মা কথাটি মূখ দিয়ে উচ্চারন করলেই মনের ভেতরে কেমন যেন একটা প্রশান্তি বয়ে যায়।যখন বাড়িতে থাকতাম তখন কারনে অকারনে শুধু সারাদিন মা-মা করতাম।মা খিদে লেগেছে ভাত দাও,মা আমার সাদা শার্টটা কই,মা প্যান্ট খুজে পাচ্ছি না,মা আজ সন্ধ্যায় পিঠা বানাবে তো?মা পা ব্যাথা করছে,মা আজ কি রান্না করেছ?মা কাল কিন্তু আমি স্কুলে যাব না,মা আমার কাপড় গুলো গোছলের সময় ধুয়ে দিও,মা পড়তে ইচ্ছে করছে না আরও কত যে কথা কারনে অকারনে বলেছি।কিন্তু কোনদিন মাকে বিরক্ত হতে দেখিনি।মায়েরা বুঝি কখনও সন্তানের প্রতি বিরক্ত হয়না?
আজ নাকি বিশ্ব মা দিবস!মাকে নিয়ে প্রতিটি মানুষের কত কি লেখার আছে।সবাই হয়তো মনের কথা সে ভাবে বলতে পারেন না।কিন্তু মনে মনে ঠিকই মাকে নিয়ে অনেক কথায় ভেবে যান প্রতিটি ক্ষন।
আজ বিশ্ব মা দিবসে আমি আমার মাকে নিয়ে লিখতে বসিনি!মা ছাড়াও সবার জীবনেই কম বেশি মায়ের মত কেউ না কেউ থাকেন,সে ফুফু-খালা-চাচী কিম্বা বোন।
আমার জীবনেও এমন দুজন মানুষ আছেন যারা আমার কাছে মায়ের মতই।তাদের কাছ থেকে আমি মায়ের মতই স্নেহ -মমতা আর ভালবাসা পেয়েছি নিঃস্বার্থ ভাবে।এই দুজনের মধ্যে একজন আমার একমাত্র বোন।আমার বোন আমার চেয়ে বার বছরের বড়।আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই আমার সার্বক্ষনিক সেবা যত্ন করতে যাকে দেখেছি তিনি আমার বোন।একজন মা যেমন তার ছোট সন্তানকে কোলে পিঠে মানুষ করেন আমার বোনটিও আমাকে ঠিক সেভাবেই মানুষ করেছেন।
আমার কিছু লাগলে কখনও মায়ের কাছে বলতাম না সব সময় আপুর কাছে বলতাম।আপু আমার এটা লাগবে, আপু আমার ওটা লাগবে।আমি কখন স্কুলে যাব,কখন খাওয়া দাওয়া করব,কখন গোছল করব সব কিছু আপু দেখত।ছোট বেলায় আমি মায়ের সাথে কোথাও বেড়াতে গেছি এমন স্মৃতি খুবই কম।কোথাও বেড়াতে গেলেই আপুর সাথে যেতাম।
আমরা আগে চট্টগ্রামে থাকতাম।আমার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন চট্টগ্রাম থেকে যশোরে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি।আব্বা তখনও চট্টগ্রামেই থাকতেন।বাড়িতে আসার পর দুবার চট্টগ্রামে গিয়েছি বেড়াতে শুধু আপুর সাথে।একবার তো মাকে ছাড়া আপুর সাথে চট্টগ্রামে তিন মাস ছিলাম!আপু সাথে থাকলে আমি কখনই মাকে খুঁজতাম না।ছোট বেলায় আপুকে ছাড়া কিছু বুঝতামই না।
আপু সব সময় আমার পড়ালেখার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস ছিলেন।পড়ায় ফাঁকিবাজির জন্য তাই আপুর কাছে মারও খেয়েছি কম বেশি।আপু কলপাড়ে নিয়ে আমার সারা শরীর সাবান দিয়ে ঘষে দিতেন।চোঁখে সাবানের ফেনা গিয়ে চোঁখ জ্বালা করত তখন আমি ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতাম।
আপু বলতেন,চুপ কর সারা গায়ে দশ পর্দা ময়লা আর উনি গা ঘষতে দিবেন না।
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন আপুর বিয়ে হয়ে যায়।সে সময়ের অনুভুতি হয়তো লিখে বোঝানো আমার দ্বারা সম্ভাব নয়।আপু নির্ভরশীল একজন ছোট ভাই আপু ছাড়া যে কত অসহায় হয়ে পড়ে তা শুধু তারাই বুঝবেন যারা তার নিজ বড় বোনের সহচার্যে বড় হয়েছেন।
আমার কাছে মাঝে মাঝে মায়ের চেয়ে আপুকেই যেন অনেক বেশি কিছু মনে হয়।যে আপুকে ছাড়া আমার একদিনও চলত না সেই আপুর সাথে এখন বছরে দু একবার দেখা হয়!আপুর প্রতি ভালবাসা-শ্রদ্ধা আজও এতটুকু কমেনি।আপু আমার কাছে মায়ের মতই।
আমার জীবেন আরেকজন আছেন যিনি আমার কাছে মায়ের মতই।তিনি আমাকে নিজ সন্তানের মতই ভালবাসেন।তিনার সাথে আমার প্রায় এগারো বছরের সম্পর্ক।এই অতি মমতাময়ী মা হলেন আমার আমার বন্ধুর মা।
আমার ভাল মন্দের খোজ তিনি সব সময় রাখেন।আমি বাড়িতে গেলে আমার জন্য কবুতরে মাংস রান্ন করে প্রতিবারই খাওয়াতে ভুল করেন না ( উনি জানেন আমি কবুতরের মাংস পছন্দ করি)।আমার সব ব্যাপারেই খোঁজ-খবর রাখেন এবং পরামর্শ দেন।তিনাকে নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে তাই অন্য কোন দিন তিনাকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে রইল।
আমার আপু আর বন্ধুর মা আমার কাছে যেন ঠিক মায়ের মতই!বিশ্ব মা দিবসে তাদের দুজনের প্রতি আমার অকৃত্তিম ভালবাসা-ও শ্রদ্ধা রইল
আপনাদের জীবনেও নিশ্চয় কেউ কেউ আছেন-ফুফু-খালা-কিম্বা বোন? তারা যেন ঠিক মায়ের মতই!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৩