somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মোটরকার খটকা নিয়ে আসে?

২৫ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার দোস্ত মোটরকারের ব্যবসা করে। আবার কাব্যও করে। রীতিমত জট্টিল সব কাব্য। এমনকি সেইসব কাব্য নিয়া সামুতে ব্লগিংও করে। শুনে তার বয়স সম্পর্কে ধারণা হয়? মোটে তিরিশ বছর। ইদানীং তারে যখনই ফোন দিই, বলে শোরুমে আছি দোস্ত। ব্যস্ত। আসতি পারুম না। পুরা মাসে একবার শুধু দেখা হয়, যেখানে ঐ ব্যাটা তার কাব্য ফলাইতে পারে। মাসিক সাহিত্যবোধিনীসভা। একটু পুরনো স্টাইল। ঐখানেই একদিন সে মেজাজ খারাপ করে আসল। কারণ মোটরকারের ব্যবসায় লস গেছে এই মাসে। তাই ঐ বেটা মোটরকার দেখলেই মেজাজ খারাপ করতেসে।

তৎক্ষনাৎ, আমার চট করে মনে পড়ল জীবনানন্দবাবুর উনিশশো চৌত্রিশের কবিতাটি। তার প্রথমদিককার কয়েকটি লাইন হল:

একটা মোটরকার
খটকা নিয়ে আসে।

মোটরকার সব-সময়েই একটা অন্ধকার জিনিস...

বন্ধুরে বললাম, আচ্ছা দোস্ত কওতো জীবনানন্দবাবু এই কবিতাখানি কবে, কোন পরিস্থিতিতে লিখেছিলেন? মানে শানে নুজুল আর কি!

বন্ধু সাথে সাথেই উত্তর দেয়, ইটি মনে হয় জীবনবাবু যখন মোটরকারের বিজনেস করে পথে নেমেছেন এবং লস খেয়ে কবিতা লিখতে বসেছেন, সেই সময়কার কবিতা! আমিতো হা, আরে আরে জীবনবাবু কি রিয়েলি মোটরকারের বিজনেস করেছেন নাকি? দোস্ত মিটিমিটি হাসতি হাসতি কয়, যদি মোটরকারের বিজনেসই না কইরতেন তাইলে এই কবিতা লিখলেন ক্যান? আর তুই কি জানস না জীবনবাবু শেষকালে গাড়ির নিচেই প্রান দিয়েছেন। মানে ভদ্রলোক এর মন থেকে এই মোটরকারের খটকা শেষকাল তক যায় নাই। রয়েই গেছিল। আমি আবার দোস্তের কথায় কবিতাটি মেপে মেপে পড়লাম এবং হাসলাম। মনে হোল, মোটরকারের বিজনেসেই ত আছি আমরা সবাই, জীবনবাবু সচেতন ছিলেন, আর আমরা অসচেতনভাবে মোটরকারের ইচ্ছের কাছে নিজেরে ছেড়ে দেই। আমার কথা শুইন্যা দোস্ত মিটিমিটি হাসে, শালার কবিতো, আগেই বুইঝ্যা ফালাইছিলো:

একটা মোটরকার
খটকা নিয়ে আসে।

মোটরকার সব-সময়েই একটা অন্ধকার জিনিস,
যদিও দিনের রৌদ্র-আলোর পথে
রাতের সুদীপ্ত গ্যাসের ভিতর
আলোর সন্তানদের মধ্যে
তার নাম সবচেয়ে প্রথম।

একটা অন্ধকার জিনিস :
পরিষ্কার ভোরের বেলা
দেশের মটরশুঁটি-কড়াইয়ের সবুজ ক্ষেতে-মাঠে হাঁটতে হাঁটতে
হঠাৎ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছি
লাল সুরকির রাস্তার ভিতর দিয়ে
হিজলগাছ দুটোর নিচে দিয়ে
উনিশশো চৌত্রিশের মডেল একটা মোটরকার
ঝকমক করছে, ঝড় উড়িয়ে ছুটেছে;
পথ ঘাট ক্ষেত শিশির সরে যেতে থাকে,
ভোরের আলো প্রতিকূল যুক্তির বিরুদ্ধে কোণের বধূর মতো
সহসা অগোচর
মাঠ নদী যেন নিশ্চেষ্ট,
সহসা যেন প্রতীজ্ঞা হারিয়ে ফেলে,
এই মোটর অগ্রদূত,
সে ছুটে চলেছে
যেই পথে সকলের যাওয়া উচিত;
একটা মোটরকারের পথ
সব সময়েই আমার কাছে খটকার মতো মনে হয়েছে,
অন্ধকারের মতো।
স্ট্যান্ডে
শহরের বিরাট ময়দানের পুবে পশ্চিমে-ফুটপাথের পাশে
মোটারকার;
নিঃশব্দ।
মাথায় হুড
ভিতরের বুরুশ-করা গভীর গদিগুলো
পালিশ স্টিয়ারিং-হুইল হেডলাইট;
কী নিয়ে স্থির?
কলকাতার ময়দানের একটা গাছ অন্য কিছু নিয়ে স্থির,
আমি অন্যকিছু নিয়ে স্থির;
মোটরের স্থিরতা একটা অন্ধকার জিনিস

একটা অন্ধকার জিনিস :
রাতের অন্ধকারে হাজার-হাজার কার হু-হু করে ছুটছে
প্যারিসে-নিউইয়র্কে-লন্ডনে-বার্লিনে-ভিয়েনায়-কলকাতায়
সমুদ্রের এপার ওপার ছুঁয়ে
অসংখ্য তারের মতো,
রাতের উল্কার মতো,
মানুষ-মানুষীর অবিরাম সংকল্প আয়োজনের অজস্র আলেয়ার মতো
তারাও চলেছে;
কোথায় চলেছে, তা আমি জানি না।

একটা মোটরকারের পথ- মোটরকার
সবসময়ই আমার কাছে খটকার মতো মনে হয়েছে,
অন্ধকারের মতো।

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ বসে অপেক্ষা করবার অবসর আছে।
জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

দোস্ত এই মহাকবিতার একখান প্যারডি বানাইছিল: ''গাড়ি সবসময়তই ভেজাইল্যা জিনিস..''.. আমি আর আগাইতে দেই নাই, বলছি চাটগাঁর ভাষাত ইটির অনুবাদ করন ভাল হইতো না। দোস্ত তারপরও দেহি মিটিমিটি হাসে। ক্যান কি জানি!

পরিশিষ্ট: জীবনবাবুরেতো জানলাম, সবাইরে একটি ধাধা দিয়ে শেষ করতে চাই, নিম্নলিখিত কাব্যখানি কার?

'কাফের' 'যবন' টুটিয়া গিয়াছে, ছুটিয়া গিয়াছে ঘৃণা,
মোসলেম বিনা ভারত বিফল, বিফল হিন্দু বিনা;
-মহামৈত্রীর গান
বাজিছে আকাশে নবভারতের গরিমায় গরিয়ান..

নাহ, বাদ দেন, ইটিও জীবনবাবুর। মেলাতে পারেন? মেলাতে নাপারলেও সমস্যা নেই। নজরুল সর্বপ্লাবী ছিলেন। সেই যুগে রবীন্দ্রনাথের পর নজরুলের যে ধুমকেতুর আসর, তার বলয় থেকে বহুদিন আমাদের জীবনবাবুও বের হতে পারেন নাই। সেই নজরুলের জন্মদিন আজ। তাকে সালাম। আসুন, সনমস্বরে বলি, বল বীর,বল উন্নত মম শির।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৯ রাত ১২:২৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×