব আনাড়ি ভাবে (যেন মাত্র ঘটেছে, রিয়েলিষ্টিক সত্য বুঝানোর জন্য) হাতের মুখ ঢাকা ভিডিও ছেড়ে দেয়া হলো
- হাজার হাজার ইনবক্সে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে দেয়া হলো
- কাজী নওশাবাকে লাইভে নিয়ে আসা হলো।
- ঠিক ঐ সময়ের মধ্যেই BBC, CNN, Al-Jazeera কে ট্যাগ করে একই ক্যাটাগরির পোস্ট।
- ইনবক্সে ইনবক্সে BBC, CNN, Al-Jazeera হোয়াটসএপ নাম্বারগুলো দিয়ে বলা হয় যে, সবাই যেনো সেসব ভিডিওগুলো পাঠায়।
লক্ষকরে দেখবেন, ঠিক সেই সময়ে শুধু এ কটি তৈরিকরা ভিডিওই মাঠে ঘুরছিলো, যেখানে মুখ ঢেকে চিৎকার করে কাঁদো কাঁদো অভিনয় ৪জন নিহত, ৪ জন ধর্ষিত ...।
আবার একই সময়ে কাজী নওশাবার লাইভ ভিডিওতে জানাচ্ছে একজনের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং ৪জনকে ততক্ষণাৎ ধর্ষণ করা হচ্ছে ! তিনি বলেননি, ধর্ষণ করা হয়েছে ; বরং তিনি বলছিলেন, ধর্ষণ করা হচ্ছে, রীতিমতো Present Continuous Tense !
দাবানলের মত, মফস্বলের মসজিদের মাইকের মত! "ডাকাত! ... ডাকাত! মসজিদে আক্রমন করেছে, মোসলমান ভাইয়েরা লাঠিসোটা নিয়ে বেরিয়ে আসেন"
৩০ মিনিটের মধ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং একই সময়ে BBC, CNN, Al-Jazeera ও খেলছিল।
হাঙ্গামাকারিরা লাশ না পেলেও বংলাদেশী মিডিয়া না পেলেও 'আল-জাজিরা' লাশ পেয়েছিল।
ঢাকার রাস্তা থেকে আল-জাজিরা লাইভ সম্প্রচার করছিল, বলছিল বাংলাদেশে দাংগা ছড়িয়ে পরেছে সংঘাতে এজাবৎ ৩জন নিহত?
(৬ দিন আগের বাস এক্সিডেন্টে মৃত্যু কে সংঘাতে নিহত! সাতার না জানাতে পানিতে ডুবে একজন জবি ছাত্র, সেটাও সংঘাতে নিহত?)
বাংলাদেশে বাক স্বাধিনতা নেই, সব মিডিয়া বন্ধ করে দিচ্ছে ! (শালার পুত রাস্তা থেকে সরাসরি খবর পাঠাইতেসস, এর আগে কবে পারছিলি) মিসরে ৩ আল-জাজিরা সাংবাদিককে কেন মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল এখন বোঝা যায়।
আরেকদিকে খেলা চলছিল মহম্মদপুরে একটি বাসায় 'কে কোন পদ পাবে' ভাগাভাগির খেলা। সাম্রাজ্যবাদি দানব দেশের দুত এসেছিলেন। গোপনে। উইদাউট প্রটকল, গাড়ীও দুতাবাসের হলুদ নম্বরপ্লেট নয়। পুরোনো সাধারন ঢাকামেট্র নাম্বারপ্লেট গাড়ী।
সংগবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারিরা মোহম্মদপুরের বাসায় বার্নিকাটের সাথে গোপন বৈঠকে বসেছিল।
গোপনেই। বৈঠকে কারা কারা ছিল কিছুই জানা যায় নি। সবাই আগেই সরে পরছিল। কারা কারা ছিল সেটা জানার জন্যেই শহিদুল আলমকে ধরেছে হয়তো। রাষ্ট্রদুত বের হওয়ার আগে প্রটকল না নিয়ে আসায় সাথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষী ছিলনা। তাই সরকারের কাছে পুলিশী নিরাপত্তা চেয়েছিলেন, তখনি সবাই জেনে যায়। আওমীলীগ সাংবাদিক খবর দিয়ে লোকজন বাসা ঘেরাও করতে যায়, বার্নিক্যাটের গাড়ি না চেনাতে ওদের গাড়ী ভেবে ঢিল মেরেছিল
মার্শা বার্নিকাট অরক্ষিত অবস্থায় ওই এলাকায় তখন কী করছিলেন? কেন গিয়েছিলেন?
উনি নিজেই নিজেদের তৈরি আইন ভংগ করলেন।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ওয়েবসাইটে গত ৩ জুলাই বাংলাদেশে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারনে নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু বিধিবিধান মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে মার্কিন সাধারন নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্ক হতে বলা হয়। নাগরিকরা কোথায় যেতে পারবে বা পারবে না সে সংক্রান্ত নির্দেশনাও আছে। পর্যাপ্ত রক্ষী ও স্থানীয় পুলিশি নিরাপত্তা ছাড়া কোনো মার্কিন অফিসিয়াল নির্ধারিত এলাকা ও নির্ধারিত সময়ের বাইরে (রাতে) কোথাও যেতে পারবে না এই নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।
এই নিয়মানুসারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রাতে মোহাম্মদপুরে কারো বাসায় যেতে পারেন না। কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়া কূটনৈতিক পাড়ার অনেক বাইরে সুজন সম্পাদক বদ বদিউলের বাসায় গিয়ে মার্শা বার্নিকাট গুরুতর ভাবে নিজ রাষ্ট্রের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।
শনিবার আওয়ামীলীগ অফিস আক্রান্ত হবে কেউ ভাবতে পারেনি। অফিসে থাকা পেটমোটা লোকজন ভাল মাইর খেয়েছিল, প্রস্তুতি ছিলনা। ক্যাডার/নেতারা ফাকা গুলিবর্শন করেও ঠ্যকাতে পারেনি। পর্যাপ্ত পুলিশও ছিলনা। লীগ ভাবতেও পারেনি নিজের অফিসে এভাবে মাইর খেতে হবে, মাইর খাবে।
স্কুল কলেজের বাচ্চাদের গায়ে কেউ হাত তুলেনি।
দুজনকে জিগাতলা অফিসে আটকে রেখেছে গুজব ছড়িয়ে তদেরকে উষ্কানি দিয়ে জিগাতলা নিয়ে মার খাওয়াতে চেয়েছিল বড়রা।
কিন্তু বাচ্চারা রাস্তার দায়িত্ব ছেড়ে যেতে চায় নি। যায় নি।
জিগাতলায় দলিয় অফিস আক্রমন, ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় যোগ দিয়েছিল সাদা শার্ট পরা বড়রা বড়রা, অছাত্ররা। নিউমার্কেট একাকার দুইহাজার সাদা ইউনিফর্ম একদিনেই বিক্রি হয়েছিল। হামলা এলোপাথারি মাইর পদদলিত, যেনতেন ভাবে একটা লাশ দরকার ছিল । পায়নি।
ইষ্টওয়েষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বসুন্ধরা
পরদিন রবিবার ও সোমবার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল জামাত-শিবিরের। অন্যান্ন জেলা থেকেও লোকবল সংগ্রহ করা হয়েছিল সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দিয়ে সমগ্র ঢাকা ভয়াবহ ভাংচুরের প্ল্যান হয়েছিল। স্কুলছাত্র খুদে শিক্ষার্থীদের মানবঢাল বানিয়ে বিরামহীন তান্ডোব চালানোর প্লান ছিল, যদিও খুদে শিক্ষার্থীরা আগের দিনই বাসায় ফিরে গেছিল। সাদা শার্টপরা কিছু ভুয়া ছাত্র তখনো মাঠে ছিল, পুলিশ ও হেলমেটধারি ছাত্রলীগ ওদের আইডিকার্ড চেক শুরু করলে ওরাও গা ঢাকা দেয়।
ওরা ভেবেছিল ইউনিভার্সিটির বড়ছাত্ররা নামলে নগর বিএনপির নেতাকর্মি সমর্থকরাও নামবে, কিন্তু কেউ নামেনি। অল্প কয়টা পুলিশ রাস্তায়, বিজিবিও নামানো হয় নি। আর শখানেক ছাত্রলীগের হেলমেটধারী মটরসাইকেল, মোকাবেলার সাহস হয়নি।
ইষ্টওয়েষ্ট ও নর্থ সাউতের কিছু ছাত্র ও ঢাকার বাইরে থেকে আনা বহিরাগতরা একযোগে মিলিটারি কায়দায় গেটথেকে বাহিরে আসার ভিডিও লাইভ করে অন্য বিশ্ববিদ্যলয়গুলো অনুপ্রানিত করতে দেখা যায়। প্রগতি সরনি ও বিমানবন্দর সড়ক অবোরোধের আহবান জানাতে থাকে।
বেশিরভাগ পুলিশ শাহাবাগ ও জিগাতলায় থাকায় বসুন্ধরায় পুলিশের সংকট ছিল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অবস্থান শুন্যের কোঠায়। মহাখালী এলাকা থেকে তিতুমির কলেজের ক্যাডার আনতেও দেরি হচ্ছিল। তাই পুলিশ আউটসোর্সিং করে ভলেন্টিয়ার যোগার করতে হয়েছিল। এরা বেশিরভাগ সিটি কর্পোরেশনের ঝাড়ুদার, বস্তির দিনমজুর।
কিন্তু শিবির বিপুল বহিরাগত আনারপরও দুটি ছাড়া আর কোন বেসরকারি ইউনিভার্সিটি গ্যাঞ্জাম করাতে পারেনি। তেজগা ও রামপুরায় অল্প কিছু নেমেছিল, তারা কোন ইউনিভার্সিটির বোঝা যায় নি। ঢাবিতে ছাত্রদল প্রাধান্য থাকায় ওদের মোটামুটি শক্ত অবস্থান ছিল শুরু থেকেই। শাহাবাগে সকালে বিপুল জমায়েত হয়ে রাস্তা বন্ধ করেছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তারাও শাহাবাগ ছেড়ে ক্যাম্পাসের ভেতর যেয়ে আস্তে আস্তে থেমে যায়।
হয়তো বেসরকারিরা রাস্তা দখল রাখতে ব্যার্থ দেখার পর হতাস হয়েই।
সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েগেলে বেচারা হারিকেন হাতে 'একজন' হতবুদ্ধি হয়ে বসে থাকে! পর দিন স্ট্যাটাস এডিট করে। বেচারা।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৩