somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামে এত বাল্যবিবাহ হয় কেন? আসেন একটা গল্প বলি "হ্যাপী এন্ডিং" এর গল্প।

০৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি প্রথম যে মেয়েটার প্রেমে পড়ি সে প্রাইমারী তে আমার সহপাঠিনী ছিল। আমরা শৈশবে একসাথেই বেড়ে উঠেছি। এরপর ওর পরিবার অন্য জায়গায় চলে যায়। তবে নিতুর সাথে নিয়মিতই যোগাযোগ ছিল আমার। ক্লাস এইটে উঠার পর বুঝতে পারলাম যে আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। আমি কোনদিন ওকে বলিনি কিন্তু নিজে নিজে স্বপ্ন দেখতাম আমরা একসাথে কলেজে যাচ্ছি, ভার্সিটি ক্যাম্পাসে খুনসুটি করছি তারপর একসাথে চাকরী। এরপর... এরপর না হয় হবে কিছু একটা।

আমরা তখন ক্লাস নাইনে উঠেছি। একদিন ছুটিতে বাড়ী গেছি। মা ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলল "শুনছিস নিতুর তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে"। আমার গোটা দুনিয়াটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। বুকটা ভীষণ রকম ফাঁকা হয়ে গেল। মাকে অবাক করে দিয়ে উঠে গিয়েছিলাম টেবিল থেকে। আমার মনে তখন ক্ষোভ, অসহায়ত্ব, হতাশা একসাথে জুড়ে বসেছে। সেদিন ই প্রথম অবাক হয়েছিলাম যে মেয়েদের এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয় কেন?
তখন আসলেই বুঝতাম না গ্রামে স্বচ্ছল সব পরিবারের মেয়েদের ও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয় ক্যান! যেন মেয়ে পার করতে পারলেই বাঁচে!
আপনি হয়তো আমার মূর্খতা দেখে হাঁসছেন বাল্যবিবাহের সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এত বিরূপ প্রভাব বাদ দিয়ে আমি কিনা একটা বিরহী প্রেমিক হিসেবে একে অপছন্দ করছি!

থাক নিজের কথা আসেন এখন এ বিষয়ে একটা গল্প বলি। একটা শুভ সমাপ্তির গল্প।অবশ্য এটা ঠিক গল্প না আমার নিজের পর্যবেক্ষন করা একটা ঘটনা। আমার গ্রামের বাড়ীর পাশের একটা মেয়ে। এবার মাত্র এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। ছাত্রী হিসেবে বেশ মেধাবী । আর মেয়ে শুনলেই আগে যে ব্যাপারটা মাথায় আসে যে দেখতে কেমন! সেইদিক থেকেও তাকে বেশ সুন্দরীই বলতে পারেন। তো যেহেতু সুন্দরী খুব স্বাভাবিক ভাবেই ক্লাস এইট নাইনে উঠার পর এলাকার সব মেয়ের বাড়ীর সামনে ডিউটি দেয়া রোমিওরা ওর পিছনেও ঘুরা শুরু করল। স্কুল থেকে বাড়ী কোন জায়গায় রেহাই নাই। যত দিন যেতে লাগল উত্তক্ত করার মাত্রা ও বাড়তে লাগল। মধ্যবিত্ত বাবা মার কপালে ভাঁজ কি করা যায়! এসময় সবচেয়ে নিরাপদ উপায় নিয়ে আসল মেয়ের এক চাচা। বিয়ের প্রস্তাব। ছেলের পড়াশোনা মাত্র মেট্রিক পাশ হলেও ব্যাবসা বাণিজ্য ভালই আছে। বলল এখন বাগদান হয়ে যাবে এসএসসির পর বিয়ে। মেয়ের বাবা মা সব কিছুর সমাধানের এই অসাধারণ প্রস্তাব পেয়ে ততক্ষনাৎ রাজী। আর এতে ম্যাজিকের মত কাজও হল। যেসব ছেলেপেলে এতদিন তাকে বিরক্ত করত তারাই তাকে ভাবী বলে ডাকা শুরু করল। সবাইও হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
এবার বাড়ী এসে শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। তো এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটা না পড়াশোনায় আগ্রহী ছিল! আর পড়াবে? বন্ধু যে ব্যাখ্যা দিল তা মোটামুটি এরকমঃ "দেখ মেয়েটাকে যদি এখন কলেজে পড়ায় সে দুনিয়ার সাথে আরো ভালভাবে পরিচিত হবে। আরো অনেক স্মার্ট ছেলেপেলের সাথে ঘুরবে এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা পর্যায়ে মেয়েটার মনে হবে তার স্বামী আসলে তার উপযুক্ত না। মানে খুব বেশী সম্ভাবনা যে এর ফলে সে ছেলেটার হাত ফস্কে বেরিয়ে যাবে। এর চেয়ে ভাল সে সুখে শান্তিতে ঘরকন্না করবে বছর ঘুরতেই বাচ্চাকাচ্চা আসবে এবং এটাই হয়ে যাবে ওর জীবন" মানে অবশেষে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। যাকে বলে "হ্যাপী এন্ডিং"।
কিন্তু এমন হ্যাপী এন্ডিং এর খপ্পরে পড়ে শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ মেয়েদের আশৈশব লালিত স্বপ্ন। তাদের ক্লাসের শেষ বেঞ্চের পড়াশোনায় অনাগ্রহী ছেলেটাও যখন কলেজে যায় তখন তারা ঢুকে রান্নাঘরে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×