somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসলিম ব্রাদারহুডের জনপ্রিয়তার উৎসের খোঁজে এবং তাদের কিছু ইতিহাস!

২৫ শে জুন, ২০১২ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক ভয়ংকর অন্ধকারে মুসলিম বিশ্ব, উসমানীয়/অটোমান খিলাফাত ধংসের পর বিশ্ব রাজনীতির স্টেজ হতে মুসলিমদের বিদায়। সোস্যালিজম, কম্যুনিজম, বাথিজমের মতো নিত্য নতুন মতবাদে মুসলিম যুবকরা ঝুঁকে পড়েছে। ওদের ইসলামের পথ দেখানোর কেউ নেই। জাতীয়তাবাদের ন্যারো ডিফিনেশানে মুসলিম বিশ্ব হয়ে পড়েছে খন্ড খন্ড। ঠিক সেই সময়ে ১৯২৯ সালে হাসানুল বান্না এসব দেখে ব্যাথিত হন। শুরু করেন মুসলিম ব্রাদারস, কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে কায়রো হয়ে সমগ্র মিশরে। ইসলাম ইস দ্যা সলুশান এই মন্ত্রে চললেও হাসানুল বান্না উপনিবেশিকবাদ, শিক্ষা, গনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যাবস্হাপনায় নজর দেন। শিক্ষা এবং চ্যারিটির কাজেই এরা বেশী মনোযোগ দেয়। ব্রাদারহুড সূফি ও সালাফি সংমিশ্রন। তখন মিশর ছিলো ব্রিটিস উপনেবিশেকদের দখলে। ফিলিস্তিনের হামাসের যেমন মিলিটারি উইং ইজ্জাদিন আল-কাশেম আছে, তেমনি মুসলিম ব্রাদারহুডের ও মিলিটারি উইং ছিলো। তাদের কাজ হলো ব্রিটিস বাহিনিীর বিরুদ্বে আক্রমন এবং পোষা পুলিশদের আক্রমন প্রতিহত করা। সর্বশেষে বৃটিশ পুতুল বাদশাহ ফারুকের প্রধামন্ত্রী মাহমুদ পাশাকে ব্রাদারহুডের এক ছাত্র পুলিশের ছদ্মবেশে হত্যা করে। বিপরীত বদলায় পুতুল বাদশাহ ফারুকের বডিগার্ডরা হাসানুল বান্নাকে হত্যা করে। ব্রিটিসদের কাছ থেকে স্বাধীনতা চিনিয়ে আনতে প্রান দিতে হলো ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতাকে।

হাসানুল বান্নার শহীদ হওয়ার পর হাসানুল হুদাইবী এই সংগঠনের হাল ধরেন বিশ বছর। ব্রাদারহুডের খুব ভয়ংকর সময়কালে তিনিই দলের হাল ধরেন। সাইয়্যেদ কুতুব,মোহাম্মদ কুতুব যোগ দেওয়ার ওদের লিখনিতে পলিটিক্যাল ইসলামের রুপরেখা ফুটে উঠে। মুসলিম ব্রদাহুড ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে প্রায় ৮০ টার মতো দেশে ব্রাদারহুডের শাখা আছে। ১৯৫২ তে নাগিব ও নাসের মতো কিছু ফ্রী অফিসার গঠন করে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে চুক্তি করে ব্রিটিস পুতুল বাদশাহকে উৎখাত করার। গদি উল্টিয়ে দেয় মুসলিম ব্রাদারহুড ও কিছু জেনারেলরা মিলে। কিন্তু হায়! আর্মি জেনারেলরা ব্রাদাহুডের সাথে ক্ষমতা শেয়ার করতে অস্বীকার করে। উল্টা ব্রাদারহুডের লোকদের উপর প্রচন্ড দমন নিপীড়ন চালায়। গ্রেফতার করা হয় এর সামনের সারির সকল নেতাকে। কারাগারে বসেই অনেকগুলো বই এবং কোরানের তাফসীর লিখে ফেলেন সাইয়েদ কুতুব। এর মধ্যে একটা বইয়ের নাম মাইলস্টোন। মাইলস্টোন বইয়ে কুতুব মুসলিম বিশ্বের শাসকদের দূর্নিতিগ্রস্থ বলেন এবং এদের উৎখাত করতে ডাক দেন। তিনি বলেন এই করাপ্টেড শাসকদের জন্যে সাধারন জনগনও করাপ্টেড হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে পতিত হচ্ছে সবাই সেল্ফিশ ইনডিভাইডুয়ালিজমে। মাইলস্টোন প্রকাশ পাওয়ার পর মিশরের ঐ সময়কারকার প্রেসিডেন্ট আব্দের নাসের ক্ষুব্দ হন ও কুতুবকে ফাঁসিতে ঝুলান।

আরব বিশ্বের অনেক দেশেই তখন চলছে সেক্যুলার বাথপার্টির জয়জয়কার। এরা ভয়ংকর আরব জাতীয়বাদী। এদের পত্র পত্রিকায় ও রেডিও টিভিতে প্রচার করা হতো, আমি বাথিজমে বিশ্বাস করি যার কোন অংশীদার নাই, আমি আরব জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি যার কোন বিকল্প নাই। মুসলিমদের আল-কোরানের মতই বাথিজমে বিশ্বাস করার জন্যে সকল আরববাসীকে আহবান জানায় তারা। এই সেক্যুলার বাথপার্টি মিশর ও সিরিয়া অনেকদিন এবং কিছু দিনের জন্যে ইরাক একসাথে মুসলিমদের খিলাফাতেরর মতো ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের অধীনে ছিলো। বাথিজমের প্রতিস্ঠাতা ছিলো মাইকেল আফলাক।

বিভিন্নদেশে মুসলিমব্রাদাহুড:
আমেরিকাঃ আব্দের নাসেরের সময় মিশরের ব্রাদারহুডের উপর ভয়ংকর দমন নিপীড়ন চলে। কিছু ব্রাদারহুড তখন পালিয়ে আমেরিকায় চলে যায়। এরাই ১৯৬৩ সালে MSA মুসলিম স্টুডেন এসোসোয়েশান গঠন করে। তারপর করে ইসলামিক সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা ISNA । এদের কাজ হলো ক্যাম্পাসে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করা। নর্থ আমেরিকাতে এখন ইসনা এখন সবচেয়ে বড় ইসলামিক সংগঠন। ডঃউইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে ডাঃযাকির নায়িকের যে ডিবেট হয় "কোরান এন্ড বাইবেলঃ ইন দ্যা লাইট অফ দি সাইন্স" নামে তা ইসনার তত্বাবধানেই হয়েছে।

সিরিয়াঃ
সাইয়েদ কুতুবের মুসলিম দূর্নিতীগ্রস্থ শাসকেদের উৎখাতের আহবানে সিরিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুড সাড়া দেয় ১৯৮১-৮২ তে। হাফেজ আল- আসাদ লৌহপিষ্টে ওটা দমন করে, যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হামা ম্যস্যাকার। আমেরিকা ঐ গনহত্যাটা খুশী মনে দেখেছে, রাশিয়া সম্পূর্নভাবে অস্র,গোলাবারুদ ও ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করেছে সিরিয়াকে।

লিবিয়াঃ লিবিয়ায় ব্রাদারহুডকে চরমভাবে দমন করা তৎকালিন সোভিয়েতদের পাঁ চাটা গাদ্দাফী। ব্রাদারহুডের লোকদের হত্যা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের জন্যে একটা কারন হলেই যথেস্ট যে সে ব্রাদারহুড করে। গাদ্দাফি শাসিত লিবিয়ার স্টেট টিভিতে মাঝে মাঝে ব্রাদারহুডের লোকজনদের দেখা যেতো, তবে তা রাস্তার বিভিন্ন ল্যাম্পোস্টে ফাঁসিতে ঝুলানো ব্রাদারহুডের লাশ।

ইরাকঃ
সেক্যুলার বার্থ পার্টির সাদ্দাম হোসেন শাসিত ইরাকেও ব্রাদারহুডকে কঠোরভাবে দমন করা হয়। মাথা উঠাতেই দেয়নি সে।

সৌদিআরবঃ
ব্রাদাহুডের সাথে সৌদির ভালো সম্পর্কে গেছে শুধুমাত্র বাদশাহ ফয়সালের সময়। বাদশাহ ফায়সালকে সবাই ভালো শাসক হিসেবে সম্বোধন করতো। এজন্যেই অবশ্য তাকে হত্যা করা হয়। তার অনুরোধেই সাইয়েদ কুতুবের ছোট ভাই ও বোন মোহাম্মদ কুতুব ও আমেনা কুতুবকে জেল হতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সৌদিতে থাকতে দেওয়া হয়। ফায়সাল পরবর্তী সব সৌদি শাসকই ব্রাদারহুডের ভয়ে ভীত থকতো। যদি না এদের আইডিওলজী দিয়ে শেখদের গদীটা উল্টিয়ে দেওয়া হয়। এবারও হোসনী মোবারক যেন ক্ষমতায় থাকে তার জন্যে শেখ আবদুল্লাহ কতো তদ্ভিরই না করেছে। সৌদি, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েতে কেউ যদি ব্রাদারহুডের আইডিয়োলোজী ধারন করে তাহলে তাকে কোন সরকারী চারকরিতে নেওয়া হয় না, বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে।

কেন ব্রাদারহুড মিশরে জনপ্রিয়ঃ মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটা রাজনৈতিক সংগঠন না বলে একটা চ্যারিটি সংগঠন বলাই ভালো। ব্রাদারহুডের লোকদের দ্বারা পরিচালিত অনেকগুলো হাসপাতাল আছে সারা মিশর জুড়ে। সবার জন্যেই উন্মুক্ত। চিকিৎসা শেষে কারো সামর্থ থাকলে টাকা দেয়, সামর্থ না থাকলে দেয় না। ব্রাদারহুডের ডাক্তাররা অন্য হাসপাতালে চাকরী করলে এরা শুক্রবারেও বিশ্রাম না নিয়ে বিনা ফিতে রোগী দেখে। সারা মিশর জুড়ে ব্রাদারহুডের অফিসগুলোকে মনে হবে একেকটা চ্যারিটি অফিস। শীতকালে গরীবদের জন্যে গরম কাপড় চোপড়ে ভরা থাকে। গ্রামে ও প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রাদারহুডের কর্মীরা নিজ মাথায় আটার বস্তা নিয়ে গরীবদের মাঝে দিয়ে আসে। এরা আসলেই আন্তরিক। এরা যাদের সেবা করে যাচ্ছে তাদের কাছে ভোট ও চাচ্ছে না, বা সমর্থক ফর্ম ও পুরন করাচ্ছে না। মিশরেতো এরা ব্যান ভোট দিয়ে করবে কি! আজ আশিটা বছর ধরে এমন দমন নিপীড়নের পরেও ওরা তাদের লোকজনদের সাহায্য করে যাচ্ছে। মিশরের সাধারন মানুষেরা এসব মনে রাখছে। প্রথমবারের মত যখন ফ্রী নির্বাচন হয় মিশরের লোকেরা ঠিকই ব্যালেটের মাধ্যেমে তার জানান দিচ্ছে। বিপরীতে মিশরের সেক্যুলারগুলা এলিট/ভিআইপি/করাপ্টেড এবং জনবিচ্ছিন্ন তুরস্কের মতই।

আমাদের দেশেই অনেকেই বলবে, ক্ষমতায় না গেলে দেশ সেবা করা যায় না। তাদের জন্যে উধাহারন হয়ে থাকবে মুসলিম ব্রাদারহুড। যারা ক্ষমতায় না গিয়েও বরং ভয়ংকর নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে ও সাধারন লোকদের সাহায্য করে গিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:৫১
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×