পুলিশের ভাষ্যমতে গত ২৬ জুলাই সকালে পরিচালিত হয়েছে দেশের ইতিহাসে সফলতম জঙ্গী বিরোধী অভিযান । শতাব্দি সেরা (!) এ অভিযানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী রাতভর একদল সশস্ত্র জঙ্গীবাহিনীর সাথে লড়াই করে তাদের শুধু কুপোকাতই করেনি বরং ৯ জঙ্গীকে হত্যার পাশাপাশি একজনকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করতেও সক্ষম হয়েছে । সবচেয়ে বড় কথা ১০ জন জঙ্গীর এতবড় একটা দলকে সেনা বা কমান্ডো সাহায্য ছাড়া শুধু পুলিশ বাহিনী একাই কাবু করে ফেলেছে । তাও আবার নিজেদের কোন সদস্যদের গুরুতর কোন ক্ষতিহওয়া ব্যাতিতই ।
এসবদিক হিসেব করলে বাহবা পাওয়ার যোগ্যই আমাদের বীর পুলিশেরা । কিন্তু ছোট্ট কিছু হিসাবে কী গড়মিলের আবছা আভাস পাওয়া যাচ্ছে না ?
পুলিশ বলছে রাতভর তাঁদের ওপর গুলি বর্ষন করা হয়েছে এবং কমপক্ষে ১১ টি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে । কিন্তু অভিযান শেষে কল্যানপুরের সে ফ্ল্যাট থেকে যে জিনিস গুলো উদ্ধার করা গেছে তা হল , " ৪ টি পিস্তল , ২২ রাউন্ড গুলি , ২৩ টি হ্যান্ড গ্রেনেড , ৫ কেজি বিস্ফোরক এবং কিছু চাকু ও তলোয়ার " । অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে গুলি ছোড়ার জন্য তাদের কাছে কেবল ৪ টি পিস্তলই ছিল । প্রশ্ন হল ৪ টি পিস্তল দিয়ে কিভাবে মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়ে কয়েকশো সশস্ত্র পুলিশকে রাতভর আটকে রাখা সম্ভব ?
এছাড়া প্রশিক্ষীত জঙ্গীদের ছোঁড়া ১১ টা হ্যান্ড গ্রেনেডের একটাও টার্গেটে না পরাটাও প্রশ্নের যোগান দেয় বৈ কি ।
অভিযান শেষ হওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ ঘোষনা করে নিহত জঙ্গীদের বয়স ২০-২৫ বছর । এর সবাই জেএমবি সদস্য এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান । এর সাথে এটাও জানানো হয় পুলিশ তাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো জানেনি ! প্রশ্ন হল নিহতদের নাম , ঠিকানা অথবা পরিচয় কোনটিই যদি পুলিশ না জানে তবে তারা কীভাবে জানলো এরা জেএমবি সদস্য এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ?
যাই হোক কো-ইনসিডেন্স বলে একটা শব্দ আছে । ধরলাম এর সবই কো-ইন্সিডেন্স । কিন্তু পুলিশের মতে কল্যানপুর অভিযানে নিহত জঙ্গীদল এবং গুলশানে হামলাকারী জঙ্গীদল একই সংগঠনের । যদি তা সত্যি হয় তবে কী তারা বলতে চাচ্ছে যে গুলশানের হামলা আইএস নয় করেছে আমাদের ঘরের প্রোডাক্ট জেএমবি ? নিতান্ত ক্ষীন বুদ্ধিসম্পন্ন লোকের কাছেও বিষয়টা হাস্যকর ঠেকবে । কারন জেএমবি আর আইএস সম্পূর্ন আলাদা সংগঠন । এবং গুলশান হামলায় আইএস এর সম্পৃক্ততা বিশ্বব্যাপি প্রমানীত । তার সাথে প্রমানীত বাংলার মাটিতে আইএস এর উপস্থিতিও । তবে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্গলা রক্ষাবাহীনীর মাথা হিসেবে যারা কাজ করছে তাদের মাথায় কেন এ জিনিসটা ঢুকছে না ? কেন এতকিছুর পরও তারা আইএসের উপস্থিতি অস্বীকার করতে চাইছে ?
আইনশৃঙ্গলা রক্ষাবাহিনীর কাজ দেশে সমস্যা যাই থাকুক না কেন তার শেকড় পর্যন্ত গিয়ে সমূলে উপড়ে ফেলা । কিন্তু আমাদের দেশে দেখছি তারা মগডালে পাতা নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে । গাছের পাতা ধরে টানলে সর্বোচ্চ একটা ডাল ভাঙ্গা সম্ভব কিন্তু সমূলে উপড়ে ফেলা কখোনোই সম্ভব না ।
প্রার্থনা করি স্রষ্ট আমাদের প্রতি সহায় হোক । যাতে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও একগুয়েমীর ফল বাংলার সাধারন জনগনকে ভোগ করতে না হয় ।