somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিরো ডিগ্রী : কেমন সিনেমা? জেনে নিন।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জিরো ডিগ্রী দেখলাম।

এটা ঠিক রিভিউ না। আমি পলিটিকাল কলাম লিখি। সিনেমা দেখি মাসে দু একটা। রিভিঊ লেখার আমার কাজ না। তবু কিছু একটা লিখলাম। জিরো ডিগ্রীর পরিচালক: অনিমেষ আইচ। এর আগে অনিমেষ আইচ জয়াকে নিয়ে কিছু চমতকার কাজ করেছিল। বিশেষ করে " তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালবাসে" যারা দেখেছেন তারা জানেন অনিমেষ কি মানের নির্মাতা।
জিরো ডিগ্রীর প্রধান চরিত্র : মাহফুজ আহমেদ, জয়া আহসান, রুহি।
ছবির ধরন: নহে আর্ট ফিল্ম, নহে হার্ড ফিল্ম।


মাহফুজ ও রুহির চমতকার সংসার। একমুহূর্ত একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারেনা টাইপ প্রেম। আট বছর বয়সী তাদের একটি ছেলে আছে। আনন্দ আর খুনসুটিতেই তাদের দিন কাটে। অফিসের কাজে বিদেশ যেতে হয় রুহিকে। যাবার সময় মাহফুজ কে পা ছুয়ে সালাম করে, বাচ্চাকে আদর করে, কান্না কাটি করে। তার ছেলেকে বলে, বাবা যা বলে মন দিয়ে শুনবা। সে সময়ও কেউ ঘুনাক্ষরে জানতে পারে না এই মেয়ে স্বামী সন্তানের সাথে প্রতারনা করছে। না তার স্বামী মাহফুজ আহমেদ। না দর্শক। সে তার নতুন প্রেমিকের চলে যাচ্ছে। '

শকড হয় মাহফুজ। রাগে ক্ষোভে একাকীত্বে অসহায় হয়ে পড়ে মাহফুজ । সপ্তাহ ঘুরতেই মাহফুজের একমাত্র ছেলে বাবাই রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায়।। মাহফুজ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
মেন্টাল হাসপাতাল থেকে ফিরে মাহফুজ মেতে উঠে প্রতিশোধের নেশায়। রুহির প্রতারনায় পুরো সিনেমা হল যেন ঘৃনা ছড়িয়ে পড়ে।

একই সাথে চলতে থাকে আরেকটি গল্প। জয়া আহসান আছে সে গল্পে। সে তার প্রেমিক কতৃক প্রতারিত। প্রতারনার গল্প আপনারা হলেই দেখবেন। এই গল্পটা কিছুটা গতানুগতিক। প্রেমিক কতৃক প্রেমিকা বিক্রি। অতপর ধর্ষন। জয়া আহসানও প্রতারনার শোধ নিতে মরিয়া। এতটুকুতেই ছবির বিরতি।

সিনেমার প্রথম অর্ধেক পুরোপুরি গল্প নির্ভর। প্রতারনার গল্প। শেষার্ধে শোধ, ক্রোধ, আর একশান যাই বলেন সব আছে। জেমস এর প্রেম ও ঘৃনা শিরোনামে " ভালোটাই দেখেছ দেখনি ঘৃনার পাহাড়" গানের কথা দিয়েই শুরু হয় প্রতিশোধ পর্ব। মাহফুজ আহমেদের অনবদ্য ডায়ালগ ছিল- "সে আমার পুরা জীবন নষ্ট করেছে। ঐ কুত্তার বাচ্চাকে ( তার স্ত্রী রুহি) দেশে এনে টুকরা টুকরা করব। "
দর্শকরা যেন চাচ্ছিল এমন একটা গালি। দর্শক উচ্ছাসে ফেটে পড়ে।

অন্যদিকে জয়ার গল্প। জয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থাকে। তার প্রতারক প্রেমিক কবিকে খুজে বেড়ায়। হোস্টেলের রুমমেট এক ছোট বোনের সাথে প্রেমের ফাদ পেতেছে তার প্রাক্তন প্রেমিক ওয়াহেদ। জয়া তাকে অনুসরন করে। ওয়াহেদ তার নতুন প্রেমিকা কে নিয়ে নষ্ট পাড়ায় যায়। জয়া তাকে অনুসরন করেন।

সে কি মেয়েটিকে বাচাতে পারে? ওয়াহেদেরই বা কী হয়? মাহফুজের স্ত্রী একসময় ফিরে আসে। তাকে কি মাহফুজ টুকরা টুকরা করে? জয়া আর মাহফুজের সম্পর্ক কী?

সিনেমার প্রচারের স্বার্থে এতটুকু রহস্য গোপন রাখা নৈতিক দায়িত্ব। সেটা সিনেমা হলেই দেখুন।

অনিমেষ আইচের অনবদ্য গল্প, গল্প বলার ঢং, নির্মান শৈলী জিরো ডিগ্রীকে অনন্য অবস্থানে নিয়ে গেছে। প্রেম ও ঘৃনায় এতটা ক্ষোভ কোন বাংলা পরিচালক আগে ক্যামেরায় আনতে পারেনি। যতক্ষণ সিনেমা হলে থাকবেন মাহফুজ আহমেদের স্ত্রীর প্রতারনার শোধ নেয়ার জন্য আপনার ভেতরও ক্রোধ কাজ করবে। পরিচালক ঘৃনা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। ক্যামেরার কাজও ভালো ছিল। গল্পে অসাড়তা ছিল না। মাহফুজের একক গল্প দিয়েই সিনেমা হত, পাশাপাশি জয়ার গল্প সিনেমায় ভারসাম্য এনেছে। জেমসের গানের কথা আগেই বলেছি। হাবিব আর ন্যান্সির গান ভালো হয়েছে যথেষ্ট। গতানুগতিক সিনেমার মত নাচ গান ছিল না। কিন্তু বিনোদন ছিল। ক্লাইমেক্স ছিল। গল্প ছিল। রক্ত ছিল। এই ছবির গল্পই এটাকে উতরে দিবে। যারা এর আগে পিপড়াবিদ্যা বা দেশা দেখে হতাশ হয়েছেন তাদের বলছি এটা দেখে হতাশ হতে হবেনা। পরিচালক ঠকান নি দর্শকদের। ফারুকীদের মত প্রতারনা অনিমেষ করেন নি।

যারা প্রথম অর্ধেক দেখতে ক্লান্ত (ক্লান্ত হবেন না আশা করি, তবুও বললাম) তারা শেষার্ধে মজা পাবেন।

হুমায়ুন আহমেদ লিও টলস্টয়ের ওয়ার এন্ড পিস ১৫০ পাতা পড়ার পর মজা পেতে শুরু করেছিলেন। বারুদের গন্ধ নাকে পেতে শুরু করেছিলেন। জিরো ডিগ্রির মজা পেতে আপনাকে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।

হলে গিয়ে দেখুন। পয়সা উসুল হয়ে যাবে বস!!!



০৭.০২.১৫
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩৭
১৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×