somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাইম মেশিনে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়টিতে চলে যেতে পারতাম তবে যে বিষয়টিতে ভর্তি হতাম তা হলো Water Resource Management/Engineering

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শিল্পী তপন চৌধুরির জনপ্রিয় গান "পৃথিবীর ৩ ভাগ জল, ১ ভাগ স্থল আর আমার হৃদয়ে আছো শুধু তুমি" এর কথা মনে আছে? না, আমরা আপাতত, হৃদয় ঘটিত ব্যপার নিয়ে আলোচনা করবো না করবো বাংলাদেশের জল বা পানি সম্পদ গবেষনা ও পানি সম্পদ ব্যবস্হাপনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

কয়েক দিন পূর্বে আব্বার সাথে কথা হলো। আব্বা জানালো বাড়ির ৫০০ লিটারের যে পানির ট্যাঙ্কই পূর্বে ১০ মিনিটে পূর্ণ হতো সেই একই ট্যাঙ্কই পূর্ণ হতে সময় লাগছে ৩০ মিনিট। গ্রামের অধিকাংশ সেচ কুপে পানি উঠছে না। আবার নতুন করে নলকূপ বসাতে হবে। আমার বাড়িটি সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য ক্রমে নীলফামারী জেলায় অবস্থিত। বাড়ীর পূর্ব দিক দিয়ে তিস্তা নদী ও পশ্চিম দিক দিয়ে আত্রাই নদী প্রবাহিত যার দুটোরই উৎপত্তি ভারত থেকে। একটি নীলফামারী জেলা দিয়ে, অন্যটি পঞ্চগড় জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।



উপরের ছবিতে দেখুন, দুর্ভাগ্য ক্রমে দুটি নদীর (গোলাকার বৃত্ত চিহ্নিত) বাংলাদেশে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ভারত সরকার অন্তর্জাতিক নদী আইন ভঙ্গ করে বাধ দিয়ে এক তরফা পানি প্রত্যাহার করে পশ্চিম বঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য।



ছবি : ১

পৃথিবীর ৪ ভাগের ৩ ভাগ জল হলেও মিঠা পানির পরিমাণ কত ভাগ জানেন কি?

পৃথিবীর শতকরা ৯৭ দশমিক ৫ ভাগ (সগর, মহাসাগর ও লবণাক্ত পানির লেক) হলো লবণাক্ত পানি আর ২ দশমিক ৫ ভাগ হলো মিঠা পানি। মিঠা পানির শতকরা ৩০ ভাগ হলো ভূ-গর্ভস্থ পানি (মাটির নিচে), আর ৭০ ভাগ হচ্ছে ভূ-উপরিভাগস্হ্য যেমন: নদী, মিঠা পানির লেক, গ্লেসিয়ার, গ্রিনল্যান্ডের বরফ ও এন্টার্কটিকার বরফের স্তরে সন্বিচিত।

বর্তমানে বাংলাদেশে খাবার পানির ৯৭% ও চাষাবাদের ৮০% আসে ভু-গর্ভস্থ উৎস থেকে। পৃথিবীর মোট ব্যবহৃত ভু-গর্ভস্থ পানির শতকরা ৩৫ ভাগ ব্যবহার করে থাকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল মানুষেরা। বাংলাদেশ গত ২০ বছরে খদ্য উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে তার অন্যতম করণ হলো শুকনো মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি-মে) অ-গভীর ও গভীর নলকূপের দ্বারা সেচের মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদন।



ছবি ২: বাংলাদেশের যে জেলা গুলোতে বোরো ধান চাষ করা হয় (সবুজ রঙ)

উপরের ২ নম্বর ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের কোন এলাকায় কেমন পরিমাণ বোরো ধান চাষ হয়। অপরিকল্পিত ভাবে ব্যাপক ভু-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে বোরো ধান চাষ করার ফলে আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি যেটা আমাদের জন্য সু-সংবাদ কিন্তু দুঃসংবাদ হলো আমরা ক্ষতি করেছি আমাদের ভু-গর্ভস্থ পানির পরিমাণের। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যে পরিমাণ পানি মাটির নিচে জমা হয় তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পানি আমরা মাটির নিচ থেকে তুলে থাকি কৃষি কাজের জন্য। আমরা এটাকে তুলনা করতে পারি ব্যাংকে টাকা উঠানো সাথে। মনে করুন আপনার বাবা মৃত্যুর পূর্বে আপনাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে গেছে। আপনি নিজের চাকুরী থেকে প্রতিমাসে বেতন পান ২০ হাজার টাকা। বাবার দেওয়া ৫ লাখ টাকা থেকে মাসিক ইন্টারেস্ট পান ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ মোট মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। এখন আপনি যদি প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে থাকেন (বাৎসরিক খরচ বৃদ্ধি ২০% কিন্তু বেতন বৃদ্ধি ১০%) তবে আগামী কত বছর সচ্ছল ভাবে জীবন-যাপন করতে পারবেন?



ছবি : ৩ : ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের পরিবর্তন (যত বেশি বাদামি ও লাল তত বেশি ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের নীচে নেমে যাওয়া)

পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যের University College London এর কর্মরত বাংলাদেশি পানিসম্পদ গবেষক মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা তার গবেষণায় [সূত্র: ৬] দেখিয়েছেন গত দুই দশকে [১৯৮৫-২০০৭] বাংলাদেশের ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের অবনতি সম্পূর্ণ রূপে কৃষিকাজ ও শহরের ব্যবহারের (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ইত্যাদি) সাথে সম্পর্ক যুক্ত।

গত ২০ বছর ধরে আমরা ক্রমাগত খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি ভু-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। উপরের ২ নম্বর ছবিতে দেখতে পাচ্ছি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের অবনতির চিত্র। দুঃসংবাদ হলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই ক্রমাগত উৎপাদন বৃদ্ধি হ্রাস পেতে শুরু করবে ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের নেমে যাওয়ার সাথে। দৈনিক প্রথম আলোতে খবর বেরিয়েছে গত বছর সেচ দেওয়া হয়েছিল ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর এবার ২৫ হাজার হেক্টরে থেমে গেছে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ।এবারে তিস্তা নদীতে পর্যাপ্ত পানির অভাবে অনেক কৃষক নিজস্ব গভীর নলকূপ (ছবি ৩) দ্বারা ভু-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন করে বোরো ধান চাষ করছেন।



ছবি : ৪

আপনারা ইতি মধ্যে সংবাদ পত্রের মাধ্যমে যে রাজশাহী অঞ্চলে ও বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে পর্যাপ্ত সেচের অভাবে অনেক কৃষক ধানের পরিবর্তে পাট চাষ শুরু করেছেন। অর্থাৎ এ বছর বোরো ধানের উৎাদের পরিমাণ গত বছরে অপেক্ষা কম হতে পারে। অর্থাৎ শুধু ভু-গর্ভস্থ পানির স্তরের নীচে নেমে যাওয়া ও তিস্তা নদীতে পানি না থাকার কারণে আগামী বছর গুলিতে বাংলাদেশের ধান উৎপাদনের পরিমাণ কমতে থাকবে যদি না দ্রুত উচ্চ উৎপাদনশীল ধানের নতুন প্রজাতি আবিষ্কার হয়। কিন্ত দূঃসংবাদ হলো উচ্চ উৎপাদনশীল প্রজাতির ধানের আবিষ্কার অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
=============================================
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন: ২০ বছর পূর্বেও বাংলাদেশের প্রধান-প্রধান নদীগুলোতে শুকনো মৌসুমেও নৌকা চলত, মৎস্য সম্পদে পূর্ণ ছিল কিন্তু বর্তমানে নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক কর্ম সেরে হাত ধৌত করার মতো পানি নেই কেন?
=============================================
বাংলাদেশের নদী গুলোতে প্রবাহিত পানির প্রধান উৎস হলো ৩ টি:

১) বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিপাত [South Asian Monsoon Rainfall ]
২) হিমালয় পর্বতের বরফ গলা পানি [Seasonal Snow and Glacier Melting]
৩) নদীর দুই ধার দিয়ে চুয়ে পড়া পানি [Base Flow]

বাংলাদেশে পানি সমস্যা দেখা দেয় মূলত শুষ্ক মৌসুমে। বাংলাদেশের নদীগুলো প্রায় সবগুলো (পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৪/৫ টি ছাড়া) উৎপন্ন হয়েছে ভারত, নেপাল ও ভুটানের পার্বত্য অঞ্চলে।



ছবি: ৫

বাংলাদেশ ৩ টি প্রধান নদ-নদীর (পদ্মা, মেঘনা ও ব্রক্ষমপুত্র) অববাহিকায় [River Basin] বিভক্ত। অববাহিকাকে আমরা তুলনা করতে পারি আমাদের গোসল খানার চৌবাচ্চার পানি যেমন একটি ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যায় (ছবি ৫) বা রান্নাঘরের সিন্কের সাথে। একটি অববাহিকা অন্তর্গত সকল নাদী-নালা, শাখা নদী, উপনদী, লেক, হাওড়-বাঁওড়ের পানি পরিশেষে একটি জায়গার মিলিত হয়ে চূড়ান্ত ভাবে লেক, সাগর, মহাসাগরে গিয়ে পতিত হয় (ছবি ৬)



ছবি ৬: পদ্মা (সবুজ), মেঘনা (পিন্ক) ও ব্রক্ষমপুত্র (বেগুনি) অববাহিকা।

আপনার প্রশ্ন হতে পারে ধান উৎপাদন কি শুধু বাংলাদেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে নাকি একই সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটানেও বৃদ্ধি পেয়েছে?

নীচের ছবিতে দেখুন বাংলাদেশের সাথে সাথে একই ভাবে ভারত, নেপাল ও ভুটানেও বৃদ্ধি পেয়েছে।



ছবি: ৭ (যত বেশি সবুজ তত বেশি পানি সেচ দিতে হয় ঐ সকল এলাকায়)

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন তারা কিভাবে সেচের পানি সংগ্রহ করতেছে?

উত্তর হলো উজানের প্রত্যেকটি নদীতে বাধ দিয়ে জমা-কৃত পানি ও ভূ-গর্ভস্থ হতে নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলিত পানি দিয়ে। নিচের ছবিতে দেখুন ভারত গঙ্গা অববাহিকার বিভিন্ন নদীতে কি পরিমাণে বাধ দিয়ে পানি আটকিয়ে তা দ্বারা চাষাবাদ করতেছে।



ছবি : ৮ (যত বড় বৃত্ত তত বড় বাধ, তত বেশি পানি প্রতাহার)

মনে রাখবেন নদীতে বাধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পানি আটকানো হলে তা ছেড়ে দিতে হয় নিয়মিত ভাবে কিন্তু চাষাবাদের জন্য বাধ দিলে সেই পানি ছাড়া হয় না। বাড়ত শুধু যে নদীতে বাধ দিয়ে ঐ এলাকার কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা দিচ্ছে তা না, তারে ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নদীতে বাধ দিয়ে সেই পানি আটকিয়ে ক্যানালের মধ্যমে আন্তঃ-নদী সংযোগের মধ্যমে এক অঞ্চলের নদীর পানি অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে নিচের ছবিটির মতো।



ছবি : ৯ (ক) (এই ছবিটি জার্মানির একটি এলাকার যা রূপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কীন্তু একই রকম ভাবে ভারত তিস্তার পানি পশ্চিম বঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে যা নিচের ৯ (খ) নম্বর ছবিতে দেখা যাচ্ছে)


ছবি : ৯ (খ)

ভরত ইতিমধ্যেই গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে হুগলী নদীতে নিয়ে গেছে। তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের জমিতে সেচ দিচ্ছে। এখন ব্যাপক পরিকল্পনা করতেছে ব্রক্ষমপুত্র নদীর বাংলাদেশে প্রবেশ মুখে ও সিলেট অঞ্চলের বরাক নদীর মুখে টিপাই বাধ দিয়ে ক্যানালের মাধ্যমে সেই পানি ভারতের উত্তরাঞ্চলে নিয়ে যাবার জন্য যাতে করে উপরে ছবিতে উল্লেখিত কৃষি জমি গুলো ভবিষ্যতে হুমকির সম্মুখীন না হয়।



ছবি ১০: ভারতের বিভিন্ন নদীর পানি প্রত্যাহার ম্যাপ। বাংলাদেশের বর্ডার ঘেষে তিস্তার পানি (সবুঝ রঙ) পশ্চিম বঙ্গে নিয়ে কৃষি কাজ করতেছে । যে লাল লাইটা দেখতে পাচ্ছেন তা হলো দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। এই পরিকল্পার মাধ্যমে ভবিষ্যতে (হয়ত আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যেই ব্রক্ষমপুত্র নদে বাধ দিয়ে ভারতে নিয়ে যাবে।

"ভারত যেভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে, তাতে ৩০ বছরের মধ্যে দেশের ৬০ ভাগ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞ এস আই খান।"

ভারত গঙ্গা নদীতে বাধ দিয়েছিল এই কথা বলে যে তারা শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহিত পানির ৪ ভাগের ১ ভাগ প্রত্যাহার করে নেবে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা ধরে রাখার জন্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তারা প্রায় সম্পূর্ণ পানি আটকিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছে।
এবারে নীচের ছবিতে দেখুন ভারত ঠিক কোন জায়গায় বাধ দিয়ে পদ্মা নদীর পানি প্রত্যাহার করে হুগলি নদীতে নিচ্ছে।



ছবি ১১ : ফারাক্কা বাধের অবস্হান

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমালয় পর্বত অঞ্চলে শীত কালে বরফ পাড়ার পরিমাণ কমে গেছে এবং গ্লেসিয়ার (হিমবাহ) গুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। [সুত্র: ৪, ৫]
এবারে নিচের ১২ নম্বর ছবি থেকে জেনে নেই হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন হিমবাহ বা গ্লেসিয়ারের অবস্থান:



ছবি ১২: যত বড় বৃত্ত ঠিক তত বেশি পরিমানে গলে গেছে সেই হিমবাহ

সূত্র: Himalayan Glaciers: Climate Change, Water Resources, and Water Security (2012)

এবারে নিচের ১৩ নম্বর ছবিতে দেখুন গঙ্গোত্রী হিমবাহ (পদ্মা নদীর উৎপত্তি মুখ) কিভাবে গলে যাচ্ছে ১৭৮০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত (শিল্প বিপ্লব শুরুর পর থেকে)



ছবি ১৩ : গঙ্গোত্রী হিমবাহ

বৈজ্ঞানিকরা অনেক গুলো কারণ নির্ধারণ করেছেন পৃথিবীর হিমবাহ গুলোর দ্রুত গলে যাবার জন্য। তবে দুইটি প্রধান করান হলো:

১) পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপ মাত্রা বৃদ্ধি ও

২) বাতাসে দূষিত পদার্থের কণা বৃদ্ধি (এরোসল ডাষ্ট, ব্ল্যাক কার্বন ইত্যাদি)।


ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে বাহিরে রেখে দিলে যেমন দ্রুত গলে যায় ঠিক একই ভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমালয় পর্বতের বরফ গুলো গলে যাচ্ছে।

আমরা জানি যে কালো কাপড় বেশি তাপ শোষণ করে। হিমালয় পর্বতের দুই পাশে অবস্থিত দেশ চিন ও ভারতের উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ ভাগেরও বেশি অংশ হলো কয়লা পুড়িয়ে। কয়লা পুড়লে যে এর বিরাট একটা অংশ বাতাসের মাধ্যমে হিমালয় অঞ্চলে প্রবাহিত হয়ে হিমবাহ গুলোর উপর জমা হচ্ছে; ফলে বরফ কালো হয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার বরফের উপর সূর্যের আলো পড়লে তা হতে শতকরা প্রায় ৭৫-৮০ ভাগই প্রতিফলিত হয় অর্থাৎ মাত্র ১৫-থেকে ২০ ভাগ শোষিত হয়। কিন্তু বরফের উপর কালো পদার্থ জমার কারণে গত ২০-৩০ বছর ধরে বরফ বেশি তাপ শোষণ করে দ্রুত গলে যাচ্ছে।

আপনার প্রশ্ন হতে পারে বরফ যেহেতু বেশি গলছে তাহলে তো আমাদের দেশের নদ-নদী গুলোতে পূর্বের চেয়ে বেশি পানি থাকার কথা?

হ্যাঁ, আপনার কথার সাথে আমিও একমত। আমাদের নদীগুলোতে বেশি পানি থাকার কথা যদি পূর্বের চেয়ে বেশি পরিমাণে হিমালয় পর্বতের বরফ ও হিমবাহ গুলো গলতে থাকে। কিন্তু উপরের (***************) ছবিতে দেখুন ভারত কিভাবে নদীতে বাধ দিয়ে বরফ গলা পানি অতিরিক্ত আটকিয়ে কৃষি জমিতে সেচ দিচ্ছে।
=========================================

এবারে আলোচনা করি কৃষিকাজ ব্যতীত পানির অন্য ব্যবহার নিয়ে। ঢকা শহরের ব্যবহৃত পানির শতকরা ৮২ ভাগ আসে ভু-গর্ভস্থ উৎস (গভীর নলকূপ) ও মাত্র ১৮ ভাগ আসে ভূ-উপরিভাগের উৎস থেকে (মূলত নদীর পানি যেমন নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে সংগৃহীত পানি সায়দাবাদ পানি শোধনাগারে পরিশোধন করে)।

নীচের দুটি ছবির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করুন। নীচের ছবিটিতে একটি নলকূপের দ্বারা পানি উত্তোলন করা হচ্ছে যা উপরের ছবিটিতে নেই। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভূমির উপরের পতিত বৃষ্টির পানি মাটির নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এক পাশে লেকে ও অন্য পাশে নদীতে (স্ট্রিম) মিশে যাচ্ছে। কিন্তু যখন লেকের পাশে নলকূপ স্থাপন করে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে তখন মাটির নিচ দিয়ে প্রবাহিত পানি লেকে না গিয়ে নলকূপের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।একই সাথে লেক হতে পানি নলকূপের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।



ছবি ১৪: নদীর পানি ভূ-গর্ভে প্রবেশ(মনে করুন ঢাকার বুড়ি গঙ্গা নদীর পানি ঢাকা শহরের মাটির নিচে প্রবেশ করতেছে)।

১৪ নম্বর ছবিতে দেখুন যখন নদীর পাশে নলকূপ বসিয়ে পানি উত্তোলন করা হয় তখন নদীর পানি নলকূপের দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ নদীর পানির একটা অংশ নলকূপ দ্বারা টেনে নেওয়া হচ্ছে।



বাংলাদেশে গত ২০/৩০ বছর ধরে গভীর নলকূপ দ্বারা উত্তলিত পানির দ্বারা বোরো ধান চাষাবাদের ফলে মাটির নিচের পানি নদীতে গিয়ে পতিত হতে পড়তেছে না বরং কোন কোন জায়গায় নদীর পানি গভীর নলকূপ টেনে নিচ্ছে।

উপরোক্ত ৩ টি প্রধান করণে বাংলাদেশের নদীগুলো পানি শূন্য হয়ে যাচ্ছে শুকনো মৌসুমে সেই সাথে গ্রাম-বাংলার জলা ভূমি ও পুকুর গুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে।
========================================

এবারে নীচের ছবিটি ভাল করে লক্ষ করুন। কোন পার্থক্য চোখে পড়ে কি?



ছবি ১৫: সময় ও ব্যবহারের সাথে ভূ-গর্ভস্হ পানির স্তরের পরিবর্তন

ধরি ছবির উপরোক্ত বাড়িটি তৈরি করেছিলেন আপনার দাদা আশুলিয়ার তুরাগ নদীর পাশে ১৯৭০ সালে। বাড়িতে একটি অ-গীভর নলকূপ স্থাপন করেছিলেন গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত পানির জন্য। ১৯৮০ সালে ঐ স্থানের পানির স্তর পরীক্ষা করে প্রথম ছবিটি পাওয়া গেল।

১৯৮০ সালে যখন বাংলাদেশে প্রথম অগভীর নলকূপ চালু করা হলো কৃষি কাজের জন্য তখন সরকার আপনার দাদা বাড়ির পাশে একটি অ-গভীর নলকূপ স্থাপন করলেন শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদের জন্য। আপনার বাবা তো খুবই খুশি কারণ তার কৃষি জমি গুলো হতে বছরে ১ বারের পরিবর্তে ২ বার ধান উৎপাদন করা যাবে। ১৯৯০ সালে ঐ স্থানের পানির স্তর পরীক্ষা করে মধ্যের ছবিটি পাওয়া গেল।

২০০৫ সালে আপনার বাবার কিছু কৃষি জমি কিনে নিয়ে ঢাকার এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী একটি ডায়িং কারখানা স্থাপন করলেন সেই জমিতে। যেহেতু ডাইয়িং কারখানায় প্রচুর পানি দরকার হয় তাই কারখানা প্রাঙ্গণে একটি শক্তিশালী গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলো। ২০০৫ সালে ঐ স্থানের পানির স্তর পরীক্ষা করে সব শেষের ছবিটি পাওয়া গেল।

২০১০ সালের গ্রীষ্মের ছুটিতে আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে দাদার বাড়িতে গেলেন দাদা বাড়ির ফরমালিন মুক্ত আম খাবার জন্য। পরের দিন দুপুর বেলা দাদি আপনাকে বলল "১ জগ ঠাণ্ডা পানি নিয়ে আয়তো বাহিরের টিউবওয়েল থেকে"। আপনি বাহিরে গিয়ে অনেক চাপা-চাপি করলেন পেডরোলো পাম্পের সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপনের মতো কিন্তু জগ আর ভর্তি হয় না অথচ ৫ বছর পূর্বে ৩/৫ টা চাপ দিলেই জগ ভর্তি হতো। ১০ মিনিট ধরে চাপা-চাপি করার পরে কোন রকমে ১ জগ পানি সংগ্রহ করতে পারলেন। গ্রীষ্মের ছুটি শেষে আপনি আবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফিরলেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন আগামী গ্রীষ্মের ছুটিতে আর বাড়িতে যাবেন না।

বরিশালের কোন এক ব্লগার শশুর বাড়ি পৌছিয়া শশুর-শাশুড়িকে পা-ছুইয়া সালাম করিয়া ঘরে পৌছিবার কিছু ক্ষণ পড়ে শ্যালিকা হাজির হইল ১ জগ পানি ও তাওয়ালা নিয়া। ব্লগার মনে আনন্দে ঘড়ের বারান্দায় বসিয়া যেই না কিছু পানি মুখে প্রবেশ করাইলেন ওমনি লবণাক্ত পানির বিস্বাদে "শশুর বাড়ি মধুর হাড়ির" কথা ভুলিয়া গিয়া ভাবিতে লাগিলেন বরিশালের শশুর বাড়ি কেমনে হইলো লবণে হাড়ি???



ছবি ১৬: উপকূলীয় এলাকায় কোন কোন নলকূপ থেকে লবনাক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে।

উপরের ১৬ ও নিচের ১৭ নম্বর ছবিতে দেখুন কিভাবে উপকূলীয় এলাকার মাটির নিচের পানি দিনে দিনে লবণাক্ত হয়ে পানের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে।



ছবি : ১৭ উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রের লবনাক্ত পানির স্হল ভাগের ভূ-গর্ভে প্রবেশ।

***************************************************
উপকূলীয় এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানিকে লবনাক্ততার হাত থেকে রক্ষার একটি ব্যয় বহুল পদ্ধতি।
***************************************************

ধরুন আপনার বাড়িটি ইটের তৈরি। এবছর হঠাৎ করে বন্যা শুরু হলো। বন্যার পানি থেকে নিজের বাড়ীটি রক্ষা করতে আপনি কি করবেন? আপনি প্রথমত যা করবেন তা হলো বাড়ির চতুর দিকে বালির বস্তা দিয়ে বা টিন দিয়ে বন্যার পানিকে বাধা দেবেন। লবণাক্ত পানি থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে রক্ষা করার জন্য ঠিক একই ভাবে মাটির নিচে প্রতিরক্ষা বাধ দিতে হবে। আর এই প্রতিরক্ষা বাধের উপরকন হবে টিন বা বালির বস্তার পরিবর্তে মিঠা পানি।

উপকূলীয় এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানিকে লবনাক্ততার হাত থেকে রক্ষা করতে ১৮ নম্বর ছবিতে যে পদ্ধতি দেওয়া আছে তা অবলম্বন করা যেতে পারে কিন্তু তা ব্যয় সাপেক্ষ।



ছবি ১৮: উপকূলীয় এলাকায় মিঠা পানি প্রতিরক্ষা বাধ দিয়ে লবনাক্ত পানির স্হল ভাগের ভূ-গর্ভে প্রবেশ প্রতিরোধ।

========================================
ভারতের পানি ডাকাতির পরে আমাদের নদীগুলোতে যে পানি অবশিষ্ট রয়েছে সেই পানির ব্যবহার আমরা কিভাবে করতেছি তার একটি ছবি পেলাম ফেসবুকে। সিলেটের সুরমা নদীর বর্তমান অবস্থা।



ছবি ১৯: সিলেটের সুরমা নদীর পানি দূষন

বুড়িগঙ্গা নদীর ছবি দেবার সাহস পেলাম না। ঢাকা ওয়াসার সাপ্লাই পানির শতকর ৮০ ভাগ গভীর নলকূপ হতে সংগৃহীত ও অপরিশোধিত। উপরের (৩ নম্বর ছবি) নম্বর ছবিতে ইতিমধ্যেই দেখেছেন কিভাবে প্রতিবছর ঢাকা শহরের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে এটা যত বড় দুঃসংবাদ তার চেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় হলো বুড়িগঙ্গা নদীর তলায় জমা-কৃত হাজারী বাগের ট্যানারি ফ্যাক্টরির, সাভার ও আশুলিয়ার ডাইয়িং কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ব্যপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গভীর নলকূপে পানির পাইপের নীচে চলে যেতে পারে। হয়তবা ইতিমধ্যে কিছু কিছু নলকূপে পৌঁছে গেছে।

অর্থাৎ বুড়িগঙ্গা নদীর তলায় জমা-কৃত হেভি মেটাল ঢাকা ওয়াসার পানির মাধ্যমে ঢাকা শহরের বস্তি হতে গুলশান-বনানীর বাসার ডাইনিং টেবিলে পৌঁছে যেতে পারে যে কোন দিন বা পৌঁছে গেছে ইতিমধ্যেই।



ছবি ২০: কারখানার দূষিত পদার্থ ভূ-গর্ভের ও নদীর পানি দূষিত করছে।

==========================================

নীচে আরও কয়েকটি ছবি দেওয়া হলো যেগুলো হতে দেখতে পাবেন অবস্থাপন ফলে কিভাবে আপনার অগোচরে আপনার নলকূপে পৌঁছে যাচ্ছে আপনার চার পাশের দূষিত পদার্থ।



ছবি ২১: আপনার বাড়ির পাশে পেট্রল পাম্পটি যে ভাবে আপনার নলকূপের পানি দূষিত করতে পারে।



ছবি ২২: আপনার পায়খানার চৌবাচ্চাটি ছিদ্র হলে যে কোন মুহূর্তে আপনার খাবার পানির নলকূপটি দূষিত হতে পারে। বর্ষা কালে বাংলাদেশের গ্রাম অন্বচলে কলেরা নামক পানিবাহীত রোগটি ছাড়াবার জন্য এই কারনটি প্রধানত দায়ী। সুতরাং আপনার বাসার চার পাশে কটু গন্ধ পেলে আপনার উচিত হবে টয়লেটের ট্যাংকি লিক হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা।



ছবি ২৩: আপনার বাসার উঠানে ফেলে রাখা অব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের ড্রামটি আপনার নলকূপের পানি দূষিত করতে পারে। সুতরং যে খানে সেখানে রাসায়নিক পদার্থ ফেলে রাখবেন না।



ছবি ২৪: ঢাকার গাবতলী-সাভার রাস্তার পাশে আমিন বাজারের যে স্হানটিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলে তা কিভাবে সেই এলাকার বাসা-বাড়ির নলকূপের ও নদির পানিকে দূষিত করছে তা উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে।



ছবি ২৫: একটি আদর্শ ময়লা ফেলার স্হান যেমন হওয়া উচিত।

ময়লা পচে যে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয় তা সংগ্রহ করে [উপরের ২৫ নম্বর ছবিতে দেখুন] বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। ময়লা গুলো জৈব সারে রুপান্তর করে কৃষি জমিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি যে শরহটিতে থাকি সাখানকার জনসংখ্যা মাত্র ৪ লাখ। এই শহরের বাড়ি গুলোতে যে পচনশীল পদার্থ (শাক-সবজির খোসা থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের কাটা ও হাড় ইত্যাদি) থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হয় (উৎপাদন ক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট) প্রথমে এর পরে ময়লা গুলো জৈব সারে রুপান্তর করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রটি ঘুরে দেখবার। আপনাদেরকে সেই বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রটির ছবি দেখাবার লোভ সামলাতে পারলাম না।


ছবি ২৬


ছবি ২৭: (আমার পিএচডি সুপারভাইজার)



ছবি ২৮ (বিদ্যুৎ উৎপাদন টারবাই রুম, ৪ টা টার্বাইন রয়েছে এই কেন্দ্রে প্র‌ত্যেকটির উৎপাদন ক্ষমতা ৫ মেগাওয়াট)



ছবি ২৯ ময়লার ফেলার স্হান থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে কেন্দ্রটিতে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় উনি আমাদের তা বুঝাচ্ছেন।



ছবি ৩০: বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাহিরে আমি।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে ১০ মেগাওয়াটে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একজন মাত্র মানুষ পরিচালনা করেন (২৯ নম্বর ছবির মানুষটি)। একান্ত দরকার না হলে উনি অফিসে আসেন না। প্লান্টে কোন সমস্যা হলে বাসা থেকেই তা সমাধন করেন। সম্পূর্ন প্লান্টটি কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

এবারে ভেবে দেখুন ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের ঢাকা শহরের গৃহস্হালী বর্জ্য পদার্থ থেকে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব?

============================================
পানি সম্পদ রক্ষার জন্য আমাদের যা করনীয়
============================================

বাংলাদেশের নদী গুলোতে পানি শূন্যতার কারণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের নীচে নেমে যাওয়া, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানির স্থল ভাগের ভূ-গর্ভে প্রবেশ, ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপের পানির দূষিত হবার সম্ভাবনা বিজ্ঞানী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হলো। এই সমস্যা গুলোর অনেক গুলোই ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। কোন কোন সমস্যার মাঠ পর্যায়ের বিজ্ঞানী পরীক্ষা এখনও অবশিষ্ট। এই সমস্যা গুলো পৃথিবীর সব দেশে এক রকম না। অন্য দেশের সমাধান আমাদের দেশে কাজ নাও করতে পারে।

বুড়িগঙ্গা নদীর তলায় কি পরিমাণ হেভি মেটাল জামা হয়েছে তা আমেরিকার মিসিসিপি নদীর তলা পরীক্ষা করে বলা সম্ভব না। বুড়িগঙ্গা নদীর তলা হতে দূষিত পদার্থ কি পরিমাণে ও কত দিনে ঢাকা ওয়াসার নলকূপে পৌছাতে পারে তার জন্য দরকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা। গবেষণার জন্য দকরার অর্থ ও যোগ্য মানব সম্পদ। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অনেক অধ্যাপকই কোন না কোন সময় কিছু অর্থ পেয়ে থাকেন সরকারের কাছ থেকে। সে গুলো দিয়ে কি গবেষণা করছেন তার জন্য জবাব দিহীতা দরকার।

এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত অন্তত ১০ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে Water Resource Management/Engineering বিষয় চালু করে ঐ এলাকার নদী ও পানি সম্পদ নিয়ে গবেষণা করে দরকার ব্যাপক ভাবে।

সর্বোপরি দরকার পানি সম্পদের দূষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গণমাধ্যম গুলোর ব্যাপক প্রচারণা। ঢাকা শহরের পানি এখনই পানের অযোগ্য আগামী ১০ বা ২০ বছর পরে কোথা হতে সংগ্রহ করবেন খাবার পানি ভেবে দেখেছেন কি?

পরিবেশ বিজ্ঞানে ছাত্র হিসাবে ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করলে ভেবে পাইনা আজ থেকে ২০ বছর পরে বর্তমানের ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের সাথে নতুন ১ কোটি মোট ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানো হবে কোথা থেকে?

ভূ-গর্ভস্থ পানি তো প্রায় শেষের দিকে। ঢাকার চার পাশের নদী গুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। আগামী ৫ বছরের মধ্যে পরিকল্পনা করতে হবে যমুনা ও মেঘনা নদী থেকে পানি সংগ্রহের। না হলে ২০ বছর পরে হয়ত ঢাকাকে পরিত্যক্ত শহর ঘোষণা করতে হবে।

============================================
পানি সম্পদ রক্ষার জন্য আমরা যা করছি
============================================



ছবি : ২৪

যে দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ "পানি সম্পদ", যে দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রটির গবেষণা করা উচিত তার দেশের পানি সম্পদ নিয়ে সেই দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পিছন দিক থেকে প্রথম বিষয় হলো Water Resource Engineering। আমার প্রচণ্ড মেধাবী এক বন্ধু তো পুরো ১ বছর পড়ার পরে সেই বিষয় ছেড়ে চলে গিয়েছিল তার পছন্দের বিষয় পদার্থ বিজ্ঞান পড়ার জন্য।



ছবি ২৫: ২০২৫ সালে ঢাকার গুলশান বনানীর বাসিন্দারা এই রকম ভাবে লাইনে দাঁড়ালে অবাক হবো না।

হায়, আমার সেই বন্ধুটিকে কেউ যদি তখন বুঝাতো দেশের জন্য ১ জন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বা পদার্থ বিজ্ঞানীর চেয়ে ১ জন Water Resource Management/Engineering এর প্রয়োজনীয়তা লক্ষ-কোটি গুন বেশি।

বন্ধুটি তার লক্ষ চ্যুত হয়নি। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে পদার্থ বিজ্ঞনে সেরা ফলাফল করেই পাশ করে বের হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে তার বিভাগের পূর্বসূরি সত্যেন বোসের মতই বড় পদার্থ বৈজ্ঞানিক হবে।

তবে আমি আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য একজন প্রচণ্ড মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে একজন প্রচণ্ড মেধাবী Resource Management/Engineering এর প্রয়োজনীয়তা লক্ষ-কোটি গুন বেশি।

টাইম মেশিনে চড়ে যদি ২০০০ সালে চলে যেতে পারতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময়টিতে তবে যে বিষটি আমার প্রথম পছন্দ থাকতো তা হলো Water Resource Management/Engineering। পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আজ থেকে ২০ বছর পরের বাংলাদেশের পানি সমস্যর কথা কল্পনা করলে মাথা হ্যাং হয়ে আসে। ব্রাড পিটের World War Z ছবির কথা মনে পড়ে।



ছবি ২৬: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মিঠা পানির রিজার্ভের পরিমাণ



ছবি ২৭: ২০২৫ সালে বিশ্বের কোন দেশে কেমন পানি সমস্যা দেখা যেতে পারে

নিজেকে প্রোবধ দেই, পলাশ এখন বাংলা পরীক্ষার সময়, ইংরেজি নিয়ে চিন্তা করতে কে বলেছে তোকে? তুমি বসবাস করছো এমন একটি দেশে যেখানে বাস করে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৫% মানুষ কিন্তু সেই দেশটি পৃথিবীর মোট মিঠা পানির ২০% এর মালিক। দয়া করে তুই নাখে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে ঘুমা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পানি সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার জন্য শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া রয়েছে।


তথ্য সূত্র:


১) Mohammad Shamsudduha

২) দৈনিক প্রথম আলোর খবর: ‘দেশের ৬০ ভাগ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে’

৩) The State and Fate of Himalayan Glaciers, Science 20 April 2012: Vol. 336 no. 6079 pp. 310-314

৪) Impact of transient groundwater storage on the discharge of Himalayan rivers, Nature Geoscience 5, 127–132 (2012)

৫) Himalayan Glaciers: Climate Change, Water Resources, and Water Security (2012), National Academy of Science

৬) Monitoring groundwater storage changes in the highly
2 seasonal humid tropics: validation of GRACE measurements
3 in the Bengal Basin, M. Shamsudduha, "Water Resources Research 48 (2012)

৭) গত বছর সেচ দেওয়া হয়েছিল ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর এবার ২৫ হাজার হেক্টরে থেমে গেছে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ১২:২৯
১০৮টি মন্তব্য ১০৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×