(বিঃ দ্রঃ এই গল্পের সকল চরিত্র কাল্পনিক । বাস্তবে কারো সাথে কোন মিল পাওয়া গেলে তা কেবল মাত্রই কাকতালীয় হতে পারে । )
একুশ ডিগ্রী তাপমাত্রার অতি অনুকুল রুমেও ঘেমে ভিজে গেছে সেবতি। সাথে সাথেই যান্ত্রিক এক মহিলা কন্ঠ বিড়বিড় করে আওড়াতে শুরু করল "এখন সময় রাত ২টা বেজে ৩৭ মিনিট ২৩ সেকেন্ড..... ১৩ ন্যানো সেকেন্ড ০৭ পিকো সেকেন্ড"।মুক্তির এই যান্ত্রিক কন্ঠ কখনই ভাল লাগেনা সেবতির। মুক্তি হলো ৭৮ মাত্রার সাহায্যকারী বোবোট।কিছু বুঝে ওঠার আগেই অ্যাপেলের নতুন ৬৬জি গিটাপড সেলফোনটা তার দিকে এগিয়ে দিল মুক্তি।ঘুমের ঘোরে সব এলোমেলো লাগলেও মুহুর্তেই বুঝে গেল সেবতি... ঘুম ভাংতেই এরিকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল তার, মেইন ডাটাবেসের কপোট্রনে সংযুক্ত সেন্সরের সাহায্যে মুহুর্তেই তা বুঝে গিয়েছিল ৭৮ মাত্রার মুক্তি।হাত বাড়িয়ে গিটাপডটা নিল সেবতি। আসলেই খুব miss করছে সে এরিককে। এরিক হলো এমন একজন যার সাথে সব কিছুই শেয়ার করতে পারে সে। কিন্তু এরিকের family-র সাথে এক সময় দা-কুড়াল সম্পর্ক ছিল সেবতির family-র।মুক্তির কাছে শুনেছে সে, এখন থেকে প্রায় ২০০বছর আগে সেবতির দাদার মা শেখ নাসিহা আর এরিকের দাদার মা বেগম ওয়ালিদা বিরোধী রাজনীতি করত এই দেশে। শেখ নাসিহার নেত্বৃত্বে ছিল বাংলাদেশ আম্বলিগীর আর বেগম ওয়ালিদার নেত্বৃত্বে ছিল বি.এ্যান.ফি । বি.এ্যান.ফি-র তখনকার মিত্রদল জুলমতে ইসলামের করাল গ্রাসে আজ বি.এ্যান.ফি অস্তিত্বহীন হয়ে গেলেও সেবতির বাবার মৃত্যুর পর আম্বলিগীর দায়িত্ব নিয়েছেন সেবতির মা পৃহি । তিল তিল করে আবার আম্বলিগীরকে দাঁড় করিয়েছেন তিনি । এবার প্রায় ৮৭ বছর পর বাংলাদেশের দায়িত্ব পেয়েছে আম্বলিগীর ।সেবতি জানে ২০০ বছর আগে ভোটে জিতলে বলা হতো অমুক দল ক্ষমতায় গেছে কিন্তু এখন বলা হয় দায়িত্ব পেয়েছে । এবছর তার মায়ের নেতৃত্বে ২০৩৪০০০২০৭০ ই-ভোটের ব্যাবধানে জুলমতে ইসলামকে হারিয়েছে আম্বলিগীর । অবশ্য এরিক এবং এরিকের বাবাও আম্বলিগীরকে অনেক সাহায্য করেছে । এই সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল সেবতি ।
আবারও মুক্তির যান্ত্রিক কন্ঠে ঘুম ভাংলো সেবতির ।সকাল হয়ে গেছে, কিন্তু ঘরের ডিজিটাল এফ.টি.এম.৬৬৯ ডিসপ্লের জন্য ভিতর থেকে কিছুই বোঝার উপায় নাই।মুক্তির কথা ভেবে আবারও অবাক হয় সেবতি । মুক্তি আর স্বাধীনতা শব্দ দু'টি খুব প্রিয় ছিল তার পরনানার, মুক্তির কাছে শুনেছে সে- এই দেশ স্বাধীন করতে তার পরনানার অনবদ্য অবদানের কথা... পরনানার কথা মনে পড়তেই গর্বে বুকটা আধ-হাত ফুলে উঠল তার। তার পরনানার প্রতি সম্মান দিয়েই এই অত্যাধুনিক ৭৮ মাত্রার রোবটটির নাম দেয়া হয়েছিল মুক্তি।মুক্তির বয়স তার থেকে বছর খানেক বেশি হবে। সে যখন তার জাইগোট মায়ের পেটে তখন তাকে এই অত্যাধুনিক ৭৮ মাত্রার রোবটটি উপহার দেয় পাশ্ববর্তী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত । অলসতা ভাংগানোর জন্যই যেন বেঁজে উঠল গিটাপডটা... মুক্তির যান্তিক কন্ঠ "এরিকের ফোন.... এরিকের ফোন"। ছোঁ-মেরে গিটাপডটা নিল সেবতি... চোখ মুখ খুশিতে জলজল করে উঠল তার... "হ্যাঁ, যাব না মানে, যাব... তুমি কোথায়... ওকে...আমি ১৫ মিনিটের মধ্যে আসছি... বাই.. টেক কেয়ার।"
ছুট দিয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে পড়ল সে । সাত মিনিটের একটা টোটাল ডিজিটাল মর্নিং ক্লিনিং কেয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়ল । একেবারে চনমনে ফুরফুরে । সেবতির মন বুঝতে পেরে মুহুর্তেই তার নাস্তা আর এনার্জিট্যাব রেডি করে রাখেছিল মুক্তি । কোন রকম নাকে মুখে দিয়েই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ল সেবতি ।
এরিক একদম এক কথার মানুষ । ঠিকই সেবতির আগে 'ওয়ালিদা পয়েন্টে' দাঁড়িয়ে আছে সে । আজ ওরা সারাদিন ঘুড়বে 'ডিজিটাল ফ্যান্টাসিতে'। সেবতির বি.এম.৬৯ গাড়িটা থামার ঠিক আগ মুহুর্তে কালো রং-এর একটা গাড়ি থেকে দু'জন জুলমতে ইসলামের ক্যাডার এরিককে উদ্দ্যেশ্য করে ওয়াটার জেট গানের গুলি ছুড়লো, মুহুর্তেই লম্ববালম্ববি দু'ভাগ হয়ে গেল এরিকের শরীর। সময়ের আকস্নিকতায় নিথর হয়ে গেল সেবতি । সম্বিত ফিরে পেয়ে ছুটে গেল এরিককের কাছে... সব শেষ । সেবতির দু'চোখ বেয়ে নেমে আসল নোনা জল । ঝাপসা দু'চোখ মেলতেই দেখল তার দিকে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে দাড়িয়ে আছে একদল যুবক । কিছু বুঝে উঠবার আগেই হ্যাচকা টানে তাকে নিয়ে একটা পরিত্যাক্ত বাড়িতে দুকে গেল ওরা । 'বহুদিন পর একটা একের মেশিন পাওয়া গ্যাছে... চালায় বহুৎ মজা আইব', একজন বলে উঠলো । ভয়ে কুকরে গেল সেবতি । মিনমিন করে বলে উঠল, "আমার সর্বনাশ কোরনা, আমি প্রধানমন্ণ্রী পৃহির মেয়ে.... আমাকে ছেড়ে দাও"..... খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল যুবকগুলো.... "উহু... ম্যাশিন মিথ্যে বলেনা.... আমরা আম্বলিগীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রম্বলিগীর সদস্য.... তুমি আমাদের ক্যাডারও বলতে পার.... মহামন্য পৃহির মেয়ে থাকবে রাস্তায়... চাপাবাজির আর জায়গা পাওনা খা-- কি-- গী "। হ্যাচকা টানে সেবতির ডিজিটাল কামিজ ছিড়তে শুরু করলো ওরা....
*** *** *** ***
পরলোকে বসে শেখ নাছিহা আর বেগম ওয়ালিদা নির্বাক হয়ে পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকল...
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



