somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন প্রবাসীর কুরবানি ঈদের ডায়রি

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রবাসে ১৪ তম ঈদ উদযাপন করলাম আজকে। রাতে ঘুমোতে যাবার পূর্বে ঘড়ির এলার্ম সেট করেছিলাম সকাল ৭ টা বেজে ১৫ মিনিটে। সকালে এলার্ম বাজলে অন্যান্য দিনের মতো বিরক্তি সহকারে এলার্ম বন্ধ করে আবারও ঘুম। ঘুম থেকে জেগে দেখি ৭ টা বেজে ৫০ মিনিট। পড়ি-মরি করে গোসল করে দে দৌড় বাসা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে একটি ইনডোর ফুটবল খেলার মাঠে।

রোজার ঈদে নামাজের জামাত ৮ টা বেজে ৩০ মিনিটে শুরু হবার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল প্রায় ৯ টায় এবং সেদিন ছিল কর্ম দিবস। ভেবেছিলাম আজকে যেহেতু শনিবার ও ছুটির দিন তাই নামাজ সকাল ৮ টা বেজে ৩০ মিনিটে শুরু হবার কথা থাকলেও হয়ত ৯ টায় শুরু হবে রোজার ঈদের মতো। আমার অবস্থা হইলো প্রতিদিন সঠিক সময়ে ইস্টিশনে উপস্থিত হইলেও ট্রেন লেট করে আসে বলিয়া একদিন লেট করে ইস্টিশনে উপস্থিত হইয়া দেখিলাম ঐদিন সঠিক সময়ে ট্রেন চলিয়া গিয়াছে।

ঈদ মাঠে প্রবেশ করিয়া দেখি ইমাম সাহেব ৬ তাকবীরের ঈদের নামাজের ২ তাকবীর ইতিমধ্যেই বলিয়া ফেলিয়াছেন। তরি-ঘড়ি করে নামাজের নিয়ত ছাড়াই নিজে ২ তাকবীর বলিয়া ৩ য় তাকবীরে ইমাম সাহেবের শঠে কণ্ঠ মিলাইলাম। নামাজ শেষে মনে পড়িল নিয়ত করতে ভুলে গিয়েছি। মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম ঈদের নামাজ পড়িবার উদ্দেশ্যেই যেহেতু মাঠে উপস্থিত হইয়াছি আল্লাহ চাইলে নিয়ত ছাড়াই নামাজ কবুল করিবেন।

নামাজ পড়িয়া বাহির হইয়া গাড়ির পার্কিং লটে কয়েক শত গাড়ির মাঝে নিজের গাড়িটি খুঁজিতে লাগিলাম। হঠাৎ দেখি একই ব্রান্ডের একটি গাড়ি লাইনে আগইয়া যাইতেছে। আমি ভাবিলাম বউ আগেই গাড়ি নিয়ে লাইনে দাঁড়াইছে যাতে করে পরে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা না করতে হয় বের হতে গিয়ে। গাড়ি সামনে আগাইয়া যাইতেছে ভাবিয়া আমিও গাড়ির পিছনে দিলাম ভো দৌড়। গাড়ির কাছে গিয়া দেখি গাড়ির মধ্যে দুই অষ্টাদশী তরুণী আমার অবস্হা দেইখা মুচকি-মুচকি হাঁসে। এদিকে আমিতো লজ্জায় মরি-মরি। ঐ গাড়ি থেক যখন আমার গাড়ির দিকে ফিরিতেছিলাম তখন দেখি গাড়ির মধ্যে বসে আমার বিবি মুচকি-মুচকি হাঁসে। বুঝিতে পাড়িলাম সে আমার ঐ গাড়ির পিছনে দৌড়ানো দেখেছে।

গত দুই বছর অন্য ৬ জনের সাথে মিলে গরু কুরবানি দিয়েছিলাম এখানে। ঈদের নামাজের পরে চলে যেতাম কুরবানি দিতে বাসা থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে একটা ফার্মে। গত ২ বছর যে গরু কুরবানি দেওয়া হত সেগুলোর ১ ভাগে প্রায় ১ মন মাংস পাওয়া যেত যার ৩ ভাগের দুই ভাগ হতো ২৫ কেজির বেশি। ২ জনে মিলে তা শেষ করতে লেগে যেত ৬/৭ মাস। এবারে এখানে কুরবানি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হলো ডাক্তারের অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থকে বিরত থাকার নিষেধাজ্ঞার করনে। যাদের সাথে কুরবানি দিতাম সেই ভাইদের মন খারাপ কারণ তারা একজন অভিজ্ঞ কসাইয়ের সার্ভিস থেকে বন্বিচিত হতে হচ্ছে এ বছর।

আজকে ঈদের নামাজ পড়ে এসে বাবা-মা কাউকেই ফোন করি নাই ইচ্ছে করেই কারণ তারা শুনে মন খারাপ করবে কারণ এবারে ঈদে কুরবানি দেই নি এই কারনে যদিও দেশে পরিবারের সকল সদস্যদের নামে কুরবানী দেওয়া হবে। আমি নিস্চিত যে মা ফ্রিজে কিছু কুরবানির মাংস রেখে দেবেন আগামী কুরবানি ঈদ পর্যন্ত এই আশায় যে ছেলে যদি এই বছর দেশে আসে।

ঈদের নামাজ শেষে বাসায় ফিরিবার পথে দোকানে প্রবেশ করিলাম চাল-ডাল কিনিবার উদ্দেশ্যে। অতঃপর বাসায় ফিরিয়া রাইস কুকারে রান্না করা পোলাও এর মাঝে মুরগির মাংস প্রবেশ করাইয়া পলাশ মিয়ার চিকেন বিরিয়ানি খাইয়া দিলাম ৩ ঘণ্টার ম্যরাথন ঘুম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ইতিমধ্যে ৫ টা বাজে। রাতে বাসায় ২-৩ জনকে আমাদের সাথে খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছিলাম। অতঃপর রান্না ঘরে গমন ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেখা কিছু রান্না এর পুঃনপরীক্ষন। রান্না হইল প্যাকেজ নাটকের মতো শর্টকাটে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শেখা ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগীটি মারা গেলেও আমাদের রান্না-বান্না অতিথি আসিবার পূর্বে সম্পন্ন হইলো না। অতঃপর রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে অতিথিদের সাথে গল্পে তালে-তালে চলিল আমার বিবির টুনা মাছের কাবাব বানানো।

ইতিমধ্যে এক ছোট ভাই, দাওয়াত খাইতে আসিয়া আমার বাসার পাশে বাস থেকে নামিয়া আমাকে বারংবার ফোন করিয়া ও আমার সাড়া না পাইয়া (দুপুরে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল ভাইব্রেশন মুড থেকে সাধারণ মুডে পরিবর্তন করিতে ভুলিয়া গিয়াছিলাম) অভিমানে বাসায় ফিরিয়া গিয়াছে। বেচারা বাসা থেকে বের হয়েছিল শীতের কাপড় না পড়িয়াই তাই ঠাণ্ডায় বাহিরে বেশিক্ষণ টিকতে পারে নাই (হঠাৎ করিয়া আমাদের শহরে আজকে ফিলস লাইক তাপমাত্রা মাইনাস ১ ডিগ্রীতে নামিয়ে গিয়াছে)। আমারে বারং বার কল দিতে গিয়া বেচারার মোবাইলের ব্যেটরী ইন্তেকাল ফরমাইয়াছিল বিধায় পরবর্তীতে কল করিয়াও আমি তাহাকে পাই নাই। বাসায় ফিরিয়া মোবাইলে চার্জ দিয়া তার করুন কাহিনী বর্ণনা করিতে লাগিল। নিজের বোকামির জন্য লজ্জায় পড়িয়া গেলাম ও তাহারে বলিলাম ১০ মিনিট পড়ে আমি তোমার বাসায় সামনে উপস্থিত হইতেছি; তুমি রেডি থাক। শেষে, বাসায় দাওয়াত খেতে আসা এক ছোট ভাইকে নিয়া তাকে নিয়া আসিলাম।

এদিকে পরচিত ২/১ জন মানুষের দাওয়াতের ওভারল্যাপ হইয়া গিয়াছিল আমার প্রতিবেশী এক বড় ভাইয়ের সাথে। ফলাফল: এই সমাধানে উপনীত যে উনার বাসায় পোলা-মাংস খাইয়া ডেসার্ট (সাধারণত দই, ড্রিন্কস, মিষ্টি ইত্যাদি আইটেম হইয়া থাকে) আমার বাসায় খাইবেন। শর্ত পালনের উদ্দেশ্যে বাধ্য হইয়া এক বাসা থেকে অন্য বাসায় আগমন ও ওরস্যালাইন বানানোর উপকরণ ৩ আঙ্গুলের এক চিমটি ডেসার্ট ভক্ষণ করিয়া নিজ নিজ বাসায় প্রত্যাবর্তন; সেই সাথে সমাপ্ত হইলা আমার প্রবাস জীবনের ১৪ তম ঈদ।

******** আবারও ঈদের শুভেচ্ছা সবাইকে ***********
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×