somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাস জীবনে রোজার ঈদ উদযাপন ও ৩ টা অপ্রাপ্তি

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০৮ সালের পর থেকে পরিবারের সাথে ঈদ করা হয়নি। প্রবাসেও অনকে বন্ধু-বান্ধ হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে ঈদে কম আনন্দ হয় তা না। কিন্তু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ঈদের আনন্দের সাথে তা কখনই তুলনীয় না।

প্রথম অপ্রাপ্তি: পারিবারিক সান্নিধ্য
===========================

দেশে থাকা কালীন ঈদের দিনে মসজিদ হতে ফজরের নামাজ পড়ে এসে দিতাম আর একটা ঘুম। একটু বেলা হলে "মা" এসে ঘরের দরজায় নক করে বলবে এই তোর আব্বা চিল্লা-চিল্লি করতেছে এখনও উঠিস নাই!!! কখন গোছল করবি? আর কখন নামাজ পড়তে যাবি? এর কিছুক্ষণ পরে ভাতিজা-ভাতিজি এসে শুরু করবে কানের কাছে চিল্লা-চিল্লি। বিছানা থেকে না উঠা পর্যন্ত রক্ষা নাই।

অতঃপর, টিউবওয়েলের গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে ছোটবোনের আয়রন করে ভাজ করে রাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়া (আমার কৃষক বাবা-মায়ের পক্ষে তার ৪ সন্তানকে প্রতি রোজার ঈদে নতুন পাঞ্জাবী বা সালোয়ার -কামিজ দেওয়া সম্ভব হতনা)। আমার ছোট বোনের ঈদের দিনে সকাল বেলার কাজ হলো সকল ভাই ও বাবা-চাচা দের পান্জাপি ও পায়জামা আয়রন করে দেওয়া। ঈদের পূর্বের দিনের কাজ হলো বাড়ির সকল পিচ্চি -পাচ্চা ও মহিলাদের হাতে মেহেদি দেওয়া। এই কাজ দুটা থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই।

এর পর "মা" এসে চোখে সুরমা ও পাঞ্জাবিতে আতর মেখে দেওয়া। অবশেষে বাড়ী থেকে ৫০০ মিটার দূরে ঈদের মাঠের উদ্দেশ্যে হাটা পথে (মটর সাইকেলে যাবার সুযোগ থাকা সত্যেও) রওনা বেশি ছওয়াব এর আশায়।

ঐ একটা দিন মটর সাইকেলে বড়রা কেউই চড়তে চায় না। যদিও অবশিষ্ট দিন গুলোতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে যায়।

দ্বিতীয় অপ্রাপ্তি: প্রয়াত পারিবারিক সদস্যদের কবর জেয়ারত
========================================

ঈদের নামাজ পড়ে মাঠের পাশেই ঈদ উপলক্ষে অবস্থিত ক্ষণস্থায়ী মেলা হতে জিলাপি (প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বেলুন), ও তিলের খাজা কিনে যে পথে নামাজ পড়তে যাওয়া হয়েছিল সেটা ব্যতীত অন্য পথে বাড়ির উদ্যশ্যে রওনা দেওয়া (প্রচলিত আছে যে এতে করে নাকি বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়)।

বাড়ির কাছা-কাছি এসে প্রথমে দাদির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারতের দোয়া পড়া। এর পরে দাদার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারতের দোয়া পড়ে রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা। যখন ছোট ছিলমা তখন এই কাজে আব্বা ও চাচারা ছিল নেতৃত্বে আর আমরা চাচাত-ভাইয়েরা ছিলাম অনুসারী। এর পর যখন স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি দিলাম তখন নেতৃত্বের ভাঁড় এসে পড়ল আমার উপর যেহেতু চাচাত ভাই বোনদের মধ্যে আমি হলাম বয়সে বড়।

কবর জিয়ারত শেষে বাসায় ফিরে শুর হতো সিরিয়াল ধরে চাচা ও ফুফু দের বাসায় সেমাই ও পায়েস খাওয়া। এই প্রোগ্রাম চলত দুপুর ১২ টা পর্যন্ত। এর পর বাসায় ফিরে ম্যাগি নুড়ুস এর বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল গাওয়া হতো ভাই-বোনরা মিলে "চল গিয়ে দেখি মা রানছে কি"। যদিও উত্তরটা পূর্বে থেকেই জানা থাকত "পোলাও, গরু/খাসি/মুরগি মাংস, আলু ভাজি, পটল ভাজি"।

তৃতীয় অপ্রাপ্তি: বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পাড়ার মোড়ে আড্ডা।
======================================

দাদা বাড়ির ঈদ উদযাপন দুপুর ৩ টার মধ্যে সমাপ্তি করিয়া বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে নানা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়া। কারণ টা হইলো নানা বাড়িতে থেকে পড়া-লেখা করার কারণে আমার সকল বন্ধু-বান্ধবের অবস্থান সেখানেই। নানা বাড়িতে প্রবেশ করিয়া কোনমতে মুখে একটু সেমাই দিয়া দে দৌড় মোড়ের উদ্দেশ্যে।

মোড়ে অবস্থান করত স্কুল জীবনের সকল বন্ধু। পাড়ার ক্লাবে গিয়া চলত বাজি ধরিয়া কার্ড খেলা। বেশিভাগ সময় বাজির শর্ত থাকিত কোল ড্রিন্কস খাওয়ানো। খেলার মধ্যে চলিত চুরির প্রতিযোগিতা। কিন্তু চুরি ধরা পড়িলে আর রক্ষা নাই। পিঠের মধ্যে পড়িত কিল-ঘুষি অনেক সময়ই খেলা শুরু পূর্বে শর্ত ঘোষণা করা হইত এই যে চুরি ধরা পড়িলে দিগম্বর হইয়া কান ধিরয়া উঠ-বোস করিতে হইবেক।

৫~৬ টার মধ্যে কার্ড খেলা শেষ করিয়া ১০~১৫ জন বন্ধুর কাফেলা নিয়া বিকাল থেকে খাওয়া শুরু হইবে বন্ধুদের বাসায়। এই খাওয়া দাওয়া চলত রাত ১০ টা পর্যন্ত।

বন্ধুদের বাসায় খাওয়া সমাপ্ত করিয়া আবারও ৩ রাস্তার মোড়ে উপস্থিত হইতাম। এর মধ্যে দুষ্ট পোলা পান চিপায়-চাপায় গিয়া ধূমপানে বিষপান করিত বাসায় ফিরিবার পূর্বে (আমি অবশ্য এই কর্মে সামিল হইতাম না কখনও)। বেশিভাগ সময়েই শেয়ার করিয়া সিগারেট খাইতে গিয়া ফ্রেন্ডলি ফায়ার হইয়া যাইত। সিগারেট খাইতে গিয়া বন্ধুদের কমন ডায়লগ হইত দোস্ত শেষ টানটা আমাকে দিস। এই রকম ক্ষেত্রে যা হইত তা হলো একজন সিগারেট পুরোটা ফুঁকিয়া ঠিক ফিল্টারের আগুন ঠেকিবার পূর্ব মুহূর্তে শেষ টান দিতে চাওয়া বন্ধুকে দিত। অতঃপর দুইজনের মধ্যে চলিত পুরা খিস্তি-খেউর যার রূপ হইত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের এমপিদের রেকর্ড ভাঙ্গিবার প্রতিযোগিতা।

পরিশেষে রাত ১২ টার কিছু পূর্বে মোড়ের চায়ের দোকান থেকে উপস্থিত বন্ধু সংখ্যার অর্ধেক কাপ চা ও অর্ধেক পাইলটের (ফাঁকা কাপ) টাকা কে দিবে তা নিয়া আর এক প্রস্থ তর্ক চলিত। অতঃপর ঈদ উৎসবে সাঙ্গ দিয়া বসায় ফিরিতে হইত। বাসায় ফিরিবার পূর্বে ধুমপানের গন্ধ দূরি করিবার জন্য চলত নানা রকম কসরত। কেউ চুয়িং গাম চিবাইত কেউ বা হাতের গন্ধ দূরি করিবার জন্য আতা গাছে পাতা হাতে তালুতে ডলিত। স্কুল>কলেজ>বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনের সাথে সাথে বাসায় ফিরিবার সময়টাও বাড়িয়া গিয়াছিল।




৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×