somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণআন্দোলন নয় বিএনপি-জামায়াতের টার্গেট হত্যা ও ধ্বংস

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনীতিতে গণআন্দোলনের সংজ্ঞা রয়েছে। সর্বোপরি আমাদের দেশ হচ্ছে আন্দোলন-সংগ্রামের দেশ। এই মানচিত্রে জাতীয় চেতনার ভ্রƒণ সৃষ্টি হয়েছে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তারপর ৫৪-এর নির্বাচনি সংগ্রাম, ’৬২ ও ’৬৪-এর সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৯ সালে ১১-দফার গণঅভ্যুত্থান এবং সব শেষে সশস্ত্র সংগ্রামের ভেতর দিয়ে আমরা স্বাধীন স্বদেশ পেয়েছি। স্বাধীন দেশেও ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সামরিক কর্তাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে আমাদের অগ্রসর হতে হয়েছে। তাই আন্দোলন বলতে কি বোঝায় তা কমবেশি সবাই জানে। মানুষ যখন কোনো দাবি আদায়ের জন্য সোচ্ছার হয়ে ক্রমেই বেশি বেশি করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে ফয়সালা করতে চায়, তখন তাকে বলে আন্দোলন। রাস্তায় মানুষ না নামলে আন্দোলন হয় না। তাই বাংলাদেশের প্রয়াত কবি শামসুর রাহমান কবিতার ছন্দে লিখেছিলেন, ‘এখানে এসেছি কেন এখানে কি কাজ আমাদের/লোক লোক চোখের পাতায় লোক হৃদয়ের প্রতিটি স্কয়ারে লোক।’
অর্থাৎ লোক ছাড়া আন্দোলন সোনার পাথর বাটির সমতুল্য। গণসম্পৃক্ততাই আন্দোলনের প্রধান বিষয়। ধীরে ধীরে সচেতন প্রয়াসের ভেতর দিয়ে জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য স্বতঃস্ফূর্ততা সৃষ্টি করতে হয়। প্রচার, জনসভা, পথসভা, মিছিল হয় এর প্রধান বাহন। আন্দোলনের গতিধারার ভেতর দিয়েই জনগণ আন্দোলনের রূপ বেছে নেয়। ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে রাস্তায় নামো’ কিংবা ‘আমরা তোমাদের ভাতে মারবো, পানিতে মারবো’ প্রভৃতি কথাগুলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন গণবিস্ফোরণের চূড়ান্ত পর্বে। ওই কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে ‘তোমরা আমাদের ভাই’ শব্দটিও উচ্চারণ করে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পথ খোলা রেখেছিলেন। এটাই মানুষকে নিয়ে রাজনীতির আর্ট, যার ভেতর দিয়ে মানুষ ন্যায়সঙ্গত দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। রাজনীতি হয়ে ওঠে গৌরবম-িত। তাই আমরা গৌরবম-িত ইতিহাস সৃষ্টিকারী জাতি।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর যদি শুরু না হতো, তবে হয়তো বা অন্যভাবে কলামটা শুরু করতাম। এই মাসের এ কলামেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের স্মৃতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলতে হয়, আসলেই কি ছিলাম আমরা; আর ৪২ বছর পর কি হয়েছি আমরা! গৌরবম-িত ঐতিহ্যকে আমরা আজ জলাঞ্জলি দিতে বসেছি। এখনো মনে পড়ে স্বাধীনতার পর ঠিক ৪০ বছর আগে ১৯৭৩ সালে বিশ্ব যুব উৎসব হয়েছিল বার্লিনে। ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে নিহত যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে বিশাল এক প্রতিনিধিদল নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম উৎসবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কমরেড মণি সিংহ ও জেনারেল ওসমানী। সব দেশের প্রতিনিধি ছিল উৎসবে। কি সম্মান ও মর্যাদা আমাদের। কারণ আমরা যে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের শেষ দেখে তারপর গেছি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে; ছিনিয়ে এনেছি বিজয়। কিভাবে কি করেছি আমরা তা জানতে ছিল সকলের প্রবল অনুসন্ধিৎসা। রাস্তায় রাস্তায় ‘জয় জয় নবোজাত বাংলাদেশ’ গানটি গাওয়া হতো আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। বিজয়ী একজন বাঙালি যুবকের অটোগ্রাফ পাওয়ার জন্য
কিভাবে যে বিশ্বের ছোট বড় সকল দেশের যুবক যুবতীরা গায়ের জামা বা খাতা এগিয়ে দিতো, তা স্মরণে আনলে এখনো অভিভূত হতে হয়।
কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেলো আমাদের! ভাবলে বিজয়ের গৌরব ও আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে? কোনো কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠী মহল রাজনীতিকদের দায়ী করেন। আর এখন তো বলা ফ্যাশন হয়ে গেছে যে, যতো দোষ নন্দ ঘোষ দুই নেত্রী। মহিলা বলেই নাকি ঝগড়া মেটাতে পারেন না। ইত্যাদি ইত্যাদি। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি বলার সুযোগ নেই। তবে বিজয়ের মাসে এটাই বলতে হয়, স্বাধীনতার পর তৎকালীন অর্থনৈতিক সংকটাপন্ন বিশ্ব প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুনর্গঠন-পুনর্বাসনের বিরাট কর্মযজ্ঞের মধ্যেও আমাদের ইতিহাসে প্রথম একটি গণতান্ত্রিক ও গণমুখী সংবিধান রচনা করে জাতি অগ্রসর হবার পথ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু একদিকে সরকারের অভ্যন্তরে ‘চাটার দল’-এর অপতৎপরতা আর অন্য দিকে উগ্র বাম ও পরাজিত শক্তির সমন্বয়ে গঠিত ‘রাতের বাহিনীর’ নাশকতামূলক কাজ রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনকে অরাজক-অস্থির করে তোলে। এর সঙ্গে যোগ হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর পরও জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্রিয় ও সচেষ্ট ছিল।
কিন্তু পাকিস্তানি আমলের মতো ক্যু-হত্যা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সব কিছুকে পাল্টে দেয়। অস্ত্রের জোরে জন্মের উৎসের গৌরব ও ঐতিহ্য থেকে জাতিকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়। চালু করা হয় ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ এবং হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যু ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারা। সামরিকীকরণ ও বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘রাজনীতি রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট’ করে পাকিস্তানি আমলের রাজনৈতিক ধারাকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যেই জন্ম লাভ করে আইয়ুবের কনভেনশন মুসলিম লীগের সঙ্গে সব দিক থেকে মিল থাকা দল বিএনপি। জামায়াত দলটিও পায় পুনরুজ্জীবন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশকেই মিনি পাকিস্তান বানানোর প্রচেষ্টা চলে। এরই ধারাবাহিকতায় চলছে চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে রাজনীতি। তাই রাজনীতিক বা ব্যক্তি বিশেষকে বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী না করে দায় খুঁজে নিতে হতে আমাদের রক্তাক্ত ও অনভিপ্রেত ইতিহাসের মধ্যে।
অনভিপ্রেত এই ইতিহাসের ধারায়ই স্বাধীন বাংলাদেশ আমলে আবার শুরু হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রাম। সামরিক শাসক জিয়ার আমলে ১০ দলীয় জোটের আন্দোলনের ভেতর দিয়ে তা অগ্রসর হয়। ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, সামরিক শাসনের মধ্যে সামরিক ফরমানের লাইসেন্স নিয়ে দল করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ১০ দলকে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আর পরে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। সংসদ নির্বাচনের মাত্র ৪ সপ্তাহ আগে বিরোধী জোটকে দেওয়া হয় নির্বাচনি কাজের সুযোগ-সুবিধা। সামরিক আইন বহাল থাকায় তা হয়ে দাঁড়ায় খাতাপত্রের ব্যাপার। তবে ওই পর্যায়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অতীত ঐতিহ্য তথা অসাম্প্রদায়িক ও নিয়মতান্ত্রিক রূপটি অক্ষুণœ থাকে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেনাশাসক এরশাদ আমলে এই আন্দোলনে দুই অশুভ উপাদান যুক্ত হয়। প্রথমত ১৫ দলীয় ও ৭ দলীয় জোটের যুগপৎ আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে পবিত্র ধর্ম অপব্যবহারকারী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত যুক্ত হয়ে পড়ে ওই আন্দোলনে। দ্বিতীয়ত শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় ককটেলবাজি, যাকে তখন বলা হতো ফুটফাট।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি আমলে ষাটের দশকের গণজাগরণের শুরুর দিনগুলোতে জামায়াতসহ পবিত্র ধর্ম অপব্যবহারকারী দল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত ছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসক আইয়ুব আমলে কৌশলী ঐক্য তখনো হয়েছে; কিন্তু জাতীয় মূলধারার আন্দোলন সহজেই ওই শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে ওই দিনগুলোতে আন্দোলনের মধ্যে ঘেরাও-জ্বালাও-পোড়াও স্থান করে নিতে চেয়েছিল; কিন্তু গণসম্পৃক্ততা তা হতে দেয়নি। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, এরশাদ আমলে যুক্ত হওয়া ওই দুই অশুভ উপাদানকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়নি। ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি কথায় না গিয়ে বলা যায়, এটা পারা যায়নি কারণ পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়ে জাতীয় রাজনীতি ঝুঁকে গেছে মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে পরিত্যক্ত ডান প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির দিকে। হিসাবটা হলো এই যে, ’৭০-এর নির্বাচনে ভোট ছিল গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে শতকরা ৭০ ভাগের ওপরে আর এখন অর্ধাঅর্ধি ভাগ হয়ে গেছে ভোট অসাম্প্রদায়িক আর সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে। এ দিকে সমদূরত্বের নীতি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নিরপেক্ষ দাবিদার সুশীল সমাজ ও কিছু রাজনৈতিক দল; তাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রশ্রয়ও পাচ্ছে ওই অপশক্তি। তদুপরি অর্থ ও পেশিশক্তি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে বিধায় গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নৈতিক মূল্যবোধ দুর্বল; যাতে ওই অপশক্তি খুঁজে পাচ্ছে শক্তি।
এই প্রেক্ষাপটেই বিএনপি ও জামায়াত ভয়তালকে হরতাল বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। অবরোধও হয়ে উঠেছে এরই নামান্তর। আন্দোলন মানে গণসম্পৃক্ততা নয়। জনগণ রাস্তায় নামলো কি না তা আদৌ বিচার্য বিষয় নয়। এবারে চোরাগোপ্তা হামলা দিয়ে জামায়াত শুরু করে আন্দোলনের নামে তা-ব। আর এখন বিএনপি-জামায়াত জোটের কাজ হচ্ছে, ক্যাডার বা ভাড়া করা যুবকদের রাস্তায় নামিয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, ককটেল বা পেট্রল বোমা ফোটানো। পুলিশকে পিটিয়ে কিংবা গুলি করে ঠা-া মাথায় খুন করা। নিরীহ পথচারী ও বাসযাত্রীদের আগুনে পুড়িয়ে মারা। যাত্রীবাহী ট্রেন আসবে জেনেও লাইন উপড়ে ফেলা বা সিøপারে অগ্নিসংযোগ করা। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে চোরাগোপ্তা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা। এক কথায় মানুষকে আন্দোলনে আনা নয়, মানুষ মারা ও সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে টার্গেট। এসবই হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন। এসবকে ওই জোটের নেতারা গণঅভ্যুত্থান বলতেও দ্বিধা করছে না।
অতীতের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, অতীতে এই দু’দল কখনো এককভাবে দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে আন্দোলনে নামেনি। আর পাকিস্তানি আমলে জামায়াত আইয়ুববিরোধী জোটে যোগ দিলেও কার্যত গণআন্দোলন বিরোধী অবস্থান নিয়েছে আর শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর-আলশামস হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গণহত্যায় শামিল হয়েছে। আর বিএনপি প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের ইতিহাস হচ্ছে ক্ষমতায় থেকে ক্যু-পাল্টা ক্যু আর হুকুমের বিচারে হত্যা কিংবা ঠা-া মাথায় অগণিত সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যার ভেতর দিয়ে। জন্মের সঙ্গেই এই দুদলের হাতে রয়েছে রক্তের দাগ। আর এটাই নিষ্ঠুর সত্য যে, ক্ষমতায় গিয়ে এই দুদল হত্যা-খুনের হোলিখেলায় নেমেছিল। উগ্র জঙ্গি দল বাংলাভাই জেএমজেবি এবং মুফতিদের হরকাতুল জিহাদকে এরাই হত্যা-খুনের অভয়ারণ্য সৃষ্টির জন্য আশ্রয়-প্রশ্রয়-উস্কানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিল।
রাজনীতিক শাহ এ এস এম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজউদ্দিন, মনজুরুল ইমাম এবং বুদ্ধিজীবী হুমায়ুন আজাদসহ আরো অনেকের হত্যা সংঘটিত হয়েছিল কিংবা ২১ আগস্ট গ্রেনেড মেরে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ ও ৭৫-এর বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের হত্যা-খুনের ধারাবাহিকতায়।
একটু খেয়াল করলেই এটা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভেতর দিয়ে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা-ফ্যাসাদের রাজনীতি আমাদের দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জামায়াতের বুদ্ধিজীবীরা ইদানীং বলতে চাইছেন যে, স্বদেশী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে নাকি সন্ত্রাসী ধারা আমাদের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এটা ঠিক স্বদেশী আন্দোলনের মধ্যে অতর্কিত সশস্ত্র হামলা ও হত্যার বিষয়টা ছিল। কিন্তু মাস্টারদা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, নলিনী দাস প্রমুখদের রাজনীতির ওই দিকটা গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক জাতীয় রাজনীতি গ্রহণ করেনি। ওদের স্বদেশ প্রেম ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার চিরায়ত আদর্শটা গ্রহণ করেছে। পাকিস্তানিরা মেজরিটির পার্টি আওয়ামী লীগকে যখন ক্ষমতায় বসতে দেয় না, তখন কেবলমাত্র বাধ্য হয়ে ‘তোমরা আমার ভাই’ বলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর স্বাধীনতার পর উগ্র বাম সশস্ত্র রাতের বাহিনীর সঙ্গে পরাজিত ডান সাম্প্রদায়িক শক্তিই মুখোশ পরিবর্তন করে ঢুকে পড়েছিল। এটাই তো সত্য যে, স্বাধীনতার পর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে রাতের বাহিনীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দিয়েছে পরাজিত পাকিস্তানের আইএসআই।
হত্যা-খুনের রাজনীতির ভেতর দিয়ে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে যে রাজনৈতিক ধারার সৃষ্টি ও বিকাশ; সেই রাজনীতি বর্তমান পর্যায়ে এসে আবারো মরণ কামড় দিতে উদ্যত
হয়েছে। সমদূরত্বের নীতি নিয়ে দুই ধারার রাজনীতিকে যারা এক করতে চান, সেই সব বিজ্ঞজনেরা বলুন তো, রায়ের ভিত্তিতে আদালতকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট না করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে যদি ওই ব্যবস্থা সংশোধন করা হতো, তবে কি ওই সংশোধন প্রক্রিয়ায় থাকতে বিএনপি আদৌ সংসদে যেতো? মহাজোট একা করলে কি বিএনপি তা আদৌ মানতো? কে হতেন ওই পদ্ধতির সরকারের প্রধান? কারা হতেন সেই ১০ জন? তা নিয়ে ফাঁক থাকায় কি এখনকার মতোই মুখোমুখি হতো না রাজনীতি?
বিএনপি মূলত চার কারণে এবারে নির্বাচন করতে চাইছে না। প্রথমত গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক ধারা বহাল থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকার পরিচালনার ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে মহাজোট সরকারের নজরকাড়া সফলতা। তৃতীয়ত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে অংশগ্রহণ করতে না পারা। চতুর্থত উগ্র জঙ্গিদের ক্ষমতায় থেকে মদদ দেওয়ার প্রেক্ষিতে ২০০১ সালের মতো নির্বাচনে জেতার নিশ্চয়তা না পাওয়া। নির্বাচনে যাওয়ার আগে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কিংবা অন্তত একটি বিজয় মিছিল বের না করে কি আদৌ নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোট? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পেলেও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কেন যুক্ত হয় না তারা?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরে যাবেন কেন? সংবিধান সংশোধন কি অসাংবিধানিকভাবে করা হয়েছে? মহাজোট তো আর সামরিক ফরমান দিয়ে সংবিধান সংশোধন করেনি? গণতান্ত্রিক পথ গ্রহণ করতে চায় না কেন বিএনপি-জামায়াত জোট? বগলে আছে তাদের কোন ইট!
বিজয়ের মাসের শুরুতে তাই বলতে হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার ভেতর দিয়ে অগণতান্ত্রিক-সাম্প্রদায়িক শক্তির লেজে নয় মাথায় আঘাত পড়েছে। তাই হত্যা-খুনের রাজনীতির ধারক-বাহক জাতিবিরোধী এই অপশক্তি মরণ কামড় দিতে উদ্যত হয়েছে। রক্তের হোলি খেলা ওরা চালিয়ে যেতে চাইবেই। তাই একাট্টা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া ভিন্ন বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক জাতীয় মূলধারার শক্তির। পেছনে ফেরা যাবে না। নিজেদের আইন মানতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। হত্যা-খুনের রাজনীতি অব্যাহত রাখলে আইনের মাধ্যমে শাস্তি পেতে হবেই। সংবিধানকে রাখতে হবে সমুন্নত।
অসাম্প্রদাদিক গণতান্ত্রিক মানবিক-জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র ও সমাজ গড়া তথা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে ওঠার পথ থেকে একটুও বিচ্যুত হওয়া যাবে না। আবুল হোসেন গংদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নে শক্তি-সামর্থ্য ও দিকনির্দেশের প্রকাশ ঘটিয়েছে। নিরপেক্ষ দাবিদারই বলেছেন, বিতর্কিত মাত্র ১২ জন পেয়েছেন মনোনয়ন। যদি তেমন অভিযোগ সত্যও হয়, তবে বলতে হবে ‘রাজনীতি রাজনীতিকদের জন্য ডিফিকাল্ট’ করার রাজনৈতিক ধারা যে পর্যায়ে এসে আজ পৌঁছেছে, তাতে এক ধাক্কায় সব ফিলিপস বাতির মতো পাকসাফ হয়ে যাবে, এমনটা কেবল ১/১১-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কুশীলব নিরপেক্ষ দাবিদাররাই বলতে পারেন। বর্তমানের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলে, দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কূটনীতিকদের হাতে ছেড়ে দিলে নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি হবে আরো জটিল ও কঠিন এবং দেশবাসীর নিয়ন্ত্রণহীন।
বাংলাদেশ এবারের বিজয়ের মাসে অপেক্ষা করে আছে ২০২১ সালে বিজয়ের রজতজয়ন্তী পালনের জন্য। দেশবাসীর এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য যে যেখানে যেভাবে আছেন, যার যতোটুকু শক্তি আছে; তা নিয়ে সংবিধান ও আইন সমুন্নত রেখে অসমাপ্ত বিজয়কে সম্পূর্ণতা দিতে, প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে রূপ দিতে সচল-সক্রিয়-উদ্যোগী থাকুন, এবারের বিজয়ের মাসে এটাই হোক সকলের প্রতিজ্ঞা।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা শহর ইতিমধ্যে পচে গেছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



স্থান: গুলিস্থান, ঢাকা।

ঢাকার মধ্যে গুলিস্থান কোন লেভেলের নোংড়া সেটার বিবরন আপনাদের দেয়া লাগবে না। সেটা আপনারা জানেন। যেখানে সেখানে প্রসাবের গন্ধ। কোথাও কোথাও গু/পায়খানার গন্ধ। ড্রেন থেকে আসছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×