আজ একটা সুন্দর জায়গার স্মৃতি খুব মনে পরছে। স্থানটি চীনের জিজিয়ান প্রদেশের রাজধানী হাংজু শহরে। অফিসের কাজে চীনে গিয়েছিলাম দিন পনের এর জন্য। আমার জীবনের প্রথম বিমান ভ্রমন। জুনের শেষে দেশে তখন প্রচন্ড গরম তার পরও বিমান বন্দরে যাওয়ার আগ মূহুর্তে গায়ে একটা ব্লেজার চাড়িয়ে নিয়ে ছিলাম। ঢাকা বিমান বন্দর থেকে চায়না ইষ্টার্ন এয়ার লাইন্স এর রাত তিন টায় ফাইট। আমার সফর সঙ্গী আমার সিনিয়র অফিসার জাকির স্যার। যিনি বসের চাইতে বড় ভাই, বন্ধুর মত আমার ভ্রমনটা অনেক মজাদার করে তুলেছিলেন।
জানালার পাশে সিট পরেছিল ছোট জানালা দিয়ে রানওয়ের হলুদ বাতি দেখা যাচ্ছিল। মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাকের মত কিছু গাড়ি এম্বুলেন্সের মত বাতি জ্বালিয়ে ছুটাছুটি করছিল। গভীর রাতে রানওয়ের অপরিচিত ব্যস্ততা কেমন যেন অন্য রকম লাগছিল। অপরিচিত চেহাড়ার লোক জন বিমান ক্রুদের রুটিন ওয়ার্ক কেমন যেন ঘোর লাগা চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি আবার রংপুরের ’মফিজ’। অপরিচিত কিছু দেখলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি।
কিছুক্ষণ পর মৃদু গুঞ্জন দিয়ে মাঝারী সাইজের বিমান টি নড়ে উঠলো। ধীরে ধীরে বাসের মত করে আগাতে থাকলো মূল রান ওয়ের দিকে। এরপর ছুটতে শুরু করলো। জানালা দিয়ে ছুটন্ত বাতি গুলো দেখছি আর ভাবছি আমার প্রিয় মানুষ গুলোকে রেখে যাচ্ছি। একটা সময় পেটে সুড়সুড়ির মত অনুভুতি দিয়ে পিছন দিকে হেলে গেলাম, অর্থাৎ বিমান আকাশে উড়াল দিয়েছে, আমি জীবনের প্রথম আকাশে উড়াল দিলাম........উপড় থেকে নীচে রাতের ঢাকা শহর দেখতে পেলাম, রাস্তার সোডিয়াম বাতির সারি আর রাস্তা দিয়ে চলা যানবাহনের হেডলাইটের বিন্দু বিন্দু আলো। একসময় আর কিছু দেখা গেল না। জানালার পাশ অন্ধকার, ইঞ্জিনের চাপা গর্জন এরই মধ্যে খেয়াল করে দেখি আমার সফর সঙ্গী ঘুমিয়ে পরেছেন।
আমিও ঘুমিয়ে পরেছিলাম, আমার হাত ঘড়িতে তখন সকাল ছয়টা বাজে, জানালা দিয়ে পাহাড়ী এলাকা, ট্রেন, নদী আর চীনা ধাচের বাড়ি দেখতে পেলাম। বিমান বেশ নীচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে অর্থাৎ নামার সময় হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর কুনমিং এয়ার পোর্টে বিমান অবতরন করলো। বিমান থেকে নামা মাত্র ঠান্ডা হাওয়া সাড়া শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিলো। যাত্রীরা একে একে বিমান থেকে নেমে একটি বাসে উঠলো, যে বাস মূল এয়ার পোর্টের ইমিগ্রেশনের দিকে নিয়ে যাবে। কুনমিং থেকে তিন ঘন্টার বিরতিতে আমাদের পরবর্তী ফাইট হাংজু এর উদ্দেশ্যে।
হাংজু একটি সাজান গোছান পরিকল্পিত শহর। শহরটি টুরিষ্টদের জন্য খুবই আকর্ষনীয়। হাংজুতে আসার ২য় দিন চীনা প্রতিনিধি আমাদের ওয়েস্ট লেক দেখানর পরিকল্পনা জানাল। আমরা দুপুরের খাবার শেষ করে গাড়িতে করে রওনা হলাম হোটেল থেকে ২২ কিমি দুরে ওয়েস্ট লেকের উদ্দেশ্যে।
ওয়েষ্ট লেকের সৌন্দর্যে আমি এতোটাই মুগ্ধ যে লিখে সে অনুভুতি প্রকাশ করতে পারবো না। আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু ছবি দিলাম।
জানালা দিয়ে দেখা যায় নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা।
এই বিমানে করে এসেছিলাম।
বিমান থেকে নামার পর এমন বাসে করে মূল টার্মিনালে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
নয়নাভিরাম ওয়েস্ট লেকের একটি দৃশ্য।
আমার কাছে গাছ গুলো সুন্দর লেগেছে।
আমি ও জাকির স্যার।
হাসি খুশি উচ্ছল মিস সু্কি সহ আমরা।
লেক দেখার মজা আরও বাড়িয়ে দেয় এই জিগজ্যাগ ব্রীজ।
লেকের ধারে সুন্দর পরিচ্ছন্ন হাটার রাস্তা।
ভাসমান বোট কাম রেস্টুরেন্ট।
বিভিন্ন পানীয় ও স্যুভেনীর দোকান।
সন্ধ্যা নামলে বোট গুলিকে আলোকিত করা হয়। ড্রাগন আকৃতির বোট গুলো দিয়ে যেন রুপকথার মহোনীয় দৃশ্য তৈরী হয়। আমাদের এখানে সংসদ ভবন বা চন্দ্রিমা উদ্যানে কিনবা রাজশাহীর পদ্মা নদীর তীরের মত সন্ধ্যার পর তরুনরা একত্রিত হয়, গিটার বাজিয়ে গান করে।
সৌখিন ফটোগ্রাফার দের মিলন মেলা।
আরও কয়েকটি দৃশ্য দিয়ে শেষ করছি, ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



