নাস্তিক = ন+অস্তি+ইক।
ন = নঞর্থক, নাই, প্রয়োজন হয় নাই।
অস্তি = অস্তিত্ব, ভৌত জগত, প্রকৃতি ইত্যাদি।
ইক = মতবাদী, মতবাদ পোষণকারী।
একেবারে শাব্দিক অর্থের বিশ্লেষণে নাস্তিক বলতে এমন মতবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তিদের বুঝায় যারা মনে করেন এই ভৌত জগত বা প্রকৃতিকে 'অস্তিতে' আসবার 'প্রয়োজনই' হয় নাই।
ভৌত জগতের অস্তিত্ব অনাদিভাবেই ছিল। অস্তিত্বর কোনো সূত্রপাত হয় নাই। অস্তিত্বই সংয়ম্ভূ। ইত্যাদি ইত্যাদি ..
সহজে বুঝলে সহজ। না বুঝলে অনেক কথা মনে আসবে। মনোযোগ দিলে অনেক কিছুই পরিস্কার হবে।
বৈদিক যুগে যে বা যারা বেদ মানত না তাকে পন্ডিতরা 'নাস্তিক' বলেছেন। আর আমি ভাবছি এত শব্দ থাকতে পন্ডিতরা ঈশ্বর অস্বীকার কারীদেরকে নাস্তিক বললেন কেন। কালক্রমে অনেক শব্দই তার 'মূল' থেকে অনেক দূরের অর্থ প্রদান করে। বৈদিক যুগের পন্ডিতরা 'নাস্তিক' শব্দটি দ্বারা একটি ধর্মীয় অভিধা বুঝাতে চাইতেন কিন্তু মূল অর্থ হিসেবে "নাস্তিক" শব্দটি একটি দার্শনিক অভিধা। যেখানে 'ন + অস্তি' একটি দার্শনিক সিধান্ত।
ন = নাই, প্রয়োজন হয় নাই।
অস্তি = অস্তিত্ব।
এখানে ইঙ্গিত এটাই যে, অস্তিত্ব নিজেই সয়ম্ভূ। অস্তিত্ব অনাদী। এ অস্তিত্বের শুরুটা কাউকে করে দিতে হয় নাই। সে হিসেবে 'অস্তিত্বের' সূচনাকারী বলে কেউ নেই যাকে 'ঈশ্বর' বলে মনে করা যায়।
এ মতবাদে বলা হয় অস্তিত্ব গ্রহণ করার 'প্রয়োজনই' হয় নাই। এ ভৌত প্রকৃতির অস্তিত্ব চিরন্তনভাবেই ছিল। 'শক্তি' বা 'বস্তু' ইত্যাদি যে কোনো একটি আকারে 'অস্তিত্ব' চিরন্তনভাবে বর্তমান। বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে শক্তি বস্তুর আকারে প্রকাশিত হয়েছে মাত্র। এটাই 'নাস্তিক্যবাদের' দার্শনিক দিক। আর 'অস্তিত্ব' যদি চিরন্তন হয়ে থাকে তাহলে 'ঈশ্বরের' অস্তিত্বের আর প্রয়োজন থাকছে কোথায়? তাই নাস্তিক মানে "ঈশ্বরে অবিশ্বাসী" ব্যক্তি এমন নয়। বরং নাস্তিক কথার আসল অর্থ হচ্ছে এমন ব্যক্তি যিনি মনে করেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকারই কোনো প্রয়োজন নাই যখন প্রকৃতি নিজেই সয়ম্ভূ। এটাই হচ্ছে 'নাস্তিক্যবাদের' দার্শনগত এবং মৌলিক বিবেচনা।