somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবশেষে তাহাকে আমি পাইলাম: 66th UN DPI/NGO Conference

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সকাল ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাতিসঙ্ঘের ডিপার্টমেন্ট অভ্ পাবলিক ইনফরমেশন (UN DPI/NGO Conference) এর এনজিও বিষয়ক সম্মেলনটি প্রথমবারের মতো কোন এশিয়ান দেশে হলো। মূলত ৬৬টি সম্মেলনের ৬০টিই হয়েছে নিউইয়র্কে, ৫টি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এবং ১টি সম্প্রতি হয়ে গেলো দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটন নগরি গিয়ংজুতে। গিয়ংজু সউল থেকে ৪/৫ ঘণ্টার দূরত্বে, দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে। কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন নিদর্শনে পূর্ণ। সম্মেলনের উদ্দেশ্য এবং আয়োজন সম্পর্কে ধারণা দেবার জন্য এই লেখা।

অফিসের বিগ বস যখন সেদিন আচমকা ডেকে নিয়ে বললেন, 'আপনাকেই যেতে হবে, সব কাজ গুছিয়ে ফেলুন' তখন আমি একই সাথে খুশি এবং চিন্তিত। চিন্তিত ছিলাম কারণ ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত ব্যস্ততাটুকু কীভাবে কাটিয়ে ওঠবো ভাবছিলাম। অন্যদিকে খুশি ছিলাম, কারণ এটি কোন প্রাতিষ্ঠানিক সেমিনার নয়, জাতিসঙ্ঘের এনজিও বিষয়ক সম্মেলন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, এনজিও প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদরা একত্রিত হয় এই সম্মেলনে। জাতিসঙ্ঘের কোন সম্মেলনে যোগ দিতে পারা আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। ফলে আমি হ্যাঁ অথবা না, কিছুই বলতে পারলাম না। বলার সুযোগও ছিল না।




'মানসম্মত শিক্ষা', সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয়। বিশ্ব নাগরিকের জন্য মানসম্মত শিক্ষা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষার বিস্তার ও পৃষ্ঠপোষকতায় বেসরকারি সংস্থার অবদান সুবিদিত। তাই জাতিসঙ্ঘ চায়, এমডিজি পর্যায়ে যেমনভাবে এনজিওগুলো সহায়তা দিয়েছে, সেটি এসডিজিতেও অব্যাহত থাকুক।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন বললেন, কোন বড় কর্মসূচি এনজিও'র সহযোগিতা ছাড়া অকল্পনীয়। একই সাথে যুবসমাজকে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। 'আমি কোরিয়ার মানুষ। কোরিয়া আজকের মতো ছিল না। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাদের। এক সময়ে খোলা আকাশের নিচে বিদ্যা লাভ করেছে যে ছেলেটি, সে আজ জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।' উদ্বোধনী পর্বের এ মুহূর্তটি ছিল আবেগপূর্ণ। হাজার প্রতিনিধির বিশাল সম্মেলন কক্ষটিতে পিনপতন নিরবতা।


আবেগ (প্যাশন) থাকতে হবে নিজেদের কাজে। সেই সাথে থাকতে হবে মমত্ববোধও (কমপ্যাশন)। বান কি মুনের এই কথাগুলো আমাকে স্পর্শ করলো।

তারপর বক্তৃতায় এলেন মি. ইল হা ই, গুড নেইবারস ইন্টারন্যাশলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেজিডেন্ট। তিনি সম্মলেনের সহ-সভাপতি। শিশুর অধিকার ও মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে গুড নেইবারস-এর দু'টি কর্মশালা ছিল। ছিল প্রদর্শনী স্টল। প্রদর্শনীতে সেইভ দি চিলড্রেন ও ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ সকল বড় এনজিওদের মাঝে বাংলাদেশের কোন সংস্থাকে দেখা গেলো না। জানি না কেন।

যা হোক, ব্ক্তৃতায় এলেন, রাশেদা কে চৌধুরি। তিনি গণশিক্ষার বিশ্ব ফোরামের ভাইস-প্রেজিডেন্ট। একই সাথে বাংলাদেশের গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান। শাড়ি-পড়া রাশেদা আপাকে দেখে গর্বিত বোধ করলাম। শেষ দিকে তার সাথে ছবি তোলার প্রতিযোগিতায় আমি যেতে চাই নি। অন্যদেশকে সুযোগ দিলাম। তবে দেখা করেছি, কথা বলেছি।

তিন দিনের সম্মেলনে মোট পাঁচটি রাউন্ড টেবিল আলোচনা ছিল। সবগুলোতেই অংশ নিয়েছি। একটিতে প্যানেলিস্ট হিসেবে আবার রাশেদা কে চৌধুরীকে পেলাম। মানসম্মত শিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিমতটি তিনিই রাখলেন। তিনি বললেন, সবার আগে রাষ্ট্রগুলো তাদের জাতীয় নীতিতে শিক্ষাকে সেভাবে গ্রহণ করতে হবে। মুহুরমুহু করতালির মাঝে আমার হাতগুলোও ছিলো। শিক্ষার মান ও প্রান্তিক মানুষের অধিকার নিয়ে অনেক আলোচনাই হলো, যা এই লেখায় তুলে ধরা সম্ভব নয়।

ইউথ ককাস। যুব সম্মেলন। প্রতিদিন সকালে আয়োজিত হয়েছে তরুণ-তরুণীদের নিয়ে যুব সম্মেলন। প্রথমটিতে স্বয়ং জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন।

দেখা হলো ঢাকা আহসানীয়া মিশন এবং আহসানীয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেজিডেন্ট জনাব কাজী রফিকুল আলমের সাথে। বয়স্ক ভদ্রলোক একাই সম্মেলনের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। আমাকে দেখে বিস্মিত। কীভাবে এলাম! যা হোক, তার সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হলো সম্মেলন কক্ষে।

অধিকার নিয়ে, রাষ্ট্রীয় অপব্যবস্থা নিয়ে, সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা নিয়ে এবং মুক্তমতের জন্য মানুষের জীবন দেওয়া... ইত্যাদি বিষয়ে এতো সাহসী এবং শানিত বক্তব্য আমি কখনও শুনি নি, দেখি নি। দর্শক সকলে স্তব্ধ, তারপর বজ্রপাতের মতো করতালি। অবশেষে বক্তার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তার বক্তৃতা অগণিত মানুষকে শক্তি দেয়, এটি তিনি জানেন কি না। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ছবি তোললাম এবং পরিচয় বিনিময় করলাম। তিনি জাতিসঙ্ঘের এনজিও বিষয়ক এসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন, ব্রুস নট।


সম্মেলনে ছিল নজিরবিহীন নিরাপত্তা। পুরো গিয়ংজুতে গিয়ংজুর মানুষ ক'জন জানতে পারলাম না, কারণ রাস্তাঘাট সব ফাঁকা। হয়তো মানুষ আসলেই কম। শুধুই সম্মেলনের অংশগ্রহণকারী। অংশগ্রহণকারীদেরকে সম্মেলনের অনেক পূর্বেই প্রাথমিক নিরাপত্তার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। নিরাপত্তা সনদ নিজ দেশ থেকেই পাওয়া গেছে, ইমেলে। তারপর সেই সনদ নিয়ে যেতে হয়েছে নিবন্ধন বিভাগে। সেখানে পাসপোর্ট তথ্য যাচাই করে, একই সাথে ফটো তুলে তৈরি করা হয় পরিচয়পত্র। পরিচয়পত্র নিয়ে নিরাপত্তার সর্বশেষ আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশ।

সুপরিকল্পিত আয়োজন। দৈনিক খাবারের জন্য আলাদাভাবে ত্রিপল টানিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইংরেজিতে নির্দেশ, লোকেশন ম্যাপ, ইংরেজিভাষী পুলিশ। আবর্জনা ব্যবস্থাপনা। সবকিছু গুছানো। সবশেষে সীমাহীন খাবারের আয়োজন নিয়ে গণ বুফে। আন্তর্জাতিক খাবারের বিশাল মেলা। সবার জন্য। কয়েকটি কক্ষ নিয়ে আয়োজিত হয় এই খাবারের মেলা। খেলাম এবং ঘুরে ঘুরে তদন্ত করলাম, কোথাও কোন ঘাটতি আছে কিনা। পেলাম না। হাজার মানুষ একসাথে খেলেন, কোনকিছুর অভাব ছিল না। আমার মতে এটি ছিলো সম্মলনের বড় আকর্ষণ। কোরিয়ান আয়োজকরা দেখিয়ে দিলো যে, তারা যতই হিসেবি হোক না কেন খাবারের বেলায় ততটা হিসেব করে না।



মোবাইলে তোলা কিছু এলোমেলো ছবি:









দেশের বাইরে এসেও সামু'র প্রত্যাখ্যান একবার পেতে হলো। পাসওয়ার্ড রিসেট করতে গেলাম। বলে কি, তোমার ইমেইল আমরা চিনি না! এত ব্যস্ত ছিলাম যে, হতাশ হবার সময়টুকুও পেলাম না।

এক সপ্তাহ গেলো। আজ আবার অন্য একটি কম্পিউটার থেকে চেষ্টা করলাম। দ্বিমুখী নিরাপত্তার কারণে নিজের ইমেলেও প্রবেশ করতে পারছিলাম না। ভাগ্যিস জিমেল কোডগুলো ইমিজ আকারে তুলে নিয়ে এসেছিলাম। অবশেষে সামু আমাকে রিসেট করার লিংক পাঠালো। অন্তত এক মাইল দীর্ঘ একটি পাসওয়ার্ড নির্মাণ করলাম! আমার পাসওয়ার্ড রিসেট হলো। অবশেষে 'তাহাকে' আমি পাইলাম!

জানি না দেশে ফেরার পর তাকে পাবো কি না। এই অধিকারহীনতার স্বদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:৫১
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×