রাত পর্যন্ত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এখনও এই দুই হামলার দায় স্বীকার করেনি। দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে, এমন কথাও পুলিশ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না। তার পরেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটাই নরওয়ের মাটিতে বৃহত্তম হামলা। আল কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেন মারা যাওয়ার পরে ইউরোপেও প্রথম। ন্যাটোর সদস্য হিসাবে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়ায নরওয়েকে অনেক বারই হুমকি দিয়েছিল আল কায়দা। পরিচিত এই ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ছাড়া উঠে আসছে আর একটি নাম। লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মর গদ্দাফি।
গদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে লিবিয়ায় ন্যাটোর বোমাবর্ষণেও সামিল হয়েছে নরওয়ে। বদলা নিতে ইউরোপে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন লিবিয়ার শাসক। এই হামলা অন্য ইউরোপীয় দেশের প্রতি লিবিয়ার হুঁশিয়ারি কিনা, সেই প্রশ্নও উঠেছে। নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় এই অসলো থেকেই। এ জন্যই নিজেদের ‘শান্তির দেশ’ হিসাবে প্রচার করে নরওয়ে। সেই নরওয়ের রাজধানীই এ বার কেঁপে উঠল জঙ্গি হামলায়।
অসলোর প্রাণকেন্দ্রে সরকারি সদর দফতরের কাছেই ‘ভিজি’ সংবাদপত্রের বহুতল দফতর। শুক্রবার বিকেলে তার সামনেই ভয়াবহ বিস্ফোরণটি ঘটেছে। প্রচণ্ড শব্দে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। বাড়িটিতে আগুন লেগে যায়। আশপাশের সব বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ছুটে আসে দমকলের গাড়ি ও হেলিকপ্টার। ঘটনাস্থলের দিকে আসা সব রাস্তা বন্ধ করে উদ্ধারকাজ শুরু করে পুলিশ। অ্যাম্বুল্যান্সে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিস্ফোরণ স্থলে একটি উড়ে যাওয়া গাড়ির টুকরো মিলেছে, যা থেকে এটিকে গাড়িবোমা হামলা বলেও মনে করছে পুলিশ। কিন্তু কোনও কিছুই এখনও নিশ্চিত ভাবে বলা হচ্ছে না। এমনিতেই অসলোর জনসংখ্যা যথেষ্ট কম। সপ্তাহান্তে তা আরও কমে যায়। শুক্রবার বিস্ফোরণের সময়ে রাস্তায় লোক জন বেশ কম ছিল।
অফিসগুলিতেও ছুটি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, না হলে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারত। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ঘটনার সময়ে অফিসে ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী স্টোলটেনবার্গ। সরকারি টেলিভিশনকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ঘটনাটি খুবই ভয়ঙ্কর ও নাটকীয়। তবে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। তিনি নিরাপদেই আছেন, তবে কোথায় রয়েছেন, তা জানাতে পুলিশ বারণ করেছে। তাঁর সব মন্ত্রীও নিরাপদেই রয়েছেন।
এ দিন বিকেলে প্রায় একই সময়ে রাজধানীর দক্ষিণে ইউটোয়া দ্বীপে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির যুবকর্মীদের সম্মলনের বাইরে পুলিশের পোশাক পরা এক আততায়ী এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এই ঘটনায় ৮৪ জন নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্টোলটেনবার্গের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনিই যে আততায়ীর নিশানা ছিলেন, পুলিশ সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারেনি। সন্দেহভাজন এক জনকে আটকও করা হয়েছে। তাকে জেরা করে দুই হামলার মধ্যে যোগসূত্রের সন্ধান করছেন গোয়েন্দারা।
ইউরোপে এই হামলার নিন্দা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হেরমান ফন রমপুই বলেছেন, কোনও যুক্তি দিয়েই এই হামলাকে সমর্থন করা যায় না।
বিবিসি,সিবিএন নিউজ,রেডিও তেহরান,ইয়াহু নিউজ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৩০