somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে এত ধর্ষণ কেন?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে পচন বহুদিনের
আজকের এ অবস্থা ভারতে একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বরং এ পচন বহুবছর ধরে অবিরাম ভাবে ঘটে আসছে। ভারতীয় ইংরেজী দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমসের ৪/১২/১২-য়ে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে সুজাতা আনানদান তুলে ধরেছেন এ নৈতীক পচনকে ত্বরান্বিত করার কাজে দেশের রাজনৈতীক নেতাগণ কীরূপে জড়িত তার এক বিবরণ। তিনি লিখেছেন,বোম্বাইয়ে একটি মারাঠী পত্রিকা ষাটের দশকে “ধর্ষণের গাইড বুক” নামে একটি নিবন্ধে ছেপেছিল যাতে ছিল নারীধর্ষণে ধাপে ধাপে ধর্ষণকারীর কি করণীয় তার খুঁটিনাটি নির্দেশনা। বিস্ময়ের বিষয়,এতবড় নোংরা বিষয় পত্রিকায় প্রকাশের পর উক্ত গাইড বুকের লেখক,পত্রিকার সম্পাদক ও প্রশাসকের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। কারো কোন শাস্তিও হয়। বরং উক্ত লেখক আবির্ভূত হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির উপদেষ্টা,রাজনৈতীক গুরু ও দার্শনিক রূপে।ভারতীয় রাজনীতির গভীরে এরূপ দুর্বৃত্তগণ যে কতটা গভীর ভাবে ঢুকে পড়েছে এ হলো তার নমুনা। ভারতের আরেক ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা “দি হিন্দু” র ৪/০১/১৩ তারিখে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, ভারতের বিধান সভা ও লোক সভার সর্বমোট ৪,৮৩৫ সদস্যদের মধ্যে ১৪৪৮ জনের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল তথা ফৌজদারি কেসের মামলা রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাও রয়েছে।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে ভারতব্যাপী লক্ষ লক্ষ মহিলার মিছিল হচ্ছে। কিন্তু দেহের রোগের ন্যায় চরিত্রের রোগও কি মিছিলে বন্ধ হয়? ফলে ধর্ষণও থামেনি। হিন্দুস্থান টাইমস ৪/১/১৩ তারিখে রিপোর্ট ছেপেছে, বিহারের ভোজপুর জেলার আরা জংশনের কাছে ধর্ষণ থেকে বাঁচতে একজন মহিলা যাত্রী চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। ধর্ষণ থেকে বাঁচলেও উক্ত মহিলা এখন পাটনার এক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। তরুণীটি ঝাঁপ দিয়েছিল দিবরুগড়-দিল্লি ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস থেকে। প্রকাশিত রিপোর্টে গুরুতর যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো, উক্ত মহিলার উপর যারা ধর্ষণে উদ্যত হয়েছিল তারা কোন সাধারণ যাত্রী বা লম্পট ছিল না,ছিল ভারতীয় সেনা বাহিনীর সদস্য। ঘটনাটি রাতে আঁধারেও ঘটেনি,ঘটেছে ভরা বিকেলে। খবরটি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাও প্রথম পৃষ্টায় ছেপেছে। প্রশ্ন হলো,সামরিক বাহিনীর যে সদস্যরা দিনের আলোয় চলন্ত ট্রেনে ও যাত্রী ভর্তি বগীতে নারীর উপর ধর্ষনে উদ্যোগী হতে পারে তারা কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, আসামের যুদ্ধউপদ্রুত এলাকায় রাতের আঁধারে নারীদের উপরে ধর্ষণে কতটা নির্মম ও বেপরোয়া হতে পারে সেটি অনুমান করা কি এতই কঠিন? কাশ্মীরের মজলুম মুসলমানেরা তো ভারতীয় সেনা বাহিনীর সে বর্বরতার কথাটিই বার বার বলে আসছে। এরূপ নারী মাংসলোভী কত হিংস্র দুর্বৃত্ত যে সৈনিক,পুলিশ,সরকারি অফিসার ও বাসড্রাইভারের বেশে এবং আরো কতরূপ বেশ ধরে ভারতের জনপদে চলাফেরা করে সে হিসাব ক’জনের? কাশ্মীরের হাজার হাজার মুসলিম নারী লাগাতর ধর্ষিতা হচ্ছে এবং ধর্ষণের পর নিহত হচেছ তো এমন পশুদের হাতেই। যে কোন যুদ্ধে সবচেয়ে নির্যাতিত হয় নারীরা। যুদ্ধরত সৈনিকের সম্পদ লুটের চেয়ে বেশী মনযোগী হয় নারীর সম্ভ্রম লুটে। জাপানী সেনাবাহিনী যখন কোন দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠিত করতো তখন সেদেশের নারীদের জোরপূর্ব্বক গ্রেফতার করে তাদেরকে যৌনদাসী রূপে ব্যবহার করতো সৈন্যদের যৌনক্ষুধা মেটাতে।সে অপরাধের শিকার হয়েছে ভিয়েতনাম, কোরিয়া, বার্মা, ক্যাম্বোডিয়ার অগণিত মহিলা। একই ক্ষুদার্ত ভারতীয় সৈনিকদের মুখে পড়েছে কাশ্মীরের মুসলিম মহিলারা। ফলে কাশ্মীরের প্রতি গ্রামে ও প্রতি গৃহে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে এজন্যই এত গণরোষ ও এত বিদ্রোহ। সে বিদ্রোহ থামাতে সেখানে ৬ লাখের বেশী ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

ধর্ষণ যেখানে শক্তি ও আধিপত্যের হাতিয়ার
ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে আধিপত্য ও নির্যাতনের হাতিয়ার শুধু দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলিম নারী-পুরুষদের হত্যা নয়।স্রেফ তাদের সম্পদ লুট বা গৃহে ও দোকানে আগুণ লাগানোও নয়। বরং জঘন্য হাতিয়ার হলো মুসলিম নারীদের ধর্ষণ।ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ভারতের হিন্দুরা মুসলমানদের জানিয়ে দেয় তারা কত শক্তিশালী। মোম্বাই,গুজরাত¸দিল্লি,হায়দারাবাদ¸মুরাদাবাদ¸বেরেলী,এলাহাবাদ ও আসামের মুসলমান নারীদের বিরুদ্ধে এ অস্ত্রটি যে কতটা ভয়ানক ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে সে বিবরণ বহু ভারতীয় পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টেও বেরিয়ে আসছে। ধর্ষণের পর নারীদের তারা আগুণে ফেলেছে যাতে সে অপরাধের কোন স্মৃতি না থাকে। একই অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে দলিত বা ভারতের নিন্মবর্ণের নারীদের বিরুদ্ধেও। মধ্যপ্রদেশ,অন্ধ্রপ্রদেশ,বিহার,ঝাড়খন্ডের মত প্রদেশগুলোতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুলিশের কাজ হলো এসব এলাকায় মাওবাদী দলিতদের ঘরে আগুণ দেয়া,এবং তাদের নারীদের উপর ধর্ষণের মধ্য দিয়ে যুদ্ধজয়ের উৎসব করা।

প্রখ্যাত ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতি রায়ের মতে ধর্ষণ হলো ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান ও নিন্মবর্ণের দলিতদের বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণ ও মধ্যবৃত্ত হিন্দুদের শক্তি প্রদর্শণের হাতিয়ার। কোথাও মুসলিম নির্মূলের দাঙ্গা শুরু হলেই এ অপরাধকর্মেরও প্লাবন শুরু হয়। যতদিন সে অস্ত্রটি শুধু মুসলমান ও নিন্মবর্ণের দলিতদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে ততদিন তার বিরুদ্ধে আজ কের ন্যায় রাজপথে বিক্ষোভ হয়নি। কাশ্মীর,মোম্বাই,গুজরাত, হায়দারাবাদ, মুরাদাবাদ, এলাহাবাদের ন্যায় বহুস্থানে বহু হাজার মুসলিম মহিলা বিগত বহুবছর ধরে ধর্ষণের শিকার হলেও সে অপরাধের বিচার চেয়ে একজন ভারতীয় হিন্দু মহিলাও এ অবধি রাস্তায় নামেনি। বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার মুসলিম নারী ধর্ষিতা এবং ধর্ষণের পর লাশ হলেও কোন একজন মুসলিম ধর্ষিতার লাশ দেখতে ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী যায়নি,যায়নি কংগ্রেস বা অন্য কোন রাজনৈতীক দলের প্রধানগণও। কোন নারীবাদি সংগঠনও রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিলে নামেনি। অথচ আজ যখন এক মধ্যবৃত্ত হিন্দু মহিলা ধর্ষিতা হলো তখন হাজার হাজার মধ্যবৃত্ত মহিলা বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে এসেছে। ধর্ষণকে ধর্ষণ, অপরাধীকে অপরাধী রূপে গণ্য করার ক্ষেত্রেও ভারতে যে চেতনাটি কাজ করে সেটিও এক সাম্প্রদায়ীক ও জাতিভেদগত চেতনা। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মস্করা আর কাকে বলে!

ভারতীয় ফিল্ম ইনডাস্ট্রি ও ধর্ষণ-পাগল পশু উৎপাদন
শত বছর পূর্বে ভারতে যখন এত থানা-পুলিশ ও আদালত ছিল না তখনও কি দেশটিতে এত ধর্ষণ ছিল? ধর্ষণ দেহের রোগ নয়,এটি চেতনাগত ও সাংস্কৃতিক রোগ। যখন কোন দেশে এ রোগের প্রকট বিস্তার ঘটে,তখন বুঝতে হবে সেদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রবলভাবে ব্যাধিগ্রস্ত। অর্থনৈতীক অগ্রগতিতে সে রোগের প্রকোপ কমানো যায় না। ভারতে এ চারিত্রিক ব্যাধিটি এখন মহামারির আকার ধারণ করছে। এ রোগটি ছড়াচ্ছে ভারতের অশ্লিল নাচগানপূর্ণ সিনেমা। মানুষ যে কতটা বেহায়া-বেশরম ও যৌনপাগল হতে পারে এবং অশ্লিলতাও যে কতটা প্রদর্শণযোগ্য হতে পারে তার নজির হলো এসব ভারতীয় ফিল্ম। পতিতাপল্লির বর্বর অশ্লিলতাকে বাজারজাত করা হয় এ ফিল্মগুলোতে। সিনেমা হলে গিয়ে বা ঘরে বসে নারী-পুরুষ,পিতা-পুত্র, ভাইবোন যখন একত্রে এসব অশ্লিল ফিল্ম দেখে তখন তাদের মাঝে মারা পড়ে লজ্জা-শরম ও শালিনতাবোধ। নীতি-নৈতীকতা ও চরিত্র ধ্বংসে মানুষকে এভাবে বিষপান করানো হচ্ছে। এমন বিবেকহীন বেহায়ার মানুষগুলো ধর্ষণে একত্রে রাজপথে নামবে সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সে লজ্জাহীনতা কতটা সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ হলো,দিল্লির বাসে মহিলা ধর্ষনে একত্রে যোগ দিয়েছিল সহোদর দুই ভাই। ভারতীয় ফিল্ম ইনডাস্ট্রির মূল কাজ হয়েছে বিবেকহীন,লজ্জাশরমহীন এরূপ ধর্ষণ-পাগল পশু উৎপাদন করা। এদের কারণেই ভারতে আজ প্রতি মিনিটে নারী ধর্ষিতা হচ্ছে।

ফিল্মের নামে ভারত তার নিজের ব্যাধী সে বিষাক্ত আবর্জনাগুলোকে বাংলাদেশের ন্যায় প্রতিবেশী দেশগুলোতেই ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষও সে আবর্জনাগুলো গোগ্রাসে গিলছে। ফলে অশ্লিলতা, ব্যাভিচার ও ধর্ষণ বাড়ছে শুধু ভারতে নয়,বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের মানুষের বিবেকশূণ্যতা তো আরো গভীর।দিল্লিতে এক মহিলা ধর্ষণের ঘটনায় সে দেশের শহরগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ধর্ষণের উৎসব হয়। যেমনটি হয়েছে নব্বইয়ের দশকে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাস গড়েছে সে ভয়ংকর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করে। আর দেশটির সরকার ইতিহাস গড়েছে সে ভয়ানক অপরাধীকে কোনরূপ শাস্তি না দিয়ে। কোন নারীবাদী সংগঠনও তখন রাস্তায় নামেনি। অতীতে বাংলাদেশে মহিলা ধর্ষিতা হয়েছে থানার অভ্যন্তরে পুলিশের হাতে,ধর্ষিতা মহিলার লাশকে জ্বালিয়েও দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ সে ভয়ংকর অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়নি,বিচারও হয়নি।সম্প্রতি টাঙ্গাইলের ১৫ বছরের এক কিশোরি ধর্ষিতা হয়েছে। কিন্তু এ অবধি সে ধর্ষণেরও কোন বিচার হয়নি। বরং দেশের বর্তমান সরকার ব্যস্ত ধর্মভীরু পর্দানশিন মহিলাদের কারাগারে তোলা নিয়ে।


সেক্যুলারিস্ট প্রেসক্রিপশন

ক্ষুধা বৃদ্ধি পেলে মানুষ বেশী বেশী খায়। তেমনি যৌন ক্ষুধা বাড়লে সে ক্ষুদার্ত ব্যক্তিটিও তা মিটাতে চায়। কিন্তু ভারতের সমস্যা হলো,দেশটিতে যৌন ক্ষুধা বাড়ানোর বিপুল আয়োজন হলেও ক্ষুধা মিটানোর ব্যবস্থাটি সহজ লভ্য নয়। ভারতে মেয়েদের প্রতি এমনিতেই প্রচণ্ড ঘৃণা। এ্যাবরশনের নামে দেশটিতে লক্ষ লক্ষ নারীর প্রাণনাশ ঘটানো হয় জন্মের আগেই।ফলে মেয়েদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক কম। তারপর বিবাহ কঠিন করা হয়েছে যৌতুকের প্রকোপে। স্ত্রী অক্ষম হলেও হিন্দু ধর্মে দ্বিতীয় বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অপর দিকে পতিতাপল্লিতে গিয়ে যৌন ক্ষুধা মিটানো আর্থিক সামর্থ সবার নাই। ফলে প্রচণ্ড যৌনক্ষুধা নিয়ে হাজার হাজার পাষণ্ড নারীশিকারি পুরুষ দিবারাত্র রাজপথে ঘুরে। তাদের হাতে হামলার শিকার হচ্ছে পথের,অফিসের বা গৃহের অসংখ্য মহিলা।

ভারতবাসীর আরেক সমস্যা হলো,নিজেদের সংস্কৃতিকে আস্তাকুরে ফেলে তারা পাশ্চাত্যের সংস্কৃতিকে গ্রহন করেছে। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির অনুকরণে অশ্লিল ছায়াছবি,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাবকে ব্যাপকতর করেছে। কিন্তু এতে বিপদ বেড়েছে নারীর। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ফলে দারুন ভাবে বেড়েছে মানুষের যৌনক্ষুধা। কিন্তু ভারতবাসী ভূলে যায়,পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অর্থ শুধু অশ্লিল ছায়াছবি,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাব নয়। ব্যাভিচারও এ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যৌন ক্ষুধা পূরণে ব্যাভিচারকে অতি অবাধ ও সহজলভ্য করা হয়েছে। সংস্কৃতি আসে সভ্যতা থেকে। সাথে আসে সে সভ্যতার নির্মানের মূল দর্শনটিও।ভারত পাশ্চাত্য থেকে অশ্লিল ছায়াছবি,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাব নিলেও যে দর্শনটি ব্যাভিচারকে অবাধ ও সহজ-লভ্য করে সে দর্শনটি নেয়নি। ফলে বেড়েছে ধর্ষণ। অথচ পাশ্চাত্যে পেশাদার বেশ্যাদের স্থান নিয়েছে ব্যভিচারি নারীপুরুষেরা। বরং এসব ব্যাভিচারি নারীপুরুষদের কারণে পেশাদার বেশ্যারা বরফপড়া শীতের রাতে অশ্লীল সাজ্জাসজ্জা করে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়েও খরিদার পায় না। বেশ্যাদের ব্যবসা ফলে লাটে উঠেছে। বিয়ে না করে বা পতিতাপল্লিতে না গিয়ে পাশ্চাত্যে তাই আজীবন যৌনক্ষুধা মিটাতে কোন অসুবিধা হয়না। বিয়ের বদলে চালু হয়েছে বইফ্রেণ্ড,গার্লফ্রেণ্ডের সংস্কৃতি। এবং সেটি স্কুল থেকেই। ভারতের নারীদের ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে তাই বিশিষ্ট কলামিস্ট, লেখক এবং সেক্যুলারিস্ট গুরু খুশবন্ত সিং হিন্দুস্থান টাইমসে ৪/১/১৩ তারিখের এক নিবন্ধে ভারতীয় মহিলাদের প্রতি কিছু পরামর্শ রেখেছেন। সে নিবন্ধে তার মূল কথাটি হলো,পাশ্চাত্যে নারীদের ন্যায় তাদের আরো উদার হতে হবে। উত্তেজক সাজসজ্জায় শুধু পুরুষের যৌন ক্ষুধা বাড়িয়ে লাভ নাই,তাতে বরং বিপদ। সে ব্পিদ থেকে নারীদের বাঁচতে হলে পুরুষের যৌন ক্ষুধা পুরণে তাদেরকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আধা অনুসারি হয়ে লাভ নাই,অনুসারি হতে হলে সে সংস্কৃতির পুরাটাই গ্রহণ করতে হবে। তাঁর সেক্যুলারিস্ট প্রেসক্রিপশনটি হলো,অশ্লিল সিনেমা,পর্ণফিল্ম,নাচগান,মদ্যপান,নাইট ক্লাবের পাশাপাশি পতিতাবৃত্তি ও ব্যাভিচারের ফ্লাডগেটগুলোকেও পুরাপুরি খুলে দিতে হবে। স্কান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেছেন¸ব্যাভিচারকে অবাধ করার ফলে সে দেশগুলিতে ধর্ষণের ঘটনা কমেছে। খুশবন্ত সিং পাশ্চাত্যে সংস্কৃতিতে পুরাপুরি ভেসে গেছেন। তিনি চান ভারতীয়রাও তার মত ভেসে যাক। অর্থাৎ ভারতীয়দের আধা-পচন নিয়ে তিনি খুশি নন, তিনি চান পুরা পচন। কিন্তু কোন বিবেকমান ও ধর্মপ্রান মানুষের কাছে তার এ নসিহত কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

মহিলাদের অপরাধ
মহিলাদের বিপদ বাড়াতে তাদের নিজেদের অপরাধটাই কি কম? যারা কাছে লাখ টাকা আছে সে যদি টাকার বিশাল বিশাল বান্ডিলগুলো পাতলা পলিথিনের ব্যাগে ভরে মানুষকে দেখাতে দেখাতে রাস্তায় হাঁটে তবে চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীদের লোভ তো বাড়বেই। ফলে যে কোন মুহুর্তে সে অর্থই শুধু ছিনতাই হবে না,জীবননাশও হতে পারেন। আকলমন্দ ধনিরা তাই নিজেদের অর্থভান্ডার দৃশ্যমান করে রাস্তায় নামে না। ডাকাতের পাড়ায় তো তারা গরীবের বেশ ধরে। নিজের ঘরের দরজা জানালা কখনো খোলা রেখে তারা ঘুমায় না। একই বিষয় মহিলাদের বিষয়। নারীদের মহান আল্লাহতায়ালা যা দিয়েছেন তা লক্ষ টাকা বা কোটি টাকার চেয়েও দামী। এ সম্পদ অমূল্য। এটি আল্লাহর দেয়া এক বিশাল নেয়ামত, সে সাথে আমানতও। প্রতিটি নারীর উপর দায়ভার হলো সে আমানতের পূর্ণ হেফাজত। নইলে শুধু তাঁর নিজের উপর বিপদ নেমে আসে না,বিপর্যয় নেমে আসে সমাজ ও রাষ্ট্রে। ইতিহাসে বহু মানুষ খুন হয়েছে,বহু অর্থ ব্যয় হয়েছে,এমনকি বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীকে নিয়ে।তাই সে অমূল্য রূপকে সাজ-সজ্জায় আরো আকর্ষণীয় করে রাস্তায় নামলে তাতে নারীর বিপদ শুধু বাড়বেই। তখন নারী-শিকারিদের ক্ষুধা যে আরো তীব্রতর হবে এবং যে কোন সুযোগে নারীধর্ষণে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? ভারতে আজ এত নারীধর্ষণের বড় কারণ এই বেপর্দাগী।

নারীর বিপদ ও নিরাপত্তার বিষয়টি মহান আল্লাহর চেয়ে আর কে বুঝে? তাই ইসলামে হিজাব বা পর্দার অলংঘনীয় বিধান দেয়। পবিত্র কোরআনে তাই ঘোষিত হয়েছে,“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও ম’মুমিনদের নারীগণকে বলে দিন,তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ দিয়ে (নিজেদেরকে) আবৃত করে। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না” –(সুরা আহযাব, আয়াত ৫৯)। পর্দা তাই মহান আ ল্লাহতায়ালা নির্দেশিত এমন এক বাংকার যা নারীকে নিরাপত্তা দেয় দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে। ঘর তাদের জন্য দুর্গ। পর্দানশিন মহিলার উপর হামলার ঘটনা এজন্যই কম। সৈনিক যখন তার দুর্গ ও বাংকার থেকে বেড়িয়ে আসে তখন তার বিপদও বাড়ে।নারী-শত্রু সেক্যুলারিস্টগণ তাই নারীকে গৃহ ও পর্দার বাইরে এনে তাঁকে নিরাপত্তাহীন করতে চায়। সে বিপদ কমাতে ইসলাম মোহাররাম ব্যক্তি (যার সাথে বিবাহ হারাম) ছাড়া রাস্তাঘাটে বেড়াতে বেরুনো দূরে থাক,পবিত্র হজে যাওয়াও নিষিদ্ধ করেছে। নারীরা তাদের উপর বিপদ ডেকে এনেছে আল্লাহর নির্দেশিত সে হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। অথচ মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারীর পক্ষ থেকে আল্লাহর সে বিধানের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ ঘটেছে।

পাশ্চাত্য সংস্কৃতি মহিলাদের বেপর্দা করে তাদের দেহকে ব্যবসায়ীক পণ্যে পরিণত করেছে। তারা যে কারো পরম শ্রদ্ধেয়া মা,প্রিয় বোন, আদরের কন্যা এবং ভালবাসার স্ত্রী -সে পরিচয়কে ভূলিকে যৌণ খায়েশ পুরণের অশ্লীল লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর দেহ পরিনত হয়ে বিজ্ঞাপণের পোষ্টার। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি এভাবে বাড়িয়েছে নারীর চরম অবমাননা ও অপমান –যেমনটি ঘটেছিল আরবের জাহলিয়াত যুগের সংস্কৃতিতে। তখন তো কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন করা হতো। ইসলাম নারীর জীবনই শুধু বাঁচায়নি, বিপুল ভাবে নারীর অধিকার এবং সন্মানও বাড়িয়েছে। তার পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশতের ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে নারীর অবদানই কি কম? নবীজী (সাঃ)র পর যিনি প্রথম ইসলাম কবুল করেন তিনি কোন পুরুষ নয়,তিনি হযরত খাদিজা। যিনি ইসলামের প্রথম শহীদ হন তিনিও কোন পুরুষ নন। তিনি আরেক মহান নারী হযরত সুমাইয়া। অথচ আজ সেক্যুলারিস্টগণ নারীকে সে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বলছে।

ব্যর্থ বিচারব্যবস্থা
ভারত ও বাংলাদেশের ন্যায় দেশে নারীধর্ষণ বৃদ্ধির আরেক কারণ,বিচারব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা। বিচার ব্যবস্থার সবচেয়ে দৃষ্টিকটু সফলতা হলো,খুনি,ধর্ষণকারি ও চোরডাকাতদের বিচার থেকে দূরে রাখা।দেশে লক্ষাধিক অপরাধ সংঘটিত হলেও শতকরা ১০ ভাগেরও কি শাস্তি হয়? শাস্তি দিলেও আদালত গুরুতর অপরাধীদেরও লঘুদণ্ড দেয়। গুরুদণ্ড বরাদ্দ রেখেছে তো শুধু তাদের রাজনৈতীক শত্রুদের জন্য। ভারত তার জাতীয় বাজেটের বিশাল অংক ব্যয় করে প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর নজরদারি বাড়াতে। এটিকে বলে শত্রু শক্তির উপর নজরদারি। কিন্তু তাদের রাডার কাজ করে না নিজদেশের খুনি,সন্ত্রাসী,ধর্ষণকারি,চোরডাকাতদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মত দেশে পুলিশ,র‌্যাব,গুপ্তচর সংস্থা,আদালত ব্যস্ত রাজনৈতীক শত্রুনির্মূলে। কিন্তু নজরদারি নেই ধর্ষক ও খুনিদের বিরুদ্ধে। কারণ তারা জনগণ বা নারীদের দুষমন হলেও সরকারের দুষমন নয়। সরকারের বিভিন্ন দফতরে অতিরীক্ত লোকবলের ভিড়,অথচ আদালত গুলোতে হাজার হাজার পদশূণ্য। ফলে বিচার শেষে হতে বছরের পর বছর লেগে যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তহশিল অফিস,পরিবার পরিকল্পনা দফতর,ভূমি দফতর,পুলিশ ফাঁড়ি –এরূপ নানা দফতর থাকলেও আদালত নাই,বিচারকও নাই। অথচ ত্বরিৎ বিচার লাভ জনগণের মৌলিক অধিকার।এবং সেটি বিনামূল্যে। ইসলাম তার গৌরব কালে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রাসাদতুল্য বড় বড় অফিস না গড়লেও সুবিচার দিতে কাজী বসিয়েছিল। আজ থানায় থানায় কত সরকারি ভবন। কত অফিসার। কিন্তু বিচারালয় থানা পর্যায়ে এখনো আনতে পারিনি। সরকারের প্রায়োরিটি কোথায় এরপরও কি বুঝতে বাঁকি থাকে?

বিচারকে ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্য বানানো ইসলামের শিক্ষা নয়। এটি তো ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের অবদান। তারা যেমন পতিতাবৃত্তি ও সূদী লেনদেনের ন্যায় ভয়ানক গুনাহকে ব্যবসা রূপে প্রতিষ্ঠা করেছে,তেমনি বাণিজ্য রূপে প্রতিষ্ঠিত করে গেছে দেশের বিচারব্যবস্থাকেও। তাদের বিদায়ের পর পরবর্তী সরকারের কাজ হয়েছে ঔপনিবেশিক কাফেরদের বিশ্বস্থ খলিফা রূপে তাদের প্রতিষ্ঠিত বিচার ব্যবস্থাকে সযন্তে চালু রাখা। ফলে ন্যায় বিচার পরিণত হয়েছে দুর্লভ পণ্যে। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় বিচার কিনতে। থানা-আদালতসহ সমগ্র বিচার ব্যবস্থা অধিকৃত হয়ে আছে একপাল দুর্বৃত্তের হাতে। এদের এজেণ্ডা সুবিচার নয়,বরং তাদের নজর বিপদগ্রস্ত লোকদের পকেটের দিকে। থানার দরোজায় পা রাখা থেকেই শুরু হয় তাদের পকেট লুন্ঠন। হত্যা,ধর্ষণ,চুরিডাকাতির শিকার হতভাগা পরিবারগুলোকে বছরের পর আদালতের বারান্দায় বিচারের আবেদন নিয়ে মিছকিনের ন্যায় ঘুরতে হয়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন,কোন মুসলিম যখন শাসনক্ষমতা হাতে পায় তার মূল দায়িত্বটি হলো ন্যায় বিচারকে সুনিশ্চিত করা। হাদীস পাকে বলা হয়েছে, সুশাসন ও সুবিচারের কারণে একজন ঈমানদার শাসক পাবে ৬০ হাজার আবেদের সমগ্র ইবাদতের সমান সওয়াব। সুবিচার ইসলামে কত গুরুত্বপূর্ণ এরপরও কি ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে? অপরদিকে আল্লাহতায়ালার কাছে অতি ঘৃণিত ব্যক্তি হলো জালেম শাসক। জনগণ সরকার থেকে খাদ্য চায় না,চায় ন্যায়বিচার। চাল-ডাল,আলু-পটল জনগণ মাঠে জন্মাতে পারে। কিন্তু ন্যায় বিচারটি আশা করে সরকার থেকে। অতীতে প্রাসাদতুল্য বড় বড় অফিস না গড়েও মুসলমানগণ সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসভ্যতা গড়ে তুলেছেন। মানুষ তখন চোর-ডাকাত, খুনি-সন্ত্রাসী ও ধর্ষণকারি রূপে গড়ে না উঠে চরিত্রবান মানুষ রূপে বেড়ে উঠেছে। রাষ্ট্র তখন অপরাধমুক্ত হয়েছে। পৃথিবী পৃষ্ঠে তখন সুশাসন ও শান্তি নেমে এসেছে। নারীকে তখন ধর্ষিত হতে হয়নি,মানুষকে গুম বা লাশও হতে হয়নি। তখন হাজার হাজার মাইল জনগণ নিরাপদে ভ্রমণ করতে পেরেছে,চলার পথে চোরডাকাতের হাতে পড়তে হয়নি। সিল্করুটের ন্যায় বহুহাজার মাইলের নিরাপদ বাণিজ্য রুট গড়ে উঠেছে পাহাড়-পর্বত, মরুভূমির মধ্য দিয়ে। সভ্যতার গুণাগুণ পরিমাপে এগুলোই তো মূল মাপকাঠি। সেটি সম্ভব হয়েছিল ন্যায় বিচারককে নিশ্চিত করার ফলে। তখন বিচারকের আসনে বসেছেন নবীজী (সাঃ)। বসেছেন হযরত আবুবকর (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)এর মত মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা। অথচ আজ বসছে খায়রুল হকের মত ব্যক্তিগণ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এই ব্যক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন।(সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ,৩০/৫/১১)। অথচ সরকারের ত্রাণ তহবিলের প্রতিটি পয়সা সংগৃহীত হয় হঠাৎ দুর্যোগে পড়া দুস্থ্য মানুষদের সাহায্যের জন্য। অথচ অতি উচ্চ বেতনের চাকুরিজীবী হয়েও জনাব খায়রুল হক দুস্থ্য জনগণের ভাণ্ডারে হাত দিয়েছেন। একাজ তো পকেটমারদের। প্রশ্নহলো এমন পকেটমারদের থেকে কি ন্যায় বিচার আশা করা যায়? সম্ভব হয় কি খুন,চুরিডাকাতি ও ধর্ষনের বিচার?

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন কেন ব্যর্থতার মুখে?
মশামাছি জন্ম নেয় ও বেঁচে থাকে দুষিত আবর্জনাময় পরিবেশে। তাই তাই শুধু মশক নিধন করে মশামাছির উপদ্রব কমানো যায় না। মশার জন্মভূমিতেও হাত দিতে হয়। ভারতে ও বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে ধর্ষণকারিগণ বনেজঙ্গলে বা রাস্তাঘাটে বেড়ে উঠেনি। বেড়ে উঠেছে সমাজে, এবং একটি চেতনাকে ধারণ করে। সেটি সেক্যুলার চেতনা। সে চেতনার মূল কথা জীবনে ভোগের আনন্দ বাড়ানো। ভোগের আনন্দ বাড়াতে যেমন এরা অশ্লিল নাচ দেখে,তেমনি পর্ণ ফিল্ম ও উলঙ্গতাপূর্ণও ছায়াছবি দেখে। সে সম্ভোগ বাড়াতেই তারা নারীদেহে হাত দেয়, তাদের ধর্ষণ করে। ফলে ধর্ষণ নিজেই কোন রোগ নয়,বরং ভয়ানক এক রোগের লক্ষণ মাত্র। সে রোগটি হলো সেক্যুলারিজম –তথা ইহজাগতিক ভোগলিপ্সা। ম্যালেরিয়া রোগ হলে প্রচণ্ড জ্বর উঠবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। প্যারাসিটামলে জ্বর কমলেও ম্যালেরিয়া সারে না।

মগজে ইসলাম শক্ত স্থান পেলে ব্যক্তি যেমন নামায-রোযা, হজ-যাকাতে মনযোগী হয়,তেমনি সেক্যুলরিজম মগজে বাসা বাঁধলে ব্যক্তি নাচের ক্লাব,নাট্যপাড়া, মদের দোকান, সিনেমা হল, পর্ণফিল্ম ও পতিতাপল্লি খুঁজে। গরুছাগল যেমন ঘাস খাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকে, সেক্যুলার মানুষগুলোও তেমনি বেঁচে থাকে জীবনের আনন্দ বাড়াতে। ধর্মকর্ম বা পরকালের বিচার নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। ফলে যৌনক্ষুধা মিটাতে ব্যাভিচার তাদের কাছে অতি প্রিয়, তবে সুযোগ পেলে ধর্ষণের ফুরসতও তারা হাত ছাড়া করেনা। মিস্টার ডমিনিক স্ট্রস কান ইন্টারন্যাশনাল মানেটরি ফ্যান্ড (আই্এম এফ)এর প্রধান ছিলেন।কথা ছিল,ফ্রান্সের বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট সারকোজীর বিরুদ্ধে সোসালিস্ট পার্টির প্রাথী রূপে প্রতিদ্বন্দীতা করবেন। কিন্তু সে আশা তাকে ছাড়তে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিউয়র্কের হোটেল রুমে মহিলা ঝারুদারকে একাকী পেয়ে তার উপর ধর্ষনে তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ জন্য তাঁর আই্এম এফ-এর চাকুরি গেছে,অবশেষে ঝারুদারকে বহু অর্থ দিয়ে আদালতের বাইরে তাকে নিষ্পত্তি করতে হয়েছে। এই হলো ফ্রান্সের এক সেক্যুলারিস্ট গুরুর কাণ্ড। এরাই ফ্রান্সে মুসলিম স্কুল ছাত্রীদের মাথায় রুমাল বাঁধাটি আইন করে নিষিদ্ধ করেছে। অপরদিকে ব্রিটিশ সেক্যুলারিজমের ফ্রাগশিপ প্রতিষ্ঠান হলো বিবিসি। বিবিসির অতি বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন জিমি স্যাবিল। তাকে ব্রিটিশ রানী স্যার উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ২০১১ সালে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু এখান প্রকাশ পাচ্ছে তার প্রচণ্ড নেশা ছিল নাবালিকা ধর্ষণে। তার হাতে ধর্ষিতা হয়েছে অর্ধশতেরও বেশী কিশোরী। তার যৌণ লিপ্সার শিকার হয়েছে এমনকি হাসপাতালের অসুস্থ্য বালিকারাও। তাদের অনেকেই এখন মুখ খুলছেন।পাশ্চাত্য অপরাধ জগতের গভীরে লুকিয়ে থাকা বিশাল হিমশৈলের এ হলো সামান্য টুকরো মাত্র। অথচ এরূপ ধর্ষণকারিরা ইসলামের হিজাবের মধ্যে নারী নির্যাতন দেখতে পায়! ব্যাভিচারকে অবাধ করে দিয়েও পাশ্চাত্যের নারীরা বাঁচছে না। ভারতে যত নারী-ধর্ষণ হয় তার চেয়ে বেশী হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

ধর্ষণ কোন দেশেই ধর্মপ্রাণ মানুষের হাতে ঘটে না। ঘটে ধর্মবিবর্জিত সম্ভোগবাদী সেক্যুলারিস্টদের হাতে। তবে কোন দুর্বৃত্ত যদি ধর্মের লেবাস পড়ে এমন দুষ্কর্ম করে তবে সেটি অন্য কথা। মশামাছি যেমন দুর্গন্ধময় আবর্জনায় বেড়ে উঠে, ধর্ষণকারিরাও তেমনি বেড়ে উঠে সেক্যুলারিজমের জরায়ুতে। ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে সমাজ থেকে সে জরায়ুকেও তাই সরাতে হয়। ভারতের আধুনিক নারীদের ব্যর্থতা তারা স্রেফ রোগের সিম্পটম দমনের দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে মূল রোগটি চিনতে। ব্যর্থ হয়েছে সে রোগের জন্মভূমি চিনতেও। তাই মূল রোগটি থেকেই যাচ্ছে। ফলে ভারতে দিন দিন বৃদ্ধি পাবে যেমন ব্যাভিচার, তেমনি ধর্ষণও। ধর্ষণবিরোধী এ আন্দোলনও যে তাই ব্যর্থ হবে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×