somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংরেজি মাস ও দিনের জন্মকথা

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশে তিনটি বর্ষের প্রচলন রয়েছে। ইংরেজি , বাংলা ও হিজরি

আমরা যে ইংরেজি বর্ষ পালন করি তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের আগে ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেরও আগে রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর ধরত ৩০৪ দিনে। যাকে ১০ মাসে ভাগ করা হয়েছিল। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্ম তখনও হয়নি। মার্চ ছিল বছরের প্রথম মাস। এক সময় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস দেখলেন ৩০৪ দিন হিসাবে বছর করলে প্রকৃতির সঙ্গে মিলছে না। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯৩ অব্দে তিনি বছরের সাথে যোগ করলেন আরও ৬০ দিন। বছরের দিন বৃদ্ধি পেল ঠিকই সঙ্গে সমস্যাও বৃদ্ধি পেল। ঋতুর চেয়ে সময় এগিয়ে আছে তিন মাস। তখনই জুলিয়াস সিজার ঢেলে সাজালেন বছরকে। নতুন দুটি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে এলেন বছরের প্রথম দিকে।



এবার দেখা যাক কিভাবে আসলো এই ইংরেজি মাসের নাম-
✪January (জানুয়ারি) : রোমে ‘জানুস’ নামক এক দেবতা ছিল। রোমবাসী তাকে সূচনার দেবতা বলে মানত। যে কোন কিছু করার আগে তারা এ দেবতার নাম স্মরণ করত। তাই বছরের প্রথম নামটিও তার নামে রাখা হয়েছে।
আরেকটি তথ্য মতে, ‘জানুস’ এর ছিল দুটি মুখ। একটি সামনে, অন্যটি পেছনে। একটি মুখ তাকিয়ে আছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, অন্যটি বিদায়ী অতীত পানে। তাই জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস করা হয়ছে।

✪February (ফেব্রুয়ারি) : যিশুখ্রিষ্টের জন্মের ৪৫০ বছর আগে দ্বিতীয় মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারির প্রচলন ছিল। সে কালে রোমানরা ‘ফেব্রুয়া’ নামে চিত্তশুদ্ধির উৎসব পালন করতো। ‘ফেব্রুয়া’ মানে পবিত্র। রোমানরা তাই এই মাসটিকে পবিত্র মনে করে।
✪March (মার্চ) : রোমান যুদ্ধ-দেবতা ‘মারস’ এর নামানুসারে তারা মার্চ মাসের নামকরণ করেন।

✪April (এপ্রিল) : বসন্তের দ্বার খুলে দেয়াই এপ্রিলের কাজ। তাই কেউ কেউ ধারণা করেন ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ (যার অর্থ খুলে দেয়া) হতে এপ্রিল এসেছে।

✪May(মে) : রোমানদের আলোকে দেবী ‘মেইয়ার’-এর নামানুসারে মাসটির নাম রাখা হয় মে।

✪June (জুন): রোমানদের নারী, চাঁদ ও শিকারের দেবী ছিলেন ‘জুনো’- তার নামেই জুনের সৃষ্টি।

✪July (জুলাই) : জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে জুলাই মাসের নামকরণ। মজার ব্যাপার হচ্ছে বছরের প্রথমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে স্থান দিয়ে তিনি নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে দেন।

✪August (আগষ্ট) : জুলিয়াস সিজারের পর রোমের সম্রাট হন তারই ভাইয়ের ছেলে অগাস্টাস সিজার। তাঁরই নাম অনুসারে এই মাসটির নামকরণ করা হয় 'আগস্ট'।

✪September (সেপ্টেম্বর) : সেপ্টেম্বর শব্দের শাব্দিক অর্থ সপ্তম মাস। কিন্তু সিজার বর্ষ পরিবর্তনের পর তা এসে দাঁড়ায় নবম মাসে। তারপর এটা কেউ পরিবর্তন করেনি।

✪October (অক্টোবর) : ‘অক্টোবরের’ শাব্দিক অর্থ বছরের অষ্টম মাস। সেই অষ্টম মাস আমাদের ক্যালেন্ডারের এখন স্থান পেয়েছে দশম মাসে।

✪November (নভেম্বর) : ‘নভেম’ শব্দের অর্থ নয়। সেই অর্থানুযায়ী তখন নভেম্বর ছিল নবম মাস। জুলিয়াস সিজারের কারণে আজ নভেম্বরের স্থান এগারতে।

✪December (ডিসেম্বর) : ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম’ অর্থ দশম। সিজারের বর্ষ পরিবর্তনের আগে অর্থানুযায়ী এটি ছিল দশম মাস। কিন্তু আজ আমাদের কাছে এ মাসের অবস্থান ক্যালেন্ডারের শেষ প্রান্তে।



* জুলাই ও অগাস্ট-এ মাস দুটোর নাম আগে ছিল ‘কুইন্টিলিস’ আর ‘সিক্সিলিস’। অর্থাৎ পঞ্চম আর ষষ্ঠ। জুলিয়াস সিজার যখন রোমের সম্রাট হলেন, তিনি নিজের নামটিকে বিশেষবভাবে চিহ্নিত করার জন্যই কুইন্টিলিস-এর পরিবর্তে নাম দিলেন নিজের নাম জুলিয়াস। এতেও কিন্তু জুলিয়াস ক্ষান্ত হলেন না; আরো গৌরব বাড়ানোর জন্য ৩০ দিনের এ মাসকে করলেন ৩১ দিনে। কিন্তু বছর তো আর ৩৬৫ দিন থেকে বেড়ে ৩৬৬ দিন হতে পারে না। তাই রোমানপণ্ডিতরা ফেব্রুয়ারি মাসকে ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ২৯ দিন করতে বাধ্য হলেন।



* সিজারের পর রোমের সম্রাট হন তারই ভাইয়ের ছেলে অগাস্টাস সিজার। আবার অপারেশান চালানো হলো ফেব্রুয়ারির উপর। সেই থেকে ফেব্রুয়ারি ২৮ দিনে এসে দাড়ালো। অগাস্টাস সিজার এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, লিপইয়ার বছরে আগস্ট মাসটিকে ৩২ দিনে গোনা। রোমে এ ব্যবস্থা চালু ছিল অনেকদিন।




ইংরেজি সাত দিনের নামের জন্মকথা-

প্রত্যেকটি দিনের নামের অর্থ ভিন্ন রকম। আমাদের সকলের নখদর্পণে সাতদিনের নাম। কিন্তু এই সাতদিনের নামের উৎপত্তিস্থল কোথায়, কিভাবে হলো তা আমাদের সকলের অজানা বা আমরা এই সম্পর্কে অবগত নই। তাহলে চলুন, আমরা নামগুলোর ইতিহাস থেকে ঘুরে আসি।

✬Saturday(শনিবার) : সে অনেক পুরনো কথা। রোমান সাম্রাজ্যের আমলের লোকেরা এই বলে বিশ্বাস করত যে, চাষাবাদের জন্য ‘স্যাটান; নামের একজন দেবতা আছেন। যার হাতে আবহাওয়া ভালো খারাপ করা লেখাটি আছে। তাই তাকে সম্মান করার জন্যই তার নামে একটি গ্রহের সাথে সপ্তাহের একটি দিনের নাম স্যাটনি ডেইজ রাখা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে স্যাটানের দিন। বর্তমানে তা ‘স্যাটারডে’ নামেই পরিচিত।

✬Sunday(রবিবার): অনেকদিন আগের কথা, দক্ষিণ ইউরোপের সাধারণ ‘লোকেরা বিশ্বাস করত এবং ভাবত যে একজন দেবতা রয়েছেন যিনি শুধুমাত্র আকাশে গোলাকার আলোর বল অংকন করেন। ল্যাটিন ভাষায় যাকে বলা হয় ‘সলিছ’- এর থেকেই সলিছ ডে অর্থাৎ সূর্যের দিন। উত্তর ইউরোপের লোকেরা এই দেবতাকে ডাকত ‘স্যানেল ডেইজ’ নামে। যা পরবর্তীতে বর্তমান সান ডে-তে রূপান্তরিত হয়।

✬Monday(সোমবার): এই নামের সাথেও দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা জড়িত। রাতের বেলায় আকাশের গায়ে রূপালী বল দেখে তারা ডাকত ‘লুনা’ নামে। ল্যাটিন শব্দ লুনা ডেইস। উত্তর ইউরোপের লোকেরা ডাকত মোনান ডেইজ। এ মানডে কিন্তু মোনান ডেজ থেকে রূপান্তর হয়।

✬Tuesday(মঙ্গলবার): আগেকার রোমান রাজ্যের লোকেরা বিশ্বাস করত যে, টিউ নামক একজন দেবতা আছেন যিনি যুদ্ধ দেখাশুনা করেন। তারা ভাবত যারা টিউকে আশা করত টিউ তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করত যুদ্ধের ময়দানে এবং যারা পরলোক গমন করেছে তাদেরকে টিউ পাহাড় থেকে নেমে একদল মহিলা কর্মী নিয়ে বিশ্রামের জায়গা ঠিক করত। তারা একে ডাকত ‘ডুইস’ নামে। যার ইংরেজি অর্থ টুইস ডে।

✬Wednesday(বুধবার): দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ‘উডেন’ বলে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা ভাবত। তিনি সারা দিন ঘুরে জ্ঞান লাভ করতেন যার জন্য তার একটি চোখ হারাতে হয়েছিল। এই হারানো চোখকে তিনি সবসময় লম্বাটুপি দিয়ে আবৃত করে রাখতেন। দুটো পাখি উডেনের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করত, তারা উডেনের কাঁধে বসে থাকত। রাতে তারা সারা পৃথিবীর ঘটনাবলি উডেনকে শুনাত। এভাবেই উডেন সারা পৃথিবীর খবর শুনতে সক্ষম হন। এজন্য লোকেরা নাম রাখল ওয়েডনেস ডেইস। যা বর্তমান ওয়েডনেস ডে নামে পরিচিত।

✬Thursday(বৃহস্পতিবার): বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর সম্পর্ক না জানার ফলে মানুষ মনে করত যে, বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকানোর জন্য একজন দেবতা দায়ী। তারা শুধু আলো জ্বলতে ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখত। তারা দেবতার নাম রাখে থর। তাদের মধ্যে এই অন্ধ বিশ্বাস ছিল যে, দেবতা থর যখন রাগান্বিত হন তখন তিনি রাগে আকাশে একটা হাতুড়ি নিক্ষেপ করেন দুটি ছাগলের গাড়িতে বসে। ছাগলের গাড়ি চাকার শব্দ হচ্ছে বজ্রপাত ও হাতুড়ির আঘাত হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানো। থরের প্রতি সম্মান রক্ষার্থে তারা সপ্তাহের একটি দিনের নাম রাখেন থার্স ডেইস। যাকে আজ আমরা থার্স ডে বা বৃহস্পতিবার বলে ডাকি।

✬Friday(শুক্রবার): ওডিন একজন শক্তিশালী দেবতা। তার স্ত্রী দেবী ফ্রিগ ছিলেন ভদ্র এবং সুন্দরী। ওডিনের পাশে সব সময় তার স্ত্রী থাকতেন। পৃথিবীকে দেখতেন, প্রকৃতিকে উপভোগ করতেন, প্রকৃতির দেবী ভালোবাসা ও বিবাহের দেবীও ছিলেন ফ্রিগ। এই জন্য লোকেরা বাকি একটি দিনের নাম ‘ফ্রিগ ডেইজ’ বা ফ্রাইডে রাখেন।


*পুরোনো ডায়েরিতে তথ্যগুলো খুজে পেলাম। আর কিছুটা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।




█ ▌ আবার 2+0+1+4=7 অর্থাৎ ‘লাকি সেভেন’ । বিগত বছর 2013 তে ‘আনলাকি থার্টিন’ এর জন্য অনেকের হয়তো সময়টা খারাপ গেছে। কিন্তু নতুন ‘লাকি সেভেন 2014’ অবশ্যই সেই অপূর্ণতা পূরণ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করি।
আবারো সবাইকে জানাই- Happy New Year 2014


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×