somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যর্থ হোন, সফলতার সাথে – let’s fail successfully! ;)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




[এক]

আজ আমরা কমপিউটার ব্যবহার করছি যেখানে সেখানে। টেবিলে কম্পিউটার - কোলেও কম্পিউটার, হাতের মুঠোতেও কম্পিউটার - হাতের কব্জিতেও কম্পিউটার। সত্তরের দশকের আমেরিকার অবস্থা এরকম ছিলো না। মার্কিনীদের কমপিউটার ব্যবহারে বিপ্লব এনেছিলেন স্টিভ জবস। চলমান বিশ্বের বিখ্যাত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান অ্যাপেল’র প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ম্যাকিনটশ তৈরি করলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন মার্কিনীদের গর্বের প্রতিষ্ঠান অ্যাপেল। ম্যাকিনটশ তৈরি করে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিলেন। প্রাপ্তবয়স্ক হতে না হতেই তারকা বনে গেলেন স্টিভ। কিন্তু প্রতিভাবান মানুষেরা ভালো প্রশাসক হতে পারেন না – এটি তাদের সাথে যায় না। তিনি ব্যর্থ হলেন। কিন্তু ফল খুবই ভয়ানক। এক বছরের মধ্যেই নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত হলেন। “আমার প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের একমাত্র মনযোগের বিষয়টি থেকে বিতাড়িত হলাম। এটি ছিলো নিঃস্ব হয়ে যাবার মতো অবস্থা। ভেবেছিলাম সিলিকন ভ্যালি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো। কিন্তু আমার কাজটিকে আমি দারুণ ভালোবাসতাম। তাই নতুন করে শুরু করলাম।” অ্যাপল থেকে নির্বাসিত হয়ে জবস তার আসল সত্ত্বাকে খুঁজে পেলেন। তিনি ‘নেক্সট’ প্রতিষ্ঠা করলেন। ১৯৯২-১৯৯৩ সাল থেকে যারা কমপিউটার ব্যবহার করছেন, তারা হয়তো নেক্সট দেখে থাকতে পারেন। তিনি এনিমেশন স্টুডিও ‘পিকসার’কে বিখ্যাত করে তুলেন কর্পোরেট জগতে। তৈরি হয় ওয়াল্ট ডিজনি’র কার্টুন ছবিগুলো। নিজের প্রতিষ্ঠানকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যান, যার মাধ্যমে আবার তিনি স্বগৌরবে অ্যাপেলে ফিরে আসেন। রূপকথার গল্পের মতো। মাইক্রোম্যানেজার হিসেবে স্টিভ জবসের দুর্নাম আছে। প্রতিভাবানদের এসব দোষ থাকেই। কিন্তু ব্যর্থ না হলে এবং ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না পেলে স্টিভ জবসকে আজকে আমরা চিনতেই পারতাম না। (১)



ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতা থেকে সফলতার উচ্চশিখরে ওঠেছেন, এমন আরেকটি দৃষ্টান্ত হলেন, বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী এবং ডি ভ্যালেরা’র চেয়েও উচ্চতর স্থান দিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে (১৮৮৮-১৯৮৮) । নিউজউইক ম্যাগাজিন যাকে ‘রাজনীতির কবি’ বলে অভিহিত করেছিল (এপ্রিল ১৯৭১), সেই বঙ্গবন্ধু জেনেছিলেন সফলতার জন্য দরকার আত্মবিসর্জন। তিনি বলতেন, “কীভাবে জীবন দিতে হয়, তা আমরা এতদিনে শিখে গেছি। কাজেই কেউ আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।” বারবার তিনি নিজেকে ফাঁসিকাষ্ঠে তুলে দিয়ে নিজেকে সমর্পন করেন। তেইশ বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যর্থতার পথ ধরে আসে সফলতার মাহেন্দ্রক্ষণ। এই তালিকাটি একদম ছোট নয়, ওয়াশিংটন, নিউটন, নেপোলিয়ন... এভাবে অনেক নাম বলা যায়। তারা ব্যর্থতা থেকে সফলতার বীজ খুঁজে পেয়েছেন।





[দুই]

//ভালোভাবে চেষ্টা করলে ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা করার সময়ই পাওয়া না। কিছু ব্যর্থতা বিজয়ের চেয়েও বিজয়ী করে তোলে। কৃতিত্বের মাধ্যমে সফলতা আসে এরকম ধারণা করা ভুল। সফলতা আসে ব্যর্থতার পথ ধরে। সফলতার চেয়ে অধিক ব্যর্থতা আর কোথাও নেই, কারণ সফলতা থেকে আমরা কিছু শিখি না। আমরা শিখি শুধু ব্যর্থতা থেকে।// (২)


ভালোমতো ব্যর্থ না হলে নাকি সেখান থেকে পরিপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে এবং ষোলকলায় ব্যর্থ না হওয়া পর্যন্ত যেমন সমস্যার রকম বুঝা যায় না, তেমনি জেদও আসে না মনে। সফলভাবে ব্যর্থ হবার প্রক্রিয়ার মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে সফলতার বীজ।


‘নিশ্চিত ব্যর্থতা’ বিকল্প পথ ধরতে অনুপ্রাণিত করে। পারবো-কি-পারবো-না মনোভাব আমাদেরকে লেগে থাকা আর ছেড়ে দেবার মাঝ পথে আটকে দেয়। আমরা কিছুই করতে পারি না। সফল হতে তো পারিই না, ব্যর্থ হবারও সুযোগ পাই না। মাঝখানে জীবনের মূলবান সময় নষ্ট হয়ে যায়।


ব্যর্থতার ভয় আমাদেরকে প্রচেষ্টা থেকে নিরুৎসাহিত করে। আমাদের অহংকার অল্পতেই আহত হয়। ছেড়ে দিই, না বুঝেই। ফিরে আসি ব্যর্থ হবার আগেই। ফলে নিজের ত্রুটি বা দুর্বলতা কোথায়, তা বুঝতে পারি না। নিজেকে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই।


আমি ব্যর্থ হই নি - শুধু জানতে পেরেছি যে ১০,০০০টি উপায় কেন কাজে আসবে না (থমাস আলভা এডিসন)। হেনরি ফোর্ড বলেন, “প্রকৃত ভুল তখনই হয়, যখন তা থেকে আমরা কিছুই শিখি না।” কিন্তু ব্যর্থতার ভয় আমাদেরকে চেষ্টা করা ও ভুল করা থেকে বিরত রাখার কারণে আমাদের শেখা হয় না।




[তিন]

ব্যর্থতা থেকে কোনকিছু শেখা অবশ্য সহজ কাজ নয়। কে তিক্ত পথে শিখতে চায়! নিজের ভুল বা ত্রুটিকে আমরা খুব কমই দেখতে পাই। যা কামনা করি, তাতেই লেগে থাকি আমরা। যেটি আমাদের প্রয়োজন, সেটিই আকর্ষণীয়। যাকে চিনি সে-ই নজরে আসে। আমাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে গঠিত যে, আমরা যা চাই, তা-ই দেখতে পাই। অন্যেরা ভুল করুক তা আমরা চাই, তাই অন্যের ভুলই শুধু দেখি। নিজের দুর্বলতা দেখা যায় না, কারণ তা আমরা চাই না। সহকর্মীর ভুল ধরা তার চেয়ে ঢের বেশি সহজ, কারণ এটা আমরা দেখতে চাই। ভুল থেকে শিখতে চাইলে, নিজের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়।


মস্তিষ্ক বিভ্রম সেটিকেই বলে যখন যখন ভালোকে মন্দ এবং মন্দকে ভালো মনে হয়। আমাদের মস্তিষ্ক যেহেতু আমাদের বিপক্ষেই কাজ করে, সেহেতু ব্যর্থতা থেকে শেখার জন্য আমাদের কিছু শৃঙ্খলা মানতে হয়। শৃঙ্খলার কথা বললেই, মনে পড়ে যায় সেনাবাহিনীর কথা। শৃঙ্খলতাই তাদের শক্তি। প্রতিটি কাজের শেষে তারা ৪টি প্রশ্ন নিয়ে ‘কাজ-পরবর্তি, মূল্যায়নে বসে যায়। ১) আমাদের উদ্দেশ্য কী ছিলো? ২) কী হয়েছে? ৩) কেন তা হয়েছে? ৪) পরবর্তিতে আমরা কী করতে পারি? কিন্তু নিজেদের কাজে সফল হবার জন্য সকলকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে, তা তো সম্ভব নয়। তবে কাজের শেষে এধরণের আত্মমূল্যায়ন আসলে কাজেরই অংশ।


আমরা ব্যর্থ হতে চাই, যেন পরিপূর্ণরূপে সফল হতে পারি। সফলতার জন্যই ব্যর্থতার প্রতি ভয় কাটুক। নোবেল বিজয়ী এবং ‘ওয়েটিং ফর গোডো’ খ্যাত আইরিশ লেখক স্যামুয়েল বেকেটের উক্তি দিয়ে শেষ করছি:
“আবার চেষ্টা করুন - আবার ব্যর্থ হোন – ভালোভাবে ব্যর্থ হোন।”

(এলোমেলো নোটসকল)








----------
(১) ওয়াল্টার আইজ্যাকসন, স্টিভ জবস, ২০১১
(২) ভালোভাবে চেষ্টা করলে ব্যর্থতা নিয়ে চিন্তা করার সময়ই পাওয়া না (জ্যাকসন ব্রাউন জুনিয়র)। কিছু ব্যর্থতা বিজয়ের চেয়েও বিজয়ী করে তোলে (ফরাসি রেনেসাঁ’র লেখক মিকেল ডি মটেঙ)। কৃতিত্বের মাধ্যমে সফলতা আসে এরকম ধারণা করা ভুল। সফলতা আসে ব্যর্থতার পথ ধরে (বেনামী)। সফলতার চেয়ে অধিক ব্যর্থতা আর কোথাও নেই, কারণ সফলতা থেকে আমরা কিছু শিখি না। আমরা শিখি শুধু ব্যর্থতা থেকে (কেনেথ গোডলিং)। চারটি উদ্ধৃতি এক সাথে উপস্থাপিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:১৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×