
গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে "দাঁত থাকিতে বাঙ্গালিরা দাঁতের মর্ম বুঝে না"। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এই মানুষটার অবদানের কথা আওয়ামী ও বাম ডমিনেটেড মিডিয়া এড়িয়ে চলেছে, প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে কৃপণতা করেছে ঠিকই; কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস লিখতে হলে কিংবা মুক্তি যুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র নিয়ে কিছু লিখতে গেলে চাষী নজরুল ইসলামের নামের উপরে আর কারো নাম থাকবে না এটা চন্দ্র-সূর্য এর মতোই প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই অবদান কোন দিনও মুছে ফেলা যাবে না; বিকৃত হয়ত করা যাবে হলুদ সাংবাদিক দ্বারা পরিচালিত ও কালো টাকায় প্রতিষ্ঠিত গন মাধ্যম দ্বারা।

"ওরা ১১ জন" মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র। ছবিটির পরিচালক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা চাষী নজরুল ইসলাম ও প্রযোজক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ (নায়ক সোহেল রানা; রুবেল এর বড় ভাই)। পৃথিবীর ইতিহাসে মুক্তি যুদ্ধ ভিত্তিক ২য় কোন চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে কি না সন্দেহ আছে, যার প্রযোজক ও পরিচালক দুইজনই মুক্তিযুদ্ধ করে এসে নিজের জীবনের অবিজ্ঞতার আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
মিডিয়ার মাধ্যমে যতটুকু চিনেছি তাতে মনে হয়েছে এই মানুষটি ছিলেন প্রচণ্ড আত্ম সম্মান বোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। রাজনৈতিক ভাবে আওয়ামীলীগ মতাদর্শই শিল্পীরা যেমন সম্মান ও সাহায্য পান নিজেদের প্রতিভা বিকাশে তার সামান্যটুকুই পাননি এই মানুষটি নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের দলটি থেকে। না; আমি অন্যায় কোন সুযোগের কথা বলছি না। বলছি রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় নিজের প্রতিভা প্রকাশের অধিকারের কথা বলছি (রাষ্ট্রীয় অনুদানে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণ)। বাংলাদেশে যে ধরনের সুযোগ নিয়মিত ভাবে পেয়ে থাকেন আওয়ামীলীগ মতাদর্শই চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকরা।
চাষী নজরুল ইসলাম চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে; হয়ত কিছুটা অতৃপ্তি নিয়ে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের। কালের বিবর্তনে ভবিষ্যতে হয়ত অনেক মেধাবী চলচ্চিত্র পরিচালক আসবে এটা যেমন চিরন্তন সত্য ঠিক তেমনি সত্য ১৯৭১ সালে নিজে মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধের উপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করা একজন চলচ্চিত্র পরিচালক জন্মাবে না বাংলাদেশে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এটা অপূরণীয় ক্ষতি; রসায়ন বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় irreversible process।
মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে উর্দু এর প্রস্তাব করলে যে মানুষটি দাঁড়িয়ে সর্ব প্রথম No, No বলে প্রতিবাদ করে উঠেছিল; যে মানুষটি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে আয়োজিত ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন; ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখিত ইতিহাসে বইয়ে যে মানুষটি পরিচিত "ভাষা মতিন" হিসাবে, সেই মানুষটিও শুধু নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে মৃত্যুর পূর্বে আওয়ামী ও বাম ডমিনেটেড মিডিয়া থেকে নিজের প্রাপ্য সম্মান টুকু পায় নি। মৃত্যুর পরেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশ সরকার যথাযথ মর্যাদায় শেষ বিদায় টুকু জানায় নি।
বাংলাদেশের গনমাধ্যম কর্মীরা যদি কোনদিন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক মতাদর্শকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে শিখবে; বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি সভ্য হয়ে উঠবে; সেদিন যেন ফ্রান্সের প্যারিস শহরের রাস্তা-ঘাট গুলোর নামকরণ যেমন সেই দেশের প্রখ্যাত কবি, শিল্পী; সাহিত্যিক, দার্শনিক; বৈজ্ঞানিকদের নামে করা হয় একই রকম ভাবে ঢাকা শহরের একটি রাস্তার নাম কিংবা বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্থার কোন ভবন কিংবা স্টুডিও এর নামকরন করা হবে সেই আশায় থাকলাম।
এই গুনি শিল্পীটির রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
চাষী নজরুল ইসলামের কাজ ও শিল্পীদের চোখে দেখা চাষী নজরুল ইসলাম:
১) ওরা ১১ জন" চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট
২) বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পীর কিছু গুনি শিল্পীর চোখে চাষী নজরুল ইসলাম: "চাষী নজরুল ছিলেন অভিভাবক"
৩) "ওরা ১১ জন" বাংলা উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



