somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ জার্নি টু কক্সবাজার এন্ড সেন্টমার্টিন (১ম পর্ব)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভূমিকাঃ ২০০১ সালের কথা। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র । ১৪ দিনের শিক্ষা সফরে বের হলাম। গন্তব্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন। সকল বন্ধুদের মাঝে আনন্দের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার চলছে। জোয়ারে আমিও ভেসে চলছি। কিন্তু আনন্দের মাঝেও কোথায় যেন এক ছন্দ পতন অনুভব করছি। সহসাই ধরে ফেললাম তার কারন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী যে সফরে আমার সাথে নেই। অনার্স সাবজেক্ট আলাদা হওয়ায় তার শিক্ষা সফরের গ্রুপ ও সময় আলাদা। প্রতিদিনই সে একাধিকবার আমাকে ফোন করছে। তখন সবার কাছে মোবাইল ফোন ছিলনা। আমাদের ক্লাসে ৫/৬ জনের মোবাইল ফোন ছিল। সে ফোনের দোকান থেকে কোন বন্ধুর মোবাইলে রিং দিয়ে আমার সাথে কথা বলত। এবিষয়ে বন্ধু মহলে ব্যপক গুঞ্জন চলছিল। আমার রাগ হত। সেতো শুধুই বান্ধবী, অন্য কিছু নয়। তার সাথে আমার প্রায় প্রতিদিন ঝগড়া লাগত। বান্ধবী ছাড়া অন্য কিছু হবার সুযোগ কোথায়?
এক যুগ পরে আবার কক্সবাজার - সেন্টমার্টিন সফরে বের হলাম। সাথে সেই প্রিয় বান্ধবী। তবে এখন আর শুধু বান্ধবী নয়, আমার প্রিয়তম স্ত্রীও বটে। সাথে সাড়েতিন বছরের ছেলে। এবার আর কোন ছন্দ পতন নেই। আছে শুধু আনন্দের বন্যা।

কক্সবাজার সফর – ২০১৩
বিয়ের পর ৭ বছর ধরেই কক্সবাজার যাবার প্লান করছি। এক সময় প্লান বাস্তবায়ন হয়নি টাকার জন্য। পরে হয়নি সময়ের অভাবে। সরকারি চাকুরী করলেও শেষ দুবছরে শুক্র-শনিবারের ছুটি আমার ভাগ্যে কমই জুটেছে। শেষ পর্যন্তু এ বছরের শুরুতে অফিস ম্যানেজ করে ৫ দিনের ছুটি নিলাম। আর ছুটির আনন্দ উপভোগে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম সপরিবারে।
কক্সবাজার টার্মিনালে বাস থেকে নামতেই তিন – চার সিএনজি চালক ঘিরে ধরল। রিতিমত লাগেজ টানাটানি। তারা আমদেরকে কম খরচে ভাল হোটেলে নিয়ে যাবে। ভীড় ঠেলে এক সিএনজিতে উঠে পড়লাম। গন্তব্য জিয়া গেস্ট হাউস, কলাতলী। হোটেল মালিকের মেয়ের জামাই এক উপজেলার ইউএনও। এক সময়ে আমরা একই স্টেশনে চাকুরী করেছি। ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও ইউএনও সাহেবের সাথে পারিবারিক সুম্পর্ক গড়ে উঠে। হোটেল বুকিং করা আছে শুনে সিএনজি চালকের মন খারাপ হয়ে গেল। বেচারা হোটেল কমিশনের পঞ্চাশ টাকা থেকে বঞ্চিত হবে। চালকের মন খারাপ দেখে অভয় দিলাম তার ভাড়া কিছু বাড়িয়ে দিব। যাত্রা পথে কলাতলী মোড়ে চোখে পড়ল হাঙ্গর ও ডলফিনের চমৎকার ভাস্কর্য। রাতে ভাস্কর্যে লাইটিং ও পানির ফোয়ারা থাকায় আরো সুন্দর লাগছে।


হোটেলে পৌছতে রাত হয়ে গেল। হোটেল ম্যানেজার, বয় সবাই খুব খাতির করল। হাজার হোক মালিক পক্ষের মেহমান।
পরদিন সকালে গেলাম লাবনী পয়েন্টে, সমুদ্র দেখতে। রিক্সা থেকে নামতেই ক্যামেরা হাতে এক ছেলে এগিয়ে এলো। ছবি তুলব কিনা জানতে চাইল। সাথে ক্যামেরা আছে বলার পরও ছেলেটি পেছনে লেগে রইল। উন্নতমানের ক্যামেরা ও প্রফেশনাল হাত দিয়ে সে আমাদের দারুন দারুন ছবি তুলতে চাইল। 3R সাইজের ছবির মূল্য মাত্র ১৫ টাকা আর 4R মাত্র ২০ টাকা।


সৈকতে অসংখ্য ছাতা আর তার নিচে হেলান দিয়ে শোয়ার ছোট খাটিয়া । ভাড়া ঘন্টায় ৩০ টাকা। ছাতা ভাড়া নিয়ে সেখানে কাপড়, জুতা রেখে পানিতে নামার প্রস্তুতি নিলাম।


পানিতে নামার আগে দেখে নিলাম সবুজ পতাকা উড়ছে। অর্থাৎ এখন জোয়ার। পানিতে নামা যাবে। লাল পতাকা দেখলে ভূলেও কেউ নামতে যাবেন না। ভাটার সময় দক্ষ সাতারুরাও বিপদে পড়ে যান।


লাইফ গার্ড সদস্যদের দেখলাম লাল ড্রেস পরে সৈকতে ঘুরে বেরাচ্ছে। আবার পর্যবেক্ষক টাউয়ার থেকে বাইনেকুলা্রে চোখে লাগিয়ে দেখছে কেউ বিপদে পরছেকিনা। সমুদ্রে কেউ বিপদে পরলেই তারা উদ্ধারের জন্য প্রস্তুত।


সমুদ্রের পানিতে সাতার কাটার জন্য একটি টিউব ভাড়া করলাম। টিউব ভাড়া ঘন্টায় ৫০ টাকা।


বালিতে শিশুদের খেলা


সমুদ্র আনন্দরত দর্শনার্থীগন


বিকেলে আবার বীচে এলাম। সূর্যাস্ত পর্যন্ত বীচে বসে রইলাম।


তারপর বীচ মার্কেটে কেনাকাটায় মনযোগ দিলাম। রকমারী পণ্যের সমাহার পাবেন বীচ মার্কেটে।


বীচ মার্কেটে কেনা যেতে পারে শুঁটকি।


আর শামুক-ঝিনুক কিনতে চাইলে বীচের দিকে রয়েছে খোলা মার্কেট।


ঘুরতে ঘুরতে ক্ষিদে লেগে গেলে বীচ লাগোয়া হোটেল্গুলোতে নাস্তা করা যেতে পারে।


মজাদার বারবিকিউ।


একটু কমদামে বারবিকিউ খেতে চাইলে রাস্তার পাশে খোলা ভ্যানে কিনে খেতে পারেন।


আর হা রাতের আলোকসজ্জিত কলাতলী রোডটি রিক্সায় ঘুরে দেখতে পারেন।


দ্বিতীয় দিন সকালের গন্তব্য হিমছড়ি। ৩৫০ টাকায় সিএনজি রিজার্ভ করলাম। চুক্তি হলো সিএনজি আপ-ডাউন করবে এবং হিমছড়িতে ২- ২.৫ ঘন্টা অপেক্ষা করবে। আমাদের হোটেল থেকে হিমছড়ি পিকনিকস্পটের দূরত্ব ১০ কিলো মিটার। সমস্ত রাস্তার বাম পাশ জুড়ে রয়েছে পাহাড় এবং ডান পাশে সমুদ্র। রাস্তার দুপাশের নয়ানভিরাম দৃশ্য সম্পূর্ণ উপভোগ করতে চাইলে রিক্সা ভাড়া করাই বুদ্ধিমানের কাজ।


সিএনজি হিমছড়ি পিকনিকস্পটে থামতেই এক লোক এগিয়ে আসলেন। ১৫ টাকা পার্কিং চার্জ দাবি করলেন। পার্কিং চার্জ দিয়ে টিকেট কাউন্টারে গেলাম। প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৩০ টাকা।


ভেতরে প্রবেশ করে ডান দিকে অগ্রসর হতে থাকলে হিমছড়ির ঝর্ণা দেখা যাবে। আকারে ছোট হলেও ঝর্ণায় সারা বছর পানি থাকে।


সিড়ি বেয়ে হিমছড়ির পাহাড়ে উঠে যেতে পারেন।


সিড়ি বেয়ে অনেক উচু পাহাড়ে উঠতে রিতিমত খবর হয়ে যাবে। তবে উঠে গেলে কিন্তু মোটেও আফসোস করতে হবে না। প্রকৃতির অসাধারন রূপ আপনার চোখে ধরা পরবে।


পাহাড়ের উপর বাইনিকুলারে দূরের দৃশ্য কাছে এনে দেখতে পারেন। চার্জ ১০ টাকা।


আর পাহাড়ে বেশি হাপিয়ে গেলে বেঞ্চে বসে ডাব খেয়ে নিতে পারেন। এখানে পাবেন সুমিষ্ট ডাবের পানি। ডাবে পানির পরিমানও বেশি। দাম ২৫/৩০ টাকা।


দুপুরে ফিরে সরাসরি রেস্তরায় খেতে বসলাম। রেস্তরায় একটি মিনি পোস্টারে লেখা দেলাম, “এখানে সামুদ্রিক মৎস্য জাদুঘরের টিকেট পাওয়া যায়। দুটো টিকেট নিলাম। প্রতিটি টিকেটের মূল্য ৩০ টাকা। হোটেলে ড্রেস চেঞ্জ করেই ছুটলাম সামুদ্রিক মৎস্য জাদুঘরে। ভাবলাম বড় বড় একুরিয়াম কিংবা টানেলে সমুদ্রের হরেকরকম জীবন্ত মাছ দেখা যাবে। জাদুঘরে গিয়ে হতাশ হলাম। ছোট পরিসরের এক আঙ্গিনায় কয়েকটি কাচের জারে ফরমালিনে মরা কিছু সামুদ্রিক মাছ। দর্শনার্থীও খুব বেশি নেই। বুঝতে পারলাম কেন এদের টিকেট রেস্তরাগুলোতে দিয়ে রাখতে হয়।


সামুদ্রিক মৎস্য জাদুঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে রিক্সা নিলাম কক্সবাজার শহরের উদ্দেশ্যে। গন্তব্য বার্মীজ মার্কেট সংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দির।


মন্দিরের প্রবেশ পথে জুতা খুলে রেখে যেতে হবে। জুতা পাহারার জন্য একজন লোক দেখতে পেলাম। মন্দিরের কাছে যেতেই দোতালা থেকে এক লোক উপরে উঠতে বলল।


দোতালায় এক যুবক আমাদেরকে মন্দিরের ভেতর সব ঘুরিয়ে দেখালো। সে উক্ত মন্দির, মন্দিরের মূর্তি, মন্দিরে রক্ষিত প্রাচিন পুঁথির ইতিহাস বর্ণনা করল। মন্দিরে টুরিস্টদেরকে গাইড করার লোক আছে দেখে ভাল লাগল। ১০ মিনিটের বর্ণনা শেষে সে আর্থিক সাহায্য চাইল। তার হাতে ৫০ টাকা তুলে দিলাম। ফেরার পথে জুতার পাহারাদারও বখশিশ চাইল। বুঝলাম ট্যুরিস্ট এলাকায় ফ্রি বলে কিছু নেই। পাহারাদারের হাতে ২০ টাকা গুজে দিলাম।


মন্দির থেকে বের হয়ে হেটে গেলাম বার্মীজ মার্কেটে। এক সময় প্রচুর পর্যটক কেনা-কাটার জন্য বার্মীজ মার্কেটে আসত। এখন বার্মীজ মার্কেটের সব আইটেমই পাওয়া যায় লাবনী পইয়েন্টে। তাছাড়া কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের মতো এখানে অসংখ্য বার্মিজ মার্কেট গড়ে উঠেছে। ফলে দোকানগুলো আগেরমত ভীড় নেই।



তৃতীয় দিনের পোগ্রাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্যাকেজ কোম্পানির গাইড ফোন দিচ্ছে। ঘুম থেকে উঠেছি কিনা, রেডি হয়েছি কিনা। সেন্ট মার্টিনে ভ্রমনের জন্য এখানে বিভিন্ন প্যাকেজ কোম্পানী রয়েছে। ১ দিনের ট্যুরে বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে। আমি নিলাম ১২০০ টাকার (জন প্রতি) প্যাকেজ।
দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×