বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। দেশব্যাপী একযোগে পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০০৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়ও গ্রেনেড হামলা হয়েছে। সারা দেশে এ রকম বহু ঘটনা ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। পুলিশি তত্পরতায় সব জঙ্গি নির্মূল হয়েছে কি? নাকি কৌশলগত কারণে আরো বড় ধরনের হামলা পরিচালনার জন্য তারা সংগঠিত হচ্ছে এবং সময় নিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ শেষোক্ত দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। গতকাল কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশসহ চারটি দেশের ২৮টি জঙ্গি সংগঠন জোট গঠন করে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, হুজি, জেএমবিসহ কয়েকটি সংগঠন, পাকিস্তানের জামায়াত আল-পাকিস্তান, কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বা, ভারতের মুজাহিদিন, হরকাতুল জিহাদ-আই, উলফা এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সলিডারিটি ইউনিয়ন (আরএসও) ও আরাকান আর্মি। আপাতত তারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলকে ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সংগ্রহসহ নানা ধরনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, দুই বছরের মধ্যে তারা বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। অবাক হওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে, সেই পরিকল্পনায় ক্ষমতাসীন দলের বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার বেশ কিছু নেতা জড়িত রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের আরো কিছু দেশে ইতিমধ্যে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেসব দেশের অতি উন্নত পুলিশ বা গোয়েন্দা বাহিনী তাদের আটকাতে পারেনি। সেখানে আমরা যদি মনে করি, বাংলাদেশে জঙ্গিরা শক্তিহীন হয়ে পড়েছে, তারা আর বড় কোনো হামলা চালাতে পারবে না—তাহলে সেটি শুধু ভুল নয়, আত্মঘাতী ভুল হিসেবে গণ্য হবে। বিশেষ করে যেখানে আইএস, আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হামলার জন্য ঘোষিত তালিকায়ও বাংলাদেশের নাম রয়ে গেছে। বরং সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কাগুলো মাথায় রেখেই তা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এখনো এ ক্ষেত্রে যেসব ঘাটতি দেখা যায়, তা আমাদের শঙ্কাই কেবল বাড়ায়। তার একটি হচ্ছে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন। দুই দিন আগেই অর্থমন্ত্রী এক বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশে যত চোরাচালান হয়, তার ৮০ শতাংশই থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর চোরাচালান থেকে আসা অর্থের বড় অংশই চলে যায় জঙ্গিদের হাতে। এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং বা এপিজিও মনে করে, বাংলাদেশে মুদ্রাপাচার ঠেকানোর ক্ষেত্রে এখনো অনেক দুর্বলতা রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অহরহ অর্থ আসছে। আর তা দিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বৃহত্তর চট্টগ্রামে একের পর এক জঙ্গি আস্তানা তৈরি করা হচ্ছে। জানা যায়, কয়েক দিন আগেই চট্টগ্রাম সফর করে গেছেন পাকিস্তান আইএসআইয়ের কর্নেল মর্যাযদার একজন কর্মকর্তা। ধারণা করা হয়, কয়েক ডজন পাকিস্তানি গুপ্তচর এখনো বাংলাদেশের নানা স্থানে লুকিয়ে ধ্বংসের আয়োজন করে চলেছে। তাই শুধু অস্বীকার নয়, জঙ্গি মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই এখন সবচেয়ে জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০২