somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ আমাদের এক বন্ধু পাহাড় বিক্রি করতো

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
কিছু কিছু খবর- গরম চায়ে প্রথম চুমুকের মতো, একটু সাবধানী হতে হয়।

দুই
আমাদের এক বন্ধু পাহাড় বিক্রি করতো। পাহাড় বিক্রির খবরটা একটু অদ্ভুত শোনায় বলেই কিনা জানিনা, তাহের খবরটা প্রথম যেদিন দিলো, তাকে আমরা মিথ্যুক ভাবলাম। দোকানীরা গুল মারবে- জানা কথা। আবার কেন যেন মনে হলো, কথাটা সত্যিও হতে পারে। তবে খবরটাকে সেদিনের মতো অসত্য ভেবেই আমরা তিনশ গ্যালন চা গিলে, পেটে অম্বল নিয়ে আরিফের বাড়ীতে ঢুকেছিলাম এবং এর পরের দিনও একে অসত্য ভেবেছিলাম, তারপর ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। তবে দিনকয়েক যেতেই বুঝলাম, আমাদের বুক ফুলে উঠছে একথা ভেবে যে, আমাদের বন্ধু নজরুল পাহাড় ব্যবসায়ী। আদার ব্যবসা, কিংবা জাহাজের কারবার করার চেয়ে পাহাড় বেচা-কেনার ব্যাপারটি আলাদা এবং কাজটি যে সে পারেনা, নজরুল পারে। সে সময়- ঘুমাতে গেলে, রাস্তায় জ্যামে আটকালে, ইডেন কলেজ কী রোকেয়া হলের সামনে জোড়-বেজোড়, জোড়-বেজোড় গুনতে গুনতে নজরুলের কথা মনে হতো। এক সময় আমরা বুঝতে পারলাম, পাহাড় বিক্রি না করাটা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তখন থেকে আমরা রাস্তায়, শোবার ঘরে, দোকানের শো-রুমে, কলতলায়, এমন কি স্বপ্নেও পাহাড় দেখতাম। দেখতাম, মাউণ্ট এভারেষ্ট কেনার জন্য লাইন ধরে খদ্দেররা দাঁড়িয়ে আছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এইমাত্র ডেলিভারীতে গেল, তাজিনডং আর ফরেস্ট হীল বেচার চালানপত্র তৈরী হয়ে গেছে- খুব ভালো লাগতো; আর ঘুম থেকে উঠলে- সকাল বেলায় নিজেদের তুচ্ছ মনে হতো, খাঁচার ভিতর অচিন পাখি গানটা শুনে মাঝে মাঝে যেমন লাগে, তেমন বৈরাগ্য হতো। পাহাড়ের আশেপাশে চিন্তাশীল মুষিক হয়ে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না।

সে সময় তাহেরের দোকানে আড্ডা শেষ করে আরিফদের বাড়ীতে যখন আসতাম, ঘড়িরকাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই করতো। মাঝরাতে অন্যের বাড়ীতে কড়া নাড়ার মতো অসভ্যতায় তখনো আমরা অভ্যস্ত ছিলাম না। আরিফ আমাদের দেখে বিরক্ত হতো, আবার হয়তো অপেক্ষাও করতো। ও থাকতো আকাশের কাছাকাছি, খুব সম্ভবতঃ দোতলা কোনো বাড়ীতে। এ বাড়িতে ঢুকলেই টের পেতাম, বড় বেশী স্যাণ্ডেল ঘষটে হাটার অভ্যাস আমাদের! খুব সাবধানে পা ফেলতাম, সিঁড়ির গায়ে কম কষ্ট দিয়ে দোতলায় উঠতাম, দোতলা থেকে তিন তলায়, তিন তলা থেকে আকাশের কাছাকাছি; অথবা তিন তলাতেই হয়তো উঠতে হতোনা আমাদের, দোতলায় থামতাম; তেতলা কিংবা আকাশ থেকে খুব বেশী দূরে নয়।

আমরা তালা ঝুলানোর কয়রায় হাত রাখার আগেই আরিফ দরোজা খুলে দিত, কপালে ভাঁজ ফেলতো, তারপর ফিসফিস করে বলতো, 'কী খবর?' আরিফের কথা শুনে আমরা তার গেঞ্জি ঠেলে উপচে পড়া ভুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতাম, নাভীর কাছে উঁচু হয়ে থাকা নীল লুঙ্গির গেঁড়ো দেখতাম, তারপর বলতাম, 'বাড়ীর সবাই ঘুমায়া পড়ছে?' আরিফ মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে এ কথার উত্তর দিত; আবার কখনো কখনো ওর মাথা নাড়ার আগেই বাথরুমের পাশের ঘর থেকে কে যেন জিজ্ঞেস করতো, 'এত রাত্রে কে আরিফ?' আরিফ তাড়াতাড়ি প্রশ্নকর্তার ঘরে ঢুকত, আর আমরা হাফপ্লেটে ঢাকা তরকারীর বাটি সামনে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসতাম, যেখানে মেলামাইনের গামলায় জালি দিয়ে ঢাকা ভাত থাকতো, মাছি থাকতো; জালির নীচে আটক নীল মাছিগুলোকে আমরা বেকশুর খালাস দিতাম।

'ও আরিফ, ঘরের মধ্যে সিগারেট খায় কে?'- ফ্যানের শব্দ, আধখোলা মেহগনীর দরজা, আর দরজায় ঝুলানো পর্দা ঠেলে বাথরুমের পাশের ঘর থেকে কার যেন গলা শোনা যেত; এইসব গলায় আহ্লাদ আর সর্দির সংশ্লেষণ থাকে। আরিফ কোমরগামী লুঙ্গির গিট পেট বরাবর টানতে টানতে ডাইনিং রুমে ঢুকতো, আমরা গ্লাসের পানিতে অর্ধেক সিগারেটের সলিল সমাধি দিতাম, সিগারেটের ফিল্টারের মরণ-বাঁচন সাঁতার দেখতে দেখতে বলতাম, 'তাইলে চইলা যাব?' আরিফ মাথা চুলকাতো, চুল ঠিক করতো, ঠিক করা চুল আবার চুলকাতো, তারপর বলতো, 'ওর শরীরটা ভালো না।' শরীর ভালো না- সংবাদটাতে আমাদের আমোদ লাগতো, তারপর সিদ্দীকা খালাম্মার মতো জিজ্ঞাসা করতাম, 'কয় মাস?' আরিফ লজ্জা পাওয়া গলায় বলতো, 'তোরা যা ভাবতেছোস, সেই রকম কিছুনা।' আমরা মাথা নাড়তাম, অল্প শব্দে হাসতাম।

তারপর আরিফ আধখোলা মেহগনীর দরজা ঠেলে বাথরুমের পাশের ঘরে ঢুকতো। আমরা অপেক্ষা করতাম। 'এতো রাতে কী করো?', দরজায় ঝুলানো পর্দার ওপাশ থেকে আহ্লাদী স্বরে কে যেন জানতে চাইতো; উত্তর শোনার জন্য আমরা কান খাড়া রাখতাম। একসময় দরজায় ঝুলানো পর্দা নড়তো, আরিফ ডাইনিং রুমে ঢুকতো, আমরা হলদে ডিস্টেম্পার করা দেয়ালে টিকটিকি বালিকাদের ছলা-কলা দেখতাম। আরিফ ডাইনিং টেবিলের তরকারীর বাটির পাশে কিছু টাকা রাখতো, বলতো, 'দশ হাজার আছে।' আমরা টাকাটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলতাম, 'মাত্র দশ?'
- 'বাকিটা কাজের পরে।'
- 'নগর ভবনের টাকাটা এখনো পাই নাই।'
- 'টেণ্ডারটা নিয়া ঝামেলা হইছে। দুই মিনিষ্ট্রিতে ক্যাচাল লাগছে।'
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ক্যাচালে আমরা ভীষণ বিরক্ত হতাম, বলতাম, 'আমরা এইবার কোন মিনিষ্ট্রির?'

বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পড়াশুনা করেও আমরা আরিফকে অর্থহীন প্রশ্ন করতাম। আমাদের আমলা বন্ধুটি এসব প্রশ্ন শুনলেই লুঙ্গির গিট ঠিক করতো। তাকে ফাঁপর থেকে বাঁচাতেই বাথরুমের পাশের ঘর থেকে আবার প্রশ্ন আসতো, 'ও আরিফ, এতো রাতে তোমরা কী করো?' আরিফের কপালে ভাঁজ পড়তো, বলতো, 'তোরা আজ যা।'

আমরা আকাশের কাছ থেকে তিন তলায়, তিনতলা থেকে দোতলায় এবং দোতলা থেকে একতলা হয়ে পথে নামতাম। অথবা তিন তলাতেই হয়তো উঠতে হতোনা আমাদের, দোতলা থেকেই পথে নামতাম; দোতলা আকাশ থেকে খুব বেশী দূরে নয়।

এসময় আমরা রাস্তায় নেমে হোমিওপ্যাথির শিশিতে সোডিয়ামের আলো ভরতাম, সাগুদানায় গোটাদশেক খসা তারার ভেজাল মেশাতাম, আর কুয়াশা থাকলে, জীবনানন্দ দাশকে ট্রামের তলা থেকে টেনে তুলে বসিয়ে দিতাম ট্রাফিক কন্ট্রোলে। বুড়ী চাঁদ- মগবাজারের রূপালী অশ্ব হয়ে ছুটে আসতো প্রেসক্লাবের সামনে; আমরা তার পিঠে চড়ে টাকায় চার মণ চাল বিক্রি করতাম। এসব দেখে ঈশা খাঁ বড় খুশি হতেন; তারপর পানের বোটায় হাকিমপুরি হাসি মাখিয়ে হোসনী দালানের পথ ধরতেন শম্ভু কাওয়ালের সাথে মন্দিরা বাজাবেন বলে।

এসব দিনে কুকুরের মতো একটা রিক্সা আমাদের পায়ে পায়ে হাঁটতো, গন্ধ শুকতো, হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে ষোল সেকেণ্ড অলস দাঁড়িয়ে থাকতো, টুংটুং বেল বাজিয়ে উকিল-মোক্তারদের রোল কল করতো, একটু পরে আবার দৌড়াতো, শিশু একাডেমীর রেইন-ট্রি গাছের গোড়ায় খুঁজে পাওয়া সঙ্গিনীকে নিয়ে নীল পলিথিনের নীচে ঠিক সাড়ে তিন মিনিটের সংসার পাততো, তিন নেতা মাজারের চৌকি ভুলে ফ্লাস্কে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো খালি রিক্সার পায়ের কাছে। এ দৃশ্যে উৎসাহিত হয়ে প্রলেতারিয়েতের ভালোবাসা পাঠ করতাম; বড় তৃপ্তি হতো আমাদের। আমাদের তৎসম শব্দে সমাজতন্ত্র পোয়াতি হয়ে ওঠার আগেই জন্ম নিত দু’শ চল্লিশ জন লেনিন। আমরা রাস্তা জুড়ে গোল্লাছুট খেলতাম; আর শিশু কমরেডরা উবু-দশ-কুড়ি গুনতে গুনতে নিমের মাজনের মতো মিশে যেত দাঁতাল শহরে, বড় আফসোস হত আমাদের। তারপর নূর হোসেনের মতো খুন হওয়া অলৌকিক পক্ষীর শোকে আমরা চুয়ান্ন ধারা ভেঙ্গে দোয়েল চত্বরে ঢুকে প্রশ্রাব করতাম; আরিফকে ভুলে যেতাম এসময়।

'তোরা এইখানে!' আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো বিনয়ী যন্ত্রযান কদম্বুচি করতে হাজির হয়েছে, গোলাপ শাহের মতো আমরা পা বাড়িয়ে দেই দর্শনার্থীর সুবিধার্থে, পরে দেখি আমাদের বন্ধু আরিফ গাড়ী থেকে নামছে, তার ল্যাণ্ড ক্রুজারকে তমিজ দেখাতে আমরা পা গুটাই এবং একটু পরে গুটানো পায়ের ঝি-ঝি ঝাড়তে উঠে দাঁড়াই, বলি, 'তোর বউ না অসুস্থ?' আমাদের কথা শুনে আরিফ চেহারায় ভ্যাবাচ্যাকা ভাব করে, খুচরা অপরাধে ধরা পড়লে সবাই যেমন করে আরকি! সে কপালে ভাঁজ ফেলে, বোকা বোকা হাসি দেয়, তারপর এটা কোনো ব্যাপার না- এমন স্বরে বলে, 'দুই মিনিট থাইকা-ই চইলা যাবো।'
- 'লোকজন দেখলে সমস্যা নাই তো?'
- 'কী সমস্যা?'
- 'একজন নব্য আমলা রাস্তায় ঘুরতেছে দেইখা জাতির বিবেক জাগ্রত হইলে?'
- 'জাতির বিবেক এতো ঘন ঘন খাড়া হয়া উঠলে তো মুশকিল!', আরিফ জটিল হাসি দেয়, আমরা রাজকর্মচারীর অনুগ্রহ পাওয়া বন্ধুর দলও হাসি। সোডিয়ামের আলোতে আমাদের হাসি এ ল্যাম্পপোষ্ট, ও ল্যাম্পপোষ্ট করে। আরিফ ভুরু কুচকে ফুটপাতে বসে, দুই ভুরু প্রায় এক করে ফেলার বিরল কৃতিত্ব দেখায়, আমরা মনে মনে বাহবা দেই, জাতির বিবেক জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষা করি। আরিফ জিজ্ঞাসা করে, 'নজরুলের কোনো খোঁজ পাইলি?'
- 'বরিশালে আছে।'
- 'ঐখানে কি করে?'
- 'মনে হয় জলদস্যু হইতে গেছে; সে ভাস্কো দা গামার আত্মীয় কিনা!'
- 'মশকরা থামা। তোদের নিয়া পত্রিকায় রিপোর্ট হইছে।'

আমাদের ধারনা ছিল কোনো একদিন বিখ্যাত হয়ে যাব; তবুও আরিফের কথা শুনে আমরা অবাক হই। ভাবতাম একদিন ঘুম থেকে উঠেই দেখবো আমরা বিখ্যাত হয়ে গেছি। আমাদের সাথে সাথে তোষকের নীচে লুকিয়া রাখা নীল পলিথিন ব্যাগ এবং ভিজিটিং কার্ডের উল্টো দিকে নাম ভুলে যাওয়া কারো ফোন নম্বর- সবাই বিখ্যাত হয়ে যাবে কোনো এক সকালে। তবে ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে আশা করিনি। আমরা সলজ্জ হাসি এবং বিধি মোতাবেক মাথা চুলকাই, জিজ্ঞাসা করি, 'কী লিখছে পত্রিকায়?' 'কী আর! কতিপয় বিপথগামী শিক্ষিত যুবক ঢাকার পরিবেশ নষ্ট করছে- এইসব হাবিজাবি! সমস্যা নাই, আমি থানায় বইলা রাখছি।'

আরিফের উত্তরে আমরা বিচলিত হই এবং আশ্বাসে বিগলিত। আমাদের বিখ্যাত এবং নিরাপদ রাখার আমানত নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কসরত হচ্ছে, ভাবতেই শিহরণ জাগে এবং তা প্রকাশে আমরা জিভ বের করি এবং বলি, 'নজরুলের কী করবি?' 'তোরা তাইলে একবার বরিশালে যা, দ্যাখ নজরুলরে পাস কিনা!' আরিফ আমাদের বুড়িগঙ্গায় ভাসার সমন দিয়ে ল্যাণ্ডক্রুজারে ওঠে। আমরা দোয়েল চত্বরের পাখি দু’টোকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা থেকে মুক্তি দেই; শাহবাগে আসি এবং পাহাড় ব্যবসায়ী, আর জাতির বিবেকের চৌম্বক শক্তিতে আটকা পড়ি।

তিন
বরিশাল থেকে ফিরেই তাহেরের দোকানে গরম চায়ে চুমুক দিতেই সংবাদ পাই আমরা আরো বিখ্যাত হয়ে গেছি। পত্রিকায় নাকি ছবিও ছাপা হয়েছে। তাহের খবর দেয়, আর কলা ঝুলানো সুতালির মাছি তাড়ায়। নীল নীল ডুমো মাছি ওড়ে, গরম চায়ে আমাদের জিভ পুড়ে। ফোস্কা পড়া গালে পল রবসনের ওল্ড ম্যান রিভার গাইতে গাইতে তাহেরের সাথে আমরাও মাছি তাড়াই; ভুপেন হাজারিকার পিঠে দু'টো মাছি ঝুলে থাকে, তাহের যেমন আমাদের পিঠে ঝুলে থাকে, আমরা যেমন আরিফের পিঠে ঝুলে আছি- সেই রকম। 'আপনেগো খোঁজে কাইল এইখানে পুলিশ আইছিল', তাহের জানায়। আমরা হাসি; হাসতে হাসতে কুটি-পাটি হই, তাহের তাকিয়ে থাকে।

'আরিফ ভায়ের বউ মাডার হইছে', তাহেরের গলায় চক্রান্ত, চোখে নিখুঁত শয়তানী। আমরা খবরটা শুনি; তাহেরের দিকে তাকাই। তাহেরও আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। 'শালা', আমরা থু থু ফেলতে ফেলতে নীল ডুমো মাছিকে গালি দেই; আরো এক গ্যালন চা খাই। তারপর যখন মনে পড়ে- বাথরুমের পাশের ঘর থেকে শ্লেষ্মা জড়ানো স্বরটি আর শোনা যাবেনা, তখন একটু অবাক লাগে; তারপর টুপ করে সব ভুলে যাই এবং নজরুল আমাদের মাথায় ভর করে, যে পাহাড় বেচে এবং যার কাছে একজন আমলাও নীল ডুমো মাছি! নোয়াখালি, নেত্রকোণা, সদর রোড নাকি আলেকান্দা- কোথায় কারবার তোমার! নাকি কারওয়ান বাজার আড়তে তোমার নিবাস!

কারওয়ান বাজারে কথা মনে হতেই মিন্তিদের কুচকাওয়াজ শুরু হয়। লেফট-রাইট, লেফট-রাইট করতে করতে এলিফেণ্ট রোডের মিন্তিরা আমাদের স্যালুট জানায়; আমরাও তিন বাহিনী প্রধানের মতো সীনা টান রাখি। আমাদের সটান সীনায় আরিফ নেমে আসে, বলে, 'নজরুলের খোঁজ পাইলি?' নজরুলের কথা মনে হতেই শাহবাগ ওভার ব্রিজের আগা-পাশ-তলায় মাইক্রোস্কোপ বসাই, বারডেমের প্রতি স্কোয়ার ইঞ্চি ওলোট-পালোট করি, টুকরির খোলে ঘুমিয়ে থাকা মিন্তিদের সার করে দাঁড় করাই। কোথায় পালাবিরে নজরুল! চিম্বুক পাহাড়ে? লাভ নেই। আরিফের ল্যাণ্ড ক্রুজার চান্দের গাড়িতে ভরে ঠিকই পৌঁছে যাবে মেঘের কাছাকাছি, সাথে আমরাও।

চাঁদ, পাহাড়, বকুল তলা, তাহেরের দোকান, চায়ের কাপ, তিন বাহিনী প্রধান সব শেষ করে আমরা হাজির হই ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কির গলিতে, আকাশের কাছাকাছি, আরিফের বাড়ীতে। সিঁড়িকে কম ব্যথা দেই, পা না ঘষটে সাবধানে হাঁটি, দরজার কড়ায় হাত রাখি, নাভী বরাবর গিট দেয়া লুঙ্গি পরে আরিফ দরজা খুলে দেয়, ফিসফিস করে বলে, 'কী খবর?' আমরা অপেক্ষা করি। ওপাশ থেকে আজ কেউ বলে না, 'এত রাত্রে কে আরিফ?' আমি নিশ্চত হই- তাহের মিথ্যে বলেনি। পিথাগোরাসকে সত্য প্রমান করে আমরা বুঝি- বড় ক্লান্তিকর এই বেঁচে থাকা। কেনরে এতো ক্লান্তি! নিরন্তর ক্লান্তি নিয়ে মুষিক কতদিন বাঁচেরে নজরুল? তোর পর্বতও বুঝি মুষিক প্রসবিনী!

আমাদের বন্ধু আরিফ, যে আকাশের কাছাকাছি দোতলা, না-কি তিনতলা বাড়ী থেকে নেমে- কখনো কখনো তশরিফ আনতো ফেলে আসা পথে, তাকে মুক্তি দিলাম। ছয় ইঞ্চি ছোরাটা কেমন মোমের মতো বসে গেল এফোঁড় ওফোঁড়।

চার
আমাদের এক বন্ধু পাহাড় বিক্রি করতো, ইদানিং কথাটি খুব মনে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৮
৯৪টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×